মানবজাতির সর্বপ্রথম দায়িত্ব:
আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন, অবগত হোনঃ আল্লাহ আদম সন্তানের উপর সর্বপ্রথম যে বিষয়টি বাধ্যতামূলক করেছেন তা হল ত্বগুতকে পরিত্যাগ, প্রত্যাখ্যাল করা ও আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। এর দলীল হল , আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল এর এই আয়াত -
“প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি (এ সংবাদ দিয়ে) যে, আল্লাহর ‘ইবাদাত কর আর তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর আল্লাহ তাদের মধ্যে কতককে সৎপথ দেখিয়েছেন, আর কতকের উপর অবধারিত হয়েছে গুমরাহী, অতএব যমীনে ভ্রমণ করে দেখ, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি কী ঘটেছিল!” [সূরা আন নাহল, ৩৬]
শরাহভাষাঃ ফারাদা (অবশ্য করণীয়) বাধ্যতামূলক ; ত্বগুত শব্দটি এসেছে ত্বাগা ক্রিয়া থেকে , যার অর্থ সীমালঙ্ঘন করা। আর এটি এমন প্রতিটি বিষয়কেই বুঝায় যা কিনা তার নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে যায় ও সীমালঙ্ঘন করে।ব্যাখ্যাঃশাইখ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর এই রিসালাহ শুরু করেছেন মানবজাতির উপর আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত প্রথম আবশ্যক দায়িত্বকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে, যা কিনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কিতাব থেকেই প্রমাণীত হয় এই ফারযিয়্যাত হলঃ ত্বাগুতকে পরিত্যাগ ও প্রত্যাখ্যান করা ও আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। কেননা আল্লাহ বলেছেন, “প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি (এ সংবাদ দিয়ে) যে, আল্লাহর ‘ইবাদাত কর আর তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর আল্লাহ তাদের মধ্যে কতককে সৎপথ দেখিয়েছেন, আর কতকের উপর অবধারিত হয়েছে গুমরাহী, অতএব যমীনে ভ্রমণ করে দেখ, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি কী ঘটেছিল!” [সূরা আন নাহল, ৩৬]সুতরাং সর্বপ্রথম কাজ হল ত্বগুতকে প্রত্যাখ্যান করা ও এতে অবিশ্বাস করা; ত্বগুত হল– আল্লাহ ব্যাতীত এমন সব কিছু যাকে বা যাদেরকে উপাসনা করা হয় ও তারা সেই উপাসনায় সন্তুষ্ট হয়। ত্বগুতকে প্রত্যাখ্যান করা ও এতে অবিশ্বাস করার অন্তর্ভুক্ত হলঃ আল্লাহ ব্যতীত আর যা কিছুর উপাসনা করা হয়, যেমন কোন গাছ, পাথর, চাঁদ, সূর্য, কোন ফেরেশতা, কোন মানুষ ইত্যাদিকে অপসারন করা। এদের আল্লাহর পাশাপাশি উপাসিত হবার কোন অধিকার নেই, কেননা সৃষ্টিজগতের উপর এদের কোন ক্ষমতাই নেই।এরপরে আসে নিজের দ্বীনকে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করা। কেবলমাত্র আল্লাহরই উপাসনা করা আর উপাসিত হবার ক্ষেত্রে একমাত্র তাঁর অধিকারকেই স্বীকার করে নেয়া। ত্বগুতকে অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান করা ও আল্লাহ্র উপর বিশ্বাস অর্থাৎ কুফর বিত ত্বগুত ওয়া ঈমান বিল্লাহ -এর এই আবশ্যকতাই হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র প্রকৃত অর্থ (আল্লাহ ব্যতীত আর কোন স্বত্তার উপাসিত হবার অধিকার নেই।) কেননা – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- তে রয়েছে একটি অস্বীকৃতি ও একটি স্বীকৃতি। লা ইলাহা (কোন সত্ত্বার উপাসিত হবার অধিকার নেই)- হল আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল স্বত্তার উপাসিত হবার বিষয়ে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন। এটা হল ত্বাগুতের উপর অবিশ্বাস (কুফর বিত ত্বগুত)। আর ইল্লা আল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত) হল এই স্বীকৃতি দেয়া যে একমাত্র আল্লাহই উপাসিত হবার অধিকার রাখেন।এর মাধ্যমে বান্দার উপর আরোপিত সর্বপ্রথম বাধ্যবাধকতা সুস্পষ্ট হয়। আর কোন বুদ্ধিবৃত্তিক অন্তর্দৃষ্টি (intellectual insight) বা এজাতীয় কিছু অর্জন করা বান্দার উপর আরোপিত সর্বপ্রথম বাধ্যবাধকতা না, যা কিনা কিছু বিভ্রান্ত কালামশাস্ত্রবিদ বা অন্যরা দাবী করে। বান্দার উপর সর্বপ্রথম বাধ্যবাধকতা হল তাই যা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হলঃ কুফর বিত ত্বগুত ওয়া ঈমান বিল্লাহ।
সারাংশঃ
১) বান্দার সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলঃ কুফর বিত ত্বগুত (ত্বগুতকে অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান করা) ওয়া ঈমান বিল্লাহ (আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা)
২) ত্বগুত হল এমন সব কিছু আল্লাহ্র পাশাপাশি যাদের ইবাদাত করা হয় এবং তারা এতে সন্তুষ্ট।
৩) কিছু গোমরাহ কালামশাস্ত্রবিদ (আহলুল কালাম) দাবি করে পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তির জন্য সর্বপ্রথম দায়িত্ব হল intellectual insight অর্জন করা।
===============================================
[ইমাম আল মুজাদ্দিদ শায়খুনা মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব - এর রাহিমাহুল্লাহ মানা আত্ব-ত্বগুতের অনুবাদ এবং শারহ। গ্রহন করা হয়েছে ডঃ মুহাম্মাদ ইবন আবদুর রাহমান আল-খুমাইয়্যিস -এর “Jam’-ul-Funoon fee Sharh Jumlati Mutoon Li’’Aqaa’id Ahlis-Sunnah ‘alal-Madhaahib-il-Arba’ah” - থেকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন