"নারীকে ব্যবহার করে শয়তানের তৈরি একটি ফাঁদ !!! একটি সত্য কাহিনী এবং কিছু শিক্ষা - khalid Saifullah

khalid Saifullah

আল্লাহর তরবারী

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

"নারীকে ব্যবহার করে শয়তানের তৈরি একটি ফাঁদ !!! একটি সত্য কাহিনী এবং কিছু শিক্ষা

বারসিসা বনী-ইসরাইলের একজন সুখ্যাত উপাসক, ধর্মযাজক ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল। সে ঈসা(আঃ) এর উম্মাত ছিল। সে উপাসনালয়ে একনিষ্ঠভাবে নিজেকে আল্লাহর উপসনায় নিয়োজিত রাখত। তার সময়ে বনী-ইসরাইল জাতির মধ্যে তিন ভাই সিদ্ধান্ত নিল যে তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। কিন্তু তাদের একটি বোন ছিল এবং তারা ভেবে পাচ্ছিলো না যে বোনটিকে তারা কার নিকট রেখে যাবে। লোকজন বলল যে বারসিসা খুব ভালো এবং বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি, সে এই দায়িত্ব বিশ্বাসের সাথে খুব ভালোভাবে পালন করতে পারবে। সুতরাং লোকজনদের পরামর্শ অনুযায়ী সেই তিন ভাই বারসিসার নিকট গেল। তারা গিয়ে বারসিসাকে বলল যে তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যেতে চায়, এখন তাদের বোনটিকে কি সে দেখে রাখতে পারবে, মন্দ লোকের থেকে আর তার যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে কি না। এর উত্তরে বারসিসা বলল যে সে তাদের কাছে থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং তারা যেন তার কাছে থেকে চলে যায়।
,
কিছু সময় পর তার মনে হল, মূলত শয়তান এসে  তাকে বলল যে(বাস্তবে নয় মনে কুমন্ত্রণা) “তুমি এত সৎ ব্যক্তি, তুমি যেহেতু মেয়েটিকে দেখাশোনার দায়িত্ব নিলে না, তাহলে নিশ্চয়ই কোনো মন্দ ব্যক্তি মেয়েটির দায়িত্ব নেবে আর এর পরের ব্যাপারটি কি হবে তুমি নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছো, এই অসহায় মেয়েটিকে আশ্রয় দেয়ার মত ভালো কাজ তুমি ছেড়ে দিতে পারো না।”
এর কিছু সময় পর বারসিসা সেই তিন ভাইকে ডেকে বলল যে তাদের কথা সে রাখতে পারে তবে তাদের বোন তার ধারেকাছেও থাকতে পারবে না, উপাসনালয়ের কাছেও না; অদূরেই তার একটি পুরোনো বাড়ি আছে সেখানে রাখতে যদি তাদের কোনো আপত্তি না থাকে তবে। ভাইয়েরা শর্তে রাজি হয়ে বোনকে বারসিসার দায়িত্বে রেখে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে চলে গেল। আর মেয়েটি সেই পুরোনো বাড়িতে আশ্রয় নিলো।
,
বারসিসা প্রতিদিন তার উপাসনালয়ের দরজার সামনে মেয়েটির জন্য খাবার রেখে দিত। সে মেয়েটিকে খাবার পর্যন্ত দিয়ে আসত না। মেয়েটিকে প্রতিদিন কিছুদূর পথ পেরিয়ে উপাসনালয়ের দরজার সামনে থেকে খাবার নিয়ে যেতে হত। বারসিসা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখত না। এরকম কিছুদিন যাওয়ার পর তার মনে হল, মূলত শয়তান এসে তাকে বলল যে(বাস্তবে নয় মনে কুমন্ত্রণা) এতটুকু হেঁটে আসতে এই অসহায় মেয়েটির অবশ্যই কষ্ট হয়, তাছাড়া দুষ্ট লোকের নজর তার দিকে পড়ে। সুতরাং তার উচিত হবে মেয়েটির খাবার তার আশ্রয়স্থলে গিয়ে দিয়ে আসা। এরপর থেকে বারসিসা মেয়েটির আশ্রয়স্থলে গিয়ে প্রতিদিন দরজার সামনে খাবার রেখে আসত।

,
কিছুদিন পর শয়তান এসে আবার বারসিসাকে বলল, মূলত তার মনে হল যে দরজা থেকে খাবার নেয়ার সময় মন্দ লোকের নজর মেয়েটির উপর পড়তে পারে, তাই তার উচিত হবে খাবার ঘরের ভিতর দিয়ে আসা। এরপর থেকে বারসিসা মেয়েটির ঘরে খাবার দিয়ে আসত এবং এক মূহুর্তও অপেক্ষা করত না। এভাবে কিছুদিন গেল। আর এইদিকে সেই তিন ভাই জিহাদে ব্যস্ত থাকায় তাদের ফিরতে বিলম্ব হচ্ছিল। এমতবাস্থায় শয়তান আবার বারসিসার কাছে, মূলত তার চিন্তায় এসে বলল যে সে যে মেয়েটি একা একা রাখছে এতে মেয়েটির হয়ত খারাপ লাগছে, তার তো আপন কেউ কাছে নেই, সে কোথাও বেরও হতে পারে না, কারো সাথে কথাও বলতে পারে না, ঠিক যেন জেলখানায় বন্দী হয়ে আছে। কথা বলার জন্য একটা মানুষ পর্যন্ত নেই, সে কোনো মেয়েটির এই দায়িত্বটি নিচ্ছে না; একটু সামাজিকতা, সুখ-দুঃখের কথা বলা। আর তা না হলে হয়ত পরে দেখা যাবে মেয়েটি বিরক্ত হয়ে ভুল পথে চলে যেতে পারে, পর কোনো পুরুষের সংস্পর্শে চলে আসতে পারে। সেই সময় শয়তান বারসিসার মনে উপস্থিত হল। সে ভাবলো খাবার যখন  দিয়েই আসছি, কিছু সৌজন্যমূলক কথা-বার্তা বলাই যেতে পারে তবে তা ঘরের ভিতরে না হয়ে ঘরের বহিরে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে। এরপর তারা এভাবে চিৎকার করে সামান্য কিছু কুশল বিনিময় করা শুরু করল। এভাবে কিছুদিন চলল। এরপর শয়তান আবার তার মনে উদয় হল এবং বলল যে এত কঠিন করে কি বা দরকার, শুধু শুধু কষ্ট করে চিৎকার করে করে, ব্যাপারটি সহজ করে নিলেই তো হয়। ঘরে বসেই তো মেয়েটির সাথে কথা বলা যায়, কথা যখন বলা হচ্ছেই।এরপর থেকে সেই সুখ্যাত, ধার্মিক ব্যক্তি বারসিসা সেই মেয়েটি সাথে একটি ঘরে কথা-বার্তা বলে সময় ব্যয় করতে থাকল। দিন দিন মেয়েটি সাথে তার সময়ক্ষেপনের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকল। একটা সময় বারসিসা মেয়েটির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতে লাগল আর ধীরে ধীরে পরস্পরের কাছাকাছি আসতে থাকল। বারসিসা মূলত সেই মেয়েটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। এমন একটা সময় উপস্থিত হল যে সেই সৎ, ধার্মিক বারসিসা মেয়েটির সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হল, ফলে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ল।

 ,
মেয়েটি একটি সন্তানের জন্ম দিল। আবার সেই শয়তান বারসিসার মনে উদয় হল। কি সর্ব্নাশ! এ কি করেছে বারসিসা! এত সৎ, ধার্মিক, বিশ্বাসী একজন লোক সে। মানুষজন কত ভালো মানুষ হিসেবে জানে তাকে। মেয়েটির ভাইয়েরা ফিরে আসলে তার কি হবে, তারা তার কি অবস্থাই না করবে। তারা তাকে হত্যা করবে, এমন কি সে যদি কাজটি অস্বীকারও কারে, তবুও দায়িত্বে তো সে ই ছিল। আর তখন তাকেই সব কিছুর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। শয়তান তখন তাকে ওয়াসওয়াসা দিল যে উপায় একটাই, এই বাচ্চাটিকে মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। তখন বারসিসার মনে হল যে শুধু বাচ্চাটিকে মেরে ফেললেই কি হবে, মেয়েটি অর্থাৎ বাচ্চাটির মা কি বলে দেবে না সন্তান হত্যা সহ বাকি সব। শয়তান তখন বারসিসাকে বলল যে সে কোনো যে এত বোকা! মেয়েটি অবশ্যই ব্যাপারটি গোপন রাখবে না, সে সবাইকে বলে দেবে। বারসিসা দিশেহারা হয়ে পড়ল, সে এখন কি করবে! শয়তান তখন তকে কুমন্ত্রণা দিল যা এতদিন ধরে ধরাবাহিকভাবে মাত্রা বাড়াতে বাড়াতে দিয়ে আসছিল যে বারসিসার উচিত তাদের দু’জনকেই অর্থাৎ সন্তান সহ মা কে হত্যা করে তাদের মাটির নিচে পুঁতে ফেলা। বারসিসা ঠিক সেই কাজটিই করল এবং তাদের দু’জনকে সেই বাড়ির নিচে মাটিতে পুঁতে ফেলল।

 ,
কিছুদিন পর মেয়েটির তিন ভাই জিহাদ থেকে ফিরে আসল। তারা বারসিসার কাছে তাদের বোনকে নিতে আসল। বারসিসা তাদের বলল যে ‘আল্লাহর কাছ থেকেই আসে আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যায়!’ তোমাদের বোন তো অসুখে মৃত্যু বরণ করেছে। তারপর সে তিন ভাইকে মনগড়া একটি স্থান দেখিয়ে বলল যে সেখানে তাদের বোনকে কবর দেয়া হয়েছে। তখন ওই তিন ভাইও বলল যে ‘আল্লাহর কাছ থেকে আসে আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যায়’। তারা তাদের বোনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তাদের ঘরে ফিরে গেল।
 ,

রাতের বেলা তিন ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই স্বপ্ন দেখলো। মূলত স্বপ্নে তার কাছে এসেছিল সেই কুমন্ত্রণা দানকারী শয়তান। শয়তন স্বপ্নে তাকে বলল যে সে কি বারসিসার কথা বিশ্বাস করে, বারসিসা তো মিথ্যা বলেছে। বারসিসা তাদের বোনের সাথে অসৎ কাজ করেছে, সন্তান সহ তাকে হত্যা করে, সেই আশ্রিত ঘরের মাটির নিচে পুঁতে ফেলেছে।

,
পরদিন সকালে সেই ভাইটি স্বপ্নের কথা বাকি দুই ভাইকে জানালো। তারা বলল যে তারাও না কি ঠিক একই স্বপ্ন দেখেছে! নিশ্চয়ই এখানে একটা কিন্তু আছে, তিন ভাইয়েরা ভাবলো। তারা গিয়ে বারসিসার দেখানে সেই মিথ্যা কবরটি খুঁড়ল কিন্তু কিছুই পেল না। এরপর তারা সেই আশ্রিত বাড়িতে গিয়ে মাটি খুঁড়ল এবং তারা দেখলো যে তাদের বোনের পঁচে যাওয়া মৃত দেহ এবং তার পাশে একটা শিশু!
 ,

তারা বারসিসাকে গিয়ে ধরলো। তার বলল যে মিথ্যুক, প্রতারক, ভন্ড! কেনো সে এমন করল আর কি দোষে তাদের বোনকে হত্যা করা হল। তারা বারসিসাকে টেনে-হিঁচড়ে রাজার কাছে নিয়ে গেল। বরসিসাকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হল।এবার আবারও শয়তান আসলো বারসিসার কাছে। এবার কিন্তু সে মনের ওয়াসওয়াসা হিসেবে আসে নি। এবার সে সরাসরিই এসেছে আরো অনেক বড় ধোঁকা দিতে, পূর্ণ শক্তি নিয়ে। চূড়ান্ত এবং চরম ধোঁকা দিতে শয়তান মানুষের রূপে বারসিসার নিকট এসে বলল যে সে কি জানে সে কে, সে হল স্বয়ং শয়তান যে কি না তাকে এত ঝামেলার মধ্যে ফেলেছে। সুতরাং সমস্যা সৃষ্টি করেছে সে, তাই সমাধানও একমাত্র সে ই জানে! এখন বারসিসার সিদ্ধান্ত যে সে কি মৃত্যুদন্ড পেতে চায় না কি শয়তানের সমাধান অনুযায়ী বাঁচতে চায় কেননা এই চরমতম মূহুর্তে শয়তানই পারে তাকে সমাধান দিতে। বারসিসা শয়তানকে বলল যে তাকে বাঁচাতে! শয়তান বারসিসাকে বলল যে সিজদাহ কর যে তোমাকে হুকুম দিচ্ছে এখন। বারসিসা শয়তানকে সিজদাহ করল!
 ,
এরপর শয়তান বারসিসাকে বলল, “তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! তোমার সাথে দেখা হয়ে আমার খুব ভালো লাগলো, আমি একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা লাভ করলাম।”
 ,
এরপর আর কখনওই বারসিসা শয়তানকে দেখতে পেল না আর এটাই ছিল বারসিসার জীবনের শেষ কাজ। কারণ এর কিছুক্ষণ পরই বারসিসার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছিল। অর্থাৎ তার জীবনের শেষ কাজটি ছিল একটি শিরক। শয়তানকে সিজদাহ করাটা ছিল শিরক। জীবন বাঁচানোর তাগিদে, পৃথিবীর মায়ায় সে শয়তনকে অন্তিম মূহুর্তেও বিশ্বাস করে তাকে সিজদাহ করেছিল কিন্ত শয়তান তো তাকে বাঁচায় নি। অথচ সে ছিল একজন সরল পথের হিদায়াহ্ প্রাপ্ত সৎ একজন উপাসক! যেহেতু সে একটা সময় ভেবেছিল যে কিছু জিনিস দ্বীন তথা জীবন-ব্যবস্থা তথা আদর্শ থেকে বাদ দিলে কি এমন ক্ষতি হয় এবং সে শয়তানের ছোট ছোট ধোঁকাগুলোকে এড়িয়ে চলতে পারে নি বরং প্রশ্রয় দিয়েছিল। একটা একটা ধাপ সে পেরিয়ে যাচ্ছিল। শয়তান তার প্রতি ধোঁকার মাত্রাটা দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছিল আর তাকে পথভ্রষ্ট করেছিল। সে যেহেতু নিজের ভাবনাকেই প্রাধান্য দিচ্ছিল এবং সে যে এক আল্লাহর উপাসনা করত, তার কথার সাথে নিজের ভাবনা মিলিয়ে দেখে নি, দেখার চিন্তা করে নি আর সেই সুযোগটা শয়তান নিয়েছিল। সে শয়তানের কাছ থেকেই সমাধান নিত, পরমর্শ নিত অথচ তার মনে হত এটাই তো  যৌক্তিক আর এটাই তো বিবেক, এটাই তো ভালো কাজ আর এটাই তো মানবতা! সে ক্রমেই শয়তানের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছিল। তার ফেরার সুযোগ ছিল তার আত্মবিশ্লেষণ করে, তার চিন্তাকে তার এক আল্লাহর সিন্ধান্ত অনুযায়ী চলার মাধ্যমে।
 ,

বারসিসা মূলত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিল। সে ভাবতো সে তো হিদায়াহ্ প্রাপ্ত, সে তো সৎ। সে কখনোই চিন্তা করে নি যে শয়তান তাকে ধোঁকা দিতে পারবে। তবুও তার পরিস্থিতিকে পুঁজি করে শয়তান তাকে ধোঁকা দিয়েছে। শয়তান প্রথমেই এসে তাকে বলে নি যে, ‘সিজদাহ কর আমাকে!’ শয়তান মূলত তার ভালো কাজ করার মানসিকতাকেই কাজে লাগিয়েছে। একটি অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দেয়ার মত ভালো কাজ করার মন্ত্রণা শয়তানই দিয়েছিল। মেয়েটির কষ্ট লাঘবের জন্য তার ঘরে গিয়ে খাবার দিয়ে আসার মত ভালো কাজে তো শয়তানই উৎসাহ দিচ্ছিল। সে পরে তার কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা করত না যে তার আল্লাহ এ ব্যাপারে কি আদেশ দেয়। সে ভাবতো যে সে তো সৎ আর সৎই থাকবে।

 ,
আর এই ছাড় দেয়ার বিষয়গুলো হয়েছিল তার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে। তার মনের প্রবৃত্তিগুলো, নারীর প্রতি আকর্ষণগুলো তার কাছে ভালো কাজ বলেই তো মনে হচ্ছিল, মূলত শয়তানই নারীর প্রতি প্রবৃত্তিগুলোকে ভালো কাজের মোড়কে প্রক্রিয়া করে তার কাছে উপস্থাপন করছিল আর সে ভাবছিল যে আরে এটাই তো যৌক্তিক আর এটাই তো শিক্ষা অসহায় মানুষকে সেবা করার! শয়তান তাকে মেয়েটির যথাসম্ভব কাছে নিয়ে গিয়েছিল আর সে নিজেকে রক্ষা করা জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেয় নি অর্থাৎ আল্লাহ যে ভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন, তা সে করে নি কিন্তু অনেকটা এরকম পরিস্থিতইতে ইউসুফ(আ) আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।

 ,
আল্লাহর সৃষ্টি নর-নারীর স্বাভাবিক আকর্ষণকে, প্রবৃত্তিকে কাজে লাগিয়ে শয়তান এত দিনের ছোট-ছোট ধোঁকার ফলাফলে বারসিসাকে ব্যাভিচারের মত অনেক বড় গুনাহে লিপ্ত করে ফেলল। এরপরও বারসিসার পথ ছিল। সে তার আল্লাহর বিধানে ফিরে যেতে পারত। বৈধভাবে গ্রহণের পথ তখনও ছিল অথচ সে তা করল না। সে এতদিন অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাসে ভুগছিল আর এই বড় গুনাহের পরে সে লোক-লজ্জার ভয় করতে থাকল, জীবনের ভয় করতে থাকল। ঈমানের চেয়ে তখন তার লোক-লজ্জা আর জীবনই বড় হয়ে গেল। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে শয়তান তাকে দিয়ে আরো বড় বড় দুইটি গুনাহ করিয়ে নিলো। সন্তান ও অসহায় নারীকে হত্যার মত বড় গুনাহ করিয়ে নিলো। এরপরও তার ঈমান বাঁচানোর পথ ছিল, আল্লাহর বিধানে ফিরে যাওয়ার পথ ছিল অথচ সে তার জীবনকেই সব থেকে বেশি মূল্য দিচ্ছিল। কারণ সে তার আল্লাহর বিধান থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল, সে তা থেকে সমাধান খোঁজে নি!
 ,

অন্তিম মূহুর্তে শয়তান তার আসল এবং প্রকৃত উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়নের জন্য আসলো। সে তার ঈমানকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে আসলো। শয়তান নিজেকে সিজদাহ করতে আহবানের মাধ্যমে তাকে পুরোপুরি অবিশ্বাসী তথা কাফির বানাতে আসলো। অথচ তখনও বারসিসার সুযোগ ছিল পরামর্শদাতা হিসেবে শয়তানকে অবিশ্বাস করা এবং তার আল্লাহর বিধান কে গ্রহণ করা যেই এক আল্লাহর উপাসনা সে করত। অথচ জীবনের মায়ায়, আপাত বাস্তবতার তাগিদে সে শেষ বারের মতও শয়তানের মত প্রকাশ্য শত্রু এবং অবিশ্বাসীকে বিশ্বাস করে বসলো এবং শয়তানকে সিজদাহ করে শেষ বারের মত ঈমানের পরীক্ষায় ঈমান শয়তানের নিকট খুঁইয়ে বসলো। একজন অবিশ্বাসী কাফির অবস্থায় শিরকের মত গুনাহ করে বারসিসার মৃত্যুবরণ করে নিতে হল। আর আমরা জানি যে ঈমানহারা তথা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার মানে হল, অনন্তকালের জন্য জাহান্নামের আগুনের জ্বালানি হওয়া।
 ,

শয়তান বারসিসার সাথে যেই নীতিটি অনুসরণ করলো তা হল, বারসিসসার ঈমানের ত্রুটিটিকে পুঁজি করে তাকে ভালো কাজে উৎসাহ দিতে থাকলো। এভাবে সে বারসিসাকে একটি পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেল এবং একটা সময় সে পিছন থেকে তাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিল। বারসিসার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অথবা অভিজ্ঞতা ছিল না। আল্লাহই মূলত তার ঈমানকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। বারসিসা কিন্তু প্রথম অবস্থায় মেয়েটির দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছিল, কেননা তার এই জ্ঞান ছিল যে এই দায়িত্বভার এবং নারী তাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তার ঈমানকে অবশ্যই পরীক্ষা করলেন। সে ফিতনায় পড়ে গেল অথচ আল্লাহ নিকট সাহায্য আর চাইলো না, সাহায্য চাইলো অভিশপ্ত শয়তানের কাছে এবং এতেই সে আল্লাহর নেয়া ঈমানের পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে অকৃতকার্য হয়ে গেল।


ঘটনা থেকে শিক্ষা কি পেলাম?১) শয়তান কখনোই আপনাকে সরাসরি এসে পাপ করতে বলবে না। সে সব সময়ই আপনাকে ভালো ভালো কারণ দেখিয়ে ধোঁকায় ফেলবে, এবং শয়তান আমাদের যে কারো চাইতেই বেশী ধৈর্য্যশীল। কাজেই আমরা সবসময়ই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবো শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
 ,

২) কখনোই ভাববেন না যে আপনার অনেক জ্ঞান আছে, বিচার-বুদ্ধি আছে, শয়তান কিছুতেই আপনাকে ধোঁকায় ফেলতে পারবে না। বরং, প্রকৃত জ্ঞানীরা শয়তানের ফাঁদে পড়ার ভয় সবচাইতে বেশী করে। এই কারণেই আপনি দেখবেন আলেমদের তাকওয়া (আল্লাহভীতি) সবচাইতে বেশী।
 ,
৩) কাহিনীটা নিয়ে চিন্তা করুন। শয়তান যদি প্রথমেই এসে বারসিসাকে বলত – ‘আমাকে সিজদা কর’ – বারসিসা কখনোই তা করতো না। কিন্তু শয়তান তার পরিকল্পনা মাফিক ধীরে ধীরে একটার পর একটা ছোট ছোট ধাপে বারসিসাকে দিয়ে ভুল করিয়ে অবশেষে তাকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেয় যে জীবন রক্ষার তাগিদে সে অবশেষে শিরক করে ফেলে, যে পাপ আল্লাহ কিছুতেই ক্ষমা করবেন না।
 ,
৪) শেষ কথা, আল্লাহ যা করতে আমাদের নিষেধ করেছেন, তা থেকে আমরা বিরত থাকবো। নিজে থেকে যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করব না যে – এটা করলে কি হয়? এ আর এমন কি? আল্লাহ নিষেধ করলে কি হবে দেখতে তো মনে হয় এটা একটা ভালো কাজ! এটা তো ছোট্ট একটা পাপ!
 ,
না, আল্লাহর যে কোন অবাধ্যতাই পাপের পথে নিয়ে যায়, আপাতদৃষ্টিতে পাপটা যত ছোটই হোক না কেন, ছোট পাপই বড় পাপের দিকে টানে, বড় পাপ টানে কুফরীর দিকে।
 ,
বর্তমানের তরুণ-তরুণীদের তথাকথিত “রিলেশনশিপ” শয়তানের এই কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে। মহান আল্লাহ সকলকে শয়তানের ধোঁকা থেকে হিফাজত করুন। আমিন।

 ,
[মূলঃ শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি(রহিমাহুল্লাহ) এর লেকচার থেকে]

রেফারেন্স:

পবিত্র কুরআনের বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর ইবনে কাসিরে সূরা হাশরের ১৬-১৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এই কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
                  <div id=vuukle-emote></div>
                  <div id=vuukle_div></div>
                  <script src=http://vuukle.com/js/vuukle.js type=text/javascript></script>
                  <script type=text/javascript>
                    var VUUKLE_CUSTOM_TEXT = '{ "rating_text": "Give a rating:", "comment_text_0": "Leave a comment", "comment_text_1": "comment", "comment_text_multi": "comments", "stories_title": "Talk of the Town" }';
                    var UNIQUE_ARTICLE_ID = "Please pass the unique article id of the article";
                    var SECTION_TAGS = "tag1, tag2, tag3";
                    var ARTICLE_TITLE = "Please pass the title or heading of the story";
                    var GA_CODE = "UA-123456";
                    var VUUKLE_API_KEY = "8d9d0fe2-28fd-4072-b10e-c1793a5f00a9";
                    var TRANSLITERATE_LANGUAGE_CODE = "en";
                    var VUUKLE_COL_CODE = "148aa3";
                    var ARTICLE_AUTHORS = btoa(encodeURI('[{"name": "name one", "email":"some_mail@site.com","type": "internal"}, {"name":"name two", "email":"some_other_mail@site.com","type": "external"}]'));
                    create_vuukle_platform(VUUKLE_API_KEY, UNIQUE_ARTICLE_ID, "0", SECTION_TAGS, ARTICLE_TITLE, TRANSLITERATE_LANGUAGE_CODE, "1", "", GA_CODE, VUUKLE_COL_CODE, ARTICLE_AUTHORS);
                  </script>
               

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

অসাধারণ শিক্ষামূলক পোষ্ট

খালিদ সাইফুল্লাহ বলেছেন...

ধন্যবাদ

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages