ঘটনাটি ছিল ১৯৮৯ সালে পূর্বাঞ্চালীয় নগরী জালালাবাদ দখলের লড়াইয়ের সময়কার। ওসামার নিজের ভাষায়: “আমি তিনজন আফগান ও তিনজন আরবকে এনে একটা অবস্থান দখল করে রাখতে বললাম। তারা সারা দিন লড়াই চালাল। সন্ধ্যায় তাদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য আমি ফিরে গেলে আরবরা কাঁদতে শুরু করে দিল। বলতে লাগল তারা শহীদ হতে চায়। আমি বললাম ওরা যদি এখানেই থেকে গিয়ে লড়াই চালিয়ে যায় তাহলে তাদের মনোবাঞ্ছনা পূরণ হতে পারে। পরদিন তারা সবাই শহীদ হল।” ওসামা পরে বলেন, তিনি তাদের বুঝিয়েছিলেন যে রণাঙ্গনের ট্রেঞ্চই হলো তাদের বেহেশতে যাবার পথ। সঙ্গী ও অনুসারীদের সাথে অনেক দিক দিয়ে নিজের কোন পার্থক্য রাখতেন না ওসামা বিন লাদেন। তিনি যে এত ধনী ছিলেন কিংবা একজন কমান্ডার ছিলেন অনেকেই তা জানত না। সবার সাথে বন্ধুর মতো একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করতেন ও ঘুমাতেন তিনি। কখনও কখনও আফগানদের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ মেটানোর জন্য নিজ উদ্যোগে সমঝোতার চেষ্টা চালাতেন। আফগান প্রতিরোধযুদ্ধে মুজাহিদ যোগান দেয়ার যে দায়িত্ব তিনি নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করেছিলেন তা অব্যাহত থাকে। সিআইএ সূত্রে হিসাব করে দেখা গেছে যে, জিহাদের জন্য আফগানিস্তানে বছরে তিনি ৫ কোটি ডলার সাহায্য নিয়ে এসেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী এক যোদ্ধার কাছ থেকে জানা যায় জালালাবাদ দখলের লড়াই চলাকালে তিনি পথের পাশে ধূলি ধূসরিত বিন লাদেনকে মুজাহিদদের জন্য খাদ্য, কাপড়চোপড়, বুট জুতা প্রভৃতি সরবরাহের আয়োজন করতে দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর মতো ইসলামী চিন্তাধারার অনুসারী যিনি নন তাঁর সঙ্গে বিন লাদেনের কিছুতেই বনিবনা হতো না। সৈয়দ মোহাম্মদ নামে আরেক আফগান মুজাহিদ জানান, একবার এক যুদ্ধে বিন লাদেন তাঁর সঙ্গে কোন রকম সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান। কারণ শুধু একটাই- তিনি দাড়ি-গোফ সম্পূর্ণ কামানো ছিলেন। আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় বিন লাদেন মিডিয়ার শক্তিটা টের পেতে শুরু করেছিলেন। আফগানযুদ্ধে তাঁর ভূমিকার বিভিন্ন কাহিনী পেশোয়ারস্থ আরব সাংবাদিকদের হাত হয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এর অনুকূল প্রভাব পড়ে। বন্যার ঢলের মতো দলে দলে স্বেচ্ছাসেবক এসে জড়ো হতে থাকে তাঁর পিছনে। তাঁর প্রতি লোকে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে। এমন মর্যাদা এর আগে আর কখনও লাভ করেননি বিন লাদেন। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়। কাবুলে রেখে যায় এক পুতুল সরকার। আফগানিস্তানে এবার শুরু হয় নতুন লড়াই। সে লড়াই আফগানদের নিজেদের মধ্যে- মুজাহিদে মুজাহিদে লড়াই। এ অবস্থায় আরব আন্তর্জাতিক ব্রিগেডের যুদ্ধে পোড়খাওয়া হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক সৈনিকের আফগানিস্তানের মাটিতে পড়ে থাকার আর কোন কারণ ঘটেনি। তাদের অনেকেই জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আফগানিস্তান থেকে নিজ নিজ দেশে পাড়ি জমায়। আফগানদের এই ভ্রাতৃঘাতী লড়াই থেকে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিন লাদেনও পাড়ি জমান নিজ দেশে। সত্যি বলতে কি, তিনি এই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ লক্ষ্য করে অতিমাত্রায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। নিজে অতি সৎ, অতি বিশ্বস্ত মানুষ বিন লাদেন। আফগানদের আত্মকলহে লিপ্ত হতে দেখে তিনি অত্যন্ত পীড়িত বোধ করেছিলেন। তিনি এ সময় তাদের বলেছিলেন যে সোভিয়েতের মতো একটা পরাশক্তিকে তাঁরা লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য করেছেন শুধু একটি কারণে- তাঁরা নিজেরা ছিলেন ঐক্যবদ্ধ এবং তাঁদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়েছিল। একতাবদ্ধ না থাকলে এ বিজয় অর্জন তাঁদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব ছিল না। এত বড় বিজয়ের পর আফগানদের নিজেদের মধ্যে নতুন করে রক্তক্ষরণ দেখে হতাশার গ্লানি নিয়ে বিন লাদেন ফিরে যান স্বদেশ সৌদি আরবে। তখন তাঁর বয়স ৩৩ বছর। সময়টা ১৯৯০- এর শরৎ। সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক প্রিন্স আবদুল্লাহ যুবক ওসামা বিন লাদেনের কাঁধে তাঁর নরম থলথলে হাতটা রাখলেন। মৃদু হাসলেন। বন্ধুত্ব ও আনুগত্যের কথা বললেন। তাঁর কথাগুলো মধুর শোনাচ্ছিল। তাঁর মধ্যে আপোসের সুর ছিল। তবে সন্দেহ নেই সেসব কথার আড়ালে লুকিয়ে ছিল কঠিন কঠোর হুমকি। ---চলমান
পুরাতন পর্বগুলো
part 1
Part 2
Part 3
1 টি মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খাইর
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন