LIFE OF BIN LADEN--বিশ্ব মৌলবাদী সন্ত্রাসের নেপথ্য নায়ক --বিন লাদেন --জীবনের কিছু স্মৃতি।--পর্ব--(১৫) - khalid Saifullah

khalid Saifullah

আল্লাহর তরবারী

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭

LIFE OF BIN LADEN--বিশ্ব মৌলবাদী সন্ত্রাসের নেপথ্য নায়ক --বিন লাদেন --জীবনের কিছু স্মৃতি।--পর্ব--(১৫)

মোবারক হত্যা চক্রান্তের মতো ইসলামাবাদের বোমা বিস্ফোরণ অভিযানটিও কড়া নিয়ন্ত্রণ ও গোপনিয়তার মধ্যে পরিকল্পিত ও বাস্তবায়িত হয়। জেনেভা থেকে আইমান- আল-জাওয়াহিরি এবং লন্ডন থেকে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ইয়াসির তৌফিক সিড়ি একাজের তত্ত্বাবধান ও অর্থসংস্থান করেছিলেন। ঘটনার চারদিন আগে ১৫ নভেম্বর সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত মিসরের দু’নম্বর কূটনীতিক আলা আলদীন নাজমীকে তারা গুপ্তঘাতক দিয়ে হত্যা করে। নাজমী কূটনীতিকের পোশাকে আসলে ছিলেন গোয়েন্দা অফিসার এবং তিনি জেনেভায় জাওয়াহিরির গোপন আশ্রয়স্থলের সন্ধান করছিলেন। মিসরীয় দূতাবাসে বিস্ফোরণের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে ছিল মোবারক সরকারের বিরুদ্ধে মিসরের ইসলামী জিহাদীদের দ্রুত প্রসারমাণ সংগ্রামের অংশ। কিন্তু তার জন্য স্থান হিসাবে ইসলামাবাদকে বেছে নেয়া হয়েছিল কেন? এটা ঠিক যে মিসরীয় ইসলামী জিহাদীদের পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পেশোয়ারে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ছিল। তাছাড়া বেশ কিছু সিনিয়র মিসরীয় জিহাদী কাশ্মীরী মুজাহিদদের শিবিরে এবং হরকত-উল-আনসারের মতো আন্তর্জাতিক ইসলামী সংগঠনসমূহের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছিল।

সুতরাং এসব ঘাঁটি বা প্রতিষ্ঠানের যে কোন একটা থেকে ইসলামাবাদে মিসরীয় দূতাবাসে অভিযান চালানো অনেক সহজ ও সুবিধাজনক ছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে এই ইসলামী জিহাদীরা পাকিস্তানে ছিল অতিথি। সেখানে তাদের আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সুতরাং যারা তাদের আতিথ্য দিয়েছে, সাহায্য সহায়তা দিয়েছে তাদেরই রাজধানীর বুকে এরকম আঘাত হানা অত্যন্ত অর্থহীন ও দৃষ্টিকটূ লাগার কথা। তাছাড়া অন্যান্য দেশের ইসলামী সংগঠনের মতো মিসরীয় সংগঠনের শিবির ও স্থাপনাগুলোও ছিল আইএসআই এর কড়া নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে। কাজেই আইএসআই’ এর চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিছু করা তাদের পক্ষে মোটেই সম্ভব ছিল না। তদুপরি আইএসআই এর সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে সিনিয়র মিসরীয় মুজাহিদ কমান্ডারদের অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। একটা বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য তারা সেই সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলার ঝুঁকি নেবে এটা খুবই অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক।

২৫ জুনের বোমা বিস্ফোরণ যেসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে ঘটেছিল তার একদিকে ছিল আল সৌদ রাজপরিবারের অভ্যন্তরে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং অন্য দিকে এই পরিস্থিতি থেকে ফায়দা লোটার জন্য ইরানের মরিয়া প্রচেষ্টা। রাজ পরিবারের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব জিহাদী হামলার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়। হামলায় অংশগ্রহণকারী দলটি আফগান ও বলকান অঞ্চলের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ সৌদি জিহাদীদের নিয়ে গঠিত হলেও এবং ওসামা বিন লাদেনের সাহায্যপুষ্ট হলেও তারা ছিল ইরানী গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নিয়ন্ত্রণে। তেহরানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ ছাড়া এই অভিযান তারা চালাতে পারত না। আল-খোবারের বিস্ফোরণের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ছিল আল-সৌদ রাজপরিবারকে ক্ষমতাচ্যুত করা কিংবা নিদেনপক্ষে এর ভিতরকে নড়বড়ে করে দেয়ার লক্ষ্যে ধারাবাহিক জিহাদী অভিযানের প্রথম পদক্ষেপ। অভিযানটি শিয়া ইরানের দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হলেও এটি সৌদি সুন্নী মুজাহিদদের দিয়ে সংগঠিত করা হয়। প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো স্থানীয় নেটওয়ার্ককে দিয়ে করা হয়। বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আনা হয় বেকা উপত্যকা এবং দামেস্কের কাছে সিরীয় ও ইরানী গোয়েন্দা বাহিনীর মজুদ থেকে। তৃতীয়ত, সুদক্ষ জিহাদীদের যাদের অীধকাংশই ছিল শিয়া ও ইরানী। দাহরানে আগমন শুরু হয় প্রস্তুতি পর্বের শেষ দিকে। এরা ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান কিংবা বসনিয়া-হারজেগোভিনার ঘাঁটি থেকে তৃতীয় দেশ হয়ে সৌদি আরবে আসে। এরাই ট্যাঙ্কার বোমা তৈরিসহ বোমা বিস্ফোণের আসল কাজটা করে। বিস্ফোরণটা ঘটায় সৌদিরা।

ওসামা বিল লাদেন আল-খোবারের অভিযানের প্রধান দিকগুলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রাজতন্ত্রবিরোধী সৌদি ইসলামী র‌্যাডিক্যালদের সঙ্গে সংস্রব থাকার কারণে তিনি যেমন তাদের সরল দিকগুলো জানতেন তেমনি জানতেন দুর্বল দিকগুলোও। অন্যদিকে রিয়াদের ক্ষমতার লড়াইয়ের ভিতরের গতি-প্রকৃতিও তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা এই অভিযান পরিচালনায় যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। আল-খোবারের জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ ছিল শিয়া এবং তারা ইরানের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিল। তবে নিরাপত্তার কারণে প্রাথমিক সাংগঠনিক কাজগুলো স্থানীয় সুন্নীদের দিয়ে করা হয়; যারা ছিল বিন লাদেনের অনুগত।

পরবর্তীকালে ১৯৯৬ সালের প্রথমদিকে সৌদি আরবের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েক ডজন সৌদি সুন্নী র‌্যাডিক্যাল যুবকদের রিক্রুট করে বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহ (!) শিবিরগুলোতে জিহাদ ও গুপ্ত তৎপরতার ওপর চার থেকে ছয় সপ্তাহের কোর্স করতে পাঠানো হয়। শিক্ষা লাভ শেষে তারা সিরিয়া ও জর্দান হয়ে সৌদি আরবে ফিরে আসার পর তাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। এরা বিস্ফোরণের কয়েক মাস আগে থেকে পেশাদারী গুপ্তচরবৃত্তি চালায়। এদের কেউ কেউ আল-খোবার সেনাছাউনির চার পাশটা আস্তে করে গাড়ি চালিয়ে ঘুরে দেখে। কেউ কেউ দূর থেকে বাইনোকুলার দিয়েও দেখে। একবার একটা ট্রাক ছাউনির চারপাশের বেড়া কত শক্ত যাচাই করার জন্য বেড়ার এক জায়গায় ধাক্কা লাগায়। বিস্ফোরণের দু’সপ্তাহ আগে বোমাবাহী ট্যাঙ্কারের ঠিক অনুরূপ একটি ট্যাঙ্কারকে কম্পাউন্ডে ঢোকার চেষ্টা করতে এবং তার পর চারপাশটা চক্কর মেরে যেতে দেখা গেছে। এসব ঘটনা ছিল বেমা বিস্ফোরণের আগের মাসগুলোয় পরিচালিত পর্যবেক্ষণ ও গোয়েন্দা তৎপরতার অতিসমান্য অংশমাত্র। এ ধরনের তৎপরতা সৌদি আরবের অন্যান্য স্থানেও সম্ভাব্য টার্গেটগুলোকে লক্ষ্য করে পরিচলিত হয়।

 চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয় ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে। এ সময় ইরানী গোয়েন্দা আফিসাররা সৌদি আরবে এসে প্রস্তুতির সব কিছু দেখেশুনে সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে যান। ১৯৯৬ এর মে মাসে দু’ধরনের সুদক্ষ জিহাদী সৌদি আরবে আসে। প্রথম দফায় আগতদের বেশির ভাগই ছিল সৌদি হিজবুল্লাহ (!) (শিয়া), সুন্নী আফগান, বলকান ও অন্যান্য। এরা ইরান, আফগানিস্তান-পাকিস্তান এবং বসনিয়া-হারজেগোভিনার ঘাঁটি থেকে সৌদি আরবে আসে। এরা এক সঙ্গে দু’ তিনজনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আসে। এরা অভিযান পরিচালনার স্থান এবং বিকল্প টার্গেটগুলো দেখে নেয়। দ্বিতীয় জিহাদী দলটি জুনের প্রথম দিকে দাহরানে আসতে শুরু করে। এরা বেশির ভাগই ছিল শিয়া। সঙ্গত কারণেই স্থানীয় নেটওয়ার্কের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ ঘটেনি।

অভিনব কৌশল তাকিয়ে ছিল বিশ্ব

জুন মাসের মধ্যে বোমা তৈরির অধিকাংশ উপকরণ- উচ্চশক্তির বিস্ফোরক, দাহ্য প্রদার্থ ও অত্যাধুনিক ফিউজ সৌদি আরবে এসে যায়। বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ সিরিয়া থেকে জর্দান হয়ে আসে। অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও ফিউজগুলো পশ্চিম ইউরোপ থেকে কম্পিউটার পার্টস নাম দিয়ে চোরাচালান করে আনা  হয়। ফিউজসহ মূল চালানের কিছু কিছু অংশ সৌদি ন্যাশনাল গার্ডের ঠিকানায় আনা হয়েছিলো। ন্যাশনাল গার্ডের অভ্যন্তরে ইসলামী জিহাদীদের সমর্থক ছিল। তারাই এগুলো গ্রহণ করে লুকিয়ে রাখে। মধ্য জুনের আগেই আল-খোবার এলাকার ওপর অনুপুঙ্খ নজরদারির কাজ শেষ হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে স্থানীয় নেটওয়ার্ক একটা ক্যাপ্রিস গাড়ি চুরি করে রেখেছিল। সেটি পরে পালানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। 

ওটা পরে দাহরান থেকে ছয় মাইল দূরে দাম্মামে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো। বোমা বিস্ফোরণের কাজে ব্যবহৃত হয় মার্সিডিজ বেঞ্জ ট্যাঙ্কার ট্রাকটি ঘটনার মাত্র ক’দিন আগে একটি নির্মাণ কোম্পানীর গ্যারেজ থেকে চুরি করে নেয়া হয়। তার অর্থ, অভিযানের সামান্য আগেই বোমা তৈরির কাজে হাত দেয়া হয়েছিল। বিস্ফোরকের সঙ্গে তৈল ও দাহ্য পদার্থের মিশ্রণে এর বিধ্বংসী ক্ষমতা বহু গুণ বেড়ে গিয়েছিল। এ ধরণের বোমা সাধারণত ইরানী জিহাদীরা ব্যবহার করে থাকে। প্রস্তুতি সম্পন্ন করার অল্প পরই, খুব সম্ভবত অভিযানের আগে এক্সপার্ট জিহাদীরা দাহরান ত্যাগ করে। বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজটা তারা সৌদি জিহাদী হিজবুল্লাহ (!) সদস্যদের একটি ক্ষুদ্র দলের হাতে ছেড়ে দেয়। বলাবাহুল্য, সে কাজে তারা ব্যর্থ হয়নি।       

সৌদি রাজপরিবারে ক্ষমতাদ্বন্দ্বের অন্তরালে

১৯৯৫ সালের শেষদিকে বাদশাহ ফাহাদ বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। যুবরাজ প্রিন্স আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের অস্থায়ী শাসক মনোনীত হন। এই নিযুক্তি গোটা আল সৌদ রাজপরিবারের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টির কারণ ঘটায়। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে বাদশাহ ফাহাদ আবার নিজের হাতে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি সিংহাসন ত্যাগ করে প্রবাসে যেতে অস্বীকৃতিই শুধু জানালেন না, আমৃত্যু ক্ষমতা ধরে রাখার ইচ্ছাও ব্যক্ত করলেন। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে প্রিন্স আব্দুল্লাহর অবস্থান এমনিতেই অনিশ্চিত ছিল; সেটা আরও বেশি অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ালো। ওদিকে বাদশাহ ফাহাদের মৃত্যুসম্ভাবনাকে সামনে রেখে উত্তরাধিকারের লড়াই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠল। ১৯৯৫-৯৬ সালে সৌদি সিংহাসনের দখল নিয়ে আল-সৌদ পরিবারের অভ্যন্তরে তিনটি পৃথক পৃথক উপদলের মধ্যে লড়াই চলছিল। এগুলো হলো- 


(১) ক্রমবর্ধমান হারে একঘরে হয়ে পড়া প্রিন্স আব্দুল্লাহ (২) প্রিন্স বন্দরের নেতৃত্বে সুদাইরির তরুণ বংশধররা, যাদের পিছনে প্রিন্স বন্দর ও প্রিন্স সুলতানের পূর্ণ সমর্থন ছিল এবং (৩) বাদশাহ ফাহদের অপর দুই আপন ভায়ের নেতৃত্বাধীন সালমান-নাইফ গ্রুপ, যারা সমঝোতার ব্যবস্থা হিসাবে প্রিন্স সালমানকে বাদশাহ করতে চাইছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে, বাদশাহ ইবনে সৌদের প্রিয়তমা স্ত্রী হাসা-আল-সুদাইরির গর্ভজাত সাত পুত্র ছিল। বাদশাহ ফাহাদ ও অপর ছয় ভাই পরস্পরের খুব ঘনিষ্ঠ। অন্যদিকে প্রিন্স আব্দুল্লাহ হচ্ছেন তাদের বৈমাত্রেয় ভাই। তথাপি উত্তরাধিকার বিধান অনুযায়ী প্রিন্স আব্দুল্লাহরই পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার কথা। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে বাদশাহ ফাহাদের স্বাস্থের অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটেছে জেনে বাদশাহর আপন তিন ভাই সুলতান, সালমান ও নাইফ নিজেদের অবস্থানের শক্তি বৃদ্ধির জন্য জোট বাঁধেন। প্রিন্স আব্দুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে অস্থায়ী বাদশাহ হওয়ার পর সুদাইরির পুত্র ও পৌত্ররা মিলে তাঁকে ভবিষ্যতে সিংহাসনে বসতে না দেয়ার জন্য একাট্টা হয়ে ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকেন। 

১৯৯৬ সালের প্রথমদিকে এই ষড়যন্ত্র তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু সুদাইরি পুত্রদের দু’টি উপদলের মধ্যে ব্যবধান বেড়ে চলে। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে আব্দুল্লাহ উপসাগরীয় শীর্ষ বৈঠকে যোগদানের জন্য মাস্কটে গেলে সুদাইরি পুত্ররা একটা শান্তিপূর্ণ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স সুলতান সুপ্রীম কাউন্সিল অব উলামা’র সদস্যদের তলব করে তাদের সমর্থন দাবি করেন, যাতে তিনি নিজেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করতে পারেন। প্রিন্স সুলতান ১৯৯৫ এর নভেম্বরে রিয়াদের বোমা বিস্ফোরণ ঘটনার জন্য প্রিন্স আব্দুল্লাহকে ন্যাশনাল গার্ডে’ প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারেও উলামাদের সমর্থন কামনা করেছিলেন। বলেছিলেন যে, প্রিন্স আব্দুল্লাহ ন্যাশনাল গার্ডের আনুগত্য সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।প্রিন্স সুলতানের এসব উদ্যোগ অবশ্য অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছিল। কারণ তিনি উলামাদের সমর্থন আদায় করতে পারেননি। উলামা সম্প্রদায় তাঁকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি সিংহাসনে বসার অনুপযুক্ত। শুধু তাই নয়, তার তাঁর এই ষড়যন্ত্রের কথা প্রিন্স আব্দুল্লাহকেও জানিয়ে দিয়েছিল।

অন্যদিকে প্রিন্স আব্দুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। উলামাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকা সমর্থন করতেন। প্যান আরব ও প্যান ইসলামিক সংগ্রামেরও সমর্থক ছিলেন। তার মধ্যে খানিকটা পাশ্চাত্যবিরেধিতা ছিল। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে অবিশ্বাসের চোখে দেখতেন। এসব কারণে তিনি উলামা সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক মিত্র ছিলেন। তবে সুদাইরিভ্রাতাদের তরফ থেকে তার ক্ষমতার প্রতি ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবালায় শুধু উলামা সম্প্রদায়ের সমর্থনই যথেষ্ট ছিল না। এ জন্য তাকে আরেকটা পথও দেখতে হয়েছিল। সেই সমর্থনটা তিনি পেয়েছিলেন দামেস্ক থেকে বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের পরিবার তথা আসাদ ক্লানের সাথে প্রিন্স আব্দুল্লাহর এক বিচিত্র ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ১৯৯৬ সালের বসন্তের প্রথম দিকে প্রিন্স আব্দুল্লাহর ইনার সার্কেলের কিছু সদস্য সুদাইরিভ্রাতাদের পতন ঘটানোর পরিকল্পনা নেয়। ঠিক হয় যে সিরীয় গোয়েন্দা সংস্থা ছোটখাটো ধরনের বেশকিছু মার্কিন বিরোধী সন্ত্রাসবাদী অভিযান চালাবে এবং তার জন্য দোষ চাপানো হবে বিভিন্ন ইসলামী জিহাদী সংগঠনের নামে। সন্ত্রাসবাদের এই আকস্মিক জোয়ারে ভারি বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে সুদাইরিরা।

 কারণ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব তাদেরই হাতে। প্রথমটি প্রিন্স নাইফের এবং পরেরটি প্রিন্স সুলতানের। তাদের এই ব্যর্থতার জন্য আমেরিকাও নাখোশ হবে। ফলে তাদের প্রতি মার্কিন সমর্থন কমবে। এ অবস্থায় তারা সৌদি সিংহাসনের জন্য আর উপযুক্ত বলে গণ্য হবে না। অন্যদিকে প্রিন্স আব্দুল্লাহর পরিচালনাধীন রয়াল গার্ড তথাকথিত “জিহাদী নেটওয়ার্ককে” ধ্বংস করে দেবে। এতে আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি দুটোই বৃদ্ধি পাবে। সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীতে তার ঘনিষ্ঠতম সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট আসাদ ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসব কার্যক্রম শুরু করার সবুজ সঙ্কেত দেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে প্রিন্স আব্দুল্লাহর পাশে সিরিয়ার এভাবে এসে দাঁড়ানোর ব্যাপারটা একটা বদান্যতা। কিন্তু এখানে বদান্যতার ব্যাপার নেই। যা আছে সেটা হলো আদান-প্রদান। বিভিন্ন ইস্যুতে বাদশাহ ফাহাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আসাদের গভীর বিরোধ থাকলেও প্রিন্স আব্দুল্লাহ যখন অস্থায়ী বাদশাহ ছিলেন সে সময় সিরিয়া সৌদি আরবের কাছ থেকে বিশেষ আর্থিক সাহায্য লাভ করে, যার পরিমাণ বেশ কয়েক বিলিয়ন ডলার। তা ছাড়া সামরিক ক্ষেত্রেও প্রিন্স আব্দুল্লাহ সিরিয়াকে বিপুল সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কাজেই সিরিয়া প্রিন্স আব্দুল্লাহর বিপদের সময় এগিয়ে আসবে এতে তেমন আশ্চর্যের কিছু ছিল না। 

সৌদি প্রিন্সদের ক্ষমতাদ্বন্দ্বের শিকার হলেন লাদেন

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের সবুজ সঙ্কেত এলো। আর সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরবে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার প্রস্তুতি নিল সিরীয় গোয়েন্দা বাহিনী। টার্গেট নির্বাচন করা হলো প্রধানত মার্কিন সামরিক স্থাপনা। সন্ত্রাসবাদীদের সৌদি আরব পাঠানো হলো। পাঠানো হলো অস্ত্র ও বিস্ফোরক। এ কাজে সাহায্য করল ইরান। আর ব্যবহার করা হলো জর্দানের ভূখন্ড। তবে অঘটন যে কিছু ঘটল না তা নয়। ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে সিরিয়া ও জর্দান হয়ে আসা একটি সৌদি নম্বর প্লেট লাগানো গাড়ি আটকে দেয়া হলো সৌদি-জর্দান সীমান্তের ক্রসিং পয়েন্ট। নানা ধরনের মোট ৮৪ পাউন্ড ওজনের উচ্চশক্তির বিস্ফোরক ছিল ওতে। এর আগে রিয়াদের ১৩ নভেম্বরের বিস্ফোরণ ঘটনায় জড়িত হাসান আল-স্যারে নামে এক সৌদি নাগরিক পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল।

 তাকে ওখান থেকে ধরে এনে অনেক গোপন তথ্য বের করে ফেলে সৌদি গোয়েন্দারা। তার কাছ থেকে জানতে পারে সৌদি আরবে অস্ত্রশস্ত্র ও লোকলস্কর আনার জন্য কোন পথটি ব্যবহার করেছিল জিহাদীরা।এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে একদিকে যখন সৌদি আরবে জিহাদী হামলার আশঙ্কা বাড়ছিল। অন্যদিকে তখন এই ঘটনাগুলোকে সৌদি রাজপরিবারের ক্ষমতাদ্বন্দ্বে ব্যবহার করছিল বিভিন্ন পক্ষ। অবশ্য এক এক পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একেক রকম। প্রিন্স সুলতান, প্রিন্স সালমান ও প্রিন্স নায়িফ প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান সংহত করার চেষ্টায় এই ঘটনাগুলো নিয়ে প্রচারযুদ্ধ চালাতে লাগলেন। তাতে দেখা গেল সৌদি রাজপরিবারে সালমান-নায়িফ পক্ষের-শক্তি বেশ বেড়ে গেছে। সেটা এতই বেড়েছে যে, এই পক্ষের ক্ষমতায় যাওয়ারও জোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে শঙ্কিত হয়ে প্রিন্স সুলতান তখন একটা চাল চাললেন। তিনি জানতেন যে, রিয়াদের শাসকচক্রের একটা মহলের পক্ষ থেকে প্রিন্স সালমান গোপনে বিল লাদেনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। উদ্দেশ্য বিন লাদেন ও তার বাহিনীকে সৌদি আরবের বাইরে জিহাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে প্ররোচিত করা। এ জন্য ঐ মহলটি বিন লাদেনের পিছনে বেশ টাকাপয়সা ঢালত তার ইসলামী বিপ্লব সাহায্য করার নামে। লাদেন আবার কখন সৌদি আরবের দিকে নজর দিয়ে বসেন সেটাই ছিল তাদের ভাবনার বিষয়। প্রিন্স সালমান-নায়িফ উপদলটিকে কোণঠাসায় ফেলার জন্য ১৯৯৬ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে প্রিন্স সুলতান বাদশাহ ফাহাদের নামে একটা অনুরোধ জানান সুদানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল বসিরের কাছে।

 জেনারেল বসির তখন হজ্জ করতে মক্কায় এসেছিলেন। প্রিন্স সুলতানের অনুরোধটা ছিল এই যে, বিন লাদেনকে সুদান থেকে বের করে দিতে হবে। বিনিময়ে সৌদি আরব সুদানকে বিপুল আর্থিক সাহায্য দেবে।প্রেসিডেন্ট বসিরের  মে মাসের মাঝামাঝি  বিন লাদেন ও তার সহচরদের সুদান থেকে বহিস্কারের আদেশ দেন। প্রিন্স সুলতানের প্রভাবাধীন সৌদি পত্রপত্রিকায় সুদান থেকে লাদেনের বহিস্কারকে সৌদি কূটনীতির বড় ধরনের বিজয় এবং সৌদি আরবের অভন্তরীণ নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান বলে অভিনন্দিত করা হয়। 
  
এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রিন্স সুলতানের উপদলটির শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং প্রিন্স সালমান-নায়িফ উপদলটি খানিকটা কোণঠাসা হয়। কিন্তু উলামাদের সঙ্গে সংঘাত বাধায় এবাং তাদের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় প্রিন্স সুলতান শেষ পর্যন্ত সিংহাসনের দাবি পরিত্যাগ করেন। বরং তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান যাতে পরবর্তী সৌদি বাদশাহ হতে পারে তা নিশ্চিত করতে নিজের সর্বশক্তি নিয়োগে লেগে যান। প্রিন্স সুলতান তরুণ প্রজন্মের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনার জন্য রিয়াদে সুদাইরীর পক্ষের সকল প্রবীণ ও নবীন সদস্যের জরুরী বৈঠক ডাকেন। প্রিন্স সুলতান তরুণ শাহজাদাদের হুঁশিয়ার করে দেন যে, তার পিছনে সবাই একাট্টা হয়ে না দাড়ালে তারা সমস্ত ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা হারাবে। সোজা কথায় একটা সুদৃঢ় ঐক্যফ্রন্ট রচনা করতে হবে। বৈঠকে প্রিন্স সুলতান জানান যে, প্রিন্স আব্দুল্লাহ অচিরেই ক্ষমতায় আসছেন।

 তখন সুদাইরীদের ক্ষমতা-প্রতিপত্তি নিশ্চয়ই খর্ব হবে। তবে আব্দুল্লাহর যা বয়স তাতে তার শাসনকাল হবে একটা ক্রান্তিকাল মাত্র। সুতরাং সুদাইরীদের সামনে আসল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের শাহাজাদাদের জন্য ক্ষমতা দখল করা ও তা ধরে রাখা। প্রিন্স সুলতান সোজা কথায় বলতে চাইলেন যে, তার ছেলে প্রিন্স বন্দরকে ঘিরেই যেন পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে ওঠে এবং এ ব্যাপারে যেন সবাই সমর্থন জানায়। প্রিন্স সুলতান তার এই উদ্যোগের পিছনে বাদশাহ ফাহাদের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হলেন। এর কিছুদিন পরই দ্বিতীয় প্রজন্মের শাহজাদাদের যৌথ নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান এবং বাদশাহর পুত্র প্রিন্স মোহাম্মদ বিন ফাহাদের মধ্যে একটা গোপন চুক্তি হয়। চুক্তির প্রতি তাদের দু’জনের পিতার বাদশাহ ফাহাদ ও প্রিন্স সুলতানের সমর্থন ছিল। প্রিন্স বন্দর এরপর থেকে নিজেকে বাদশাহর প্রিয়পাত্রে পরিণত করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। ক্ষমতার সুতীব্র লড়াইেয়ের মধ্যে তিনি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে নেন। 

এসব সুবিধার মধ্যে একটি ছিল রাজকীয় গ্যারান্টি, যে গ্যারান্টিবলে তিনি আব্দুল্লাহর ভাবী রাজদরবারে এমন উচু পদ পাবেন যেখান থেকে সিংহাসন দখল করা সহজ হবে। মে মাসে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, প্রিন্স সুলতানের উপদলটি কার্যত এই গ্যারান্টি দিতে সক্ষম হয় যে, দ্বিতীয় প্রজন্মের সুদাইরীদের মধ্যে শীর্ষস্থানটিতে থাকবেন পিন্স বন্দর অন্য কেউ নন। এমনকি প্রাক্তন বাদশাহ ফয়সালের দুই পুত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স সৌদ আল ফয়সাল এবং গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সালও নন। মে মাসের শেষ দিকে প্রিন্স সালমান-নায়িফ উপদলটির ক্ষমতা সহসা বেড়ে যাওয়ায় প্রিন্স বন্দর ও প্রিন্স মোহাম্মদ তাদের পরিকল্পনাকে তরান্বিত করে তোলেন। 

তালেবানরা বিন লাদেনকে কিভাবে নিল

ওসামা বিন লাদেনের আফগানিস্তানে অবস্থান সম্ভব হয়েছে তালেবানদের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য। এই সমর্থন না পেলে তার কি পরিণতি হতো কিছুই বলা যায় না। বৈরী শক্তির হাতে ধরা পড়া বা নিহত হওয়ার তার সমূহ আশঙ্কা ছিল। লাদেন আফগানিস্তানে আসেন ১৯৯৬ সালে মে মাসে। আর তালেবানরা কাবুল দখল করে সে বছরের সেপ্টেম্বরে। অবশ্য কাবুল দখলের বেশ আগেই তালেবানরা আফগানিস্তানের প্রধান সামরিক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী জিহাদে বিন লাদেনের অবদানের কথা ভালভাবেই জানা ছিল তালেবানদের।তদুপরি লাদেনের বিশ্বব্যাপি ইসলামী জিহাদের দৃষ্টি ভঙ্গির সঙ্গে তালেবানদের দৃষ্টিভঙ্গিরও অনেক দিক দিয়ে মিল ছিলো। তালেবানরাও বিশ্বজুড়ে সীমান্তমুক্ত ইসলামী সমাজ কায়েমের কথা বলে এসেছে। তাই লাদেনকে সর্বাত্মক সমর্থন প্রদানে তালেবানদের ওয়াদাবদ্ধ থাকাই স্বাভাবিক।

 তালেবানরা লাদেনের সঙ্গে তাদের প্রথম সাক্ষাতের পূর্বে থেকেই সহমর্মিতা ও সংহতির পরিচয় দিয়েছে। তালেবানদের একটি প্রতিনিধি দল জালালাবাদে লাদেনের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেখানে লাদেনের প্রতি বিপুল সম্মান ও মর্যাদা দেখিয়ে এক তালেবান কমান্ডার বলেন: হে শেখ! আমাদের এই ভূখ- আফগান ভূখন্ড নয়, এ ভূখন্ড আল্লাহর। আমাদের জিহাদও আফগানদের জিহাদ নয়, বরং সকল মুসলমানদের জিহাদ। তোমার অনুগত শহীদরা আফগানিস্তানের প্রতিটি অঞ্চলেই ছড়িয়ে আছে, তাদের কবরই তার স্বাক্ষর। তুমি যে মাটির উপর দিয়ে হেটে যাও সেটাকে আমরা পবিত্র বলে জ্ঞান করি। লাদেনের প্রতি এ ছিল তালেবানদের সুগভীর অনুভূতির প্রকাশ। একারণে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের হুমকি, ভয়ভীতি ও প্রলোভন সত্ত্বেও আফগানিস্তানে তাঁর নিরাপদ আশ্রয় সম্ভব হয়েছিল। তালেবানরা আফগানিস্তানের মাটিতে লাদেনের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে অন্য আর কোন বিষয়ের প্রতি নজর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু করেছিল তাদের তৎকালিন নেপথ্য চালিকা শক্তি পাকিস্তানের আইএসআই। লাদেনকে নিয়ে যাতে সৌদি নেতৃবৃন্দের সাথে বড় ধরনের কোন বিরোধে জড়িয়ে পড়তে না হয়, বিচক্ষণ আইএসআই কমান্ডাররা তা নিশ্চিত করতে বড়ই ব্যস্ত ছিলেন। 

১৯৯৭ সালে এপ্রিল মাসে সৌদি গোয়েন্দা প্রধান তুর্কী আল-ফয়সাল বেশ কয়েকবার আইএসআই-এর কাছে অভিযোগ করেন যে, সৌদি আরবে বিভিন্ন জিহাদী ঘটনার সঙ্গে লাদেন জড়িত ছিলেন। এথেকে আইএসআই  ধরে নেয় যে, সৌদি আরব লাদেনকে ফেরত চাইতে পারে। ফেরত চাইলে তাকে ফেরত দিতেই হবে এমন ধারণার বশবর্তি হয়ে আইএসআই তালেবানদেরই একটি দলকে দিয়ে লাদেনকে কান্দাহারে শিথিলভাবে গৃহবন্দি করে রাখে। কিন্তু ক’দিন পর পাকিস্তানে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আনুষ্ঠানিকভাবে জানান যে, “বিন লাদেন সৌদি আরবে কোন অপরাধ করেননি এবং সৌদি আরবও তাকে কখনো গ্রেফতারের দাবি জানায় নি”। ব্যাপারটা অতিব লক্ষণীয় যে, তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তালেবান নেতৃবৃন্দ ও আইএসআই হাই কমান্ডের সঙ্গে প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সালের সঙ্গে কয়েক ডজনবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কখনই তিনি বা সৌদি সরকারের অপর কোন প্রতিনিধি এ বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। কিংবা বিকল্প কোন বক্তব্যও দেননি। 

সৌদি রাজতন্ত্র সম্পর্কে বিন লাদেন

ব্রিটেনের “দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট” পত্রিকার সাংবাদিক রবার্ট ফিস্কের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বিন লাদেন তাঁর সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধাচরণ করার কারণগুলো ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, উপসাগর যুদ্ধের অজুহাতে আমেরিকাকে সৌদি আরবে ঘাঁটি গেড়ে বসতে দেয়া ছিল প্রধানতম কারণ। তবে আল-সৌদ রাজপরিবারের সঙ্গে তার যেটুকুবা ঘনিষ্ঠতা ছিল জনপ্রিয় উলামা শেখ উদাহ ও তার সমর্থকদের গ্রেফতারের পর সেটুকুও শেষ হয়ে যায়। বিন লাদেন বলেন যে, শেখ উদাহকে কারাগারে পাঠানোর মধ্য দিয়ে আল- সৌদ রাজপরিবার দেশ শাসনের বৈধতা হারিয়ে ফেলেছে।
 ---চলমান।

কোন মন্তব্য নেই:

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages