LIFE OF BIN LADEN--বিশ্ব মৌলবাদী সন্ত্রাসের নেপথ্য নায়ক --বিন লাদেন -- জীবনের কিছু স্মৃতি।--পর্ব--(৬) - khalid Saifullah

Papermag-smooth

আল্লাহর তরবারী

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬

demo-image

LIFE OF BIN LADEN--বিশ্ব মৌলবাদী সন্ত্রাসের নেপথ্য নায়ক --বিন লাদেন -- জীবনের কিছু স্মৃতি।--পর্ব--(৬)

Responsive Ads Here


13235700_128617480878265_959541228273268364_o
ওসামা বিন লাদেন আফগানযুদ্ধাভিজ্ঞ একজন আরব স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে রিয়াদে প্রিন্স আবদুল্লাহর সাথে তাঁর প্রাসাদে দেখা করতে এসেছিলেন। মনোরমভাবে সাজানো লাউঞ্জে আফগান ভেটারেনদের উদ্দেশ্যে প্রিন্স আবদুল্লাহ বললেন, “মোহাম্মদ বিন লাদেনের পরিবার বরাবরই আমাদের এই রাজ্যের বিশ্বস্ত প্রজা। প্রয়োজনের সময় এই পরিবার আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, কাউকে এমন কিছু করতে দেয়া হবে না যাতে আমাদের এই সুসম্পর্ক ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।” উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ প্রিন্স আবদুল্লাহর কথায় শ্রদ্ধাবনতভাবে মাথা নেড়েছিল। কিন্তু যার উদ্দেশে কথাগুলো উচ্চারিত হয় সেই বিন লাদেন তাঁর অবদমিত ক্রোধ ভিতরেই চেপে রাখার আপ্রাণ প্রয়াস পাচ্ছিলেন। বস্তুতপক্ষে আবদুল্লাহর কথায় তিনি এতই উত্তেজিত হয়ে পড়েন যে, সেটা তাঁর চোখমুখের অভিব্যক্তিতে প্রকাশ হয়ে পড়ে। আবদুল্লাহর কথায় তিনি অত্যন্ত হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন সেদিন।

 বিশ্ব জিহাদ ফ্রন্ট


মিসরীয় সহকর্মীদের কাছ থেকে একটা জিনিস শিখেছিলেন বিন লাদেন। তা হলো, আক্রমণই আত্মরক্ষার সর্বোত্তম কৌশল। তাদের এই পরামর্শ মতো তিনি কাজ করেছিলেন। তোরাবোরা ঘাঁটিতে দু’মাস কাটানোর পর বিন লাদেন বারো পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ লিখেন ও বিলি করেন। তাতে কুরআন ও ইতিহাস থেকে অসংখ্য উদ্ধৃতি ও প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছিল। এবং অঙ্গিকার করা হয়েছিল যে, আমেরিকানরা সৌদি আরব থেকে সরে না গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। নিবন্ধে প্রথমবারের মতো তিনি ফিলিস্তিন ও লেবাননের পক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে ইহুদী খৃস্টানদের হিংসার অপপ্রচারের উল্লেখ করে বলেন, তাদের এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা প্রত্যেক মুসলমানের পবিত্র দায়িত্ব। এ ধরনের অবস্থান গ্রহণের মধ্য দিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষণীয়ভাবে প্রসারিত হয়। এর পিছনে মিসরীয়দের প্রভাব ছিল অনস্বীকার্য। আফগান মুজাহিদদের সিআইএ বেশ কিছু স্ট্রিংগার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছিল।


MyArt_1480657033535

 বিন লাদেন তাদের কাছ থেকে চারটি স্ট্রিংগার কিনে নিয়ে সৌদি ইসলামী গ্রুপগুলোর কাছে গোপনে পাচার করেন। ব্যাপারটা ফাঁস হয়ে গেলে রিয়াদ অতিশয় ক্রুদ্ধ হয়। পাকিস্তানের মতো সৌদি আরবও আফগানিস্তানে রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব খর্ব করার জন্য তালেবানদের সাহায্য সমর্থন দিয়েছিল। এখন সেই তালেবানরাই সৌদিদের ঘোরতর এক শত্রুকে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাকে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের দাবি অগ্রাহ্য করেছে। সুতরাং তার বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে অনুভব করছে সৌদি আরব। ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকে তালেবানরা বিন লাদেনকে হত্যার একটি সৌদি ষড়যন্ত্র উদঘাটন করে। আফগানিস্তানের তখন প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এলাকা এই মুজাহিদ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। হত্যা ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হবার পর তালেবানরা বিন লাদেনকে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য কান্দাহারে চলে যেতে বলে। বিন লাদেন রাজি হন এবং কান্দাহার বিমানবন্দরের কাছাকাছি সোভিয়েত বিমানবাহিনীর একটি পুরনো ঘাঁটিতে চলে যান। ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ সামরিক সাজসরঞ্জাম কেনার অর্থ যুগিয়ে, মসজিদ তৈরি করে এবং নেতৃবৃন্দকে গাড়ি কিনে দিয়ে বিন লাদেন তালেবান হাই কমান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করে তুলেছিলেন। তিনি কান্দাহার নগরীর উপকণ্ঠে মোল্লা ওমর ও তাঁর পরিবারের জন্য একটি নতুন বাসভবনও তৈরি করে দিয়েছিলেন। বিন লাদেন আফগানিস্তানের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলো থেকে সেরা শিক্ষার্থীদের আল-কায়েদায় নিয়ে নেয়ার একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রশাসকরা স্বেচ্ছাসেবকদের বলত যে, তাদের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হবেন তাঁদের ‘আমীরের’ সামনে হাজির করা হবে। আমীর বিন লাদেনের সামনে হাজির করার পর তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে চৌকশ ও প্রতিভাবান যুবকদের বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ শিবিরের জন্য বেছে নেয়া হতো। এই বিশেষ শিবিরে তাদের পদাতিক বাহিনীর মৌলিক কলাকৌশল শিখানো হতো না বরং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা নেয়া হতো। যুদ্ধের মহড়ার আয়োজন করা হতো এবং পরিশেষে আধুনিক জিহাদের দক্ষতা ও কৌশল শিখানো হতো। এক বছরের মধ্যে বিন লাদেন মুজাহিদদের একটি বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলেন। ডা. আইমান আল জাওয়াহিরির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিন লাদেন এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি যে উদ্দেশ্যের জন্য লড়ছেন সেটাকে আন্তর্জাতিকীকরণ করা দরকার।


8hozPCF%25282%2529

১৯৯৭ সালের শেষদিকে তিনি ইসলামী সংগঠনগুলোকে আল কায়েদার ছত্রছায়ায় একতাবদ্ধ করার কাজ শুরু করেন। তিনি সারা বিশ্বের মুসলিম নেতাদের একই উদ্দেশ্যের পিছনে টেনে আনার জন্য নিজের অর্থবিত্ত, খ্যাতি, প্রতিপত্তি সবকিছুই কাজে লাগিয়েছিলেন। স্থানীয় পর্যায়ের ইসলামী আন্দোলনগুলোর প্রতি তিনি তাঁর সাহায্য-সমর্থন জোরদার করেন। মসজিদ নির্মাণের জন্য গ্রামের ইমাম আলেমদের হাতে টাকা দেন। তালেবান সূত্রে জানা যায় যে, দুবাই থেকে তিনি তিন হাজার সেকেন্ডহ্যান্ড টয়োটা করোলা গাড়ি আমদানির ব্যবস্থা করেন। জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা হিসাবে এই গাড়িগুলো যুদ্ধে শহীদ তালেবানদের পরিবারের হাতে দেয়া হয়।


পরিশেষে ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিন লাদেন ‘বিশ্বজিহাদ ফ্রন্ট’ এর নামে ইহুদী ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে এক ফতওয়া জারী করেন। বিন লাদেন, আল জাওয়াহিরি এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ইসলামী আন্দোলনের নেতারা ফতওয়ায় স্বাক্ষর দেন। এবং গোটা অঞ্চলের ডজনখানেক সংগঠন ফতওয়া অনুমোদন করে। পাশ্চাত্যের ইসলাম সম্পর্কিত এক বিশেষজ্ঞের মতে ফতওয়াটি ছিল অলঙ্কারপূর্ণ আরবী গদ্যের এক অপরূপ সুন্দর দৃষ্টান্ত। এমনকি ওটাকে অসাধারণ কাব্যিকও বলা যায়। অবশ্য এর বক্তব্য বিষয়টা মোটেও কাব্যিক ছিল না। কারণ ফতওয়ায় বলা হয়েছিল যে, আমেরিকান ও তাদের মিত্রদের- এমনকি তারা যদি অসামরিক ব্যক্তিও হয় তাহলেও তাদের হত্যা করা মুসলমানদের দায়িত্ব। এর অল্পদিন পরই এক সাক্ষাতকারে বিন লাদেন বলেন যে, খবু শীঘ্রই র‌্য ডিকেল কার্যক্রম শুরু হবে। সেটা শুরু হলো ১৯৯৮ সালের সাত আগস্ট। ঐ দিন সকাল এগারো’টায় মুহাম্মাদ রশিদ দাউদ আল-ওহালী নামে ২২ বছরের এক সৌদি যুবক নাইরোবি শহরতলীর এক হাসপাতালের নিচ তলায় পুরুষদের একটি টয়লেটে দাঁড়ানো ছিল। যুবকটির মুখে দাড়ি। শীর্ণ কাঁধ। এক সেট চাবি ছিল তার হাতে এবং তিনটি বুলেট।

যুবকটির পরনে ছিল জিনসের প্যান্ট, একটা সাদা রঙের কারুকাজ করা শার্ট। পায়ে মোজা ও কালো জুতা। তাঁর পোশাকে রক্তের দাগ ছিল। হাতে যে চাবিগুলো ছিল সেগুলো একটি হালকা বাদামী রঙের টয়োটা পিকাপ ট্রাকের পিছনের দরজার চাবি। ৩৪ মিনিট আগে গাড়িটি এক প্রচ- বিস্ফোরণে উড়ে যায়।


বিস্ফোরিত বোমাটি ঐ গাড়ির ভিতরেই রাখা ছিল। বিস্ফোরণে মার্কিন দূতাবাস, একটি অফিস ব্লক এবং একটি সেক্রেটারিয়ান কলেজ বিধ্বস্ত হয়। নিহত হয় ২১৩ জন। আহত হয় ৪৬০ জন। প্রায় একই সময় তাঞ্জানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে দ্বিতীয় একটি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ১১ জন। আল ওহালীর ট্রাকের ড্রাইভার ছিল আযযাম নামে আরেক সৌদি যুবক। বিস্ফোরণে সে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তারা দু’জন টয়োটা ট্রাকটি নিয়ে সবেগে দূতাবাসে ঢুকে পড়ার সময় শাহাদাতবরণের আরবী গান গাইছিল। যদিও সে সময় তাঁরা ভেবেছিল যে, দু’জন একত্রে মৃত্যু বরণ করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয় না। চালকের আসনে বসা আযযাম ড্যশবোর্ডর সঙ্গে টেপদিয়ে আটকানো ডেটোনেটরের বোতামে চাপ দেয়ার সাথে সাথে বিষ্ফোরণে তার শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু আল ওহালি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরে তিনি এফবিআই কে জানান যে, ১৯৯৭ সালের প্রথম ভাগে আফগানিস্তানে ট্রেনিং নেয়ার সময় তাকে বেছেনিয়ে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। এরপর তাকে সে বছরের গ্রীষ্মে তালেবানদের পক্ষে লড়াই করার জন্য পাঠানো হয়। অতপর তাঁকে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে আল কায়েদার ইন্সট্রাক্টরদের হাতে জিহাদের উপর বিশেষ ধরণের ট্রেনিং নিতে পাঠানো হয়। পরিশেষে এপ্রিল মাসে তাকে নাইরোবিতে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার মিশনে নিয়োগ করা হয়। আয্যাম ও একই পথ অনুসরণ করেছিল। আফ্রিকায় বোমা বাজির দুটো ঘটনার তেরো দিন পর ৭৫ টি মার্কিন ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলিয় পার্বত্য এলাকার ছয়টি প্রশিক্ষণ শিবিরে আঘাত হানে। অপর ক্ষেপনাস্ত্রগুলো সুদানের একটি মেডিকেল কারখানা ধ্বংশ করে দেয়। মুসলিম বিশ্ব ক্ষোভ ও ঘৃণায় ফেটে যায়। বিশ্বের রঙ্গমঞ্চে পাদপ্রদীপের আলোয়ে আবির্ভূত হন ওসামা বিন লাদেন।

 ---চলমান।



Part 1

Part 2

Part 3

Part 4

Part 5

     

Post Bottom Ad

Pages