আল-হামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার, যিনি বিশ্বের প্রভূ। দোয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবারবর্গ এবং সাহাবাগনের উপর।
ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। সব ধরনের সম্পদ ও প্রচেষ্টাকে কাজে লাগানো হচ্ছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। কোন একটা মুহুর্তের জন্যেও তারা বিরত হচ্ছে না। আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে একথা জানিয়ে দিয়েছেন, “এবং যদি তারা সক্ষম হয় তবে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই থাকবে যতক্ষন না তোমরা দ্বীনের পথ থেকে সরে যাও।” (আল-বাকারাঃ২১৭)
আল্লাহ তা’আলা তাঁর আয়াত এ বলেন…
وَلَايَزَالُونَيُقَاتِلُونَكُمْحَتَّىيَرُدُّوكُمْعَنْدِينِكُمْإِنِاسْتَطَاعُوا
ইবনে কাসির (রহঃ) পুর্ববর্তী আয়াতের ব্যাখ্যা করেন যে, “এবং ফিতনাহ হত্যার চেয়েও জঘন্য পাপ” অর্থাৎ “বস্তুত তারা একজন মুসলিমকে তার দ্বীনের মধ্যে ফিতনায় ফেলছে এবং এভাবে ঈমান আনার পরও তাকে কুফরের দিকে ঝুঁকিয়ে মুরতাদ বানাচ্ছে এবং এটা আল্লাহর নিকট হত্যার চেয়েও মারাত্মক।” এবং এরপর তিনি বর্ননা করেন “এবং যদি তারা সক্ষম হয় তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই থাকবে যতক্ষন না তোমরা দ্বীনের পথ থেকে সরে যাও।” মানে হল “এবং তারপর তারা আরো খারাপ ও আরো জঘন্য পাপ করবে, তারা অনুতপ্তও হবে না বা বিরতও হবে না।”
শায়খ আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-সা’দি উপরের আয়াতটির তাফসীরে বলেন “এবং আল্লাহ তা’য়ালা জানান যে, তারা অনবরত মুমিনদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে। মুমিনদের বৈশিষ্ট্য মুছে দেওয়া এবং হত্যা করা তাদের লক্ষ্য নয়। বস্তুত, তাদের লক্ষ্য হল মুমিনদেরকে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং তারপর তারা কাফির হয়ে যায় যদিও তারা পূর্বে বিশ্বাসী ছিল এবং প্রজ্বলিত জাহান্নামের বাসিন্দা হয়। এই সবের জন্য তারা তাদের সামর্থ্যকে প্রয়োগ করে এবং যা করতে পারে সবই করে।” এবং তারা তাদের মুখের সাহায্যে আল্লাহর (দ্বীনের) মশাল নিভিয়ে ফেলতে চায়।, কিন্তু আল্লাহ তার এ আলোর পূর্ণ বিকাশ ছাড়া অন্য কিছুই চান না, যদিও কাফেররা তা পছন্দ করে না।””
তিনি আরো বলেন “ এই বৈশিষ্ট্য সকল কুফফরের জন্য প্রযোজ্য, তারা তাদের নিজেদের বাইরের দলগুলোর সাথে কখনোই যুদ্ধ হতে বিরত হবে না যতক্ষন না তাদেরকে দ্বীন থেকে সরিয়ে দেয়া যায়। বিশেষ করে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মধ্য হতে আহলে কিতাবধারীরা যারা তাদের দ্বীনের দিকে উম্মাহকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা স্থাপন করেছে, মিশনারি ছড়িয়ে দিয়েছে, ডাক্তার নিযুক্ত করেছে, স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাদের দ্বীনের (ইসলামের) মধ্যে সন্দেহ ঢুকানোর জন্য বিভিন্ন প্রোপ্যাগান্ডা তৈরি করছে।”
যদি এই হয় অবস্থা, তাহলে কি হবে যদি জিহাদের মনোভাব স্তিমিত হয়ে যায় যখন কাফিরদের শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব তীব্র হচ্ছে?
আল্লাহ কুফফারদের অন্য একটি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানান, তারা অব্যাহত ভাবে আল্লাহর পথ হতে ব্যাহত করার কাজ করে এবং আন্দোলন তৈরি করে যা ইসলাম হতে দূরে সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
قُلْيَاأَهْلَالْكِتَابِلِمَتَصُدُّونَعَنْسَبِيلِاللَّهِمَنْآمَنَتَبْغُونَهَاعِوَجًاوَأَنْتُمْشُهَدَاءُوَمَااللَّهُبِغَافِلٍعَمَّاتَعْمَلُونَ
“তুমি বল, হে আহলে কিতাবরা, যারা ঈমান এনেছে তোমরা কেন তাদের আল্লাহর পথ থেকে সরাতে চেষ্টা করছ, তোমরা (আল্লাহর) পথকে বাঁকা করতে চাও, অথচ তোমরাই তো (সত্যের) সাক্ষী?” এবং তোমরা যা কর সে ব্যাপারে আল্লাহ উদাসীন নয়। হে মুমিনরা, যাদের (আগে) কিতাব দেওয়া হয়েছে তোমরা যদি তাদের কোন একটি দলের কথা মেনে চল, তাহলে ঈমান আনার পরও তারা (ধীরে ধীরে) তোমাদের কাফির বানিয়ে দেবে”। (আলি-ইমরানঃ ৯৯-১০০)
এই কারনে, (তেজী) মনোবলকে ম্রিয়মাণ হতে দেওয়া যাবে না, এটা অবশ্যই জাগিয়ে রাখতে হবে। যদি শরি’য়ার শর্ত অনুযায়ী প্রত্যক্ষ জিহাদের উপযুক্ত সময় না হয় অথবা সামর্থ্য না থাকে তাহলেও আমাদের অবশ্যই জিহাদের মনোবলকে চাঙ্গা রাখতে হবে।
আল্লাহর দ্বীনকে ধ্বংস করার জন্য ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন ধরনের পন্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাঁর (দ্বীনের) মশাল উপড়ে ফেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা করছে। একটা হল তাদের মুখ দ্বারা যেমনটি কুরআনে বর্নিত হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ মিডিয়ার ফানেলের মাধ্যমে। সুতরাং আমাদের এই ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে, ইসলামের শত্রুরা ইসলামকে আক্রমণ করার জন্য সাংবাদিক কার্যক্রম সহ আরো বিভিন্নভাবে মিডিয়াকে ব্যবহার করবে, তাই আনসারুল্লাহ এবং মুজাহিদিনদের দক্ষ হতে হবে যাতে কুফফরদের ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হওয়া যায় এবং তা প্রতিহত করা যায়।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
يُرِيدُونَأَنْيُطْفِئُوانُورَاللَّهِبِأَفْوَاهِهِمْوَيَأْبَىاللَّهُإِلَّاأَنْيُتِمَّنُورَهُوَلَوْكَرِهَالْكَافِرُونَ
“তারা তাদের মুখের (এক) ফুঁৎকারে আল্লাহর (দ্বীনের) মশাল নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তার এ আলোর পূর্ণ বিকাশ ছাড়া অন্য কিছুই চান না, যদিও কাফেররা তা পছন্দ করে না।” (আত-তাওবাঃ৩২)
অন্য একটি আয়াতও তা ফুটিয়ে তোলে,
لَتُبْلَوُنَّفِيأَمْوَالِكُمْوَأَنْفُسِكُمْوَلَتَسْمَعُنَّمِنَالَّذِينَأُوتُواالْكِتَابَمِنْقَبْلِكُمْوَمِنَالَّذِينَأَشْرَكُواأَذًىكَثِيرًاوَإِنْتَصْبِرُواوَتَتَّقُوافَإِنَّذَلِكَمِنْعَزْمِالْأُمُورِ
“(হে মুমিনেরা) নিশ্চয়ই মাল ও জানের মাধ্যমে তোমাদের পরিক্ষা নেয়া হবে। এবং তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায় – যাদের কাছে আল্লাহর কিতাব নাযিল হয়েছিল এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্যদের শরীক করেছে, তাদের (উভয়ের) কাছ থেকে অনেক (কষ্টদায়ক) কথবার্তা শুনবে, এ অবস্থায় তোমরা যদি ধৈর্য ধারন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তা হবে অত্যন্ত বড়ো সাহসিকতার ব্যাপার।” (আলি-ইমরানঃ১৮৬)
যদি আমরা দেখি, বর্তমানে অধিকাংশ মিডিয়াই কুফফরদের দ্বারা এবং মুনাফিকদের মধ্য হতে কুফফরদের সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত। সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যদি আমরা অধিকাংশ গন মিডিয়ায় দেখি যে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃনা প্রচার করছে, ইসলামের শিক্ষাকে অপমান করছে, মুসলিমদের একঘরে করে ফেলছে, জিহাদকে সন্ত্রাস বলে প্রচার করছে, জিহাদের কার্যক্রমকে নেতিবাচক শিরোনাম দিয়ে প্রচার করছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে এরকম অনেক কিছু করছে। এমনকি কি এর চেয়েও দুঃখজনক হল, মুসলিম সম্প্রদায় এগুলো গিলছে এবং পাল বেধে ইসলাম সম্পর্কে একটা পক্ষপাতদুষ্ট উপসংহারের দিকে আগাচ্ছে এবং তারা এটা কোন রকমের বাছ বিচার ছাড়াই গ্রহণ করছে। সুতরাং বস্তুত, এই যুগে সংগ্রামের জন্য খুব বেশী প্রয়োজন অধিক পরিমান ধৈর্য এবং আল্লহভীতি (তাকওয়া), “কিন্তু যদি তুমি ধৈর্য ধারন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর- তাহলে, তা হবে অত্যন্ত বড়ো ধরনের এক সাহসিকতার ব্যাপার।”
গন মিডিয়ার মাধ্যমে কুফফরদের ঘৃনার কথাও আল্লাহ সুবহানু তা’য়ালা তার আয়াতের মাধ্যমে জানিয়েছেনঃ
“হে মুমিনেরা, তোমরা নিজেদের (মুমিনদের) ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না, কারন তারা তোমার অনিষ্ট সাধনের কোন পথই অনুসরন করতে দ্বিধা বোধ করবে না, তারা তো তোমাদের ক্ষতি-ই কামনা করে, তাদের ঘৃনা তাদের মুখ থেকেই প্রকাশ পেতে শুরু করেছে, এবং তাদের অন্তরে লুকানো হিংসা বাইরের অবস্থার চাইতেও মারাত্মক”। (আলি-ইমরানঃ ১১৮)
এটা হতে পারে যে , যদি আমরা সমর্থ হই, আমরা অবশ্যই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করব এবং তাদের ধ্বংস করব। কিন্তু কি করব, যখন উম্মাহ দুর্বল অবস্থায় আছে? গন মিডিয়ায় মুজাহিদিনদের সামর্থ্য কম। একজনকে ধৈর্য্য ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে হবে, এর মধ্যে একটি হল মিডিয়ার মাধ্যমে জিহাদ পরিচালনা করার আকাঙ্ক্ষাকে জাগ্রত রাখা।
কিভাবে জিহাদের মনোবলকে চাঙ্গা রাখা যায় তার জন্য কিছু উপদেশঃ
দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে মনের পরিবর্তন করুন; আখিরাতকে প্রধান জীবন বানান। দুনিয়া কেবল তার সঙ্গী হচ্ছে, এটাকে লক্ষ্য বানানো উচিত নয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম আহযাবের যুদ্ধে যখন খন্দক খুঁড়ছিলেন তখন তার সাহাবাদের সম্পর্কে বলেন,
اللهمإنالعيشعيشالآخره . فاغفرللأنصاروالمهاجره
“হে আল্লাহ, বস্তুত জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন। সুতরাং আনসার ও মুহাজিরীনদেরকে তুমি ক্ষমা কর। (আল-বুখারী) মানে হচ্ছেঃ হে আল্লাহ, বস্তুত জীবন হচ্ছে তাই যা আমরা খুজছি এবং যা হয় চিরস্থায়ী আর তা হল আখিরাতের জীবন।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন