Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

আমি কেন জঙ্গি হলাম?


 জঙ্গিবাদের অভিযোগ থেকে কখন আপনি মুক্ত হবেন?

 
 তাগুতের হাতে গ্রেফতারের পূর্বে এক শহীদ আরব মুজাহিদের লেখা শেষ প্রবন্ধ অনুকরণে-
(মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারলে বোঝার আছে অনেক কিছু, চিন্তাশীল সকল ভাইকে সম্পূর্ণটা পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি)
এক
কেন আমি ওয়ান্টেড পার্সন?
চার দিক থেকে জবাব আসতে লাগলঃ সন্ত্রাস......... সন্ত্রাস ...... (জঙ্গিবাদ)। তুমি সন্ত্রাসী (জঙ্গি)। আর সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সন্ত্রাসকে দমন করা, জঙ্গিবাদের নির্মূল করা।
 ঠিক আছে .........।
সন্ত্রাসের এই অপরাধ থেকে আমি মুক্ত হতে চাই, যার ফলে আমি আজ মোস্ট ওয়ান্টেড, আমাকে বন্দি ও হত্যা করা সরকারের দায়িত্ব।  বলুন, কি সেই সন্ত্রাসটি?
 উত্তরঃ মানুষ হত্যা ...............।
 কিন্তু ..............., সৌদি সরকারও তো মানুষ হত্যা করে .........।
তারা শায়েখ ইউসুফ আল-ওয়াইরী, বীর মুজাহিদ দান্দানী সহ অন্যান্য আলেম ও মুজাহিদীনদেরকে হত্যা করেছে। তাহলে সৌদি সরকারও সন্ত্রাসী সুতরাং আমরা  যখন উভয়েই সন্ত্রাসী  আমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে কাঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে সামনে বাড়া,তাহলে আমি তাদের কাছে ওয়ান্টেড হলাম কেন? নাকি সৌদি সরকার আমার থেকে ভিন্ন?
কেননা সৌদি সরকার যাদেরকে হত্যা করেছে তারা সন্ত্রাসী?   ভাল কথা ...।   আমিও তো সন্ত্রাসীদেরকেই হত্যা করেছি।আমেরিকানরা কি সন্ত্রাসী নয়?
 ইরাক, আফগানস্থান ফিলিস্তিন সহ অন্যান্য ভূখণ্ডে অ্যামেরিকা যে সন্ত্রাস করেছে,
 এর চেয়ে বড় কোন সন্ত্রাস হতে পারে?!! আমিও সন্ত্রাসীদেরকে হত্যা করলাম, সৌদি সরকারও সন্ত্রাসীদেরকে হত্যা করল!!
 তাহলে আমি কেন সন্ত্রাসী হব? অথচ আমরা উভয় একই কাজ করছি,
 সন্ত্রাসীদেরকে হত্যা করছি?!! বরং সৌদি সরকারই এমন অনেককে হত্যা করছে যারা সন্ত্রাসী নয় ......।
 তারা মার্কিন বাহিনীকে সহায়তার মাধ্যমে ইরাকের সধারন জনগণকে হত্যা করেনি?!!
 নাকি সৌদি সরকার আমাকে ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী হিসাবে কাল তালিকাভুক্ত করেছে এ কারণে,আমি ঐ সৈনিকদেরকে হত্যা করেছি যারা অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদেরকে পাহারা ও নিরাপত্তা দিত?!!     তাহলে সৌদি সরকার কি ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে হত্যা করেনি,
 যারা সন্ত্রসীদেরকে পাহারা দিত?!! যেমনটি করেছে তারা কাসীমের মধ্যে।
 অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদের পাহারাদার আর অন্যান্য সন্ত্রাসীদের পাহারাদারদের মাঝে,
 কি এমন পার্থক্য বিদ্যমান?!!!
 দুই
 মনে হয়, এখন আমি বুঝতে পেরেছি ............।
 সৌদি সরকার আমাকে ওয়ান্টেড ঘোষণা দিয়েছে কারণ আমি সন্ত্রাসীদের বন্ধু, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল,আর নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসীর বন্ধুও সন্ত্রাসী।
 কিন্তু সৌদি সরকার ঘোষণা দেয়নি কি, অ্যামেরিকা তাদের বন্ধু?!!
পৃথিবীর সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী কি অ্যামেরিকা নয়?!!
সৌদি ও অ্যামেরিকার মধ্যকার প্রতিটি ক্ষেত্রে মন্ত্রীরা গভীর সম্পর্কের ব্যাপারটা কি নিশ্চিত করেনি?!!
অনুগ্রহ করে আমাকে জবাব দাওঃ
 কেন আমি ওয়ান্টেড হলাম?!!!
 আমি যেমন সন্ত্রাসী সৌদি সরকারও কি একই রকম সন্ত্রাসী নয়?!!
 তাহলে সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে তাদের ভ্রাতাকে কীভাবে তারা তাড়া করে?
 আমি হত্যা করেছি অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদের পাহারাদারদেরকে,
সৌদি হুকুমত হত্যা করছে শরয়ী ইসলামী ‘সন্ত্রাসীদের” আশ্রয় দাতাদেরকে।
আমি যেমন সন্ত্রাসীদেরকে ভালবাসি তাদের প্রতি সহানভুতি প্রকাশ করি,
সৌদি সরকার মার্কিন সন্ত্রাসীদেরকে ভালবাসে, তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। বরং তারা এই বন্ধুত্ব নিয়ে গর্ব প্রকাশ করে থাকে।
 তিন
 হতে পারে-আমি ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী,
 কারণ আমি মুসলিমদের দেশে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছি।
 কিন্তু ..................।
 ইরাক মুসলিমদের দেশ,
 অ্যামেরিকা ইরাকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
 জঙ্গি বিমান থেকে মিসাইলের আঘাতে পুরো দেশকে চূর্ণবিচূর্ণ করেছে।
 অথচ সৌদি, অ্যামেরিকাকে ওয়ান্টেড হিসাবে আখ্যায়িত করে না।
 এমনকি শত্রু পর্যন্ত ভাবে না বরং তাদেরকে সাহায্য করে।
 সৌদি সরকারের কাছে কোন প্রমাণ আছে, যে আমি সন্ত্রাসীদেরকে কোন সাহায্য করেছি?
 যদি থাকে তাহলে ভাল কথা,
 একই ভাবে সৌদি সরাকারও অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদেরকে,
 সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।
 আমি কি তাদের আশ্রয় দিয়েছি?
 সৌদি সরকার মার্কিন বাহিনীকে আশ্রয় দিয়েছে।
 আমি কি তাদের অস্ত্রের হেফাজত করেছি?
 সৌদি সরকার সৌদিকে অ্যামেরিকার অস্ত্রগুদাম বানিয়েছে।
 তারা কি আমার কাছ থেকে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে?
 মার্কিন বিমানগুলো সৌদি থেকে ইরাকে যেয়ে তাদের সন্ত্রাস পরিচালনা করছে।
 আমি কি তাদেরকে মাল দিয়ে সাহায্য করছি?
 অথচ ইরাক-আফগানের যুদ্ধে সৌদি হচ্ছে,
 অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদেরকে সাহায্যকারী অন্যতম একটি রাষ্ট্র।
 ওহে সৌদি শাসকগুষ্ঠি! তোমরা লক্ষ্য কর, আমরা আর তোমরা উভয়েই সন্ত্রাসের অংশীদার!
 হ্যাঁ তবে যদি আমি তোমাদের থেকে আগে বেড়ে থাকি আলহামদুলিল্লাহ্! কেননা আমি মুসলিম।
চার
 হ্যাঁ এখন আমার বুঝে এসেছে......!
 আমি সন্ত্রাসী, কেননা আমি সৌদি শাসকদেরকে তাকফীর করেছি।
  কিন্তু ..................!
 উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তো সৌদি সরকারও সাদ্দামকে তাকফীর করেছিল?!!
 সৌদি সরকার সাদ্দামকে কেন তাকফীর করল?
 এই কারণে তাকফীর করেছে, সে আল্লাহ্ তায়ালার বিধান ছাড়া ভিন্ন বিধানে শাসন পরিচালনা করে? সৌদি সরকারও তো আল্লাহ্ তায়ালার বিধান ব্যতিরেকে ভিন্ন বিধানে শাসন পরিচালনা করে থাকে।
 আর আমি তো তাকফীরে এই ফাতওয়া পেয়েছি সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়েখ মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম আলে-শাইয়েখ রহঃ এর ফাতওয়া থেকে, যার ফলে এই ফাতওয়া সৌদি সরকার বাজারে নিষিদ্ধ করেছে।  শায়েখ আবদুল্লাহ বিন হামীদ সহ অন্যান্য শায়েখদের থেকেও একই ফাতওয়া বিদ্যমান আছে।

আর আমি দেখছি বিলাদুল হারামাইনের অধিকাংশ বিষয়ে,
 মানব রচিত আইন দ্বারা ফায়সালা করা হয়।
 তাহলে কেন তারা সাদ্দামকে তাকফীর করল?
 উত্তরঃ এ কারণে, সে একজন বাথিস্ট?
 বাথিস্ট কি? এই শব্দে তো ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে কোন কারণ বিদ্যমান নেই।
 তারা কি এ কারণেই কুফর মনে করে না যে, বাথিস্টদের কাছে সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বর মাপকাঠি হচ্ছে দ্বীনের পরিবর্তে জাতীয়তা। ?
 সৌদির কাছেও তো সম্পর্ক ও বন্ধুত্বয়ের মাপকাঠি,দ্বীনের পরিবর্তে দেশ ও আরব জাতীয়তার উপর।

বাথিস্টরা কি এ জন্য কাফের,
 কেননা তাদের কাছে একজন আজমি মুসলিমের চেয়ে আরবি কাফের শ্রেষ্ঠ?
 আরব জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সৌদি শাসকদের কাছে একজন আরবি কাফের
 একজন বাংলাদেশী মুসলিমের চেয়ে উত্তম।

হ্যাঁ যদি আমি এ কারণেই সন্ত্রাসী হই যে,
 আমি সৌদি সরকারকে কাফের মনে করি।
 তাহলে সৌদি সরকারও এ জন্য সন্ত্রাসী যে,
 তারা সাদ্দাম হুসাইন কে কাফের মনে করে।

বরং সৌদি সরকার এ ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে------
 ১১ সেপ্টেম্বরের মোবারক আক্রমণ পরিচালনাকারী বীরদেরকে
 সুলতান বিন আব্দুল আযীয তাকফীর করেছে,
 সে বলেছে তারা নাকি ইসলামী মিল্লাত থেকে খারেয হয়ে গেছে।
 তাহলে যে ভাবে আমি ওয়ান্টেড একই ভাবে সুলতান বিন আব্দুল আযীযও যেন ওয়ান্টেড হয়।
 রিয়াদের মধ্যে মার্কিন ক্রসেডারদের উপর আক্রমণ পরিচালনাকারীদেরকে আব্দুল্লাহ তাকফীর করেছে। সুতরাং আমার মত যেন আবদুল্লাহ ওয়ান্টেড হিসাবে গণ্য হয়।
 ওরে সন্ত্রাসীর দল!!!
 আমাকে ঐ সন্ত্রাস বোঝাও! যেটার কারণে আমাকে তোমরা ওয়ান্টেড আখ্যায়িত করছ।?!!!  আমি যা করেছি তা কি অ্যামেরিকা করেনি?!!
 বরং এর চেয়ে অনেক অনেক বেশী করেছে।
 তাহলে তারা কেন সন্ত্রাসী (জঙ্গি) হচ্ছে না।?!!!
 কেন অ্যামেরিকার প্রতি সহানভুতি প্রকাশ অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে না?!
 যেভাবে আমার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ অপরাধ বলে গণ্য হচ্ছে?!!!

  আমাকে কি তোমরা নাসারা (খ্রিস্টান) হতে বলছ?
 কুফরী করতে বলছ? তাহলে অ্যামেরিকার মত আমি এই সন্ত্রাসের অপরাধ থেকে মুক্তি পাব?!!
 এটাই কি সৌদি সরকার আমার থেকে আশা করে?!
 ইহুদী-নাসারা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম গ্রহণ কর।

সৌদি সরকার সন্ত্রাস করেছে।
 সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে সহানুভূতি দেখিয়েছে।
 সন্ত্রাসীদেরকে সাহায্য করেছে।
 তাদেরকে মাল দিয়ে শক্তিশালী করেছে।
 মার্কিন সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে সব করেছে।
 তথাপি কেন তারা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হবে না?!!
 এই কারণে কি, তারা হচ্ছে একটা হুকমত বা সরকার?!!

তাহলে আমার উপরও তো আবশ্যক হচ্ছে,
 যে কোন ভাবে ক্ষমতা দখল করা।
 যাতে আমিও এই সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাই।

পাঁচ
 আচ্ছা ঠিক আছে ...............।।
 যা আলোচনা হল সব বাদ।!!!

যদিও আমি কোন অভিযোগ ব্যতিরেকেই অভিযুক্ত,
 যে সৌদি সরকার আমাকে ওয়ান্টেড আখ্যায়িত করেছে,
 যদিও সে আমার চেয়ে অনেক বেশী অপরাধে অপরাধী
 তথাপি আমি নিজেকে সমর্পণ করব ............।!

তবে আমি কিছু শর্ত দেব ----------।
 আমি এমন শর্ত দেব না, যার হক শরীয়ত আমাকে দেয়নি।

আমর প্রথম শর্ত হবে,
 আমার ফায়সালা করতে হবে শরয়ী মাহকামাতে,
 ইনসাফের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশ্য মাহকামা।

আমার আর একটি শর্ত হচ্ছে,
আমাকে নির্যাতন করা যাবে না।

আমার শেষ শর্ত হচ্ছে,
আমার যে সমস্ত আপনজনকে সরকার জিম্মি হিসাবে আটক করেছে,
তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে।

হ্যাঁ এগুলোই আমার শর্ত।

কিন্তু আমার আশংকা হচ্ছে,
সৌদি সরকার আমাকে জেলে ভরবে,
আমার সকল শর্ত অস্বীকার করবে।
তাহলে আমার পক্ষে কীভাবে সম্ভব হবে,
সরকারকে এই শর্ত পুরনে বাধ্য করতে
অথচ আমি জিন্দানখানায় শিকলাবদ্ধ।

একটা সমাধান পেয়েছি --------।
 আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এর সাথে সম্পর্ক আছে এমন কোন শায়খের কাছে যাব।
 তিনি হতে পারেন, সাফার আল- হাওালী।
 আমি তার কাছে আমার শর্তগুলো পেশ করব,
 তাকে এ ব্যাপারে সরকারের সাথে আলোচনা করতে বলব।

তিনি যে এটা করতে সক্ষম হবেন, আমি এই নিশ্চয়তা পাব কীভাবে?
 হ্যাঁ এটা করা যেতে পারে যে,সরকার শর্ত মানলে তাকে এ ব্যাপারে মিডিয়ার মধ্যে প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে হবে।
 কিন্তু..................!
 এই একই কাজ কি ফাকআসী করেননি?
 ফাকআসীর শর্তগুলো হেওালি কি সৌদি পত্রিকার সমূহের মধ্যে প্রকাশ করেননি?
 তথাপি ফাকআসী তার হক সমূহের নিশ্চয়তা পেয়েছে কি?!!
 না পায়নি!!!
 স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি নায়েফ দৃশ্যপটে এলো,
 এসে হেওালিকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করল।
 ফাকআসীর শর্ত সমূহ অস্বীকার করল।
 নায়েফের দাবি অনুযায়ী হেওালি মিথ্যা বলেছিল কি?
 না এটাই স্বাভাবিক যে নায়েফ হেওালিকে মিথ্যার অপবাদ দিয়েছে?
 তাহলে দুর্বল কারাবন্দী ফাকআসীর ক্ষেত্রে কি অবস্থা হয়েছে?!!
 আর কে আছে এমন, যে ফাকআসীর শর্তের নিশ্চয়তা দেবে, তার জামিন নেবে?
 আমি আত্মসমর্পণের চিন্তা থেকে সরে এসেছি,
 কারণ আমি যে সতর্কতাই নিতে চাই, ফাকআসী তাই গ্রহণ করেছিল।
 কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
 তাই মৃত্যুই আমার কাছে উত্তম ও অধিক প্রিয় ............।

  ছয়
 যদিও আমি আত্মসমর্পণের চিন্তা বাদ দিয়েছি,
 কিন্তু সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে মুক্ত হবার দিঢ় সংকল্প থেকে পিছে সরে আসতে পারিনি।
 সন্ত্রাসের সকল উপকরণ দ্বারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে অ্যামেরিকা।
 তাদেরকে সন্ত্রাসের সকল সংজ্ঞা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায়।
 অথচ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো অ্যামেরিকার ভালবাসা অর্জনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত,
 আমাকে অপরাধী সাব্যস্তকারী সৌদি সরকার এ ক্ষেত্রে আরও অগ্রগামী।
 অ্যামেরিকার সাথে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক ও ভালবাসা তাদের জন্য গর্বের ব্যাপার কেন?
 অথচ আমার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ অপরাধ!!!
 যে রাষ্ট্র মার্কিন সন্ত্রসিদেরকে সাহায্য করে,
 তার সাথে সম্পর্ক রাখা জনগণের উপর ওয়াজিব কেন?!!
 আর শরয়ী জঙ্গিদের (সন্ত্রাসীদের) ব্যাপারে সামান্য সহানুভূতি প্রকাশ
 জনগণের জন্য হারাম কেন?!!
 সন্ত্রাসী সৌদি সরকারকে সাহায্য করা,
 কেন জনগণের উপর আবশ্যক?
 আর আমাদেরকে সাহায্য করা হারাম?!!

  আমি কারণ খুঁজে পেয়েছি ......
 হ্যাঁ... হ্যাঁ...  আমি এখন কারণ বুঝতে পেরেছি .........।
 আমি উসামা রহঃ এর আওয়াজ শুনতে পেলাম ----------- 
 
  إنَّ الناس يميلون مع القوي ..  إرهابُنا جريمة .. وإرهاب أمريكا أمر مشروع ..  أبرياؤهم أبرياء .. وأبرياؤنا ليسوا أبرياء .. 
মানুষেরা ঝোঁকে শক্তিশালীর দিকে ...।।
আমাদের “সন্ত্রাস” হচ্ছে অপরাধ
আর অ্যামেরিকার সন্ত্রাস হচ্ছে বৈধ।
তাদের নিরাপরাধ জনসাধারণ নিরাপরাধ
আর আমাদের নিরাপরাধ জনসাধারণ অপরাধী।!!

আল্লাহ্ তায়ালা আপনার প্রতি রহম করুন, হে উসামা!
এখন বুঝেছি কবিতার পংতি।
এখন চিনেছি ঘোড়ার লাগাম।
এখন পেয়েছি সমস্যার সমাধান!

হ্যাঁ এখন বুঝেছি......।।
 আমাকে শক্তিশালী হতে হবে।
যখন তুমি শক্তিশালী হবে,
তখন তুমি যাই কর সন্ত্রাসী হবে না।
ঠিক আছে!!!
কিন্তু আমি যে দুর্বল এটা তাদেরকে কে বলল?
হয়ত আমি শক্তিশালী কিন্তু সেটা তারা জানে না!!?

আচ্ছা!!
তাদেরকে আমার শক্তি দেখাতে হবে,
যেমন তারা অ্যামেরিকার শক্তি দেখেছে।
 আর তখনি আমার সাথে ক্ষমতাশীলরা
উষ্ম বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করবে।
তখনি সৌদি শাসক নড়েচড়ে বসবে,
আমার সাথে চুক্তি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

এই শাসকেই তো শ্যরন এর সাথে চুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে ছিল।
ইয়াহুদী সন্ত্রাসী শ্যরন কি একজন মুসলিম জঙ্গির চেয়ে ভাল?!!!

সন্ত্রাসের (জঙ্গিবাদের) অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার এক মাত্র উপায় হচ্ছে ---
তোমাকে শক্তিশালী হতে হবে।

ঠিক আছে ......।
কিছু সময় অপেক্ষা কর ............।
অচিরেই ইনশাআল্লাহ্ তোমরা আমরা শক্তি দেখতে পাবে ......।।
এটাই ইসলামী সন্ত্রাসীর বার্তা...।।
হে আল্লাহ্!
আপনি মুজাহিদিন সন্ত্রাসীদের ত্রাসকে আপনার পথে কবুল করুন।
হে আল্লাহ্! আপনি নিহত জঙ্গিদের রূহগুলোকে আপনার পথে গ্রহণ করুন। 
কপিরাইট @আহমাদ নাবীল

তালেবান সৃষ্টি হয়েছিল যেভাবে!

আফগান তালেবান
আফগান-রাশিয়া যুদ্ধ শেষ হয়েছে মাত্র।যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান।যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির হাইওয়েতে কোন নিরাপত্তা নেই, ডাকাত আর চোরের দলের উৎপাত এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, রাস্তার পাশে মরা লাশ পড়ে থাকলেও তা লোকজনের কাছে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এতটাই স্বাভাবিক যে, কেউ গাড়ি থামিয়ে লাশটিকে কবর দেয়া দূরে থাক, পথচারীরা পর্যন্ত দুবার ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করে না।একে তো দারিদ্র পীড়িত তার উপর যুদ্ধ বিধ্বস্ত হওয়ায় চুরি ডাকাতি,ছিন্তাই,ধর্ষণ বেড়ে গেছে মারাত্মক হারে।
 ,
এহেন পরিস্থিতিতে,মাদ্রাসার একজন মোল্লা [রাহিঃ] কয়েকজন মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে তিনিটি কাজ করার পরিকল্পনা করলেন।একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ, একটি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ।তিনি কাজটি করার জন্য যাদের সহায়তা পেয়েছিলেন তারা সবাই মাদ্রাসার ছাত্র। সুশীল সমাজের বিশিষ্ট জনদের কর্মব্যস্ততা এতই বেশি যে তাদের ফুসরত নেই মানুষের বিপদ আপদে এগিয়ে যাবার। আরো কিছু লোক এগিয়ে এসেছিলেন এই মোল্লার আহবানে সাড়া দিয়ে, তাদের কেউ স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা স্বচ্ছল কৃষক। তাদের ছোট্ট দলটি গঠিত হয়েছিল মাদ্রাসার শরীয়াহ বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্র, মৌলভী এদের নিয়ে।

,
১৯৯৪ সালের গ্রীষ্মকাল।আফগানের কান্দাহার প্রদেশে দুজন আরোহী মোটর সাইকেলে করে ছুটে চলেছেন।গ্রামের লোকদের জন্য সময়টি ছিল উৎসবের। বিয়ের অনুষ্ঠান, বরযাত্রী চলছে দলবেঁধে।যে বিপদের আশংকা ছিল, ঘটলো তাই। বরযাত্রীদের দল হাইওয়ে ডাকাতদলের খপ্পরে পড়ল, হতাহতের ঘটনা ঘটল, মহিলাদের উঠিয়ে নেয়া হল অপহরণ আর ধর্ষণের জন্য। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের গণ্ডারের চামড়ায় সাধারণত ময়না তদন্তের আগে অনুভূতি হয় না।এই অবস্থা দেখে মোটর সাইকেল আরোহী মাদ্রাসার সেই মোল্লা এই ঘটনায় ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলেন।কিছু মহিলাদের উদ্ধার করা সম্ভব হলো, আবার অনেকে ইতোমধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। গ্রামের লোকজনের আবেদনে যে প্রশাসন নির্বিকার ছিল সেই প্রশাসনকে বসিয়ে রাখার কোন মানে হয় না। কাবুলের শাসক রব্বানীর অনুগত গভর্ণর ও তার প্রশাসনকে কান্দাহার প্রদেশের গ্রামের লোকেরা বের করে দিল। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সাথে তারা স্বেচ্ছায় তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব তুলে দিল মোটর সাইকেল আরোহী সেই মোল্লার [রাহিঃ] হাতে যার পুরো নাম  মোল্লা মুহাম্মদ ওমর [রাহিঃ]।যিনি সবার আগে এগিয়ে গিয়েছিলেন চোর আর ডাকাতদলের হাত থেকে মুসলিম নারীদের ইজ্জত রক্ষা করার ডাকে সাড়া দিয়ে।

,
এখানেই তিনি থামলেন না।এরপর তিনি বের হলেন “আমর বিল মা’রুফ ওয়া নাহিয়ানিল মুনকার” এর ডাকে, সাথে ছিলেন আরো মাদ্রাসার ছাত্ররা, যাদের বলা হয় তালেব। তালেবের বহুবচন ‘তালেবান’ মানে অনেকগুলো ছাত্র।কিন্তু স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, একা এভাবে এগিয়ে যাবার শক্তি তিনি কোথায় পেলেন?
কিভাবে তিনি বাকি লোকদেরকেও সাহসী অগ্রযাত্রার সাথী করে নিলেন?
আসুন শুনি তাঁর নিজের জবানীতে,
,
,
“তখন আমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করি, মাদ্রাসাটি ছিল “সানজ সার” শহরে, কান্দাহারে। আমার সাথে আরও প্রায় ২০ জনের মত সহপাঠী ছিল। এরপর দেশে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ল, খুন হত্যা, লুটতরাজ, ডাকাতি এগুলো সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল, আর দেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল দুর্নীতিবাজ, বাজে সমাজপতিদের হাতে। ‘এই সমাজের অবস্থার উন্নতি ঘটবে, আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে’ ; সবচেয়ে আশাবাদী লোকেরাও এমন আশা করা ছেড়ে দিয়েছিল। এমনকি আমি নিজেও তাদের মতই ভাবছিলাম, এরপর নিজেকেই বললাম, “আল্লাহ তায়ালা কখনো কাউকেই তার শক্তি সামর্থের বাইরে কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না” (বাকারাহ ২৮৬) ,
এরপর আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য এই আয়াতটিই যথেষ্ট মনে হল, নইলে আমি হয়তো এই বিষয়গুলো ছেড়ে দিতাম, কারণ কোন কিছুই আমার সামর্থ্যের মধ্যে ছিল না। কিন্তু আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম, খাঁটি ভরসা, আর যেকেউ আল্লাহর উপর এ ধরণের তাওয়াক্কুল করে, তার আশা কখনো হতাশায় পরিণত হয় না।
মানুষ হয়তো ভাবতে পারেঃ কখন এই আন্দোলন শুরু হল? কারা এর পিছনে ছিল? অর্থায়ন কারা করল? পরিচালনা করল কারা আর নিয়ন্ত্রণ করল কারা?
 ,
আমি তাদের বলবো, এই আন্দোলন তো শুরু হয়েছে সেদিন, যেদিন আমি আমার মাদ্রাসাতে বইটি ভাঁজ করে রেখে দিলাম, আমি আমার সাথে আরেকজন ভাইকে নিয়েছিলাম, এরপর আমরা দুজনে মিলে পায়ে হেঁটে যানযাওয়াত এলাকার দিকে গেলাম। এরপর সেখান থেকে আমি একটি মোটরসাইকেল ভাড়া নিলাম, যে আমাকে ভাড়া দিয়েছিলেন তার নাম ছিল ‘শুরুর’, এরপর আমরা তালুকান এলাকায় গেলাম। আর, এভাবেই আমাদের আন্দোলন শুরু হল, আপনাদের মনে যদি অন্য কোন চিন্তা উঁকি দিয়ে থাকে তাহলে সেগুলো ঝেড়ে ফেলুন !
 ,
এরপর আমরা এক মাদ্রাসা থেকে আরেক মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে দেখা সাক্ষাত শুরু করলাম, ছাত্রদের যে সকল হালাকা (স্টাডি সার্কেল) ছিল সেগুলোতে যেতাম, একদিনের ঘটনা, সেদিন সকাল বেলায় আমরা একটি স্টাডি সার্কেলে যাওয়ার পর দেখলাম সেখানে ১৪ জনের মতন ছাত্র অবস্থান করছএরপর আমি তাদেরকে একত্রিত করলাম আমার চারপাশে, আর বললাম, “আল্লাহর দীন এখন মানুষের পায়ের নিচে, মানুষ প্রকাশ্যে বেহায়াপনা, অশ্লীলতা করছে, খারাপ কাজ করছে, আর অপরদিকে যারা দীন মেনে চলার চেষ্টা করছে তারা তাদের দীনকে গোপন করে আছে, আর অসৎ লোকেরা পুরো এলাকায় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে আছে, তারা মানুষের সম্পদ চুরি করে, রাস্তায় তারা মানুষের ইজ্জত হানি করে, খুন করে, এমনকি যদি কারো মরা লাশ রাস্তার উপর পড়েও থাকে, তাহলে মানুষ নির্বিকার চিত্তে তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলে যায়, গাড়ি চালিয়ে চলে যায় আর দেখে রাস্তার উপর একটা মরা পড়ে আছে, এমনকি কোন লোক যে এসে লাশটাকে তুলে নিয়ে গিয়ে দাফন করবে তাও খুঁজে পাওয়া যায় না”।

,
,
আমি তাদেরকে আরও বললাম, “এই রকম জরুরী অবস্থার মধ্যে শুধুমাত্র পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকা সম্ভব না, চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব না, আর এই সমস্যাগুলো স্লোগান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব না, যার পিছনে কোন সমর্থন নেই। আমরা, তালেবে ইলম (ইলমের ছাত্ররা), এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে চাই। যদি তোমরাও সত্যি সত্যি চাও আল্লাহর দীনের জন্য কাজ করতে, তাহলে আমাদের পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ততা থেকে অবসর নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আর আমি তোমাদেরকে খুলে বলছি, একটা মানুষও আমাদেরকে একটা পয়সা দিয়ে সাহায্য করার ওয়াদা করেনি, তাই তোমাদের এরকম মনে করার কোন কারণ নেই, আমরা আল্লাহর দীনের জন্য কাজ করব আর বিনিময়ে অন্য কেঊ আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। বরং, মানুষের কাছ থেকেই অনুরোধ করে আমাদের নিজেদের খাদ্য ও সাহায্য চেয়ে নিতে হবে”।আমি বলেছিলাম, “এটা একদিনের কাজ নয়, এক সপ্তাহ , এক মাস কিংবা এক বছরের কাজও নয়, বরং এতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। তোমরা কি সেটা করতে তৈরি আছ নাকি না ?
,
,
“গ্রীষ্মের সেই দিনগুলো ছিল খুব গরমের, মনে হতো যেন কালো রঙয়ের কেটলীতে কেউ পানি গরম করছে , আর আমি তাদেরকে উৎসাহিত করতে লাগলাম আর বলেছিলাম, ‘আজ এই রকম পরিস্থিতিতে তোমরা নিজ নিজ কেন্দ্রে বসে থাকতেই বেশি পছন্দ করছো ! অথচ তারা সরাসরি আল্লাহর দীনের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আর আমরা কিনা দাবী করছি আমরা আল্লাহর দীনের লোক! শরীয়াহর ছাত্র, অথচ আমরা শরীয়াহর সমর্থনে কোন কাজ করছি না” !
তাদেরকে আমি বললাম, “আমরা যদি কোন একটি এলাকা জয় করতে পারি, তাহলে সেটি রক্ষা করব, আর সেই অবস্থায় কেউ এ ধরণের কথা বলো না, হায় এখন কোন পড়ার ব্যবস্থা নেই, টাকা পয়সার অভাব, অস্ত্র নেই…; কাজেই তোমরা বলো তোমরা কি এই কাজগুলো করতে তৈরি আছো ?”
,
এরপর সেই চৌদ্দ জনের মাঝে একজনও খুঁজে পাওয়া গেল না, যে এই সকল কাজ করতে তৈরি আছে, তারা বলল, ‘জুমার দিনে হয়তো আমরা এই কাজগুলোর কিছু কিছু কাজ করতে পারি’, উত্তর শুনে আমি বললাম, “তাহলে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে কে এই কাজগুলো করবে?”
,
,
আমি আল্লাহকে আমার সাক্ষী মেনে বলছি, এটাই ছিল বাস্তবতা, আর আমি যাবতীয় ইজ্জতের মালিক আল্লাহর সামনে শেষ বিচারের দিনে এই ঘটনার সাক্ষ্য দিব।
আমাদের এই আন্দোলন ছিল আল্লাহর উপর খাঁটি তাওয়াক্কুলের একটি ফলাফল, কেননা সেদিন যদি আমি ঐ কয়েকজন ছাত্রের উপর ধারণা করে বাকি মাদ্রাসা, স্টাডি সার্কেলের প্রতিও একই রকম ধারণা করে বসে থাকতাম, তাহলে হয়তো আমি নিজেও আমার পড়ালেখায় মন দিতাম, মাদ্রাসায় ফেরত যেতাম। কিন্তু আমি আমার নিজের উপর আল্লাহর জন্যে যে শপথ করেছিলাম তা পূর্ণ করার দিকে মন দিলাম, আমি যে শপথ নিয়েছিলাম তা পূর্ণ করেছি, আর আল্লাহও আমাকে সেইভাবেই চালিত করেছেন যেমনটা আজকে আপনারা দেখছেন। এরপর আমি আরেকটি পাঠশালাতে গেলাম, সেখানে প্রায় সতের জন ছাত্র ছিল, তো আমি তাদেরকে বিষয়টা উপস্থাপন করলাম যেভাবে প্রথম হালাকাতে আমি উপস্থাপন করেছিলাম (যারা ছিল তালেবে ইলম বা ইলমের ছাত্র তথা মাদ্রাসার ছাত্র), এবারে এই হালাকার সতের জনের সবাইকেই পাওয়া গেল যারা আমাদের প্রস্তাবে আল্লাহর দীনের জন্য কাজ করতে রাজী ছিল।
 ,
তারা প্রত্যেকেই ছিল যেন একটি জাতি সমতূল্য, তাদের মাঝে যুবক-বৃদ্ধ কোন পার্থক্য ছিল না, শিশু কিংবা যুবক, আর না নারী না পুরুষের উপর ভিত্তি করে কোন পার্থক্য ছিল, বরং এই (আল্লাহর দীনের) কাজটি ছিল আল্লাহ আমাদের যে ইলম জ্ঞান দান করেছেন তার উপর। তাই এ কাজের শুরু থেকেই আমাকে একের পর এক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে।এরপর আমরা যে একটি মোটর সাইকেল ভাড়া করেছিলাম, সেটিতে চড়ে একের পর এক মাদ্রাসা, স্কুল ও স্টাডি সার্কেলে ভ্রমণ করতে লাগলাম আসরের সালাতের সময় হওয়া পর্যন্ত । আর সে সময় দেখা গেল তিপ্পান্ন জন লোক আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করে কাজের জন্য তৈরি আছে। এরপর আমি আমার মাদ্রাসায় ফেরত আসলাম আর তাদেরকে বললাম, “আগামীকাল সকালে এসো”, কিন্তু তারা রাতের বেলায় সবাই একসাথে সানয সার’এ এসে হাজির হল, আর এটাই ছিল শুরু।
 ,
আমাদের আইডিয়ার বয়স চব্বিশ ঘণ্টা পার হবার আগেই আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেল। আর আমার একজন বন্ধু তাদের সালাতে ইমামতি করল, ফযরের সালাতে ইমামতি করার পর সেখানে উপস্থিত একজন বলল, “আজকে রাতে আমি যখন ঘুমাচ্ছিলাম, আমি দেখলাম ফেরেশতারা সানয সার’এ প্রবেশ করছে, আর কি কোমল ছিল তাদের হাতের পরশ, তাই আমি তাদেরকে অনুরোধ করলাম যেন তারা আমার মুখমণ্ডলে বরকতের জন্য মাসেহ করে দেয়”।
,
পরদিন সকাল দশটার দিকে, আমরা ‘আল-হাজ বিশর’ থেকে দুটা গাড়ি চেয়ে নিলাম, তিনি একজন এলাকার ব্যবসায়ী, তিনি আমাদেরকে দুটি গাড়ি দিলেন, একটা ছোট কার, আরেকটা বড় কার্গো ট্রাক। এরপর আমরা সব ছাত্রদের “কাশক নুখুদ” এলাকার দিকে সরিয়ে নিলাম, এরপর বাদবাকি অন্যান্যরাও আমাদের সাথে যোগ দিল। আর যখন একসাথে অনেক লোক জমায়েত হল, আমরা লোকদের কাছ থেকে অস্ত্র ধার করলাম, আর এভাবেই শুরু হয়েছিল আমাদের প্রতিরোধ আন্দোলন, যেভাবে আজকে পর্যন্ত তা চলে আসছে…” তাঁর বক্তব্যের শেষ- আল্লাহ তাকে জান্নাতে সু-উচ্চ মাকাম দান করুন, বিজয় দান করুন এবং মুজাহিদিনদের সাহায্য করুন। আমিন।
,
 ,
হ্যাঁ, এটাই ছিল আন্দোলনের সূত্রপাত যতক্ষণ না আমেরিকা ইসলামিক আমিরাতের উপর হামলে পড়ল। যখন আমেরিকা এই ইসলামিক রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করল, তারা ইতিহাসকে যেন পালটে দিল, যেন তারা সাম্প্রতিক অতীতের এই বাস্তবতাকেও পালটে দিতে চাইল। ‘তালাবাহ’ দের নাম দেয়া হল বিদেশী এজেন্ট, পাকিস্তানী ইন্টিলেজেন্সের দেশীয় রক্তপিপাসু দোসর, একদল লুটেরা, হাইওয়ে ডাকাত, খুনী যারা কিনা যমীনে নিজেদের কর্তৃত্ব ও অনাচার প্রতিষ্ঠা করতে চায় !!!
 ,
আর কত সহস্র বই, বিশ্লেষণ, অভিযোগ, ধোঁকা, চক্রান্ত ইত্যাদি করা হল এই ইসলামিক ইমারাহ’র বিরুদ্ধে যা চায় শুধুমাত্র ইসলাম। এই বইগুলো লাইব্রেরী স্থান নিয়েছে, বইয়ের অক্ষরগুলো যেমন কালো যারা এগুলো লিখেছে তাদের অন্তরগুলোও তেমনি কালো। মিথ্যা, অতিরঞ্জন, প্রতারণা, এবং বিশুদ্ধ নির্বুদ্ধিতা যার কোন ভিত্তি নেই, এদের কোন স্থিতিশীল অবস্থান নেই, যেমন বাতাসে একটা গাছের ডাল দোল খায় কিংবা একটা পালক ভেসে বেড়ায় এরাও তেমনি ভাসমান, পরজীবি।
,
,
আর এখন যারা কাছে কিংবা দূরে যেখানেই আছে, তারা জানেন, তালাবাহরা কোনদিনই পাকিস্তানী ইন্টিলিজেন্স এর খেলনা ছিল না। এখন আমেরিকা এবং পাকিস্তান সরকার উভয়েই তাদের দিকে এক তীরে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করছে। আর এখন তালাবাহ সারা দুনিয়ার কাছে প্রমাণ করে দিয়েছে-যে, তারাও রাজনীতি বুঝে, তারা আমেরিকানদের ট্রিকস এর ফাঁদে পড়ে না, আরব কিংবা নন আরব মুনাফিকদের ফাঁদে পড়ে না, বাকি সারা দুনিয়ার মানুষের ফাঁদেও না।
আফগান তালেবান


আমরা পুনরায় ফেরত যাচ্ছি সেই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহের দিকেকান্দাহারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার খবর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে লাগল, দলে দলে তালেবে ইলম’দের বহর আসতে লাগল, কান্দাহারের সীমানাবর্তী দক্ষিণ পশ্চিম প্রদেশগুলো থেকে জনসাধারণ আসতে লাগল, তারাও এই তালেবে ইলমদের কাছে অনুরোধ জানাল যেন তাদের প্রদেশের কর্তৃত্ব নেয়া হয় এবং সেখানেও শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারা সেই প্রদেশগুলোতে কর্তৃত্ব ও শরীয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সহায়তা করতে লাগলেন। আর এভাবেই, ‘তালিবান’- ‘তালেব’ শব্দটির পশতু বহুবচন, যার অর্থ ইসলামী শরীয়াহ’র ছাত্রবৃন্দ- আফগানিস্তানের এক পঞ্চমাংশ অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল, কোন ধরণের লড়াই ছাড়াই, বরং এখানে মানুষের নিরাপত্তা কামনা ও শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছাই ছিল প্রধান শক্তি।
 ,
আলেম, মৌলভী, মোল্লাহদের সামাজিক মর্যাদার কারণে; শরীয়াহ ইলমের ছাত্রদের প্রতি মানুষের সম্মানবোধের কারণে কোন রকম বড় বাধা ছাড়াই তালাবাহরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। উত্তরের প্রদেশ, পূর্বে সবদিকে, আর কাবুলের শাসক রব্বানী এর কাছে এই খবর পৌঁছেছিল যে, তার প্রতিদ্বন্দী হিকমাতায়ার এর লোকেরা নিজেদের কাবুল থেকে পৃথক করে নিয়েছে, তাই তিনি তালাবাহদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোন অফিসিয়াল অবস্থান ঘোষণা করেননি বরং তিনি শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সাহায্য করেন যেখানে মানুষের কাজের জবাবদিহিতা আছে। কিন্তু হিকমাতায়ার তার ফোর্সদের আদেশ করেন যেন তারা তালাবাহদের কাছে আত্মসমর্পণ না করে। তাই গযনী এলাকাতে কিছু সংঘর্ষ হল, এরপর উত্তর দিকে এভাবে কাবুলের দিকে একের পর এক এলাকা প্রায় উল্লেখযোগ্য কোন লড়াই ছাড়াই পতন হতে লাগল। এমনকি, বিভিন্ন দল গোষ্ঠী, যেমন চোর হাইওয়ে ডাকাত দল এরা পর্যন্ত শরীয়াহ ইলমের তালাবাহ বা ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দ্বন্দে ভুগতে লাগল।
,
অন্যান্য দল যেমন, ‘ইউনুস খালিস’ এরপর ‘হাক্কানী’ ফোর্স বাতকিয়াতে,খোস্তে তাদের ভূমি সমর্পণ করল, সায়াফে অধিকাংশ ফোর্স লড়াই থেকে বিরত থাকলো, নানকারহার এর রাজধানী জালালাবাদ এর লোকজন যখন তালাবাহদের সামনাসামনি দেখল, তাদের শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার কথা জানলো, আমর বিল মারুফ ওয়া নাহিয়ানিল মুনকার এর কথা জানতে পারল, তাদের নিরাপত্তা, হাইওয়ে চোর ডাকাত নিধনের কথা ইত্যাদি জানতে পারল তারাও তালাবাহদের সমর্থনে এগিয়ে এল।
 ,
এরপর তালাবাহরা কাবুলের কাছাকাছি পৌঁছে গেল, সেখানে একটি সাধারণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। ১৫০০ আলেমের উপস্থিতিতে ৩১ মার্চ হতে ৩রা এপ্রিলের সেই বৈঠকে মোল্লাহ মুহাম্মদ ওমর রাহিমাহুল্লাহ কে আনুষ্ঠানিকভাবে তালাবাহদের আমির নিযুক্ত করা হল এবং উপাধি প্রদান করা হল ‘আমির আল-মুমিনিন’, আর সেদিন থেকেই তালাবাহদের কাছে শরয়ী আমির হিসেবে তিনি গৃহীত হয়ে আসছেন আর তাদের মতে তাকে একজন খলীফার যাবতীয় দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তালাবাহরা কাবুলের সীমান্তে পৌঁছে গেলেন আর রব্বানীর কাছে কিছু অনুরোধ নিয়ে গেলেন যার মধ্যে প্রধান চারটি হচ্ছে,
১-শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে

২- সরকার হতে কমুনিষ্ট ও তাদের অনুসারীদের অপসারণ করতে হবে

৩- স্টেট ভবন হতে নারীদের অপসারণ করতে হবে

৪-দুর্নীতি, পতিতালয়, সিনেমা, গান-বাজনা, অশ্লীল ভিডিও ইত্যাদি নির্মূল করতে হবে

কাবুলের শাসক রব্বানী তালাবাহদের সাথে আলোচনা করার জন্য দূত পাঠাতে বললেন, তাই তারা আলেমদের দূত হিসেবে প্রেরণ করলেন, কিন্তু তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফোর্সদের দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হলেন, এমনকি তারা তাদের অস্ত্র সোপর্দ করবেন, মারামারি বন্ধ করবেন আর আলোচনা শুরু করবেন এই প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও তারা প্রেরিত দূতদের একটি অংশকে হত্যা করে আর বাকীদের ফেরত পাঠায়। যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াইশ জন। এরপর, এ ধরণের বিশ্বাসঘাতকতার পরে তালাবাহদের পক্ষ হতে কাবুল আক্রমণ করা ছাড়া আর কোন পথই খোলা রইল না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৬তম রজনীতে কাবুলের পতন হল।
 ,
তালেবানরা ১৯৯৭ সালে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল জয় করল, আর বামিয়ান- আফগানিস্তানে রাফেদিদের কেন্দ্র-এর পতন হল ১৯৯৮সালে, আর এর পূর্বে কায়ান উপত্যকা-যার নিয়ন্ত্রণে ছিল (শিয়া) আগা খানি ইসমাইলী সৈন্যরা-এরও পতন হল। আর এখানে তালেবানেরা যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গনীমতের মাল হিসেবে লাভ করল তা গণনা করা কোন সহজ কাজ ছিল না। আর বলা হয়ে থাকে আহল সুন্নাহ গত ৮০০ বছরে এই উপত্যকায় কখনো প্রবেশ করেনি।

,
আর এভাবেই, মাত্র চার বছরেরও কম সময়ে তালাবাহরা আফগানিস্তানের ৯৫ ভাগ এলাকাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারল-যার শুরু হয়েছিল সেই সেদিনের মুল্লা মুহাম্মদ ওমর-রাহিমাহুল্লাহ-এবং তাঁর ভাইদের একটি অন্যায়ের প্রতিবাদের থেকে, যখন তারা একতাবদ্ধ হয়েছিলেন একদল মুসলিম নারীর ইজ্জত রক্ষা করার জন্যে যাদেরকে অপহরণ করেছিল কিছু চোর আর হাইওয়ে ডাকাতদল।
 ,
এর পরের ইতিহাস সকলেরই জানা।তালেবান ক্ষমতাসীন হল।আফগানে শরীয়া প্রতিষ্ঠিত হল।শুধু মাত্র শরিয়া প্রতিষ্ঠিত করার কারনে আমেরিকা কাবুল আক্রমণ করল।শুরু হল আফগান ইন্দো আমেরিকান জিহাদ।পশ্চিমা বিশ্ব এটাকে নাম দিল সন্ত্রাসের বিরুধ্যে যুদ্ধ।বস্তুত ইহুদি খ্রিস্টানদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে এটা ছিল তাদের ধর্ম যুদ্ধ (ক্রুসেড)।গ্রহণযোগ্যতা পাওয়াতে তারাই ক্রুসেডের নাম দিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।খ্রিস্টানদের ধর্ম যুদ্ধের বিরুদ্ধে। যে মুসলিম বীরেরা জিহাদ করে যাচ্ছে আফসোস সেই বীরদের অনেক মুসলিম পশ্চিমাদের সুরে সন্ত্রাসী বলে।আপনি তালেবানদের সম্পর্কে যাই ভাবেন বা বলুন না কেন মনে রাখবেন আপনার কাটাযুক্ত কথা তাদের অগ্রযাত্রা রুখতে পারবেনা।পৃথিবীর পরাক্রমশালী ৫৭ টি দেশ একত্রে হয়েও রুখতে পারেনি।
,
,
"তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।" [সুরা সফ-৮]

“এবং আমার বাহিনীই (সবশেষে) বিজয়ী হবে”।
[ সূরা আস-সাফফাত, ৩৭ : ১৭৩ ]

“অন্য বহু বাহিনীর মতও এ বাহিনিও (কাফির বাহিনী) পরাজিত হবে”।
[ সূরা সোয়াদ, ৩৮ : ১১ ]


আল-কুর আন  সুরা নিছা আয়াত ৭৫






















Ad Code

Responsive Advertisement