পশ্চিমা বিশ্ব এবং মুসলিম বিশ্বে তাদের অন্ধ অনুসারীরা ইসলামকে আক্রমণ করার সময় কয়েকটা ধরাবাঁধা আর্গুমেন্ট ব্যবহার করে। এগুলোর বেশীরভাগই হল প্রাচ্যবিদ বা ওরিয়েন্টালিস্টদের দ্বারা ব্যবহৃত নানা বস্তাপচা যুক্তি, যেগুলোকে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং তথ্যগত ভাবে ভুল। যুক্তিগত বা নৈতিক উৎকর্ষ না, ফ্যাকচুয়াল অ্যাকিউরিসি না, এই আর্গুমেন্টগুলোর মূল চালিক শক্তি হল এগুলোর ইনবিল্ট ইসলামবিদ্বেষ।
দুঃখজনক আমাদের সমাজে এরকম মানুষের অভাব নেই যারা হাসি মুখে এবং খুশি মনে পশ্চিমা বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক গোলামীকে মেনে নিয়েছেন। পশ্চিমাদের যেকোন দাবি তারা বিনাবাক্য ব্যয়ে মেনে নিতে রাজি। এই কারণে আর্গুমেন্টগুলোর প্রচার আমাদের শিক্ষিত সমাজের মধ্যেও বেশ ভালো মতোই হয়েছে।
ইসলামবিদ্বেষীদের এরকম একটি আর্গুমেন্ট হল মরাল সুপিরিওরিটি-র আর্গুমেন্ট। পশ্চিমা উদারনৈতিক চিন্তাধারা [Liberalism] এবং সেক্যুলারিসমকে নৈতিকভাবে ইসলামের চাইতে শ্রেষ্ঠতর দাবি করা। লিবারেলিসম আর সেক্যুলারিসমের এথিকাল সিস্টেমকে ইসলামের দেয়া নৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর দাবি করা। ইসলামবিদ্বেষীরা দুই ভাবে এই দাবির পক্ষে যুক্তি দেয়ার চেস্টা করে।
প্রথমত তারা ইসলামকে আক্রমণ করে। “ইসলাম নারী স্বাধীনতা দেয় না, ইসলাম চোরের হাত কাটতে বলে, ইসলাম অমানবিক, ইসলাম বর্বর, ইসলাম চারটা বিয়ের অনুমতি দিয়েছে, ইসলামে বাক স্বাধীনতা নেই, ইসলামের জিহাদের কথা আছে...” এরকম বিভিন্ন কথা বলে। এটা হল নৈতিক ভাবে ইসলাম অধম এটা প্রমাণ করার জন্য চেস্টা। দ্বিতীয়ত, তারা বিভিন্ন ভাবে প্রমাণ করার চেস্টা করে কেন তাদের দর্শন এবং নৈতিক চিন্তাধারা উন্নততর। তারা কত নৈতিক, তারা কত উদার, তারা নীতির প্রশ্নে কতোটা আপোষহীন, তারা মানবাধিকারে কত বিশ্বাসী, মানবতার ধারকবাহক – এসব ব্যপারে বিভিন্ন দাবি করে। আমরা সবাই এদুটো অ্যাপ্রোচের সাথেই পরিচিত। আমরা সবাই কমবেশী এই আর্গুমেন্টগুলো শুনেছি। অনেকে হয়তো কিছুটা প্রভাবিতও হয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা কি আসলে পশ্চিমাদের, এবং তাদের বাদামী চামড়ার অন্ধ অনুসারীদের এই বক্তব্যগুলোকে সমর্থন করে?
কোন জাতি বা সভ্যতা কতোটা নৈতিক এটা পরিমাপ করার একটা ভালো উপায় হল সেই জাতি বা সভ্যতা তার অধিনস্ত এবং দুর্বলদের সাথে কি রকম আচরণ করে সেটা লক্ষ্য করা। যাদের উপর তারা কতৃত্ব অর্জন করেছে তাঁদের সাথে কি রকম আচরণ করে সেটা থেকে কোন জাতি আসলেই কতোটা নৈতিক সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। প্রয়োজনের তাগিদে কেউ তার নৈতিকতা কতোটা কম্প্রোমাইয করে সেখান থেকেও আপনি একটা ধারনা পাবেন।
নিচের লিঙ্কটি হচ্ছে ২০ শে সেপটেম্বর, ২০১৫ তে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি আর্টিকেলের।
http://tinyurl.com/psqpqqd
লিঙ্ক থেকে আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়তে পারবেন, আমি এখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে মূল বিষয়টা বলছি। যেকোন দেশে আগ্রাসন চালানোর সময় আগ্রাসী ভিনদেশী সেনাদল কিছু স্থানীয় লোককে ব্যবহার করে। তারা এসব কোলাবরেটরদের মিত্র বা অ্যালাই বলে থাকে। আফগানিস্তানের মুসলিম তথা তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অ্যামিরিকানরাও কিছু স্থানীয় দালালদের ব্যবহার করছে। অ্যামিরিকার এসব মিত্রদের অনেকেরই হবি হচ্ছে ধর্ষণ । বিশেষ করে কমবয়েসী ছেলেদের ধর্ষণ করা। অ্যামিরিকানদের এই মিত্রদের কম্যান্ডাররা কমবয়েসী শিশু এবং কিশোরদের নিজেদের যৌনদাস হিসেবে ব্যবহার করতো।
তাঁদেরকে ২৪ ঘন্টা বিছানার সাথে শেকল দিয়ে বেধে রাখতো আর রাতে ধর্ষণ করা হতো। এবং এই কাজগুলো হতো অ্যামিরিকানদের বেইসের ভেতরে। অর্থাৎ অ্যামিরিকানদের সেনাঘাটিতে, অ্যামিরিকানদের মিত্ররা, অ্যামেরিকানদের উপস্থিতিতে শিশুদের ধর্ষণ করতো। শুধু তাই না, অ্যামিরিকান সেনাবাহিনী এই বিকৃতকাম, ধর্ষক ও সমকামিদের বিভিন্ন গ্রামের নেতৃত্বের পদে বসাতো। তাই এটা বলা অনুচিত হবে না যে, এই শিশু কিশোরদের উপর নির্যাতনের জন্য অ্যামেরিকা দায়ী। এরকম একটি মেরিন বেইসে কিছু কিশোর মুক্ত হবার চেস্টা করার সময় একজন অ্যামেরিকান সেনাকে গুলি করে হত্যা করে। ঐ সেনা মারা যাবার প্রেক্ষিতেই নিউইয়র্ক টাইমসের এই আর্টিকেলটি লেখা। এমন না যে তারা মুসলিম শিশুদের অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আর্টিকেলটি লিখেছে।
অনেকে মনে করতে পারেন এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দেখা যাক অ্যামেরিকানরা অন্য যে দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়েছে সেখানে কি অবস্থা। ইরাকে অ্যামেরিকান আগ্রাসন চলাকালীন সময়ে কুখ্যাত আবু গ্রাইব কারাগারে অ্যামেরিকানর বন্দীদের উপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালানো হয়। যা সে সময় বিশ্ব মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। কিন্তু যা মূল ধারার মিডিয়াতে আলোচিত হয় নি সেটা হল অ্যামেরিকান সেনারা আবু গ্রাইব কারাগের শুধু মুসলিম নারীদেরকেই ধর্ষণ করে নি, বরং তাঁদের সামনে তাঁদের ছোট ছেলেদের ধর্ষণ করেছে এবং সেটার ভিডিও করেছে। লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের অক্ষমতা ক্ষমা করুন।
http://tinyurl.com/otfeory
http://tinyurl.com/qyqrjh
এ ব্যাপারে পুলিৎযার জয়ী সাংবাদিক সিমোর হারশ এর বক্তব্যঃ
http://tinyurl.com/nnhh59u
আচ্ছা এমনকি হতে পারে এটা শুধু অ্যামেরিকানরা করছে, অথবা এটা শুধু ইরাক এবং আফগানিস্তানেই ঘটেছে? আচ্ছা আমরা একটু অন্যদিকে তাকাই। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বাহিনী এমন একটি সেনবাহিনী যা পরিচালিত জাতিসংঘের আদর্শ অনুযায়ী। যেমন সোভিয়েত আর্মির পেছনে চালিকা শক্তি ছিল সোশ্যালিসম, যা ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শ। তেমনিভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর চালিকা শক্তি হল জাতিসংঘের আদর্শ – সেক্যুলার হিউম্যানিসম বা “ধর্ম নিরপেক্ষ মানবতাবাদ”। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বাহিনির সদস্যরা সেক্যুলার হিউম্যানিসমের মহাম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে যেসব অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গেছেন সেখানে ধর্ষণের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে এসেছেন। মালি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো বিভিন্ন জায়গায় এই শান্তিরক্ষীরা এই কাজ করেছে। হাইতিতে প্রায় এক দশক ধরে এই ধর্ষণ চলছে।
http://tinyurl.com/kq3zytd
http://tinyurl.com/nqthgh9
http://tinyurl.com/ndahex4
http://tinyurl.com/q72ojgb
এই ধর্ষণের স্বীকার শুধু নারীরা না। প্রতিটি ক্ষেত্রে শিশুদের ধর্ষণ করা হয়েছে। একটু প্যাটার্নটা লক্ষ্য করুন। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিকটিম হলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নারী, শিশু এবং বন্দীরা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা দাবি করেছে তারা এসব দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যাচ্ছে, গণতন্ত্র আনার জন্য যাচ্ছে, মানবাধিকারের জন্য যাচ্ছে। অর্থাৎ এই মহান আদর্শগুলো দ্বারা বলীয়ান সেনারা সবচেয়ে দুর্বল মানুষগুলোকে তাঁদের সবচাইতে দুর্বল সময়ে আক্রমণ করেছে। এবং মানবতা, শান্তি, গন্ততন্ত্র এই আদর্শগুলো তাঁদের এই পৈশাচিকতা, এই প্রিডেটরি বিহেইভিয়ারকে থামাতে পারে নি।
সবচাইতে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল তারা তো এসব ঘটনা চেপে রাখার চেস্টা করেছেই, কিন্তু প্রকাশিত হবার পরও তারা এই ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে ইচ্ছুক না। তারা কিন্তু বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায় তাদের সেনাবাহিনী কত নৈতিক, কত মানবতাবাদী। মুসলিমরা জঙ্গী আর তারা মানবতাবাদী। অথচ তাদের সেনাবাহিনী, তাদের আদর্শের ধারকরাই, আফগানিস্তান ও ইরাকে তেজস্ক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে, ওয়াইট ফসফরাস ব্যবহার করে, শিশুদের ধর্ষণ করে, নারীদের ধর্ষণ করে সেটার ভিডিও করে, নিজেরা নিজেদের ধর্ষণ করে, ড্রোন হামলা করে নিয়মিত শিশু হত্যা করে, ঘন জনবসতি পূর্ণ এলাকায় নির্বিচারে বম্বিং করে। এতো কিছু করার পরও তারা মানবিক। তারা মানবতাবাদী তারা মহান, আর মুসলিমরা বিশ্বাস করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড, তালিবান মনে করে চুরির শাস্তি হাত কাঁটা, আমরা মনে করি শারীয়াহ মানবজাতির একমাত্র সংবিধান – এজন্য আমরা বর্বর, মধ্যযুগীয়, জঙ্গি!.
পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্ট, ইসলামবিদ্বেষী এবং তাদের বাদামী চামড়ার সন্তানরা আমাদের খুব করে বোঝানোর চেস্টা করেন ইসলামকে মানুষকে বন্দী করে, অসম্মানিত করে, অধিকার কেড়ে নেয় আর পশ্চিমাদের আদর্শগুলো মানুষকে সম্মানিত করে। বাস্তবতা হল পশ্চিমাদের আদর্শ মানুষ চরমভাবে অসম্মান করে এবং তাঁকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে নামিয়ে আনে। এসব আদর্শ পুরুষকে লম্পট এবং নারীকে পণ্যে পরিণত করে। এই আদর্শগুলো মানুষকে “অধিকার, মানবতা, স্বাধীনতা-র মতো কিছু সুন্দর সুন্দর শব্দ শুনিয়ে অন্ধ ও বধির বানিয়ে রাখে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত অর্থ-সম্পদ-নারীর পেছনে ছুটে চলা এক ঘোরগ্রস্থ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করে। এই আদর্শগুলো ন্যায়বিচার দেয় না, সুসাশন দেয় না, নৈতিক উৎকর্ষতা আনে না বরং উল্টোটা করে। এই আদর্শ এমন কিছু মানুষ তৈরি করে যারা মুখে মানবতা আর মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু কাজের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। তাদের বর্বরতা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ক্রুসেইডার পূর্বপুরুষদের হিংস্র পাশবিকতাকেও ছাড়িয়ে যায়।
অন্যদিকে ইসলাম প্রকৃত ভাবে মানুষকে মুক্ত করে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করে। নারীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়, সুরক্ষিত রাখে এবং মানবচরিত্রের অন্ধকার দিকটিকে লাগাম দিয়ে রাখে। ইসলাম মানুষকে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনে। সৃষ্টির উপাসনা থেকে মুক্ত করে মানুষকে এক আল্লাহ-র ইবাদাতে নিয়োজিত করে। অর্থ, সম্পদ, সম্মান, ক্ষমতার পেছনে ছোটার বদলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মানুষকে প্রতিযোগিতা করতে শেখায়।
এ কারণে যেসব বিকৃতকাম, সমকামি, শিশুকামিদের অ্যামেরিকান সেনারা মিত্র হিসেবে গ্রহণ করে তালিবান তাদের খুঁজে বের করে হত্যা করে। অ্যামেরিকানরা যেখানে পপি চাষ থেকে অর্থ উপার্জন করে তালিবানের শাসনামলে সেই পপি চাষ নেমে আসে শুন্যের কোঠায়। অ্যামেরিকা তার তথাকথিত সুপিরিওর শাসন ব্যবস্থা দিয়ে প্রায় এক দশক চেস্টা করেও প্রহিবিশানের সময় মদ নিষিদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তালিবান মাত্র কয়েক বছরে পপি চাষ বন্ধ করে ফেলে। ব্রিটীশরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করে আর তালিবানের কাছে বন্দী ইয়োভন রিডলী ইসলাম গ্রহণ করে। এটা হল এক সুস্পষ্ট পার্থক্য এই দুই আদর্শের মধ্যে। নিশ্চয় এটা একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য, এবং নিশ্চয় এর মাঝে প্রমাণ আছে তাঁদের জন্য যারা নিজেদের বিচার-বুদ্ধি-বিবেককে এখনো সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাদের কাছে বন্ধক দেননি।
বাহ্যিক চাকচিক্য, চটকদার কথা, মানবতা ও শান্তির রেটরিক এবং পশ্চিমাদের বৈষয়িক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্যে আমরা বিভ্রান্ত হই। বিশেষ করে আমরা যারা সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত হই তাঁদের মাথায় ছোটবেলা থেকেই গেঁথে দেয়া হয় যে সফলতার সংজ্ঞা হল পশ্চিমাদের মতো হওয়া। একই সাথে এই শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজ আমাদের শেখায় পশ্চিমাদের সব দাবিগুলোকে ধ্রুব বাস্তব সত্য হিসেবে মেনে নিতে। কোন অপ্রিয় প্রশ্ন উত্থাপন না করতে। আমরা পশ্চিমাদের বড় বড় স্কাইস্ক্রেইপার আর বিশাল অর্থনীতি দেখি, কিন্তু এগুলোর পেছনে ঔপনিবেশিক এবং নব্য-ঔপনিবেশিক লুটপাটের ভূমিকা দেখি না। আমরা রেনেসন্স আর এনালাইটেনমেন্ট থেকে শেখার কথা বলি কিন্তু রেনেসন্স আর এনলাইটেমেন্ট মুসলিমদের কাছে কতোটা ঋণী সেটা জানার চেস্টা করি না। আমরা জেনেভা কনভেনশানের কথা বলি, কিন্তু জেনেভা কনভেনশানের প্রায় সাড়ে ১৩০০ বছর আগে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ যে মানবাধিকার এবং যুদ্ধবন্দীর অধিকারের ব্যাপারেয়া মানব ইতিহাসের সর্বোৎকৃষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে গেছেন এটা নিয়ে বলতে সংকোচ বোধ করি। জন স্টুয়ারট মিল, বেন্থাম, লিঙ্কনম, প্লেইটো, মার্ক্স যেখানে এতো কারুকার্যময় ব্যাখ্যা দিয়েছেন এগুলোর মাঝে আল্লাহ-র দেয়া সরল ব্যাখ্যা, যা বেদুইন আর বিজ্ঞানী, সবার কাছেই বোধগম্য, আমাদের আকর্ষণ করে না।
আমাদের মধ্যে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স কাজ করে। আমরা নিজেদের ক্ষুদ্র, অপাংতেয় মনে করি। আমরা মনে করি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ হবার উপায় হল পশ্চিমাদের অনুসরণ করা। আমাদের সফল হবার উপায় হল ফিরিঙ্গীদের মতো হবার চেস্টা করা। তাই আমাদের সমাজে পশ্চিমাদের অনেক বাদামী চামড়ার সন্তান আছেন যারা পশ্চিমাদের ইসলাম বিদ্বেষ অনুসরণ করাকে সভ্যতা, সাফল্য আর জ্ঞানের মাপকাঠি মনে করেন, এতে অবাক হবার কিছু নেই। এই মানুষগুলো পশ্চিমা বিশ্বকে প্রভু হিসেবে, পশ্চিমা আদর্শকে জীবনবিধান, দ্বীন, হিসেবে গ্রহন করেছে। এই বাদামী ফিরিঙ্গী, নাস্তিক এবং কাফিরদের কথাবার্তা, প্রচার প্রচারণা এবং মিডিয়ার প্রভাবের কারণে অনেক সাধারণ মুসলিম প্রভাবিত হয়ে পড়েন। কিন্তু আপনি যদি অন্ধভাবে ওরিয়েন্টালিস্ট এবং তাদের গোলামদের বক্তব্য গ্রহণ না করে একটু খুঁটিয়ে দেখার চেস্টা করেন, তাহলে দেখবেন, মিথ্যা, প্রতারণা, অনৈতিকতা, পাশবিকতা, এবং পাপাচার কিভাবে এই সভ্যতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে, দেখবেন কিভাবে অন্ধকার এই সভ্যতাকে ঘিরে রেখেছে।
আমি এখানে তাদের সেনাদের আচরণের মাধ্যমে মাত্র একটি উদাহরণ দিয়েছি, এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। আপনি যদি একটু চিন্তা করেন তাহলে এই বুলি সর্বস্ব আদর্শের অন্তঃসারহীনতা আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে পড়বে। এরা যেসব আদর্শের ক্যানভাসিং করছে এগুলো গত দুইশ বছরে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ আর নোংরামি ছাড়া পৃথিবীকে কিছু দিতে পারে নি। যেখানে ইসলামের সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে ১৩০০ বছরের খিলাফাহ-র ইতিহাস। ১৩০০ বছর ধরে শারীয়াহ এর আলোকে ইসলাম দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ ও রাস্ট্রের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কারো যদি আসলেই প্রশ্ন জাগে কোন আদর্শ মানব জীবনের সমাধান দেয়ার ব্যাপারে সফল, তাহলে সে ইতিহাস দেখে নিক।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, ইসলামই প্রথম মানবাধিকার নিশ্চিত করেছে, ইসলাম নারীকে সম্মান এবং স্বাধীনতা দিয়েছে, ইসলাম ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে, ইসলাম প্রথম ওয়েলফেয়ার স্টেইটের ধারণা এনেছে এবং বাস্তবায়ন করেছে, ইসলাম রাস্ট্রীয় ভাবে জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ইসলাম মানবজাতিকে সর্বোত্তম আদর্শ দিয়েছে। ইসলামই একমাত্র ব্যবস্থা যা মানবজীবনের সমস্যার সফলতার সাথে সমাধান করেছে, বহিঃশত্রুর মোকাবেলা করে টিকে থেকেছে, নিজ আদর্শের বিস্তার করেছে। ইসলাম এই কাজগুলো বাস্তবে করেছে। ইসলাম পশ্চিমাদের আদর্শের মতো কথায় সীমাবদ্ধ না। ইসলাম কাজের মাধ্যমে তাঁর আদর্শিক উৎকর্ষ প্রমাণ করেছে
। পশ্চিমা চিন্তাধারা জীবনবিধানের ব্যাপারে অনেকগুলো মডেল দিয়েছে কিন্তু কোনটাই বাস্তব সমাধান তো দেয়-ই নি বরং নতুন সমস্যা সৃষ্টি করেছে। আর ইসলাম একটি মডেল দিয়েছে এবং ১৩০০ বছর ধরে সেই মডেলের বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানব জাতির সমস্যার সমাধান দিয়েছে। একজন চিন্তাশীল ব্যক্তির জন্য প্রমাণ হিসেবে এটুকুই যথেস্ট। এবং ইন শা আল্লাহ, ইসলামী খিলাফাহ আবারো প্রতিষ্ঠিত হবে, আল্লাহ-র মাটিতে আল্লাহ- র শারীয়াহ আবারো কায়েম হবে। আমরা সমর্থন করি আর না করি এটা আল্লাহ-র প্রতিশ্রুতি যা হবেই। যে বিষয়টা নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা হল আমরা নিজেদের কিভাবে দেখতে চাই। আমরা কি নিজেদের সম্মানিত অবস্থায় দেখতে চাই, আমরা কি মাথা তুলে মর্যাদা এবং গর্বের সাথে বাঁচতে চাই? নাকি আমরা চাই পশ্চিমা দাসত্ব মেনে নেয়ার মাধ্যমে অপমান আর অন্ধ অণুসরণের এক জীবন? আল্লাহ আমাদের ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেনঃ
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে…” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০]
তাই আমাদের সম্মান ইসলামেই নিহিত। আমাদের জন্য আল্লাহ ইসলামকে মনোনীত করেছেন, তাই আর যা কিছুরই অনুসরণ আমরা করি না কেন আমরা কখনোই সফল হতে পারবো না।
“নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম... “ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
তোমরা যখন ধারে ক্রয়-বিক্রয় করবে, গাভীর লেজ ধরে থাকবে, কৃষি কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে, তখন আল্লাহ্ তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দেবেন এবং তা তোমরা হটাতে পারবে না, যতক্ষন না তোমরা নিজের দ্বীনের দিকে ফিরে আস।(আহমদ, আবু দাউদ, আল হাকিম)
আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল আমাদের সবাইকে বোঝার তাউফিক্ব দান করুন, আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন