Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

সমকামি এজেন্ডাঃ ব্লু-প্রিন্ট




 ১৯৮৭ সালে অ্যামেরিকান ম্যাগাযিন ‘গাইড’ এর নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয় মার্শাল কার্ক এবং হান্টার ম্যাডসেনের লেখা প্রায় ৫০০০ শব্দের একটি আর্টিকেল। দু’বছর পর নিউরোসাইক্রিয়াট্রি রিসার্চার কার্ক এবং পাবলিক রিলেইশান্স কনসালটেন্ট ম্যাডসেন একে পরিণত করেন ৩৯৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে। হান্টার ও ম্যাডসেনের এই আর্টিকেল উপস্থাপিত ধারণা ও নীতিগুলো পরবর্তী ৩ দশক জুড়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে রাজনীতি, মিডিয়া, অ্যাকাডেমিয়া, বিজ্ঞান, দর্শন ও চিন্তার জগতে। সারা বিশ্বজুড়ে। সমকামীদের ম্যাগাযিন গাইডে প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটির নাম ছিল “The Overhauling of Straight America ”। ৮৯ তে প্রকাশিত সম্প্রসারিত বইয়ের নাম দেওয়া হয় - After the Ball: How America Will Conquer Its Fear and Hatred of Gays in the 90s.  কার্ক ও ম্যাডসেনের উদ্দেশ্য ছিল সিম্পল –সমকামিতা ও সমকামিদের প্রতি অ্যামেরিকানদের মনোভাব বদলে দেওয়ার জন্য একটি স্টেপ বাই স্টেপ ব্লু-প্রিন্ট বা ম্যানুয়াল তৈরি করা।  কিন্তু কেন প্রায় তিন দশক পর বাংলাদেশে বসে কার্ক-ম্যাডসেনকে নিয়ে চিন্তা করা? কার্ক-ম্যাডসেনের নাম শুনেছেন বা তাদের লেখার সম্পর্কে জানেন এবং মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। শুধু বাংলাদেশেই না, বিশ্বজুড়েই। কিন্তু তাদের ব্লু-প্রিন্টের প্রভাব কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করে নি এমন সমাজ বা রাষ্ট্র খুজে পাওয়াটাও কঠিন।

গত ৩০ বছরে সমকামিতার স্বাভাবিকীকরন, সমকামিতাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সমকামিতার মধ্য এতোটা অস্বাভাবিক একটি বিষয়ের প্রতি মানুষের সংবেদনশীলতাকে নষ্ট করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা প্রায় হুবহু মিলে যায় কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের সাথে। আর বাংলাদেশেও সমকামিতার প্রচার, প্রসার এবং সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা তৈরির জন্য এখন এই একই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।  বর্তমানে ২২টি দেশে সমলৈঙ্গিক ‘বিয়ে’ আইনগত ভাবে স্বীকৃত। কোন আগ্রাসী সেনাবাহিনী শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে এদেশগুলোর জনগোষ্ঠীর উপর সমকামিতা চাপিয়ে দেয় নি। তবে নিঃসন্দেহে মানুষের স্বভাবজাত মূল্যবোধ, ফিতরাহর বিরুদ্ধে গিয়ে জঘন্য একটি বিকৃতিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দেওয়া, মানুষের মাঝে এই বিকৃতির গ্রহনযোগ্য তৈরি করা একটি যুদ্ধের অংশ। এই যুদ্ধ মনস্তাত্ত্বিক, আদর্শিক। এই যুদ্ধ সর্বব্যাপী এবং ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আপনি এই যুদ্ধের অংশ। আর এই যুদ্ধে শত্রুপক্ষের স্ট্র্যাটিজির মূল ভিত্তি কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট। আর তাই কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট সম্পর্কে জানা, শত্রুর কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানা একটি আবশক্যতা, কোন অ্যাকাডেমিক কৌতুহল না। তবে কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের দিকে তাকানোর আগে গত তিন দশকে এর অর্জিত সাফল্যের দিকে একটু তাকানো যাক।


The Overhauling of Straight America 

       একটা সহজ উদাহরন দিয়ে শুরু করা যাক। Gallup এর হিসেব অনুযায়ী ৮৭-তে, অর্থাৎ আর্টিকেলটি লেখার সময়, যাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ৩২% সমকামি সম্পর্ক বৈধ হওয়া উচিৎ বলে উত্তর দিয়েছিল। ৫৭% বলেছিল এধরনের কাজ সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ঘোষণা করা উচিৎ। ত্রিশ বছর পর ২০১৭ তে এসে দেখা গেল ব্যাপারটা প্রায় পুরোপুরি উল্টে গেছে। ৬৪% উত্তরদাতা এখন মনে করেন এধরনের বিয়ে বৈধ হওয়া উচিৎ, আর মাত্র ৩৪% এর বিরুদ্ধে [১]। ১৯৮৯ সালে ১৯% উত্তরদাতা বিশ্বাস করতেন মানুষ জন্মসূত্রে সমকামি হয়। ৪৮% মনে করতেন সমকামিরা সমকামিতাকে স্বেচ্ছায় বেছে নেয়। ত্রিশ বছরের কম সময়ের মধ্যে তে ৪২% উত্তরদাতা বিশ্বাস করা শুরু করলো সমকামিতা জন্মগত [২]।  

অথচ ১৯৭৩ সালের আগ পর্যন্ত খোদ অ্যামেরিকান সাইক্রিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশান সমকামিতাকে একটি মানসিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করতো। অর্থাৎ ৫০ বছর আগে যা বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে স্বীকৃত ছিল আজ অর্ধেকের বেশি মানুষ তার উল্টোটা বিশ্বাস করছে, যদিও সব বৈজ্ঞানিক গবেষনার ফলাফল বারবার বলছে সমকামিতার কোন জেনেটিক ভিত্তি নেই, এটি জন্মগত না, বরং স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া একটি বিকৃতি।  পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৫ তে এসে অ্যামেরিকান খ্রিস্টানদের ৫৪% মনে করে সমকামিতার বিরোধিতা করার বদলে সমকামিতাকে সামাজিক ভাবে মেনে নেওয়া উচিৎ। অ্যামেরিকান প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে ৬২% সমকামি ‘বিয়ে’-কে সমর্থন করে, আর ৬৩% মনে করে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস আর সমকামিতার মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই [৩]। অথচ সমকামিতা যে একটি জঘন্য বিকৃতি, চরম পর্যায়ের সীমালঙ্ঘন এবং অত্যন্ত ঘৃণিত পাপাচার এ ব্যাপারে বাইবেলের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট।   অ্যামেরিকান সমকামিতা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ GLAAD এর সমীক্ষ অনুযায়ী ২০১৬ সালে রিলিয  হওয়া প্রায় ১৭.৫% হলিউড সিনেমাতে LGBT (Lesbian,Gay, Bi-sexual, Queer) চরিত্রের উপস্থিতি ছিল [৪] । 

পাশাপাশি গত ১০ বছরের প্রায় সব প্রাইমটাইম টেলিভিশন শো-তে কমপক্ষে একটি সমকামি বা অন্যকোন বিকৃতকামি চরিত্র রাখা হয়েছে। কিন্তু Gallup এর মতে অ্যামেরিকার মোট সংখ্যার মাত্র ৩.৯% সমকামি। মিডিয়াতে সমকামিদের ওভাররিপ্রেসেন্টেশানের সঠিক মাত্রাটা বোঝার জন্য এ তথ্য মাথায় রাখুন যে অ্যামেরিকান মিডিয়ার দর্শক শুধু অ্যামেরিকাতেই সীমাবদ্ধ না। সারা পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ অ্যামেরিকান মিডিয়ার দর্শক ও ভোক্তা। এই কোটি কোটি মানুষের কাছে অ্যামেরিকান মিডিয়া সমকামিতা, সমকামি ‘বিয়ে’, সমকামি যৌনাচারকে সাধারন দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করছে। 

সর্বশেষ হিসেবে অনুযায়ী ২২টি দেশে সমকামি ‘বিয়ে’-কে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জার্মানির সংসদে গত ৩০শে জুন, ২০১৭ সমলৈঙ্গিক ‘বিয়ে’র স্বীকৃতিদানের পক্ষে বিল পাশ হয়েছে। উল্লেখ্য জার্মানির সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬ জন নিজেদের মুসলিম হিসেবে দাবি করে থাকে। এই ৪জনই এই বিকৃতি ও চরম সীমালঙ্ঘনের আইনগত বৈধতা দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।  রাজনীতি, অ্যাকাডেমিয়া এবং মিডিয়ার উপর এই ক্ষুদ্র বিকৃত মানসিকতার মাইনরটির প্রভাবের মাত্রা কতোটুকু তা শুধু উপরের তথ্যগুলোর আলোকে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব না। তবে একটা বেইসিক আইডিয়া এখান থেকে আপনি পাবেন। এই প্রভাবের উৎস কী? আর এই প্রভাবের ব্যাপ্তি কতোটুকু?

 আর একটা তথ্য দেই। আপনি নিজেই বাকি হিসেবটা মিলিয়ে নিন।  পৃথিবী জুড়ে অনেকগুলো অ্যাডভোকেসি গ্রুপ সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ধনী গ্রুপ হল HRC বা Human Rights Campaign। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে HRC-র বার্ষিক আয় ছিল ৩.৮৫ কোটি ডলার। এই অর্থের উৎস? বড় বড় কর্পোরেশানগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ডোনেইশান। HRC এর ডোনার এবং কর্পোরেট পার্টনারদের মধ্যে আছে স্টারবাকস, লিবার্টি মিউচুয়াল ইনশুরেন্স, অ্যামেরিকান এয়ারলাইন্স, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, ব্যাঙ্ক অফ অ্যামেরিকা, শেভরন, কোকাকোলা, পেপসিকো, লেক্সাস অটো, গুগল, অ্যামাযন, আইবিএম, নাইকি, গোল্ডম্যান অ্যান্ড স্যাক্স, জেপি মরগান চেইস অ্যান্ড কো, ডেল, শেল অয়েলসহ আরো অনেকে [৫]।   বিশাল বাজেটের ব্যাপক প্রভাবশালী এসব অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আসলে কী করে?

 লবিয়িং এর মাধ্যমে, প্রেশার গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে এবং অবশ্যই অর্থের মাধ্যমে এরা প্রভাবিত করে মিডিয়াকে, রাজনীতিবিদদের, সমকামিতার সাথে সংশ্লিস্ট বিভিন্ন রিসার্চকে (যাতে করে সমকামিতার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি করা যায়), এবং সরকারের পলিসিকে। যেমন অ্যামেরিকাতে এই মূহুর্তে অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো একটি প্রধান লক্ষ্য হল প্রতিটি স্কুলে, হাইস্কুল ও প্রাইমারি পর্যায়ে Gay-Straight Alliance Club অর্থাৎ স্বাভাবিক শিশু ও সমকামি শিশু ঐক্য পরিষদ জাতীয় কিছু তৈরি করা। প্রতিটি স্কুলে গড়ে ওঠা এই ক্লাবগুলোর কাজ হবে শিশুদের মধ্যে সমকামিতার প্রসার ঘটানো এবং স্বাভাবিকীকরন। 

 গ্লোবাল এজেন্ডা ও বাংলাদেশঃ

 বিষয়গুলো শুধু অ্যামেরিকাতে বা পশ্চিমা বিশ্বে সীমাবদ্ধ না। বরং সমকামিতার প্রচার, প্রসার ও স্বাভাবিকীকরনের এই এজেন্ডা গ্লোবাল, এবং বিশ্ব রাজনীতির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৯৯৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষণা করে সমকামিতা কোন অসুস্থতা না কোন বিকৃতিও না। অর্থাৎ সমকামিতা স্বাভাবিক। OHCHR, UNDP, UNFPA, UNHCR, UNICEF, UNODC, UN Women, WFP, ILO, UNESCO, World Bank এবং UNAIDS –সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বৈষম্য নিরসন মানবাধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার নামে উন্নতশীল দেশগুলোতে বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে সমকামিতার প্রচার, প্রসার ও স্বাভাবিকীকরনের জন্য কাজ করছে। এদের মধ্যে Office of the United Nations High Commissioner for Human Rights (OHCHR) সমকামিতাকে মানবাধিকারের সংজ্ঞার ভেতরে ফেলে এর প্রচার করছে [৬] ।

 OHCHR সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য Free & Equal নামে একটি আলাদা ক্যাম্পেইন চালু করেছে যার ঘোষিত উদ্দেশ্যে মাঝে আছে শিশুদের সমকামিতা সম্পর্কে সচেতন করা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ব্যবহারের মাধ্যমে সমকামিতা ও সমকামের প্রতি সহনশীলতা তৈরি করা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে সমকামিতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা [৭] । Free & Equal ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে জাতিসঙ্ঘ সমকামি ‘বিয়ে’-কে বৈধতা দেয়ার জন্য বলিউডের মিউযিক ভিডিও-ও তৈরি করেছে।   

 পৃথিবীর যেকোন জায়গায় সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য যা কিছু করা হচ্ছে, যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেগুলো এই গ্লোবাল এজেন্ডার অংশ। বাংলাদেশে যারা সমকামিতার প্রচার, প্রসার ও স্বাভাবিকীকরনের জন্য এখনো পর্যন্ত যেসব কাজ করা হয়েছে তার সবকিছুই কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের সাথে খাপেখাপে মিলে যায়। একারনে তাদের কর্মপদ্ধতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বোঝার জন্য কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট  সম্পর্কে ধারণা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা আলাদা ভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই।

 বরং যে মডেলের মাধ্যমে অ্যামেরিকায় অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে এখন সেই একই মডেল বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই পায়ুকাম প্রচার করা ইয়াহু চ্যাট গ্রুপ, ফেইসবুক গ্রুপ, ফোরাম, রুপবান ম্যাগাযিন, শাহবাগে সমকামি প্যারেড, বইমেলায় সমকামিতা নিয়ে কবিতার বই প্রকাশ, গ্রামীনফোনের ফান্ডিং এ আরটিভিতে প্রচারিত নাটক, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও এনজিও গুলোর মাধ্যমে পায়ুকামে উৎসাহিত করা, বিনামূল্যে কনডম-লুব্রিকেন্ট বিতরণ - এই সবকিছুকে দেখতে হবে একটি বৃহৎ, গ্লোবাল এজেন্ডার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে। যে বিষয়টা উপলব্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল শত্রুপক্ষ জানে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ বা কম্পোনেন্টের যেকোন একটা দিয়ে রাতারাতি জনমত বদলে ফেলা যাবে না। সেটা তাদের উদ্দেশ্যও না। বরং তাদের উদ্দেশ্য হল ছোট ছোট ইঙ্ক্রিমেন্টাল পরিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সামাজিক মূল্যবোধকে বদলে দেওয়া। এটাই কালচারাল সাবভারশানের টাইম-টেস্টেড পদ্ধতি। হঠাৎ করে একটা বড় পরিবর্তন সমাজে উপর চাপিয়ে দিতে চাইলে সেটা ব্যাকফায়ার করার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান মাত্রায় পরিবর্তনটা উপস্থাপন করা হয় তখন এক পর্যায়ে গিয়ে সমাজ তা মেনে নেয়।  


সহজ উদাহরনঃ একটা সময় বাংলাদেশে বুকে ওড়না না দিয়ে গলায় ওড়না দেয়াটা খারাপ মনে করা হতো। এই সময়টাতে যেসব মেয়েরা জিন্স-টিশার্ট পড়ে ঘুরে বেড়াতো তাদের ব্যাপারে সমাজের অধিকাংশের ধারণা ছিল এরা উগ্র, অশ্লীল ইত্যাদি। কিন্তু পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের ফলে যারা একসময় জিন্স-টিশার্ট পরিহিতাদের উগ্র বলতেন তারাই তাদের মেয়েদের এখন জিন্স-টিশার্ট পড়াচ্ছে, এবং ব্যাপারটা এখন প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে ‘নরমাল’। গলায় ওড়না ঝোলানো থেকে টি-শার্টে আসার ব্যাপারটা রাতারাতি করার চেস্টা সমাজ মেনে নেয়নি। বিরোধিতা করেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন পরিবর্তন হয়েছে তখন সেই একই সমাজ খুশি মনে একে মেনে নিয়েছে।   কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের প্রথম ধাপ এটাই। মানুষকে সমকামিতার ব্যাপারে ডিসেনসেটাইয করা।  . 
   

 ‘প্রথম কাজ হল সমকামি এবং সমকামিদের অধিকারের ব্যাপারে অ্যামেরিকার জনগনের চিন্তাকে অবশ করে দেওয়া, তাদের সংবেদনশীলতা নষ্ট করে দেওয়া [desensitization]। মানুষের চিন্তাকে অবশ করে দেওয়ার অর্থ হল সমকামিতার ব্যাপারে তাদের মধ্যে উদাসীনতা তৈরি করা...একজন স্ট্রবেরি ফ্লেইভারের আইস্ক্রিম পছন্দ করে আরেকজন ভ্যানিলা। একজন বেইসবল দেখে আরেকজন ফুটবল। এ আর এমন কী!’  [Kirk & Madsen, The Overhauling of Straight America ]


 কার্ক-ম্যাডসেনের মতে প্রাথমিক পর্যায়ে উদ্দেশ্য এই একটি। সমকামিতা  যে একটি জঘন্য বিকৃতি, চরম সীমালঙ্ঘন, ও ঘৃণ্য পাপাচার তা সম্পর্কে মানুষের সংবেদনশীলতাকে নষ্ট করে দেওয়া। তাদের ভাষায় –  

‘সমকামিতা একটি ভালো জিনিস - একেবারেই শুরুতেই তুমি সাধারন মানুষকে এটা বিশ্বাস করাতে পারবে, এমন আশা বাদ দাও। তবে যদি তুমি যদি তাদের চিন্তা করাতে পারো যে সমকামিতা হল আরেকটা জিনিষ (ভালো না খারাপ না – জাস্ট আরেকটা ব্যাপার) তাহলে ধরে নাও আইনগত ও সামাজিক অধিকারের আদায়ের লড়াইয়ে তুমি জিতে গেছো।’ [Kirk & Madsen, The Overhauling of Straight America ]


সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য যারা কাজ করছে তাদের রেটোরিক খেয়াল করলে দেখবেন তাদের অধিকাংশ ঠিক এই মেসেজটাই দিতে চাচ্ছে। ‘সমকামিতা ভালো বা খারাপ না, জীবনের একটা বাস্তবতা মাত্র’। পহেলা বৈশাখের সময় শাহবাগে সমকামি প্যারেড কিংবা ঈদের সময় ঈদের নাটক হিসেবে সমকামিদের গল্প তুলে ধরার পেছনে একটি মূল উদ্দেশ্য হল সমাজের বিকৃতকামী এক্সট্রিম মাইনরিটিকে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা। একই সাথে সমকামিতাকে ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত করা, যেমনটা জাতিসংঘের Free & Equal ক্যাম্পেইনেও করা হয়েছে।
ভিকটিমহুড – সমকামিতা জন্মগতঃ  কার্ক-ম্যাডসেনের আরেকটি সাজেশান হল সমকামিদের ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করা। সমকামিদের ভিকটিম হিসেবে চিত্রিত করার দুটি ডাইমেনশান থাকবে। প্রথমত, সমকামিতাকে একটি সিদ্ধান্তের পরিবর্তে প্রাকৃতিক বা জন্মগত হিসেবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে সমকামিদের জন্মগতভাবেই ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করা। দ্বিতীয়ত, সমকামিদের সমাজ দ্বারা নির্যাতিত হিসেবে চিহ্নিত করা।  বাংলাদেশে এবং বিশ্বজুড়ে যারা সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের কাজ করে তাদের প্রপাগ্যান্ডা ও বক্তব্য আপনি সবসময় এ দুটো মোটিফ দেখতে পাবেন। সমকামিরা জন্মগতভাবেই সমকামি এটা প্রমানের উদ্দেশ্য হল যদি সমকামিতাকে জন্মগত বা প্রাকৃতিক প্রমান করা যায় তাহলে সমকামিদের সম্পূর্ণ নৈতিক দায়মুক্তি সম্ভব। সমকামিতা যদি জন্মগত হয় তাহলে সমকামিতা একটি ‘অ্যাক্ট’ বা ক্রিয়া হিসেবে নৈতিকভাবে নিউট্রাল, কারন এর উপর ব্যক্তির কোন নিয়ন্ত্রন নেই। কিন্তু সমকামি জন্মগত – এই দাবির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তো নেই-ই, বরং বিভিন্ন পরীক্ষা ফলাফল ইঙ্গিত করে যে Sexual Oreintation নির্ভর করে ব্যক্তির ‘চয়েস’ বা স্বেচ্ছায় গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর [৮]।   

 আরেকটি বিষয় হল সমকামিতা যদি জন্মগত হয় তাহলে অন্যান্য বিকৃত যৌনাচার কেন জন্মগত বলে গন্য হবে না? শিশুকামি, বা পশুকামিদের কেন অপরাধী গণ্য করা হবে? ইন ফ্যাক্ট শিশুকামের সাথে সমকামের, বিশেষ করে পায়ুকামের সম্পর্ক তো হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন গ্রিসে শিশুদের সাথে মধ্য বয়স্ক পুরুষদের পায়ুকামী সম্পর্ক বা Pederasty প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে চালু ছিল  প্লেইটো তার রিপাবলিক ও ল’স – রচনাতে প্রাচীন পেডেরাস্টি এবং সমকামিতার ব্যাপক প্রচলনকে গ্রীসের অধঃপতনের একটি কারন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। অ্যামেরিকাতেও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের সাথে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অধিকারের জন্য আন্দোলন করা NAMBLA (North American Man Boy Love Association) – দীর্ঘদিন ছিল গে-প্রাইড প্যারেডের নিয়মিত অংশ। বিখ্যাত অ্যামেরিকান কবি সমকামি অ্যালেন গিন্সবার্গ (সেপ্টেবর অন যশোর রোড – এর রচয়িতা) ছিল NAMBLA এর সদস্য। এছাড়া অসংখ্য সমীক্ষার মাধ্যমে একথা প্রমাণিত যে সমকামিতার সাথে অন্যান্য যৌন বিকৃতির বিশেষ করে শিশুকামিতার ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে [ ৯]। সমকামিতার বিশেষ করে পায়ুকামিতার সাথে শিশুকামের গভীর সম্পর্কের ব্যাপারে সংক্ষেপে বোঝার জন্য পায়ুকামি ও শিশুকামি কেভিন বিশপের এই উক্তিটি যথেষ্ট -  

"Scratch the average homosexual and you will find a pedophile" [Kevin Bishop in an interview. Angella Johnson, “The man who loves to love boys,” Electronic Mail & Guardian, June 30, 1997]



 সুতরাং যদি সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষন জন্মগত হতে পারে তাহলে সমলিঙ্গের অল্পবয়েসীদের প্রতি আকর্ষন কেন জন্মগত হতে পারবে না? কেন ধর্ষনের তাড়না অনুভব ধর্ষকরা জন্মগত বিচ্যুতির কারনে ভিকটিম গণ্য হবে না? কেন পশুকাম জন্মগত বলে গণ্য হবে না? Sexual Oreintation যদি জন্মগতই তবে কেন তা কেবলমাত্র সমকামিদের ক্ষেত্রে জন্মগত বলে বিবেচিত হবে? কিন্তু সব যুক্তি, প্রমান এবং বিবেচনাবোধের বিরুদ্ধে গিয়ে সমকামের প্রচারকরা একে জন্মগত বলে যাচ্ছে। আর ‘জন্মগত’ এই বৈশিষ্ট্যের কারনে কেন সমকামিদের আলাদা ভাবে দেখা হবে, এ নিয়ে আবেগঘন বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। এবং এ দুটি দিক থেকে সমকামিদের ভিকটিম প্রমান করার মাধ্যমে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।  


মিডিয়াঃ কার্ক-ম্যাডসেনের মতে সমকামিতার স্বাভাবিকীকরন ও গ্রহনযোগ্যতা তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমের একটি হল মিডিয়া। বিশেষ করে ভিযুয়াল মিডিয়া –

‘সোজা ভাষায়, ভিযুয়াল মিডিয়া, টিভি ও সিনেমা হল ভাবমূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে পশ্চিমা সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালি মাধ্যম। অ্যামেরিকান প্রতিদিন গড়ে টিভি দেখে। এই সাতঘন্টা সময় সাধারন মানুষের চিন্তার জগতে ঢোকার এমন একটি দরজা আমাদের জন্য খুলে রেখেছে যার মধ্য দিয়ে একটা ট্রোজান হর্স ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব...যতো বেশি ও যতো উচ্চস্বরে সম্ভব, সমকাম, সমকামিতা এবং সমকামিদের কথা বলুন। বারবার দেখতে দেখতে থাকলে প্রায় যেকোন কাজই মানুষের কাছে ‘নরমাল’ মনে হওয়া শুরু করে...তবে মানুষের সামনে আগেই সমকামি আচরণ উপস্থাপন করা যাবে না – কারন তা মানুষের কাছে জঘন্য বলে মনে হবে এবং মানুষ সমকামিতার বিরুদ্ধে চলে যাবে। তাই সমকামিদের যৌনাচার সাধারন মানুষের সামনে উপস্থাপন করা যাবে না। আগে তাবুর মধ্যে উটের নাক ঢুকাতে দিন, তারপর আস্তে আস্তে বাকিটাও ঢুকানো যাবে।’ [Kirk & Madsen, The Overhauling of Straight America ]


 আর বাস্তবিকই ধীরে ধীরে এই দরজার মধ্য দিয়ে ট্রোজান হর্স ঢুকাতে সমকামি মাফিয়া সমর্থ হয়েছে। ৯০ এবং ২০০০ এর প্রথম দশক জুড়ে বিভিন্ন ডেইলি সোপ ধীরে ধীরে সাধারন অ্যামেরিকানদের মধ্যে সমকামিতার গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জৌ বাইডেন ২০১২ সালে সরাসরি সমকামিতা প্রচার করা টিভি সিরিয ‘উইল অ্যান্ড গ্রেইস’-এর নাম উল্লেখ করে বলে –

“একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষকে একজন নারী আরেকজন নারীকে বিয়ে করবে এতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই...আমার মনে হয় না অ্যামেরিকান মানুষকে (সমকামিতা সম্পর্কে) শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে উইল অ্যান্ড গ্রেইসের মতো ভূমিকা আর কেউ বা আর কোন কিছু রাখতে পেরেছে। যা অন্যরকম মানুষ সেটাকে ভয় পায়। কিন্তু এখন মানুষ (সমকামিতার ব্যাপারে) বুঝতে শুরু করেছে।”[১০]



   আর একইভাবে আজ বাংলাদেশেও এই একই দরজার ভেতর দিয়ে সেই একই ট্রোজান হর্স ঢোকানোর জন্য কর্মতৎপরতা চলছে। কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট বাংলাদেশে প্রায় অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সমকামিতার প্রচারে মিডিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্ক-ম্যাডসেনের মত ছিল প্রাথমিকভাবে প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করা, এবং তারপর ধীরে ধীরে ভিযুয়াল মিডিয়ার দিকে আগানো। বাংলাদেশে সমকামিতা প্রচারের কাজ শুরু হয় ৯০ এর দশকের শেষের দিকে। প্রাথমিকভাবে সমকামিতা প্রচারকদের কাজ ছিল অনলাইন চ্যাট গ্রুপ, মেইল গ্রুপ, ফোরাম ইত্যাদির মাধ্যমে সমকামিদের মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচিতি তৈরি করা, বিভিন্ন সময় একত্রে ‘মিলিত’ হওয়া এবং কিছু নির্দিষ্ট অঙ্গনে সমকামিতার প্রচার করা, এবং সমকামিতার পক্ষে জনমত তৈরি করা। 

পাবলিক স্ফেয়ারে যখন তারা তাদের বিকৃতি প্রচারের শুরু করে তখন তারা সেটা করে প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে। ২০১০ সালে বইমেলায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে বের হয় কুখ্যাত মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অ্যামেরিকা প্রবাসি ইসলামবিদ্বেষি অভিজিৎ রায়ের বই ‘সমকামিতা’। অভিজিৎ রায় এই বইয়ে বিজ্ঞানের জগাখিচুড়ি ব্যাখ্যা দিয়ে, এবং নানা লজিকাল ফ্যালাসি ব্যবহার করে সমকামিতা-কে স্বাভাবিক মানবিক আচরণ হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করে। তার অন্যান্য লেখার মতো এই লেখাটিও ছিল মূলত বিভিন্ন পশ্চিমা লেখকের লেখার ছায়া অনুবাদ। ২০১০ সালে অগাস্টে   আলতাফ শাহনেওয়াজ নামে একজনের  লেখা অভিজিৎ রায়ের বইটির রিভিউ প্রকাশ করে প্রথম আলো। আর এর মাধ্যমে প্রায় সবার অলক্ষ্যে তাদের বিশাল পাঠকবেইসের ড্রয়িং রূপে এই জঘন্য বিকৃতির সাফাই পৌছে দেয় প্রথম আলো।  




বাংলাদেশে প্রকাশ্যে সমকামিতার প্রসারে পরবর্তী বড় পদক্ষেপটি আসে ২০১৪ সালে, রূপবান নামে একটি ম্যাগাযিনের মাধ্যমে। আর এই ম্যাগাযিনের পক্ষে প্রচারনা চালানো হয় প্রিন্ট মিডিয়া (যেমন ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে) এবং অনলাইনের মাধ্যমে। ২০১৪ সালে রূপবানের প্রথম সংখ্যার প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ হাই-কমিশনার রবার্ট গিবসন, ব্যারিস্টার সারা হোসেনসহ আরো অনেকে। এ থেকে গ্লোবাল সমকামি মাফিয়ার প্রভাব এবং বাংলাদেশে এদের বিস্তার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। ম্যাগাযিনটির প্রকাশনার খবর ফলাও করে প্রচার করা হয় ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা ট্রিবিউন, বিবিসি সহ বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমে। রূপবান পত্রিকার সম্পাদক ছিল সাবেক পররাস্ট্রমন্ত্রী দীপুমনির আত্মীয় অ্যামেরিকান দূতাবাসে চাকরিরত জুলহাস মান্নান। পরবর্তীতে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা অভিজিৎ রায় এবং জুলহাস মান্নানকে যথাক্রমে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হত্যা করে [১১]। 

 কার্ক-ম্যাডসেনের প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যবহারের পর এবার বাংলাদেশে সমকামিতার প্রচারকরা ভিযুয়াল মিডিয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া শুরু করেছে। সম্প্রতি আরটিভিতে প্রচারিত নাটক তাই নতুন কিছু না, বরং প্রায় দুই দশক পুরনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নতুন একট পর্যায়ের শুরু কেবল। গ্রামীনফোন প্রযোজিত এই নাটকে হুবহু কার্ক-ম্যাডসেনের শিখিয়ে দেওয়া ‘যুক্তি’গুলোই তুলে ধরা হয়েছে, এবং নাটকের ডায়ালগের মাধ্যমে সমকামিতাকে জন্মগত ও স্বাভাবিক, এবং সমকামিতা নৈতিকভাবে নিউট্রাল একটি কাজ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। নাটকে দেখানো হয়েছে সমকামি চরিত্রের পক্ষ নিয়ে একটি চরিত্র আরেকটি চরিত্রকে বলছেঃ 


‘ও পায়ুকামি (not straight), এটা কি ওর দোষ? সে কি এটাকে বেছে নিয়েছে? না। ওয়ার্ল্ডে নানা ধরনের মানুষ থাকে, তাহলে ও কেন থাকতে পারবে না? ও কি অস্বাভাবিক? না। ও কি একজন অপরাধী? না। ও তোমার আমার মতোই নরমাল মানুষ।’ [রেইনবো,আরটিভি,নির্মাতাঃ আশফাক নিপুন, প্রযোজনাঃ গ্রামীন ফোন ] 

  
 যদি বাংলাদেশে কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট নির্বিঘ্নে অনুসৃত হতে থাকে তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা এরকম আরো অনেক নাটক, শর্টফিল্ম, স্কিট এবং জনসচেতনতা মূলক বিজ্ঞাপন দেখতে পাবো। এক পর্যায়ে পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতাগুলোতে সমকামিতার স্বপক্ষে প্রবন্ধ ছাপা হবে। সমকামিতা নিয়ে বানানো নাটক ও সিনেমাকে জাতীয় পুরষ্কার, মেরিল প্রথম-আলো পুরস্কার সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরষ্কার দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমকামি অধিকার সম্পর্কে প্রকাশ্যে নানা ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হবে, পাবলিক স্কুলের কারিকুলামে সমকামিতা ও সমকামি অধিকার সম্পর্কে আলোচনা যুক্ত করা হবে। এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে সমকামি কোন তরুন বা তরুণীকে দেশী ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে ইয়ুথ আইকন হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। আর এভাবে ধীরে ধীরে সমকামিতাকে সামাজিক ও রাস্ট্রীয়ভাবে গ্রহনযোগ্য করে তোলা হবে একসময় একে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া হবে। অথবা আইনগত স্বীকৃতি ছাড়াই একসময় সমকামিতে সমাজে ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা লাভ করবে, যেমনটা বর্তমানে যিনার ক্ষেত্রে হয়েছে।  যদি এইভাবেই চলতে থাকে তাহলে অত্যন্ত অন্ধকার এক ভবিষ্যৎ এর মোকাবেলা আমাদের করতে হবে। 

তাই এ ব্যাপারটা বোঝা জরুরী যে এ দ্বন্দ্বটা সাময়িক কিছু না। কোন একটা নাটক বা বই বা ম্যাগাযিনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ সমকামিতাকে রাতারাতি গ্রহনযোগ্যতা দিতে চাচ্ছে না। এই নাটক, বই বা ম্যাগাযিনগুলোও এভাবে বানানো হচ্ছে না। তারা চাচ্ছে ক্রমাগত মানুষের সামনে সমকামিতা, ও সমকামিতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে, সমকামিতাকে স্বাভাবিক প্রমান করতে। প্রাকৃতিক প্রমান করতে। এই ব্যাপারে মানুষের সংবেদনশীলতা নষ্ট করে দিতে। মানুষকে ডিসেনসেটাইয করতে। জনমতকে পরিবর্তন করতে, সামাজিক মূল্যবোধকে বদলে দিতে। প্রতিপক্ষের আছে প্রায় অফুরন্ত ফান্ডিং, মিডিয়া এবং আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক সমর্থন। সুতরাং একটি নাটকের পর সেই নাটক নিয়ে লেখালেখি করলে অনেক মানুষ এসব সম্পর্কে জেনে যাবে – এমন ধারণা যেমন সঠিক না, তেমনি ভাবে একটি নাটকের পর কেবলমাত্র আরটিভি-গ্রামীনফোন বর্জনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হারানো যাবে এমন চিন্তা করাও ভুল। যদি আসলেই এই বিশাল মেশিনারীকে থামাতে হয়, যদি এই এজেন্ডার বাস্তবায়নকে বন্ধ করতে হয় তাহলে সমকামি এজেন্ডা বাস্তবায়নের পেছনে থাকা কাঠামো সম্পর্কে জানতে হবে, একে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। তবে সেই আলোচনা আরেক দিনের জন্য তোলা থাক।


গণতন্ত্র দিয়ে কি মনজিলে মকসুদে পৌঁছা যাবে??


রহমান রহিম আল্লাহর নামে,

 যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নিই যে শরীআ পরিস্থিতির কারনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে মৃদু সম্মতি দেয়, তাহলেই কি আমরা সেই মনজিলে মকসুদে পৌছঁতে পারবো যা আমরা চাই??

আসলে দুনিয়ার অনেক বিষয়ই আছে যেটা অনেকটা গণিতের মত, গাণিতিক সমীকরন দিয়েই বুঝে ফেলা যায়, এর জন্য বছরের পর বছর টেস্ট প্রজেক্ট খেলে খেলে মিশর আর আলজেরিয়া হতে হয় না। x^2 = -1 এই সমীকরণের যেমন কোন বাস্তব সমাধান নেই, কাল্পনিক একটা বিষয়, ঠিক তেমনি গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চিন্তভাবনাও কোন বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা নয়, নিছক দিবাস্বপ্ন মাত্র। এখানে x এর লক্ষ-কোটি মান একের পর এক বসিয়ে পরীক্ষা করার দরকার নেই, সমীকরণই বলে দিচ্ছে যে এর কোন বাস্তব সমাধান নেই। 1 এর উপরে সূচক (Power) হিসেবে (অর্থাৎ 1^x) যা-ই বসাও না কেন ফলাফল কখনই 100 হবে না। চাই 1 এর উপর সূচক (Power) 1oo বসাও, 1 লাখ বসাও কিংবা 1 কোটি বসাও, ফলাফল শুধু এবং শুধুমাত্র 1 ই হবে, এর বেশি কিছুতেই হবে না।

 গাণিতিক যুক্তিগুলো যদি কারও বুঝতে অসুবিধা হয়, তার জন্যে সহজ করে বলি-  গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন, মইয়ের উপর মই বসিয়ে চাঁদে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নের চেয়েও অবাস্তব।  পাকিস্তানের অন্যতম ইসলামী চিন্তাবিদ Dr. Israr Ahmed যিনি একসময় জামাআতে ইসলামী করতেন, এক আলোচনায় ‘গণতন্ত্র দিয়ে কখনই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যাবে না’- এর কারন হিসেবে বলেছিলেন-

১.কুফর-শির্ককে মিটিয়ে দিয়ে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার পর ইসলামী রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল- নামায কায়েম করা। এবং এ কাজ না করলে হাদীসে শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার অনুমতিও আছে।  মহান আল্লাহ বলেন-
“আমি তাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করলে  তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকর্মের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে, আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে”। [সূরা হাজ্জ : ৪১]
সহীহ মুসলিমে আউফ বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। নবী (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম নেতা তারাই যাদেরকে তোমরা ভালোবাসো আর তারাও তোমাদেরকে ভালোবাসে এবং তারা তোমাদের জন্য দুআ করে এবং তোমরাও তাদের জন্য দুআ কর। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নেতা তারা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তোমরা তাদের অভিসম্পাত করো এবং তারাও তোমাদের অভিসম্পাত করে।  রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তলোয়ার দিয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করবো না?? আল্লাহর নবী (সঃ) বললেনঃ না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মাঝে সালাত কায়েম রাখে ততক্ষণ পর্যন্ত নয়”।
নামায কায়েমের ব্যাপারে রাষ্ট্রের কর্তব্য কি? এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফার (রহঃ )মত হল বে-নামাযীকে তওবা না করা পর্যন্ত জেলে বন্দী রাখা হবে আর অন্যান্য আলেমদের মত হল তাদেরকে তওবার আহ্বান জানানো হবে অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে।  [সূত্রঃ তাফসীরে সূরা তাওবা/ ড. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম রহঃ, সালাত পরিত্যগকারীর বিধান/ ইবনে উসাইমীন রহঃ]
এখন, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার সবচেয়ে Vital একটি Element এ গণতন্ত্র কতটুকু সফল হবে??ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে দেশের মাত্র ২% মানুষ নিয়মিতভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায  পড়ে। তাহলে আপনি কি করে আশা করেন যে তারা নামায কায়েমের এ ধরনের বিধানের পক্ষে ভোট দিবে?? অর্থাৎ তাদের ভোটে ইসলামী বিধান বাস্তবায়িত হবে এটা একটা আকাশ কুসুম কল্পনা।
ইনফ্যাক্ট গণতন্ত্রবাদী কোন একটি ইসলামি দল যদি ভাগ্যক্রমে ক্ষমতায় আসেও, তবুও তারা কখনই নামায কায়েম করবে না। কেননা এতে পরের নির্বাচনে তাদের ভরা ডুবির আশংকা আছে!!

[ এ বিষয়টা আরো একটু পরিষ্কার করিঃ  যদি কোন রাষ্ট্রের শতভাগ মুসলিম নামায পড়ে তবুও আমরা ঐ রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র বলবো না, যদি না সেখানে রষ্ট্রীয়ভাবে বেনামাযীর শাস্তির বিধান না থাকে। কিন্তু যে রাষ্ট্রে বেনামাযীর শাস্তির বিধান আছে, চাই সে রাষ্ট্রের সবাই নামায নাও পড়ুক তবুও সেটা ইসলামিক রাষ্ট্র। বস্তুত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্ক সম্যক আইডিয়া না থাকার কারনেই এই বিভ্রান্তগুলো ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ তো এমনটিও মনে করে যে তাদের দল পার্লামেন্টের ১৫১ টা সিট পেলেই বুঝি রাষ্ট্র ইসলামী হয়ে যাবে!!]

২.ইসলাম নামক মুক্তির বিহঙ্গ আজ জাতীয়তাবাদ নামক লোহার খাঁচায় বন্দী। মুসলিমদের সীসা-ঢালা ভাতৃত্বের বন্ধন আজ বৃটেন, ফ্রান্সের এঁকে দেওয়া সীমারেখায় কেঁদে কেঁদে মরছে। গণতন্ত্র কি পারবে এ লোহার খাঁচা ভেঙে উম্মাহকে পুনরায় ঐক্য আর মুক্তির স্বাদ দিতে ??

৩.কোন ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম থেকে ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান হয়ে গেলে কিংবা নাস্তিক হয়ে গেলে ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল তাকে তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসার আহ্বান জানানো। এতে যদি সে অপরাগ হয় তাহলে রাষ্ট্রের কর্তব্য হল তাকে ক্বতল করা।রাসূল (সঃ) বলেছেন-
“যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে পরিত্যাগ করে (বা বদলে ফেলে), তাকে ক্বতল কর”।  [ সহীহ বুখারী-২৭৯৪ ]
ইমাম তিরমিযী  তাঁর জামে তিরমিযীর ১৪৫৮ নম্বর হাদীস-  من بدل دينه فاقتلوه  অর্থাৎ যে তার দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে-এর অধীনে লিখেছেন-
والعمل على هذا عند أهل العلم في المرتدঅর্থাৎ  মুরতাদের শাস্তির বিষয়ে ইলমের সকল ধারক-বাহকের নিকট এটাই অনুসৃত বিধান।
আপনার কি মনে হয় যারা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ পরিচালনা করছে, কোটি কোটি ডলার খরচ করছে মানুষকে ধর্মান্তরিত করার জন্য, তারা এত সহজে আপনাকে এই আইন বাস্তবায়ন করতে দিবে??
 ৪.ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তা ইয়াহুদী খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে জিযিয়া আদায় করবে।  ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহঃ,
 “আর তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়”  (সূরা আনফাল : ৩৯)
এই আয়াতের উল্লেখ করে বলেন –“আল জিহাদের লক্ষ্য  তো এটাই যে  আল্লাহর কালিমা সুউচ্চ হবে  এবং  দ্বীন সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে”।তিনি আরো বলেন-
“দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ হল- কাফিররা নত হবে এবং তাদের নেতাদের উপর জিযিয়া কার্যকর হবে এবং তাদের উপর দাসত্ব চাপানো হবে- এটাই আল্লাহর দ্বীনের দাবী।  এর একেবারে বিপরীত হল কাফিরদেরকে তাদের ক্ষমতা বজায় রেখে যেভাবে খুশী তাদের দ্বীন প্রচারের সুবিধা করে দেওয়া যাতে তারা ক্ষমতাশীল ও দৃঢ়পদ হয়”। [আহকামুল যিম্মাহ]
 যারা কারনে অকারনে মার্কিন দূতাবাসে ধন্যা দেয়, তারা এটা করার সাহস দেখাবে বলে কি আপনার মনে হয়?? কুফফারদের ফর্মুলা Follow করে তাদের স্বার্থবিরোধী আইনের স্বপ্ন দেখা কি নিছক বিভ্রান্তি নয়??

৫. ইসলামী রাষ্ট্র ইসলাম বিরোধী সকল প্রকার বাতিল মতবাদ, মানব রচিত তন্ত্র-মন্ত্র ও দলকে নিষিদ্ধ করবে- চাই তারা বামপন্থী হোক, সেক্যুলারপন্থী হোক, কিংবা জাতীয়তাবাদী হোক। তাদেরকে তওবা করার আহ্বান জানানো হবে, অন্যথায় তাদেরকে মুরতাদ ঘোষণা করে হত্যা করা হবে।

শুধু তাই নয়, ইসলামে  ‘সরকারী দল’ এবং  ‘বিরোধী দল’  এ জাতীয় পরিভাষাগুলো সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য, সকল প্রকার দলাদলি নিষিদ্ধ, এক আমীরের নেতৃত্বে গোটা উম্মাহ- এটাই হল ইসলামিক মডেল। বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্বীকার করে নিয়ে এ কাজ করার সুযোগ কোথায়??জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসে তাদের প্রিয় নাস্তিক-বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিককে হত্যা করার নৈতিক শক্তি একটি ইসলামি দল কই পাবে?

  রাজনৈতিক দলসমূহকে নিষিদ্ধ করতে গেলে কার্যত গণতন্ত্রকেই কবর চাপা দিতে হবে।  যে জনগণের কাছ থেকে ভোটভিক্ষার মাধ্যমে দলটি ক্ষমতায় এসেছে তারা এটা মানবে কেন?? ঐ সমস্ত দলগুলো বা তাদের সাপোর্টাররাইবা বসে থাকবে কেন?? আর পশ্চিমারাইবা বসে বসে আঙুল চুষবে কেন??


৬.একটি ইসলামী রাষ্ট্র সকল প্রকার অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, যত্রতত্র বেপর্দা চলাফেরা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, সহশিক্ষা, অশ্লীল নাটক, সিনেমা, যাত্রাপালা নিষিদ্ধ করবে। সিনেমা হল, নাইটক্লাব, মদের বার, ডিজে পার্টি, নিষিদ্ধ গানের আসর বন্ধ করবে। সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র ভেঙ্গে ফেলবে। ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী পত্র-পত্রিকা, ম্যগাজিন, ব্লগ, সাময়িকী, বইপত্র, কবিতা, উপন্যাস, সাহিত্য নিষিদ্ধ করবে। বিবাহিত ব্যভিচারীকে রজম করে হত্যা করবে, সমকামীদের হত্যা করবে। চারুকলা-কারুকলার নামে নিষিদ্ধ মূর্তি-ভাস্কর্য তৈরির চর্চা বন্ধ করবে। গণতান্ত্রিক পন্থায় এসব করার সুযোগ কোথায়??

আপনি যদি ক্ষমতায় যেতে চান তাহলে আপনাকে জনপ্রিয়তা খুঁজতে হবে। আর আপনি যদি জনপ্রিয়তা খুঁজতে চান তাহলে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা আপনার নিজের মাঝেই ইসলাম থাকবে না।  আসলে জনপ্রিয়তার রাজনীতিই আজকের ইসলামী দলসমূহের আদর্শিক অধঃপতনের প্রধান কারন।
আল কুরআনে আল্লাহ বলেন,
“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করেন তবে  তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করে দেবে;  তারা শুধু নিছক ধারণা ও অনুমানের অনুসরণ করে, আর তারা ধারণা ও অনুমান ছাড়া কিছুই করছে না”। [আল-আনআম : ১১৬]
আরো একটা লক্ষণীয় বিষয় হল, মহান আল্লাহ বলেন-
“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং তুমি মানুষকে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবে   …….. “    [সূরা নাসর]
কাজেই ইসলামের বিজয় আসলেই মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করবে। কিন্তু গনতন্ত্রী ভাইয়েরা উল্টো বুঝে মনে করেন, আগে মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করবে, তারপরে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সূত্রে তারা ইসলামের বিজয় ঘটাবেন!!

৭.সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থাকে উৎখাত করতে গেলে এবং যাকাত ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করতে গেলে দেশের ভোগবাদী ধনিক শ্রেণী আপনাকে অপসারন করার সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাবে। কেননা এই সুদের জোরেই তারা জিইয়ে রেখেছে তাদের আদিগন্ত ভোগলিপ্সা, শাসন, শোষণ, অবৈধ কর্তৃত্ব আর সম্পদের বিশাল পাহাড়। 

আর একথা তো সর্বজনবিদিত যে বর্তমান পুঁজিবাদ নির্ভর গনতন্ত্রের পেছনের কলকাঠি নাড়ে এই ব্যবসায়ী গ্রুপ।  আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর যুগেও একটা গ্রুপ যাকাত না দেওয়ার জন্য অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছিল । তাহলে তো বর্তমান যুগের পুঁজিবাদীদের কথা বলাই বাহুল্য।


৮.মিশর কিংবা আলজেরিয়ার মত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দরকার পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ। গণতন্ত্রবাদীদের এসব পরিস্থিত ট্যাকল দেওয়ার প্রস্তুতি কতটুকু?? তাদের প্রস্তুতি তো কেবল পোস্টারিং আর দেওয়াল লিখন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বরং তারা এ ধরনের প্রস্তুতিকে অসাংবিধানিক ও অনিয়মতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে থাকে। অথচ আলেমদের পরিষ্কার মত হচ্ছে সার্বক্ষনিক জিহাদের প্রস্তুতি মুসলিমদের জন্য ফরয, চাই যুদ্ধের পরিস্থিতি থাকুক, আর নাই থাকুক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন-
“তোমরা কাফিরদের মোকাবেলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদা সজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে”। [সূরা আনফাল ৬০]
“কাফেররা কামনা করে যেন তোমরা অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাব সম্পর্কে অসতর্ক হও যাতে তারা তোমাদের একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে”। [সূরা নিসা ১০২]
 রাসূল (সঃ) বলেছেন –
 তোমরা অনেক রাষ্ট্র জয় করবে এবং তোমরা নিরাপদ নিশ্চিন্তে থাকবে। যদি তা হয়  তবুও তোমরা তীরন্দাজী ছেড়ে দিও না”।   [ সহীহ মুসলিম, উকবাহ (রাঃ) এর বর্ণনায়]
আসলে গণতন্ত্র হল কুফফারদের তৈরি করা ফাঁদ। যখন তারা দেখবে একটি ইসলামী দল ক্ষমতায় চলে এসেছে তখন তারা মিথ্যা অভিযোগে তাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালাবে এবং তখনও তারা গণতন্ত্র রক্ষারই অজুহাত দিবে!!



দেখুন ইতিহাস কি বলে-

তুরস্ক 


  • আরবী ভাষায় আযান পুনরায় চালু করার জন্যে ১৯৬০ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আদনান মেন্দারেসের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয় এরপর তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
  • ১৯৮০ সালে তুরস্কের সেক্যুলার সেনাবাহিনী, মধ্যমপন্থী-ইসলামপন্থী কোয়ালিশনের সরকারকে আবার ক্ষমতাচ্যুত করে। ইসলামী দল নিষিদ্ধ করে।
  • ১৯৯৭ সালে তুরস্কের ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রী নাজিম€Œ উদ্দীন আরবাকান কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সেনাবাহিনীর চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। 

 তিউনিসিয়া

  • ১৯৮৯ সালে তিউনিসিয়ার সেনাবাহিনী ও পশ্চিমা সমর্থিত শাসক যখন দেখতে পেল রশীদ ঘানুশীর নেতৃত্বাধীন ‘আন নাহদা’ নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাধা স্বত্তেও স্বতন্ত্রভাবেই বিপুল ভোট পাচ্ছে, তখন ২৫ হাজার ইসলামপন্থীকে বিশৃংখলা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে জেলে ঢুকিয়ে দেয় আর সেই সাথে কয়েকজন নেতাকে ফাঁসিতেও লটকে দেয়।

আলজেরিয়া

  • ১৯৯২ সালে আলজেরিয়াতে ‘ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট’ যখন বিপুল ভোটে বিজয়ী হল তখন সেখানে সামরিক অভ্যত্থান ঘটানো হল। ৩০ হাজার ইসলামপন্থীকে জেলে ঢুকানো হল। শুরু হল গৃহযুদ্ধ।

ফিলিস্তিন

  • ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস বিজয়ী হয়।  শুরু হয়ে যায় ইজরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের হাউকাউ। ইজরায়েল গাজা আক্রমণ করে। শুরু হয় অবরোধ।

মিশর

  • ২০১২ সালের জুন মাসে ১ম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুহাম্মাদ মুরসি মিশরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই মুরসির বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। 
  • হাজার হাজার কর্মী-সমর্থদের হত্যা করা হয়। বর্তমানে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদেরকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যালিম আল ফাত্তাহ সিসি।
[ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরে যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগকেই প্রকৃত অর্থে  Islamic Party বলা যায় না, বড়জোর  ইসলাম ঘেঁষা জাতীয় রাজনৈতিক দল  বলা যায়। আর যাদেরকে কিছুটা বলা চলে, তারাও তাদের ক্ষমতাসীন অবস্থায় দ্বীন কায়েম করতে পারে নি, কারন ইসলামী রাষ্ট্রের  Very Very Fundamental Criteria  পূরন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।]

গনতন্ত্র নিয়ে আক্ষেপ করতে গিয়ে এক ভাই একবার বলেছিলেন-
“গনতন্ত্র এমন একটা ধর্ম যা তার অনুসারীদের বেঁধে দেয়, বুলেটের আঘাতে তোমাদের বুক ঝাঁঝরা করে দিলেও তোমরা সর্বোচ্চ  রাস্তায় গিয়ে একটু প্ল্যাকার্ড হাতে দাড়িয়ে থাকতে পারবে। আর এতটুকু করতে পারলেই তারা এই ভেবে পরিতৃপ্ত হয়ে যায় যে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় হয়ে গিয়েছে”!! 

৯.আমেরিকার  RAND  ইন্টস্টিটিউশন  মডারেট মুসলিমদের  যে চারটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছে এবং যেগুলো তারা আমাদের উপর Impose করতে চায়, তার দুটি হল-

1. Accepting Democracy as understood in the liberal western traditions (not in islamic perspective)

2. Acceptance of non sectarian source of law. Those who want laws from a particular scriptures are extremist!!!

বিস্তারিত ইমাম আনোয়ার আল আওলাকির ‘The Battles of Hearts & Minds’  লেকচারটা শুনুন।

ইংরেজি ভাষায় এখানে শুনুন

বাংলায় অনুবাদ লিখিত ভার্সন 

আপনি হয়তো ভাবছেন Democracy গ্রহণ করলেই পশ্চিমারা আপনার উপর খুশি হয়ে যাবে, Moderate মুসলিম ঘোষণা করবে, তা কিন্তু নয়। তারা স্পষ্ট করেই বলেছে সেই গনতন্ত্র নয় যে গণতন্ত্র আপনি বুঝেন বা যা চান, বরং তাদের বক্তব্য একেবারে পরিষ্কার-  Accepting Democracy as understood in the liberal western traditions  এবং তারা গনতন্ত্রবাদী ইসলামী দল ইস্যুতে বলেছে-  as in the case of present Egyptian Muslim Brotherhood is not Enough.  প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন,  RAND  ইন্টস্টিটিউশনের সংজ্ঞায় যেটা Moderate Islam  আমাদের কাছে তা  পরিষ্কার কুফর।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন-  
“ইয়াহুদী খৃষ্টানরা কখনই তোমার উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের দ্বীনের অনুসরণ কর”।  [সূরা বাকারা : ১২০]

১০.প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী হবার সবচেয়ে সহজ কৌশল হল Divide & Rule.  মোটাদাগে দেখলে এদেশের অল্পকিছু মানুষ ইসলামপন্থী।  অতঃপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের ফর্মুলায় এই অল্প সংখ্যক ভোট ভাগ হবে এত্ত এত্ত ইসলামী দলের মাঝে।  একদলের শাইখুল হাদীস দাড়াবে, অপরদলে দাড়িবিহীন শিক্ষিত তরুণ দাড়াবে।  অতঃপর সমর্থকদের মাঝে শুরু হবে নোংরা কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি, গীবত, অপবাদ, আর পরনিন্দার বৃষ্টিধারা।  দূর থেকে সেক্যুলার-বামপন্থীরা মজা লুটবে।

আসলে গণতন্ত্র আর নির্বাচন এই উম্মাহর মাঝে বিভেদ ও অনৈক্যের বিষফোঁড়া রোপণ করে দিয়েছে।  যার ফল আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দেশে বর্তমানে ইসলামী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ঠিক কতটি তা এই মূহুর্তে বলা মুশকিল তবে অন্তত এতটুকু জেনে রাখা ভালো যে এ দেশে ইসলামী ঐক্যজোটের (?) সংখ্যাই ৪ থেকে ৫ টা (!!)

১১. বর্তমানে নির্বাচনে বিদেশী প্রভাব একটি Open Secret. প্রতিটা ইলেকশনের পূর্বে বিভিন্ন নেতা-নেত্রীদের ভারত আর ওয়াশিংটনমুখী দৌড়াদৌড়ির  দৃশ্য তাই খুবই কমন। বলা যায়, দিল্লী-ওয়াশিংটন থেকেই নির্ধারন করা হয়ে থাকে আগামী ৫ বছর কারা এদেশে তাদের  Proxy দালাল  হিসেবে কাজ করবে। তার উপরে  ভোটে কারচুপি, জাল ভোট প্রদান, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, দূর্নীতি, নির্বাচন কমিশনের অবৈধ হস্তক্ষেপ, ক্ষমতার অপব্যবহার (দলীয় সরকার হলে তো কথাই নাই, তথাকথিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ক্ষেত্রে বলা যায়- পাগল আর বেকুব ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়) এগুলো তো আছেই। এই সিরিয়ালে সর্বশেষ সংযোজন হল  এক তরফা প্রহসনের নির্বাচন,  যেটা কিছু দিন আগে এ দেশের মানুষ খুব ভালোভাবেই প্রত্যক্ষ করেছে। ইসলামী দলতো দূরের কথা, সেক্যুলার দলগুলোরও এক্ষেত্রে কিছুই করার ছিল না।

আর গণতন্ত্রের তথাকথিত ‘সর্বশক্তির উৎস’ বলে পরিচত ‘জনগন’ তো এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আর কিছুই করে নি, এমনকি ২/১ টি ফাঁকা বুলিও নয়। আসলে আম জনতার এসব নিয়ে কোন মাথাব্যথাই নেই, ‘চাচা তোর আপন প্রান বাঁচা’ নিয়েই সবাই ব্যস্ত। দেশের মানুষ প্রহসনের নির্বাচনের আগেও যেমন সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘুমাতে যেত, এখনও তেমন-ই যায়।

দেশের একটি প্রধান রাজনৈক দল, বিএনপি বারবার ওয়াশিংটনের দিকে হাত তুলে মুনাজাত করছিল, কিন্তু ওয়াশিংটন আকার ইঙ্গিতে ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে, আমরা মুখে যাই বলি না কেন  কাজে আমরা তারই পক্ষ নিবো, যারা আমাদের বেশি সুবিধা দিবে আর বেশি গোলামী করবে। সেক্যুলারদের প্রভু ওয়াশিংটনের এই নীতিটি আপনি আরো ভালো করে বুঝবেন গণতন্ত্রের পুরোপুরি বিপরীত রাজতন্ত্রবাদী সৌদিদের সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক থেকে।

 আসলে তাদের দরকার  কর্তৃত্ব আর আধিপত্য; গণতন্ত্রের মন্ত্রতো ওরা জপে কেবল তৃতীয় বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহকে ধোঁকা দেওয়ার জন্যে।পশ্চিমাদের বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হল সাম্রাজ্যবাদ নীতি। বিভিন্ন মুসলিম দেশে আক্রমন করা, মুসলিম নারীদের ইজ্জত লুন্ঠন করা, শিশুদের রক্ত ঝরানো, মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুটে নেওয়া এগুলো পশ্চিমাদের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। এজন্যে তারা কখনই কোন দেশে এমন কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে দিবে না যারা তাদের দখলদারিত্বের বিরোধিতা করবে আর নির্যাতিত মুসলিমদের জন্যে জিহাদ পরিচালনা করবে।

অথচ এ ব্যপারে আলেমদের ইজমা হল যখন কাফিররা কোন মুসলিম দেশ আক্রমণ করে তখন আস্তে আস্তে সারা বিশ্বের মুসলিমদের উপর জিহাদ ফরয হয়ে যায়।

প্রিয় ভাইয়েরা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না-

  • ক) দ্বীন ইসলামের চির শত্রু ইয়াহুদী- খৃষ্টানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একের পর এক ক্রুসেড যুদ্ধ চালিয়েছে, মুসলিমদের প্রথম কিবলা বাইতুল মাকদিস দখল করে রেখেছে, স্পেন থেকে ইসলামের নাম নিশানাটা পর্যন্ত মুছে দিয়েছে।
  • খ) ইসলামী হুকুমত কায়েমের চেষ্টার জন্যে এবং মুজাহিদীনদের সাহায্য করার জন্যে এরাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হককে হত্যা করেছিল।
  • গ) এরাই সৌদি বাদশা ফয়সালকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করেছে। বাদশা ফয়সালের অপরাধ ছিল তিনি আমেরিকানদের মিত্র ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, মুসলিমদের ১ম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন এবং পশ্চিমাদের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলেন!!
  • ঘ) মুসলিমদের পবিত্র ভূমিতে ১৯৪৮ সালে যখন ইহুদীবাদী ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হল, ইমাম হাসান আল বান্না (রহঃ) দেখলেন তাঁর চোখের সামনে ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই তিনি দশ হাজার মুজাহিদ (ঠিকই পড়েছেন ১০ হাজার) নিয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করতে চাইলেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকার তিন রাষ্ট্রদূত বৈঠক করে তাদের সিদ্ধান্তপত্র মিশরের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায়। এর ২ মাস পর মিশরের রাজা ফারুকের সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মাহমুদ আব্দুল মাযীদ শহরের সবচেয়ে বড় রাস্তায় ইমাম হাসান আল বান্নাকে হত্যার চেষ্টা করে। এতে তিনি আহত হন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। তখন রাজা ফারুকের আরেক ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা মুহাম্মাদ ওয়াসফি পুনরায় ইমাম বান্নাকে গুলি করে হত্যা করে।  [ ফিলিস্তিনের স্মৃতি/ ড. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম ]
  • ঙ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া মিলে মুসলিমদের ঐক্য ও শক্তির কেন্দ্র খিলাফতকে ধংস করেছে, মধ্যপ্রাচ্যকে ভেঙে খন্ড বিখন্ড করেছে।  কামাল আতাতুর্ক নামক গাদ্দারের মাধ্যমে পশ্চিমারা সে সময় কর্যত তুরস্কে ইসলামকেই নিষিদ্ধ করেছিল।  ১৯২৪ সালের ২৪ জুলাই, লুজেন চুক্তি (Lausanne Treaty) স্বাক্ষরিত হবার পর হাউস অফ কমন্সে তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী লর্ড কার্জন ঘোষণা দিয়েছিল যে, “মূল বিষয় হচ্ছে তুরস্ক ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এটি আর কোনদিনও মাথা তুলে দাঁড়াবে না। কারণ, আমরা তাদের আধ্যাত্মিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছি। আর তা হল খিলাফত এবং ইসলাম”।  এছাড়া, আল-কুদস এ দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পর বৃটিশ জেনারেল অ্যালেনবি ঘোষণা করে, “আজ ক্রুসেডের সমাপ্তি ঘটল”। আর, দামেস্ক দখল করে নেবার পর ফরাসী জেনারেল গরো (Gourou) তড়িৎ গতিতে সালাহউদ্দীন আইয়্যুবীর সমাধিস্থলে প্রবেশ করে তার কবরে লাথি মেরে বলেছিল, “উঠো, সালাহউদ্দীন! আমরা আবার ফিরে এসেছি”। বস্তুত খিলাফত ধংসের পর পশ্চিমাদের উল্লাসের কোন সীমা-পরিসীমা ছিল না।

১২.আধুনিক কালে নির্বাচন মানেই লক্ষ লক্ষ টাকার ছড়াছড়ি। মিছিল, মিটিং, মাইকিং, পোস্টারিং ইত্যাদিতে কে কাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে সবসময় তারই প্রতিযোগিতা চলে। একগাদা ভাড়া করা ক্যানভাসার যোগাড় করা হয়। কোথাও কোথাও তো অসভ্য নর্তকী আর গায়িকাদেরও ভাড়া করা হয়। 
এসব ক্যানভাসারদের কাজই হল জোর গলায় নিজ নেতার চরিত্রকে  ‘ফুলের মত পবিত্র‘  বলে দাবী করা আর যেকোনভাবে প্রতিপক্ষের নামে দূর্নাম ও কুৎসা রটনা করা। 
একগাদা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, সুযোগ পেলে আকাশের চাঁদ হাতে এনে দেওয়ার গল্পও ছাড়া হয়। ভোটারদের মনোরঞ্জনের জন্যে ক্ষণে ক্ষণে পান, তামুক, চা, বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা, মদ, গাঞ্জা পরিবেশন হয়। এমন কি প্রয়োজনে নগদ টাকা-পয়সা দিয়ে ভোট কেনা হয়। যে এই কাজ যত বেশি করতে পারবে সে তত বেশি সফল। 
একজন ইসলামপন্থী না নিজের মিথ্যা গুণগান গাওয়ার জন্য লোক ভাড়া করতে পারে, না অন্যের নামে মিথ্যা বদনাম রটনা করতে পারে, না মিথ্যা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, না তরুণদের হাতে মদের বোতল আর বৃদ্ধদের হাতে হুক্কার ডিব্বা ধরিয়ে দিতে পারে, না সে দূর্নীতিবাজদের মত ক্যানভাসে লাখ লাখ টাকা অপচয় করতে পারে, না সে কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভোট কেনার মত জগন্য কাজ করতে পারে।  
এসব যদি সে না-ই পারে তাহলে এই প্রতিযোগিতায় তার কোন স্থান নেই কেননা তথাকথিত নৈতিকতার বুলিতো তো কত আগেই নগদ টাকা-পয়সা আর বিড়ি সিগারেটের গন্ধে কর্পূরের মত উবে গেছে।  আর যদি সে এগুলোও করতে পারে তাহলে বুঝতে হবে তার মাঝে ইসলামী চরিত্রের আর ছিটেফোঁটাও নেই। জনপ্রিয়তা অর্জনের স্রোতে গা ভাসিয়ে সব ধুয়ে মুছে একেবারে সাফ হয়ে গেছে।
রাসূল (সঃ) বলেছেন-
“আমরা এরূপ ব্যক্তিকে কোন পদে মনোনিত করি না,  যে তার পদ চেয়ে নেয় বা পদের প্রতি লালায়িত হয়”। [বুখারী]

১৩.গণতন্ত্রের মাধ্যমে একটা ইসলামী দল যদি ক্ষমতায় আসেও (বাংলাদেশে সে আশা করা নিতান্তই গুড়ে-বালি) তাহলেও তারা ইসলামকে কায়েম করতে পারবে না- ইতিহাস এবং সমীকরণ এটাই বলে। একান্ত যদি পারেও এর পরের ইলেকশনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে। জনগণের মন সবসময়ই পরিবর্তনশীল। সবচেয়ে ভালো শাসনেও তাদের মাঝে ‘নদীর এপাড় কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ওপাড়েতে সর্বসুখ আমার এ বিশ্বাস’- টাইপের অনুভূতি কাজ করতে পারে। ফলে আবারও  দেশ  পরিচালিত হবে কুফরী আদর্শ ও মূলনীতিতে। এভাবে  ‘৫ বছর ইসলাম, ৫ বছর কুফর‘–   এই অবস্থা তো আমাদেরকে আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর কাছে তৎকালীন কাফিরদের সেই প্রস্তাবের কথা মনে করিয়ে দেয়
“আপনি এক বছর আমাদের ইলাহগুলির ইবাদাত করুন, তাহলে আমরাও পরের বছর আপনার রবের ইবাদাত করবো”।

১৪. আমরা দেখেছি যে পৃথিবীতে ব্যাপক বিস্তৃত একটি খিলাফতের প্রতিশ্রুতি রাসূল (সঃ) আমাদেরকে দিয়েছেন। এবং এটা প্রত্যেকটা মাটির ঘর বা তাবু পর্যন্তও বিস্তৃত হবে। তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ বা জিযিয়ার আহ্বান জানাবে। অন্যথায় তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে। কথিত ভোটাভোটির মাধ্যমে পৃথিবীতে এত বড় পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস করাটা কি বোকামী নয়?
১৫.শেষকথা,  একটা প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র বিনা আক্রমণে বিশ্বব্যাপী জিহাদ পরিচালনা করবে দ্বীনকে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী করার জন্যে।  কারন দ্বীন ইসলাম কোন নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডের জন্যে নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীর জন্য অবতীর্ণ হয়েছে।

যদি মুসলিমরা অক্ষম না হয় এবং শত্রুর সাথে কোন চুক্তি না থাকে তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রকে পার্শ্ববর্তী কুফফার রাষ্ট্রে আক্রমন চালাতে হবে এবং তাদেরকে হয় ইসলাম, নয় জিযিয়া, নয় যুদ্ধের নীতিতে আহ্বান জানাতে হবে। এই জিহাদকে জিহাদ আত তালাব বলা হয়।  অধিকাংশ আলেমদের মত হচ্ছে বছরে কমপক্ষে ১ বার এই ধরনের আক্রমন পরিচালনা করতে হবে। অন্যদের মত হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমরা সক্ষম ততক্ষণ পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে হবে এবং এর সর্বনিম্ন কোন সীমা নেই।  [দেখুনঃ আল মুগনী ওয়াশ শারহ আল কাবীর/ দশম খণ্ড]


 ইমাম কুরতুবী  তাঁর তাফসীরে কুরতুবীর অষ্টম খন্ডে অনুরূপ কথাই ব্যক্ত করেছেন অর্থাৎ আক্রমণাত্বক জিহাদের ফরযসীমা বছরে অন্তত একবার, এর অধিক ইমামের ইচ্ছাধীন। ইবনে কাসীর (রহঃ) সূরা তাওবার ১২৬ নং আয়াতের ব্যখ্যায় কাতাদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন- “তারা (কাফিররা) বছরে ১ বার বা ২ বার যুদ্ধের দ্বারা পরীক্ষিত হয়।”  তবে ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) তাঁর ফাতহুল বারীর ৬ নং খন্ডের ২৮ পৃষ্ঠায় ২য় মতটিকেই অধিক শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন।

কাজেই কুফফাররা ও তাঁদের দোসররা কখনই নিছক কিছু টিপসই দিয়েই এরূপ রাষ্ট্র হতে দিবে না, কখনই না।

Ad Code

Responsive Advertisement