আন-নাববীর চল্লিশ হাদিস পর্ব ১ - khalid Saifullah

khalid Saifullah

আল্লাহর তরবারী

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭

আন-নাববীর চল্লিশ হাদিস পর্ব ১


 ১। আমীরুল মুমিনীন আবূ হাফস্ উমার ইবনু আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন,

—আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি— “সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপর, আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়্যত করেছে, তাই পাবে।

 সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে, আর যার হিজরত দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত সে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।

”[সহীহ্ আল-বুখারী: ১, সহীহ্ মুসলিম: ১৯০৭। মুহাদ্দিসগণের দুই ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ইবনু ইব্রাহীম ইবনু মুগীরা ইবনু বারদেযবাহ্ আল-বুখারী এবং আবূল হাসান মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ ইবনু মুসলিম আল-কুশায়রী আন্-নিশাপুরী আপন আপন সহীহ্ গ্রন্থে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। যা সবচেয়ে সহীহ্ গ্রন্থদ্বয় বলে বিবেচিত হয়।]


২। এটাও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা, চুল ছিল ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতে পারে নি। সে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তার হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেন:


 “হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”।রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রমাদানে সওম সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর) ঘরের হজ্জ কর।”তিনি (লোকটি) বললেন: “আপনি ঠিক বলেছেন”। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে। এরপর বলল: “আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন”।তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- আল্লাহ্, তাঁর ফিরিশ্‌তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতর উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনা।”সে (আগন্তুক) বলল: “আপনি ঠিক বলেছেন”। তারপর বলল: “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন”।তিনি বলেন: “তা হচ্ছে এই- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে নাও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন”।

সে (আগন্তুক) বলল: “আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন”।তিনি (রাসূল) বললেন: “যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী কিছু জানে না”।সে (আগন্তুক) বলল: “আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন”।তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদে দম্ভ করবে”।তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি (রাসূল) আমাকে বললেন: “হে উমার, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান? আমি বললাম: “আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন”। তিনি বললেন: “তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন।
”[সহীহ্ মুসলিম: ৮]


৩। আবূ আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ্ ইবনু উমার ইবনু আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,“পাঁচটি জিনিসের উপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে— সাক্ষ্য দেয়া যে,আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল,সালাত কায়েম করা,যাকাত আদায় করা,আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা এবংরমাদানের সওম পালন করা।”[বুখারী: ৮, মুসলিম: ২১]


৪। আবূ আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে,
 তিনি বলেছেন— রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম— যিনি সত্যবাদী ও যার কথাকে সত্য বলে মেনে নেয়া হয়— তিনি আমাদেরকে বলেছেন:তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবৎ শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন গোশতপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফিরিশ্‌তা পাঠানো হয়।

অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়- তার রুজি, বয়স, কাজ এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।অতএব, আল্লাহর কসম-যিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই-তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীর মত কাজ করে[1]- এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জাহান্নামবাসীর মত কাজ শুরু করে এবং তার ফলে তাতে প্রবেশ করে।

এবং তোমাদের মধ্যে অপর এক ব্যক্তি জাহান্নামীদের মত কাজ শুরু করে দেয়- এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জান্নাতবাসীদের মত কাজ শুরু করে আর সে তাতে প্রবেশ করে।

[বুখারী: ৩২০৮, মুসলিম: ২৬৪৩]


[1] অর্থাৎ বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার কাজটি সবার নিকট জান্নাতবাসীদের কাজ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতের কাজ করেনি। কারণ, তার ঈমান ও ইখলাসের মধ্যে কোথাও কোন ঘাটতি ছিল। [সম্পাদক]



৫। উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় সংযুক্ত করবে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে (অর্থাৎ তা গ্রহণযোগ্য হবে না)।
[বুখারী: ২৬৯৭, মুসলিম: ১৭১৮]
মুসলিমের বর্ণনার ভাষা হলো এই যে,যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যা আমাদের দ্বীনে নেই, তা গ্রহণযোগ্য হবে না (অর্থাৎ প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে)।

 ৬। আবূ আব্দিল্লাহ্ আন্-নু‘মান ইবনু বশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ নিঃসন্দেহে হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, আর এ দু‘য়ের মধ্যে কিছু সন্দেহজনক বিষয় আছে যা অনেকে জানে না। অতএব, যে ব্যক্তি সন্দিহান বিষয় হতে নিজেকে রক্ষা করেছে; সে নিজের দ্বীনকে পবিত্র করেছে এবং নিজের সম্মানকেও রক্ষা করেছে।
 আর যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়ে পতিত হয়েছে; সে হারামে পতিত হয়েছে। তার অবস্থা সেই রাখালের মত যে নিষিদ্ধ চারণ ভূমির চারপাশে (গবাদি) চরায়, আর সর্বদা এ আশংকায় থাকে যে, যে কোন সময় কোন পশু তার মধ্যে প্রবেশ করে চরতে আরম্ভ করবে।সাবধান! প্রত্যেক রাজা-বাদশাহর একটি সংরক্ষিত এলাকা আছে। 
আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর হারামকৃত বিষয়াদি। সাবধান! নিশ্চয়ই শরীরের মধ্যে একটি গোশতপিণ্ড আছে; যখন তা ঠিক থাকে তখন সমস্ত শরীর ঠিক থাকে, আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায় -এটা হচ্ছে কলব (হৃদপিণ্ড)।

[বুখারী: ৫২, মুসলিম: ১৫৯৯]


 ৭। আবূ রুকাইয়্যা তামীম ইবনু আওস আদ্-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দ্বীন হচ্ছে শুভকামনা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: কার জন্য? তিনি বললেন: আল্লাহ্, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম নেতাদের এবং সকল মুসলিমের জন্য।

[মুসলিম: ৫৫]



 ৮। ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে লড়াই করতে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। আর তারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। যদি তারা এরূপ করে তবে তারা আমার হাত থেকে নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে নেবে, অবশ্য ইসলামের হক যদি তা দাবী করে তবে আলাদা কথা; আর তাদের হিসাব নেয়ার দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত।
[বুখারী: ২৫, মুসলিম: ২২]


৯। আবূ হুরায়রা আব্দুর রহমান ইবনু সাখর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

আমি তোমাদেরকে যেসব বিষয় নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক। আর যেসব বিষয়ে আদেশ করেছি, যথাসম্ভব তা পালন কর। বেশী বেশী প্রশ্ন করা আর নবীদের সথে মতবিরোধ করা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে।
[বুখারীঃ ৭২৮৮, মুসলিম: ১৩৩৭]

১০। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

আল্লাহ্ তা‘আলা পাক-পবিত্র, তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবূল করে থাকেন। আল্লাহ্ তা‘আলা মুমিনদের ঐ কাজই করার হুকুম দিয়েছেন যা করার হুকুম তিনি রাসূলদেরকে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন:

(হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক আমল করুন।) আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেছেন: (হে মুমিনগণ! আমরা তোমাদের যে পবিত্র জীবিকা দান করেছি তা থেকে আহার কর।)তারপর তিনি (রাসূলুল্লাহ্) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে বের হয় এবং তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে ও কাপড় ধুলোবালিতে ময়লা হয়ে আছে। অতঃপর সে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে তুলে ধরে ও বলে: হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, সে হারামভাবে লালিত-পালিত হয়েছে; এ অবস্থায় কেমন করে তার দো‘আ কবূল হতে পারে।
[মুসলিম: ১০১৫]

পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করুন

কোন মন্তব্য নেই:

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages