Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

সমকামি এজেন্ডাঃ ব্লু-প্রিন্ট




 ১৯৮৭ সালে অ্যামেরিকান ম্যাগাযিন ‘গাইড’ এর নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয় মার্শাল কার্ক এবং হান্টার ম্যাডসেনের লেখা প্রায় ৫০০০ শব্দের একটি আর্টিকেল। দু’বছর পর নিউরোসাইক্রিয়াট্রি রিসার্চার কার্ক এবং পাবলিক রিলেইশান্স কনসালটেন্ট ম্যাডসেন একে পরিণত করেন ৩৯৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে। হান্টার ও ম্যাডসেনের এই আর্টিকেল উপস্থাপিত ধারণা ও নীতিগুলো পরবর্তী ৩ দশক জুড়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে রাজনীতি, মিডিয়া, অ্যাকাডেমিয়া, বিজ্ঞান, দর্শন ও চিন্তার জগতে। সারা বিশ্বজুড়ে। সমকামীদের ম্যাগাযিন গাইডে প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটির নাম ছিল “The Overhauling of Straight America ”। ৮৯ তে প্রকাশিত সম্প্রসারিত বইয়ের নাম দেওয়া হয় - After the Ball: How America Will Conquer Its Fear and Hatred of Gays in the 90s.  কার্ক ও ম্যাডসেনের উদ্দেশ্য ছিল সিম্পল –সমকামিতা ও সমকামিদের প্রতি অ্যামেরিকানদের মনোভাব বদলে দেওয়ার জন্য একটি স্টেপ বাই স্টেপ ব্লু-প্রিন্ট বা ম্যানুয়াল তৈরি করা।  কিন্তু কেন প্রায় তিন দশক পর বাংলাদেশে বসে কার্ক-ম্যাডসেনকে নিয়ে চিন্তা করা? কার্ক-ম্যাডসেনের নাম শুনেছেন বা তাদের লেখার সম্পর্কে জানেন এবং মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। শুধু বাংলাদেশেই না, বিশ্বজুড়েই। কিন্তু তাদের ব্লু-প্রিন্টের প্রভাব কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করে নি এমন সমাজ বা রাষ্ট্র খুজে পাওয়াটাও কঠিন।

গত ৩০ বছরে সমকামিতার স্বাভাবিকীকরন, সমকামিতাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সমকামিতার মধ্য এতোটা অস্বাভাবিক একটি বিষয়ের প্রতি মানুষের সংবেদনশীলতাকে নষ্ট করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা প্রায় হুবহু মিলে যায় কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের সাথে। আর বাংলাদেশেও সমকামিতার প্রচার, প্রসার এবং সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা তৈরির জন্য এখন এই একই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।  বর্তমানে ২২টি দেশে সমলৈঙ্গিক ‘বিয়ে’ আইনগত ভাবে স্বীকৃত। কোন আগ্রাসী সেনাবাহিনী শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে এদেশগুলোর জনগোষ্ঠীর উপর সমকামিতা চাপিয়ে দেয় নি। তবে নিঃসন্দেহে মানুষের স্বভাবজাত মূল্যবোধ, ফিতরাহর বিরুদ্ধে গিয়ে জঘন্য একটি বিকৃতিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দেওয়া, মানুষের মাঝে এই বিকৃতির গ্রহনযোগ্য তৈরি করা একটি যুদ্ধের অংশ। এই যুদ্ধ মনস্তাত্ত্বিক, আদর্শিক। এই যুদ্ধ সর্বব্যাপী এবং ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আপনি এই যুদ্ধের অংশ। আর এই যুদ্ধে শত্রুপক্ষের স্ট্র্যাটিজির মূল ভিত্তি কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট। আর তাই কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট সম্পর্কে জানা, শত্রুর কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানা একটি আবশক্যতা, কোন অ্যাকাডেমিক কৌতুহল না। তবে কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের দিকে তাকানোর আগে গত তিন দশকে এর অর্জিত সাফল্যের দিকে একটু তাকানো যাক।


The Overhauling of Straight America 

       একটা সহজ উদাহরন দিয়ে শুরু করা যাক। Gallup এর হিসেব অনুযায়ী ৮৭-তে, অর্থাৎ আর্টিকেলটি লেখার সময়, যাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ৩২% সমকামি সম্পর্ক বৈধ হওয়া উচিৎ বলে উত্তর দিয়েছিল। ৫৭% বলেছিল এধরনের কাজ সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ঘোষণা করা উচিৎ। ত্রিশ বছর পর ২০১৭ তে এসে দেখা গেল ব্যাপারটা প্রায় পুরোপুরি উল্টে গেছে। ৬৪% উত্তরদাতা এখন মনে করেন এধরনের বিয়ে বৈধ হওয়া উচিৎ, আর মাত্র ৩৪% এর বিরুদ্ধে [১]। ১৯৮৯ সালে ১৯% উত্তরদাতা বিশ্বাস করতেন মানুষ জন্মসূত্রে সমকামি হয়। ৪৮% মনে করতেন সমকামিরা সমকামিতাকে স্বেচ্ছায় বেছে নেয়। ত্রিশ বছরের কম সময়ের মধ্যে তে ৪২% উত্তরদাতা বিশ্বাস করা শুরু করলো সমকামিতা জন্মগত [২]।  

অথচ ১৯৭৩ সালের আগ পর্যন্ত খোদ অ্যামেরিকান সাইক্রিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশান সমকামিতাকে একটি মানসিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করতো। অর্থাৎ ৫০ বছর আগে যা বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে স্বীকৃত ছিল আজ অর্ধেকের বেশি মানুষ তার উল্টোটা বিশ্বাস করছে, যদিও সব বৈজ্ঞানিক গবেষনার ফলাফল বারবার বলছে সমকামিতার কোন জেনেটিক ভিত্তি নেই, এটি জন্মগত না, বরং স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া একটি বিকৃতি।  পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৫ তে এসে অ্যামেরিকান খ্রিস্টানদের ৫৪% মনে করে সমকামিতার বিরোধিতা করার বদলে সমকামিতাকে সামাজিক ভাবে মেনে নেওয়া উচিৎ। অ্যামেরিকান প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে ৬২% সমকামি ‘বিয়ে’-কে সমর্থন করে, আর ৬৩% মনে করে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস আর সমকামিতার মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই [৩]। অথচ সমকামিতা যে একটি জঘন্য বিকৃতি, চরম পর্যায়ের সীমালঙ্ঘন এবং অত্যন্ত ঘৃণিত পাপাচার এ ব্যাপারে বাইবেলের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট।   অ্যামেরিকান সমকামিতা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ GLAAD এর সমীক্ষ অনুযায়ী ২০১৬ সালে রিলিয  হওয়া প্রায় ১৭.৫% হলিউড সিনেমাতে LGBT (Lesbian,Gay, Bi-sexual, Queer) চরিত্রের উপস্থিতি ছিল [৪] । 

পাশাপাশি গত ১০ বছরের প্রায় সব প্রাইমটাইম টেলিভিশন শো-তে কমপক্ষে একটি সমকামি বা অন্যকোন বিকৃতকামি চরিত্র রাখা হয়েছে। কিন্তু Gallup এর মতে অ্যামেরিকার মোট সংখ্যার মাত্র ৩.৯% সমকামি। মিডিয়াতে সমকামিদের ওভাররিপ্রেসেন্টেশানের সঠিক মাত্রাটা বোঝার জন্য এ তথ্য মাথায় রাখুন যে অ্যামেরিকান মিডিয়ার দর্শক শুধু অ্যামেরিকাতেই সীমাবদ্ধ না। সারা পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ অ্যামেরিকান মিডিয়ার দর্শক ও ভোক্তা। এই কোটি কোটি মানুষের কাছে অ্যামেরিকান মিডিয়া সমকামিতা, সমকামি ‘বিয়ে’, সমকামি যৌনাচারকে সাধারন দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করছে। 

সর্বশেষ হিসেবে অনুযায়ী ২২টি দেশে সমকামি ‘বিয়ে’-কে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জার্মানির সংসদে গত ৩০শে জুন, ২০১৭ সমলৈঙ্গিক ‘বিয়ে’র স্বীকৃতিদানের পক্ষে বিল পাশ হয়েছে। উল্লেখ্য জার্মানির সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬ জন নিজেদের মুসলিম হিসেবে দাবি করে থাকে। এই ৪জনই এই বিকৃতি ও চরম সীমালঙ্ঘনের আইনগত বৈধতা দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।  রাজনীতি, অ্যাকাডেমিয়া এবং মিডিয়ার উপর এই ক্ষুদ্র বিকৃত মানসিকতার মাইনরটির প্রভাবের মাত্রা কতোটুকু তা শুধু উপরের তথ্যগুলোর আলোকে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব না। তবে একটা বেইসিক আইডিয়া এখান থেকে আপনি পাবেন। এই প্রভাবের উৎস কী? আর এই প্রভাবের ব্যাপ্তি কতোটুকু?

 আর একটা তথ্য দেই। আপনি নিজেই বাকি হিসেবটা মিলিয়ে নিন।  পৃথিবী জুড়ে অনেকগুলো অ্যাডভোকেসি গ্রুপ সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ধনী গ্রুপ হল HRC বা Human Rights Campaign। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে HRC-র বার্ষিক আয় ছিল ৩.৮৫ কোটি ডলার। এই অর্থের উৎস? বড় বড় কর্পোরেশানগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ডোনেইশান। HRC এর ডোনার এবং কর্পোরেট পার্টনারদের মধ্যে আছে স্টারবাকস, লিবার্টি মিউচুয়াল ইনশুরেন্স, অ্যামেরিকান এয়ারলাইন্স, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, ব্যাঙ্ক অফ অ্যামেরিকা, শেভরন, কোকাকোলা, পেপসিকো, লেক্সাস অটো, গুগল, অ্যামাযন, আইবিএম, নাইকি, গোল্ডম্যান অ্যান্ড স্যাক্স, জেপি মরগান চেইস অ্যান্ড কো, ডেল, শেল অয়েলসহ আরো অনেকে [৫]।   বিশাল বাজেটের ব্যাপক প্রভাবশালী এসব অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আসলে কী করে?

 লবিয়িং এর মাধ্যমে, প্রেশার গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে এবং অবশ্যই অর্থের মাধ্যমে এরা প্রভাবিত করে মিডিয়াকে, রাজনীতিবিদদের, সমকামিতার সাথে সংশ্লিস্ট বিভিন্ন রিসার্চকে (যাতে করে সমকামিতার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি করা যায়), এবং সরকারের পলিসিকে। যেমন অ্যামেরিকাতে এই মূহুর্তে অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো একটি প্রধান লক্ষ্য হল প্রতিটি স্কুলে, হাইস্কুল ও প্রাইমারি পর্যায়ে Gay-Straight Alliance Club অর্থাৎ স্বাভাবিক শিশু ও সমকামি শিশু ঐক্য পরিষদ জাতীয় কিছু তৈরি করা। প্রতিটি স্কুলে গড়ে ওঠা এই ক্লাবগুলোর কাজ হবে শিশুদের মধ্যে সমকামিতার প্রসার ঘটানো এবং স্বাভাবিকীকরন। 

 গ্লোবাল এজেন্ডা ও বাংলাদেশঃ

 বিষয়গুলো শুধু অ্যামেরিকাতে বা পশ্চিমা বিশ্বে সীমাবদ্ধ না। বরং সমকামিতার প্রচার, প্রসার ও স্বাভাবিকীকরনের এই এজেন্ডা গ্লোবাল, এবং বিশ্ব রাজনীতির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৯৯৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষণা করে সমকামিতা কোন অসুস্থতা না কোন বিকৃতিও না। অর্থাৎ সমকামিতা স্বাভাবিক। OHCHR, UNDP, UNFPA, UNHCR, UNICEF, UNODC, UN Women, WFP, ILO, UNESCO, World Bank এবং UNAIDS –সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বৈষম্য নিরসন মানবাধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার নামে উন্নতশীল দেশগুলোতে বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে সমকামিতার প্রচার, প্রসার ও স্বাভাবিকীকরনের জন্য কাজ করছে। এদের মধ্যে Office of the United Nations High Commissioner for Human Rights (OHCHR) সমকামিতাকে মানবাধিকারের সংজ্ঞার ভেতরে ফেলে এর প্রচার করছে [৬] ।

 OHCHR সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য Free & Equal নামে একটি আলাদা ক্যাম্পেইন চালু করেছে যার ঘোষিত উদ্দেশ্যে মাঝে আছে শিশুদের সমকামিতা সম্পর্কে সচেতন করা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ব্যবহারের মাধ্যমে সমকামিতা ও সমকামের প্রতি সহনশীলতা তৈরি করা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে সমকামিতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা [৭] । Free & Equal ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে জাতিসঙ্ঘ সমকামি ‘বিয়ে’-কে বৈধতা দেয়ার জন্য বলিউডের মিউযিক ভিডিও-ও তৈরি করেছে।   

 পৃথিবীর যেকোন জায়গায় সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য যা কিছু করা হচ্ছে, যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেগুলো এই গ্লোবাল এজেন্ডার অংশ। বাংলাদেশে যারা সমকামিতার প্রচার, প্রসার ও স্বাভাবিকীকরনের জন্য এখনো পর্যন্ত যেসব কাজ করা হয়েছে তার সবকিছুই কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের সাথে খাপেখাপে মিলে যায়। একারনে তাদের কর্মপদ্ধতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বোঝার জন্য কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট  সম্পর্কে ধারণা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা আলাদা ভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই।

 বরং যে মডেলের মাধ্যমে অ্যামেরিকায় অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে এখন সেই একই মডেল বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই পায়ুকাম প্রচার করা ইয়াহু চ্যাট গ্রুপ, ফেইসবুক গ্রুপ, ফোরাম, রুপবান ম্যাগাযিন, শাহবাগে সমকামি প্যারেড, বইমেলায় সমকামিতা নিয়ে কবিতার বই প্রকাশ, গ্রামীনফোনের ফান্ডিং এ আরটিভিতে প্রচারিত নাটক, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও এনজিও গুলোর মাধ্যমে পায়ুকামে উৎসাহিত করা, বিনামূল্যে কনডম-লুব্রিকেন্ট বিতরণ - এই সবকিছুকে দেখতে হবে একটি বৃহৎ, গ্লোবাল এজেন্ডার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে। যে বিষয়টা উপলব্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল শত্রুপক্ষ জানে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ বা কম্পোনেন্টের যেকোন একটা দিয়ে রাতারাতি জনমত বদলে ফেলা যাবে না। সেটা তাদের উদ্দেশ্যও না। বরং তাদের উদ্দেশ্য হল ছোট ছোট ইঙ্ক্রিমেন্টাল পরিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সামাজিক মূল্যবোধকে বদলে দেওয়া। এটাই কালচারাল সাবভারশানের টাইম-টেস্টেড পদ্ধতি। হঠাৎ করে একটা বড় পরিবর্তন সমাজে উপর চাপিয়ে দিতে চাইলে সেটা ব্যাকফায়ার করার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান মাত্রায় পরিবর্তনটা উপস্থাপন করা হয় তখন এক পর্যায়ে গিয়ে সমাজ তা মেনে নেয়।  


সহজ উদাহরনঃ একটা সময় বাংলাদেশে বুকে ওড়না না দিয়ে গলায় ওড়না দেয়াটা খারাপ মনে করা হতো। এই সময়টাতে যেসব মেয়েরা জিন্স-টিশার্ট পড়ে ঘুরে বেড়াতো তাদের ব্যাপারে সমাজের অধিকাংশের ধারণা ছিল এরা উগ্র, অশ্লীল ইত্যাদি। কিন্তু পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের ফলে যারা একসময় জিন্স-টিশার্ট পরিহিতাদের উগ্র বলতেন তারাই তাদের মেয়েদের এখন জিন্স-টিশার্ট পড়াচ্ছে, এবং ব্যাপারটা এখন প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে ‘নরমাল’। গলায় ওড়না ঝোলানো থেকে টি-শার্টে আসার ব্যাপারটা রাতারাতি করার চেস্টা সমাজ মেনে নেয়নি। বিরোধিতা করেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন পরিবর্তন হয়েছে তখন সেই একই সমাজ খুশি মনে একে মেনে নিয়েছে।   কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের প্রথম ধাপ এটাই। মানুষকে সমকামিতার ব্যাপারে ডিসেনসেটাইয করা।  . 
   

 ‘প্রথম কাজ হল সমকামি এবং সমকামিদের অধিকারের ব্যাপারে অ্যামেরিকার জনগনের চিন্তাকে অবশ করে দেওয়া, তাদের সংবেদনশীলতা নষ্ট করে দেওয়া [desensitization]। মানুষের চিন্তাকে অবশ করে দেওয়ার অর্থ হল সমকামিতার ব্যাপারে তাদের মধ্যে উদাসীনতা তৈরি করা...একজন স্ট্রবেরি ফ্লেইভারের আইস্ক্রিম পছন্দ করে আরেকজন ভ্যানিলা। একজন বেইসবল দেখে আরেকজন ফুটবল। এ আর এমন কী!’  [Kirk & Madsen, The Overhauling of Straight America ]


 কার্ক-ম্যাডসেনের মতে প্রাথমিক পর্যায়ে উদ্দেশ্য এই একটি। সমকামিতা  যে একটি জঘন্য বিকৃতি, চরম সীমালঙ্ঘন, ও ঘৃণ্য পাপাচার তা সম্পর্কে মানুষের সংবেদনশীলতাকে নষ্ট করে দেওয়া। তাদের ভাষায় –  

‘সমকামিতা একটি ভালো জিনিস - একেবারেই শুরুতেই তুমি সাধারন মানুষকে এটা বিশ্বাস করাতে পারবে, এমন আশা বাদ দাও। তবে যদি তুমি যদি তাদের চিন্তা করাতে পারো যে সমকামিতা হল আরেকটা জিনিষ (ভালো না খারাপ না – জাস্ট আরেকটা ব্যাপার) তাহলে ধরে নাও আইনগত ও সামাজিক অধিকারের আদায়ের লড়াইয়ে তুমি জিতে গেছো।’ [Kirk & Madsen, The Overhauling of Straight America ]


সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য যারা কাজ করছে তাদের রেটোরিক খেয়াল করলে দেখবেন তাদের অধিকাংশ ঠিক এই মেসেজটাই দিতে চাচ্ছে। ‘সমকামিতা ভালো বা খারাপ না, জীবনের একটা বাস্তবতা মাত্র’। পহেলা বৈশাখের সময় শাহবাগে সমকামি প্যারেড কিংবা ঈদের সময় ঈদের নাটক হিসেবে সমকামিদের গল্প তুলে ধরার পেছনে একটি মূল উদ্দেশ্য হল সমাজের বিকৃতকামী এক্সট্রিম মাইনরিটিকে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা। একই সাথে সমকামিতাকে ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত করা, যেমনটা জাতিসংঘের Free & Equal ক্যাম্পেইনেও করা হয়েছে।
ভিকটিমহুড – সমকামিতা জন্মগতঃ  কার্ক-ম্যাডসেনের আরেকটি সাজেশান হল সমকামিদের ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করা। সমকামিদের ভিকটিম হিসেবে চিত্রিত করার দুটি ডাইমেনশান থাকবে। প্রথমত, সমকামিতাকে একটি সিদ্ধান্তের পরিবর্তে প্রাকৃতিক বা জন্মগত হিসেবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে সমকামিদের জন্মগতভাবেই ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করা। দ্বিতীয়ত, সমকামিদের সমাজ দ্বারা নির্যাতিত হিসেবে চিহ্নিত করা।  বাংলাদেশে এবং বিশ্বজুড়ে যারা সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের কাজ করে তাদের প্রপাগ্যান্ডা ও বক্তব্য আপনি সবসময় এ দুটো মোটিফ দেখতে পাবেন। সমকামিরা জন্মগতভাবেই সমকামি এটা প্রমানের উদ্দেশ্য হল যদি সমকামিতাকে জন্মগত বা প্রাকৃতিক প্রমান করা যায় তাহলে সমকামিদের সম্পূর্ণ নৈতিক দায়মুক্তি সম্ভব। সমকামিতা যদি জন্মগত হয় তাহলে সমকামিতা একটি ‘অ্যাক্ট’ বা ক্রিয়া হিসেবে নৈতিকভাবে নিউট্রাল, কারন এর উপর ব্যক্তির কোন নিয়ন্ত্রন নেই। কিন্তু সমকামি জন্মগত – এই দাবির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তো নেই-ই, বরং বিভিন্ন পরীক্ষা ফলাফল ইঙ্গিত করে যে Sexual Oreintation নির্ভর করে ব্যক্তির ‘চয়েস’ বা স্বেচ্ছায় গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর [৮]।   

 আরেকটি বিষয় হল সমকামিতা যদি জন্মগত হয় তাহলে অন্যান্য বিকৃত যৌনাচার কেন জন্মগত বলে গন্য হবে না? শিশুকামি, বা পশুকামিদের কেন অপরাধী গণ্য করা হবে? ইন ফ্যাক্ট শিশুকামের সাথে সমকামের, বিশেষ করে পায়ুকামের সম্পর্ক তো হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন গ্রিসে শিশুদের সাথে মধ্য বয়স্ক পুরুষদের পায়ুকামী সম্পর্ক বা Pederasty প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে চালু ছিল  প্লেইটো তার রিপাবলিক ও ল’স – রচনাতে প্রাচীন পেডেরাস্টি এবং সমকামিতার ব্যাপক প্রচলনকে গ্রীসের অধঃপতনের একটি কারন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। অ্যামেরিকাতেও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের সাথে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অধিকারের জন্য আন্দোলন করা NAMBLA (North American Man Boy Love Association) – দীর্ঘদিন ছিল গে-প্রাইড প্যারেডের নিয়মিত অংশ। বিখ্যাত অ্যামেরিকান কবি সমকামি অ্যালেন গিন্সবার্গ (সেপ্টেবর অন যশোর রোড – এর রচয়িতা) ছিল NAMBLA এর সদস্য। এছাড়া অসংখ্য সমীক্ষার মাধ্যমে একথা প্রমাণিত যে সমকামিতার সাথে অন্যান্য যৌন বিকৃতির বিশেষ করে শিশুকামিতার ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে [ ৯]। সমকামিতার বিশেষ করে পায়ুকামিতার সাথে শিশুকামের গভীর সম্পর্কের ব্যাপারে সংক্ষেপে বোঝার জন্য পায়ুকামি ও শিশুকামি কেভিন বিশপের এই উক্তিটি যথেষ্ট -  

"Scratch the average homosexual and you will find a pedophile" [Kevin Bishop in an interview. Angella Johnson, “The man who loves to love boys,” Electronic Mail & Guardian, June 30, 1997]



 সুতরাং যদি সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষন জন্মগত হতে পারে তাহলে সমলিঙ্গের অল্পবয়েসীদের প্রতি আকর্ষন কেন জন্মগত হতে পারবে না? কেন ধর্ষনের তাড়না অনুভব ধর্ষকরা জন্মগত বিচ্যুতির কারনে ভিকটিম গণ্য হবে না? কেন পশুকাম জন্মগত বলে গণ্য হবে না? Sexual Oreintation যদি জন্মগতই তবে কেন তা কেবলমাত্র সমকামিদের ক্ষেত্রে জন্মগত বলে বিবেচিত হবে? কিন্তু সব যুক্তি, প্রমান এবং বিবেচনাবোধের বিরুদ্ধে গিয়ে সমকামের প্রচারকরা একে জন্মগত বলে যাচ্ছে। আর ‘জন্মগত’ এই বৈশিষ্ট্যের কারনে কেন সমকামিদের আলাদা ভাবে দেখা হবে, এ নিয়ে আবেগঘন বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। এবং এ দুটি দিক থেকে সমকামিদের ভিকটিম প্রমান করার মাধ্যমে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।  


মিডিয়াঃ কার্ক-ম্যাডসেনের মতে সমকামিতার স্বাভাবিকীকরন ও গ্রহনযোগ্যতা তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমের একটি হল মিডিয়া। বিশেষ করে ভিযুয়াল মিডিয়া –

‘সোজা ভাষায়, ভিযুয়াল মিডিয়া, টিভি ও সিনেমা হল ভাবমূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে পশ্চিমা সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালি মাধ্যম। অ্যামেরিকান প্রতিদিন গড়ে টিভি দেখে। এই সাতঘন্টা সময় সাধারন মানুষের চিন্তার জগতে ঢোকার এমন একটি দরজা আমাদের জন্য খুলে রেখেছে যার মধ্য দিয়ে একটা ট্রোজান হর্স ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব...যতো বেশি ও যতো উচ্চস্বরে সম্ভব, সমকাম, সমকামিতা এবং সমকামিদের কথা বলুন। বারবার দেখতে দেখতে থাকলে প্রায় যেকোন কাজই মানুষের কাছে ‘নরমাল’ মনে হওয়া শুরু করে...তবে মানুষের সামনে আগেই সমকামি আচরণ উপস্থাপন করা যাবে না – কারন তা মানুষের কাছে জঘন্য বলে মনে হবে এবং মানুষ সমকামিতার বিরুদ্ধে চলে যাবে। তাই সমকামিদের যৌনাচার সাধারন মানুষের সামনে উপস্থাপন করা যাবে না। আগে তাবুর মধ্যে উটের নাক ঢুকাতে দিন, তারপর আস্তে আস্তে বাকিটাও ঢুকানো যাবে।’ [Kirk & Madsen, The Overhauling of Straight America ]


 আর বাস্তবিকই ধীরে ধীরে এই দরজার মধ্য দিয়ে ট্রোজান হর্স ঢুকাতে সমকামি মাফিয়া সমর্থ হয়েছে। ৯০ এবং ২০০০ এর প্রথম দশক জুড়ে বিভিন্ন ডেইলি সোপ ধীরে ধীরে সাধারন অ্যামেরিকানদের মধ্যে সমকামিতার গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জৌ বাইডেন ২০১২ সালে সরাসরি সমকামিতা প্রচার করা টিভি সিরিয ‘উইল অ্যান্ড গ্রেইস’-এর নাম উল্লেখ করে বলে –

“একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষকে একজন নারী আরেকজন নারীকে বিয়ে করবে এতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই...আমার মনে হয় না অ্যামেরিকান মানুষকে (সমকামিতা সম্পর্কে) শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে উইল অ্যান্ড গ্রেইসের মতো ভূমিকা আর কেউ বা আর কোন কিছু রাখতে পেরেছে। যা অন্যরকম মানুষ সেটাকে ভয় পায়। কিন্তু এখন মানুষ (সমকামিতার ব্যাপারে) বুঝতে শুরু করেছে।”[১০]



   আর একইভাবে আজ বাংলাদেশেও এই একই দরজার ভেতর দিয়ে সেই একই ট্রোজান হর্স ঢোকানোর জন্য কর্মতৎপরতা চলছে। কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট বাংলাদেশে প্রায় অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সমকামিতার প্রচারে মিডিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্ক-ম্যাডসেনের মত ছিল প্রাথমিকভাবে প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করা, এবং তারপর ধীরে ধীরে ভিযুয়াল মিডিয়ার দিকে আগানো। বাংলাদেশে সমকামিতা প্রচারের কাজ শুরু হয় ৯০ এর দশকের শেষের দিকে। প্রাথমিকভাবে সমকামিতা প্রচারকদের কাজ ছিল অনলাইন চ্যাট গ্রুপ, মেইল গ্রুপ, ফোরাম ইত্যাদির মাধ্যমে সমকামিদের মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচিতি তৈরি করা, বিভিন্ন সময় একত্রে ‘মিলিত’ হওয়া এবং কিছু নির্দিষ্ট অঙ্গনে সমকামিতার প্রচার করা, এবং সমকামিতার পক্ষে জনমত তৈরি করা। 

পাবলিক স্ফেয়ারে যখন তারা তাদের বিকৃতি প্রচারের শুরু করে তখন তারা সেটা করে প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে। ২০১০ সালে বইমেলায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে বের হয় কুখ্যাত মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অ্যামেরিকা প্রবাসি ইসলামবিদ্বেষি অভিজিৎ রায়ের বই ‘সমকামিতা’। অভিজিৎ রায় এই বইয়ে বিজ্ঞানের জগাখিচুড়ি ব্যাখ্যা দিয়ে, এবং নানা লজিকাল ফ্যালাসি ব্যবহার করে সমকামিতা-কে স্বাভাবিক মানবিক আচরণ হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করে। তার অন্যান্য লেখার মতো এই লেখাটিও ছিল মূলত বিভিন্ন পশ্চিমা লেখকের লেখার ছায়া অনুবাদ। ২০১০ সালে অগাস্টে   আলতাফ শাহনেওয়াজ নামে একজনের  লেখা অভিজিৎ রায়ের বইটির রিভিউ প্রকাশ করে প্রথম আলো। আর এর মাধ্যমে প্রায় সবার অলক্ষ্যে তাদের বিশাল পাঠকবেইসের ড্রয়িং রূপে এই জঘন্য বিকৃতির সাফাই পৌছে দেয় প্রথম আলো।  




বাংলাদেশে প্রকাশ্যে সমকামিতার প্রসারে পরবর্তী বড় পদক্ষেপটি আসে ২০১৪ সালে, রূপবান নামে একটি ম্যাগাযিনের মাধ্যমে। আর এই ম্যাগাযিনের পক্ষে প্রচারনা চালানো হয় প্রিন্ট মিডিয়া (যেমন ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে) এবং অনলাইনের মাধ্যমে। ২০১৪ সালে রূপবানের প্রথম সংখ্যার প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ হাই-কমিশনার রবার্ট গিবসন, ব্যারিস্টার সারা হোসেনসহ আরো অনেকে। এ থেকে গ্লোবাল সমকামি মাফিয়ার প্রভাব এবং বাংলাদেশে এদের বিস্তার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। ম্যাগাযিনটির প্রকাশনার খবর ফলাও করে প্রচার করা হয় ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা ট্রিবিউন, বিবিসি সহ বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমে। রূপবান পত্রিকার সম্পাদক ছিল সাবেক পররাস্ট্রমন্ত্রী দীপুমনির আত্মীয় অ্যামেরিকান দূতাবাসে চাকরিরত জুলহাস মান্নান। পরবর্তীতে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা অভিজিৎ রায় এবং জুলহাস মান্নানকে যথাক্রমে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হত্যা করে [১১]। 

 কার্ক-ম্যাডসেনের প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যবহারের পর এবার বাংলাদেশে সমকামিতার প্রচারকরা ভিযুয়াল মিডিয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া শুরু করেছে। সম্প্রতি আরটিভিতে প্রচারিত নাটক তাই নতুন কিছু না, বরং প্রায় দুই দশক পুরনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নতুন একট পর্যায়ের শুরু কেবল। গ্রামীনফোন প্রযোজিত এই নাটকে হুবহু কার্ক-ম্যাডসেনের শিখিয়ে দেওয়া ‘যুক্তি’গুলোই তুলে ধরা হয়েছে, এবং নাটকের ডায়ালগের মাধ্যমে সমকামিতাকে জন্মগত ও স্বাভাবিক, এবং সমকামিতা নৈতিকভাবে নিউট্রাল একটি কাজ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। নাটকে দেখানো হয়েছে সমকামি চরিত্রের পক্ষ নিয়ে একটি চরিত্র আরেকটি চরিত্রকে বলছেঃ 


‘ও পায়ুকামি (not straight), এটা কি ওর দোষ? সে কি এটাকে বেছে নিয়েছে? না। ওয়ার্ল্ডে নানা ধরনের মানুষ থাকে, তাহলে ও কেন থাকতে পারবে না? ও কি অস্বাভাবিক? না। ও কি একজন অপরাধী? না। ও তোমার আমার মতোই নরমাল মানুষ।’ [রেইনবো,আরটিভি,নির্মাতাঃ আশফাক নিপুন, প্রযোজনাঃ গ্রামীন ফোন ] 

  
 যদি বাংলাদেশে কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট নির্বিঘ্নে অনুসৃত হতে থাকে তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা এরকম আরো অনেক নাটক, শর্টফিল্ম, স্কিট এবং জনসচেতনতা মূলক বিজ্ঞাপন দেখতে পাবো। এক পর্যায়ে পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতাগুলোতে সমকামিতার স্বপক্ষে প্রবন্ধ ছাপা হবে। সমকামিতা নিয়ে বানানো নাটক ও সিনেমাকে জাতীয় পুরষ্কার, মেরিল প্রথম-আলো পুরস্কার সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরষ্কার দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমকামি অধিকার সম্পর্কে প্রকাশ্যে নানা ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হবে, পাবলিক স্কুলের কারিকুলামে সমকামিতা ও সমকামি অধিকার সম্পর্কে আলোচনা যুক্ত করা হবে। এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে সমকামি কোন তরুন বা তরুণীকে দেশী ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে ইয়ুথ আইকন হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। আর এভাবে ধীরে ধীরে সমকামিতাকে সামাজিক ও রাস্ট্রীয়ভাবে গ্রহনযোগ্য করে তোলা হবে একসময় একে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া হবে। অথবা আইনগত স্বীকৃতি ছাড়াই একসময় সমকামিতে সমাজে ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা লাভ করবে, যেমনটা বর্তমানে যিনার ক্ষেত্রে হয়েছে।  যদি এইভাবেই চলতে থাকে তাহলে অত্যন্ত অন্ধকার এক ভবিষ্যৎ এর মোকাবেলা আমাদের করতে হবে। 

তাই এ ব্যাপারটা বোঝা জরুরী যে এ দ্বন্দ্বটা সাময়িক কিছু না। কোন একটা নাটক বা বই বা ম্যাগাযিনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ সমকামিতাকে রাতারাতি গ্রহনযোগ্যতা দিতে চাচ্ছে না। এই নাটক, বই বা ম্যাগাযিনগুলোও এভাবে বানানো হচ্ছে না। তারা চাচ্ছে ক্রমাগত মানুষের সামনে সমকামিতা, ও সমকামিতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে, সমকামিতাকে স্বাভাবিক প্রমান করতে। প্রাকৃতিক প্রমান করতে। এই ব্যাপারে মানুষের সংবেদনশীলতা নষ্ট করে দিতে। মানুষকে ডিসেনসেটাইয করতে। জনমতকে পরিবর্তন করতে, সামাজিক মূল্যবোধকে বদলে দিতে। প্রতিপক্ষের আছে প্রায় অফুরন্ত ফান্ডিং, মিডিয়া এবং আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক সমর্থন। সুতরাং একটি নাটকের পর সেই নাটক নিয়ে লেখালেখি করলে অনেক মানুষ এসব সম্পর্কে জেনে যাবে – এমন ধারণা যেমন সঠিক না, তেমনি ভাবে একটি নাটকের পর কেবলমাত্র আরটিভি-গ্রামীনফোন বর্জনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হারানো যাবে এমন চিন্তা করাও ভুল। যদি আসলেই এই বিশাল মেশিনারীকে থামাতে হয়, যদি এই এজেন্ডার বাস্তবায়নকে বন্ধ করতে হয় তাহলে সমকামি এজেন্ডা বাস্তবায়নের পেছনে থাকা কাঠামো সম্পর্কে জানতে হবে, একে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। তবে সেই আলোচনা আরেক দিনের জন্য তোলা থাক।


আল্লাহ মনোনীত দ্বীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া



রাহমান রাহীম আল্লাহতালার নামে,

আল্লাহ মনোনীত দ্বীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। যারা ইসলাম অনুসারে আমল করতে এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে নারাজ, এরকম ব্যক্তি কাফির। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ ‘

যে ব্যক্তিকে আল্লাহর আয়াত সমূহ দ্বারা উপদেশ প্রদান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালিম আর কে হ’তে পারে? নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব’ (সাজদাহ ২২)।

এছাড়াও সূরা কাহফের ৫৭নং আয়াতেও একই ধরনের বক্তব্য এসেছে। অন্যত্র তিনি বলেন,

وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى، قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِيْ أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا، قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى- ‘

যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? আমিতো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল। অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব’ (ত্ব-হা ১২৪-১২৬)।

মানুষ নির্দ্বিধায় আল্লাহকে ভুলে অসৎ পথে চলে, পাপাচারে লিপ্ত হয়। প্রবৃত্তির অনুসারী হ’তেও দ্বিধা করে না। কিন্তু হক্ব যদি প্রবৃত্তির অনুসরণ করত তবে আসমান-যমীন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। মহান আল্লাহ বলেন,

 وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّ بَلْ أَتَيْنَاهُمْ بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَنْ ذِكْرِهِمْ مُعْرِضُوْنَ ‘

সত্য যদি তাদের কাছে কামনা-বাসনার (প্রবৃত্তির) অনুসারী হ’ত, তবে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত’ (মুমিনূন ৭১)।

 উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী আক্বীদাহ ও তাওহীদ গ্রহণের পর যদি কেউ উপরোল্লিখিত বিষয়গুলিতে নিপতিত হয়, তবে সে ঈমান হারা হবে বা মুরতাদ হয়ে যাবে। তার উপর মুরতাদের হুকুম (মৃত্যুদন্ড) ওয়াজিব হবে। যা কার্যকর করার মালিক হচ্ছেন দেশের সরকার। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই দন্ড কার্যকর করার অধিকার রাখে না। ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

 مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوْهُ ‘যে তার দ্বীন পরিবর্তন করল তাকে হত্যা কর’।[26] তবে তওবা করে নতুনভাবে ইসলাম গ্রহণ করলে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لاَ تَقْنَطُوْا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

 ‘বলুন, ‘হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (যুমার ৫৩)।

 মহান আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা, যেন তিনি আমাদেরকে বিষয়গুলো বুঝে তা থেকে দূরে থাকার তাওফীক্ব দান করেন। -আমীন!

যে ব্যক্তি মনে করে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শরী‘আত ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে জীবন পরিচালনা করলেও জান্নাত পাওয়া যাবে বা আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব, সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে



রাহমান রাহীম আল্লাহতালার নামে,
 
যে ব্যক্তি মনে করে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শরী‘আত ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে জীবন পরিচালনা করলেও জান্নাত পাওয়া যাবে বা আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব, সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

 وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلاَمِ
دِيْنًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ‘

যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মকে গ্রহণ করবে তার কোন আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৮৫)।

 মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

 وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيْرًا

‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিকে সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান’ (নিসা ১১৫)।

মানুষ আল্লাহর দ্বীন ত্যাগ করে অন্য দ্বীন তালাশ করে, অথচ আসমান-যমীনে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর দ্বীন মেনে চলে। মহান আল্লাহ বলেন,

 أَفَغَيْرَ دِيْنِ اللهِ يَبْغُوْنَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ ‘

তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে’ (আলে ইমরান ৮৩)।

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, জড় বস্ত্ত আল্লাহর দ্বীনের অনুগত হ’তে বাধ্য, আর মানুষের বিষয়টিতো এর চেয়ে কঠিন। কারণ মানুষ আল্লাহর দ্বীন মানবে বলে রূহের জগতে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে এসেছে। যা লঙ্ঘন করলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হ’তে হবে।

মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা


 রাহমান রাহীম আল্লাহতালার নামে,

মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি এমন কাজ করে তবে সে কুফরী করল। মহান আল্লাহ বলেন,

 وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ ‘

তোমাদের মধ্যে যে তাদের (বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না’ (মায়েদাহ ৫১)।

 তিনি আরো বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُوْنَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوْا بِمَا جَاءَكُمْ مِنَ الْحَقِّ يُخْرِجُوْنَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوْا بِاللهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِيْ سَبِيْلِيْ وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِيْ تُسِرُّوْنَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنْتُمْ وَمَنْ يَفْعَلْهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيْلِ-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আমার এবং তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে, তা অস্বীকার করেছে। তারা রাসূলকে ও তোমাদেরকে বহিষ্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং আমার পথে জিহাদ করার জন্য বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, তা আমি খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়’ (মুমতাহিনা ১)।

 পরের আয়াতেই মহান আল্লাহ বলেন,

إِنْ يَثْقَفُوْكُمْ يَكُوْنُوْا لَكُمْ أَعْدَاءً وَيَبْسُطُوْا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُمْ بِالسُّوْءِ وَوَدُّوْا لَوْ تَكْفُرُوْنَ ‘

তোমাদেরকে করতলগত করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে কোনরূপে তোমরাও কাফির হয়ে যাও’ (মুমতাহিনা ২)।

এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, সুযোগ পাওয়ার পর তারা মুমিনদের সাথে উদার ব্যবহার করবে, তাদের কাছে এরূপ প্রত্যাশা করা দুরাশা মাত্র। তারা যখনই সুযোগ পাবে তাদের বাহু ও জিহবা মুসলমানদের অনিষ্ট করার জন্য প্রসারিত করবে। এজন্য তাদের সাথে মিল রাখা ভবিষ্যতে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকায় এ আচরণ ত্যাগ করতে হবে। অন্যথা ঈমান হারা হয়ে যাবে।

যদি কেউ যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা মন্দ কিছু বর্জন করতে চায় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় অথবা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায়


রাহমান রাহীম আল্লাহতালারর নামে,

যদি কেউ যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা মন্দ কিছু বর্জন করতে চায় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় অথবা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায় তবে তা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে এবং যে ব্যক্তি এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে উভয়ই কুফরী করল। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন

,اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি বললেন,
(১) আল্লাহর সাথে শিরক করা

 (২) যাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন

 (৪) সূদ খাওয়া

 (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা

(৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা

(৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া’।[16]


আল্লাহ রাববুল আলামীন যাদুকে কুফরী ও শয়তানী শিক্ষা হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ ‘কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত’ (বাক্বারাহ ১০২)।

অত্র আয়াতের শেষের দিকে মহান আল্লাহ বলেন,



وَلَقَدْ عَلِمُوْا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ ‘তারা ভালরূপেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই’ (বাক্বারাহ ১০২)।

 যাদুর শ্রেণীভুক্ত কিছু বিষয় :

(ক) আউফ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াফা’ হচ্ছে পাখি উড়িয়ে ভাগ্য গণনা করা। ‘তারক’ হচ্ছে মাটিতে রেখা টেনে ভাগ্য গণনা করা। হাসান বলেন, ‘জিবত’ হচ্ছে শয়তানের মন্ত্র।[17]

ওমর (রাঃ) বলেন, ‘জিবত’ হচ্ছে যাদু’।[18]

(খ) ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ... ‘যে ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যা থেকে কিছু অংশ শিখল সে মূলতঃ যাদুবিদ্যারই কিছু অংশ শিখল। এ (জ্যোতির্বিদ্যা) যত বাড়বে যাদুবিদ্যাও তত বাড়বে’।[19]

 (ঘ) ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِىَ النَّمِيْمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ ‘আমি কি তোমাদেরকে যাদু কি এ সম্পর্কে সংবাদ দিব না? তা হচ্ছে চোগলখুরী বা কুৎসা রটনা করা অর্থাৎ মানুষের মধ্যে কথা লাগানো বা বদনাম ছড়ানো’।[20]

দু’টি কারণে যাদু শিরকের অন্তর্ভুক্ত :১। যাদু বিদ্যায় শয়তানকে ব্যবহার করা হয় এবং তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।

২। যাদু বিদ্যায় ইলমে গায়েবের দাবী করা হয় এবং যাদুকরের জ্ঞান ও যাদুবিদ্যা অর্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর অংশীদারিত্বের দাবী করা হয়। এটা নিঃসন্দেহে শিরক এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।[21]

যাদুকরের শাস্তি : যাদুকররা কাফির ও হত্যাযোগ্য অপরাধী।[22]

বাজালা (রহঃ) বলেন, আমি আহনাফ ইবনে কায়সের চাচা মাযই ইবনে মু‘আবিয়ার কাতেব (সচিব) ছিলাম। ওমর (রাঃ)-এর মৃত্যুর একবছর পূর্বে তাঁর লেখা একখানা পত্র আমাদের হস্তগত হ’ল। তাতে লেখা ছিল, اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ ‘প্রত্যেক যাদুকরকে হত্যা কর’।[23]

ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, ওমর (রাঃ) মুসলিম গভর্ণরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা কর’। বাজালা বিন আবাদাহ বলেন, ‘এ নির্দেশের পর আমরা তিনজন যাদুকরকে হত্যা করেছি’।[24]

তবে ইমাম আহমাদ ও ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মতে, যদি তারা তওবা করে তবে তাদের তওবা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ মুশরিকও তওবা করলে কবুল হয়, যেমন তওবা করেছিল ফিরআঊনের যাদুকররা।[25]

ফুটনোটঃ[16]. বুখারী হা/২৭৬৬; মুসলিম হা/২৭২; মিশকাত হা/৫২।
 [17]. আহমাদের সনদে ফাতহুল মাজীদ ২৪৯ পৃঃ।
 [18]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৩ পৃঃ।
 [19]. আবূদাঊদ হা/৩৯০৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৮, সনদ হাসান। 
[20]. মুসলিম এর সনদে ফাহুল মাজীদ ২৫২ পৃঃ। 
[21]. তাওহীদ মর্মকথা ১১৭ পৃঃ।
 [22]. তাওহীদের মর্মকথা ১১৬ পৃঃ। 
[23]. আবুদাউদ হা/৩০৪৩, সনদ ছহীহ। 
[24]. বুখারী, আহমাদ ১/১৯০ পৃঃ। 
[25]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৭ পৃঃ।

যদি কোন মুসলিম মুহাম্মাদ (ছাঃ) আনিত ধর্মের কোন বিষয়ে অথবা ধর্মীয় ছওয়াব বা শাস্তির ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তবে সেও কাফির হয়ে যাবে



রাহমান রাহীম আল্লাহ নামে,

 কোন মুসলিম মুহাম্মাদ (ছাঃ) আনিত ধর্মের কোন বিষয়ে অথবা ধর্মীয় ছওয়াব বা শাস্তির ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তবে সেও কাফির হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

 قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ، لاَ تَعْتَذِرُوْا

 قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ ‘

আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, ঈমান আনার পর তোমরা যে কাফির হয়ে গেছ’ (তওবা ৬৫-৬৬)।

 যারা ইসলাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তাদের আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের কোন আশা নেই। আল্লাহ বলেন,

 فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ ‘

সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি’ (ইউনুস ১১)।

এ ধরনের লোকদের সাথে উঠাবসা, চলাফেরা ত্যাগ করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা উক্ত আচরণ পরিত্যাগ না করে। মহান আল্লাহ বলেন,

 وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا- ‘

আর কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)।

এরূপ ব্যক্তিদের আল্লাহ নির্বোধ বলে ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতেও নিষেধ করেন। তিনি বলেন,

 يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِيْنَ أُوتُوْا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ

 وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوْا اللهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ، وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ اتَّخَذُوْهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَ يَعْقِلُوْنَ-

‘হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর যখন তোমরা ছালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা মনে করে। কারণ তারা নির্বোধ’ (মায়েদাহ ৫৭-৫৮)।

উপহাস করা মুনাফিকদের আলামত হিসাবে আল্লাহ রাববুল আলামীন উল্লেখ করেন,

وَإِذَا لَقُوا الَّذِيْنَ آمَنُوْا قَالُوْا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُوْا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ ‘

আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি, আমরাতো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্র’ (বাক্বারাহ ১৪)।

 উল্লিখিত আয়াত সমূহে ধর্মে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসকারীকে জাহান্নামী, নির্বোধ ও মুনাফিকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং এদের সাথে চলাফেরা, উঠাবসাও সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে।

যদি কোন মুসলিম নবী করীম (ছাঃ)-এর দেখানো পথ ব্যতীত অন্য কোন পথ পরিপূর্ণ অথবা ইসলামী হুকুমাত বা বিধান ব্যতীত অন্য কারো তৈরী হুকুমাত উত্তম মনে করে, তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে


রাহমান রাহীম আল্লাহতালার নামে,

যদি কোন মুসলিম নবী করীম (ছাঃ)-এর দেখানো পথ ব্যতীত অন্য কোন পথ পরিপূর্ণ অথবা ইসলামী হুকুমাত বা বিধান ব্যতীত অন্য কারো তৈরী হুকুমাত উত্তম মনে করে, তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করে যে, মানুষের তৈরী আইন ও বিধান ইসলামী শরী‘আত থেকে উত্তম বা ইসলামের সমান, মানব সৃষ্ট বিধান দিয়ে বিচার-ফায়ছালা জায়েয, ইসলামী হুকুমাত বিংশ শতাব্দীর জন্য প্রযোজ্য নয়, ইসলামই মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার কারণ, ইসলামের সাথে পরকালীন সম্পর্ক, দুনিয়াবী কোন সম্পর্ক নেই- ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে উক্ত বিষয়গুলো কুফরীর শামিল। কারণ এটা হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করার হীন প্রচেষ্টা মাত্র।[14]

আল্লাহ বলেন, اتَّخَذُوْا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُوْنِ اللهِ ‘তারা (ইহুদী-খ্রীষ্টানরা) তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদেরকে তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতিরেকে’ (তওবা ৩১)।

 ইহুদী-খৃষ্টান পন্ডিত ও ধর্ম জাযকদের মা‘বূদ (প্রভু) সাব্যস্ত করা অর্থ তাদেরকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করা নয়, বরং তারা সর্বাবস্থায় যাজক শ্রেণীর আনুগত্য করে থাকে। যদিও তারা আল্লাহ প্রদত্ত হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করে দেয়। এধরনের আনুগত্য তাদেরকে প্রভু সাব্যস্ত করারই নামান্তর। আর এটা হ’ল প্রকাশ্য কুফরী।[15]

 আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়ছালা পরিত্যাগ করা কোন মুমিনের জন্য জায়েয হ’তে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلاَ مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً مُبِيْنًا- ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার নারী-পুরুষের সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে’ (আহযাব ৩৬)।

 সুতরাং আল্লাহ কর্তৃক কোন বিষয় নির্ধারিত হ’লে তা পরিবর্তন করার এখতিয়ার কারও নেই।


যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করে অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মতবাদসমূহ সঠিক মনে করে


রাহমান রাহীম আল্লাহতালার নামে,


যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করে অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মতবাদসমূহ সঠিক মনে করে।

 মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ ‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’ (তওবা ২৮)।

মুশরিক সম্প্রদায় অপবিত্র হওয়ার পর কি করে তাদের মতবাদ গ্রহণীয় হ’তে পারে? তিনি আরও বলেন, أَنَّ اللهَ بَرِيْءٌ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ وَرَسُوْلُهُ ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ) মুশরিকদের থেকে মুক্ত’ (তওবা ৩)। অর্থাৎ মুশরিকদের ব্যাপারে আল্লাহর কোন দায়দায়িত্ব নেই। মহান আল্লাহ বলেন,

 إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِيْنَ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَا أُوْلَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ ‘

নিশ্চয়ই আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং শিরক করে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং এরাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট সৃষ্টি’ (বায়্যিনাহ ৬)।

যার কারণেই আল্লাহ এদের সাথে বিবাহ পর্যন্ত হারাম ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ

 حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلاَ تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتَّى يُؤْمِنُوْا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُوْلَئِكَ يَدْعُوْنَ إِلَى النَّارِ-

‘তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ কর না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদে

র কাছে ভাল লাগে। তোমরা কোন মুশরিক পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত না সে ঈমান আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করে’ (বাক্বারাহ ২২১)।

যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে কাউকে মাধ্যম তৈরী করে তাদেরকে ডাকে এবং তাদের নিকট শাফা‘আত কামনা করে


রাহমান রাহিম আল্লাহতালার নামে,

যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে কাউকে মাধ্যম তৈরী করে তাদেরকে ডাকে এবং তাদের নিকট শাফা‘আত কামনা করে, সে মুরতাদ হয়ে যাবে। কারণ শাফা‘আতের একমাত্র মালিক আল্লাহ। তিনি বলেন, قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيْعًا لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ‘বলুন, সমস্ত সুফারিশ আল্লাহরই আয়াত্ত্বাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য’ (যুমার ৪৪)।

 এক শ্রেণীর লোক আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করে এবং তাদেরকে সুফারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করে। অথচ তাদের সুফারিশ করার কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ বলেন, وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللهِ قُلْ أَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِي الْأَرْضِ ‘তারা উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্ত্তর, যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে, না পারে উপকার করতে এবং তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুফারিশকারী। তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ে অবহিত করছ, যে বিষয়ে তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে’ (ইউনুস ১৮)।

আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপর ভরসা করা কুফরী। যেমন কোন পীর, অলী-আউলিয়া, জীবিত বা মৃত কোন বুযুর্গ বা বিশেষ কোন ব্যক্তির উপর ভরসা করে কোন কাজ শুরু করা। কেউ যদি গুরু সহায়, খাজা ভরসা, ফাতেমা সহায়, রাসূল ভরসা ইত্যাদি বলে তাহ’লে শিরক হবে। একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা রাখতে হবে, অন্যথা ঈমান বিনষ্ট হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে ঈমানদারদের বিশেষ গুণ হিসাবে তাঁর উপর ভরসা রাখার কথা বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ ‘যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর’ (মায়েদাহ ২৩)।

 তিনি আরও বলেন, إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِيْنَ ‘যদি তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেই থাক এবং যদি মুসলিম হয়ে থাক, তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর’ (ইউনুস ৮৪)।

 মহান আল্লাহ নবী করীম (ছাঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছেন, قُلْ حَسْبِيَ اللهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُوْنَ ‘বলুন, (হে নবী!) আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে’ (যুমার ৩৮)।

الشرك في عبادة الله তথা আল্লাহর ইবাদতে শরীক বা অংশীদার স্থাপন করা


 রাহমান রাহিম আল্লাহতালার নামে,

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়ার এবং একে আকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে কেউ এমন কাজ না করে, যা তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। এ ব্যাপারে দাওয়াত দেওয়ার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولاً أَنِ اعْبُدُوْا اللهَ وَاجْتَنِبُوْا الطَّاغُوْتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى اللهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلاَلَةُ- ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূত[1] কে পরিহার কর। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যককে আল্লাহ হেদায়াত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্য বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল’ (নাহল ৩৬)।

 সুতরাং যারা নবীদের অনুসরণ করবে তারা সৎপথ পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবে না কিংবা অবাধ্যতা বা বিরোধিতা করবে তারা পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হবে। এছাড়াও এমন কিছু কাজ-কর্ম রয়েছে, যা মুসলমানের ঈমান ধ্বংস করে দেয়, তাকে ‘মুরতাদে’ পরিণত করে তথা ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। মুরতাদ হওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে ও ছহীহ হাদীছ সমূহে অসংখ্য সাবধান বাণী পরিলক্ষিত হয়। মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগীদের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম একমত যে, এটা হত্যাযোগ্য অপরাধ এবং তার মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকের জন্য বৈধ।ইসলাম থেকে খারিজ হওয়ার বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ অনেক। তন্মধ্যে দশটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল.

الشرك في عبادة الل1 তথা আল্লাহর ইবাদতে শরীক বা অংশীদার স্থাপন করা!

 

১. الشرك في عبادة الله তথা আল্লাহর ইবাদতে শরীক বা অংশীদার স্থাপন করা। আল্লাহর সাথে শিরক বিভিন্নভাবে হ’তে পারে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।- 

(ক) ইবাদত পাওয়ার একমাত্র উপযুক্ত সত্তা আল্লাহ তা‘আলাকে না মেনে তাঁর সাথে আরো কাউকে যোগ্য বলে মনে করা। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلاَ تَجْعَلْ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ فَتُلْقَى فِيْ جَهَنَّمَ مَلُوْمًا مَدْحُوْرًا ‘আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না। তাহ’লে নিন্দিত ও (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (বানী ইসরাঈল ৩৯)।

 আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, لاَ تَجْعَلْ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُوْمًا مَخْذُوْلاً ‘আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করো না। তাহ’লে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে’ (বানী ইসরাঈল ২২)।

 তিনি আরো বলেন, وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ لاَ بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لاَ يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ ‘যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যার কোন সনদ তার কাছে নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার নিকটে রয়েছে। নিশ্চয়ই কাফিররা সফলকাম হবে না’ (মুমিনূন ১১৭)।

 নবীদেরকেও এ ব্যপারে আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, فَلاَ تَدْعُ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ فَتَكُوْنَ مِنَ الْمُعَذَّبِيْنَ ‘(হে নবী!) আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকবেন না। তাহ’লে আপনি শাস্তিতে নিপতিত হবেন’ (শু‘আরা ২১৩)। 

উল্লেখিত আয়াতে নবী করীম (ছাঃ)-কে জাহান্নামের ভয় দেখানো হয়েছে। অথচ নবীদের জাহান্নামী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সুতরাং এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, যারা পীর, অলী-আওলিয়া বা কোন কবরবাসীকে ডাকে, তাদের ইবাদত করে, তারা ঈমান হারাবে এবং জাহান্নামী হবে। কারণ উক্ত কাজ স্পষ্ট শিরক। আর এ ধরনের শিরক মুমিনকে ঈমানহীন করে দেয়।

 (খ) মৃতব্যক্তির নিকট কিছু চাওয়া বা অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য দো‘আ করা শিরকে আকবার তথা বড় শিরক। কোন মুমিন যদি এ কাজ করে তবে তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ভাল-মন্দ দেওয়া, না দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। 

তিনি বলেন, قُلْ أَتَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلاَ نَفْعًا وَاللهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্ত্তর ইবাদত কর, যে তোমাদের অপকার ও উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। অথচ আল্লাহ সব শুনেন ও জানেন’ (মায়েদাহ ৭৬)।

 আল্লাহর নবী (ছাঃ) নিজেই নিজের উপকার-অপকার করতে পারতেন না বলে কুরআনে প্রমাণ মিলে। সেখানে অন্যদের মাধ্যমে কি করে উপকার আশা করা যায়? আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ لاَ أَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَاءَ اللهُ ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই কিন্তু আল্লাহ যা চান’ (আ‘রাফ ১৮৮)।

 আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, قُلْ أَفَاتَّخَذْتُمْ مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَاءَ لاَ يَمْلِكُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا ‘(হে নবী!) বলুন, তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা ভাল ও মন্দের মালিকও নয়’ (রা‘দ ১৬)। 

অন্যত্র তিনি বলেন, وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ‘আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তিনি তোমার মঙ্গল করেন, তবে তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। তিনিই তার বান্দার উপর পরাক্রান্ত’ (আন‘আম ১৭-১৮)।

মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ قُلْ حَسْبِيَ اللهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُوْنَ ‘বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। (প্রকৃত পক্ষে) নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে’ (যুমার ৩৮)। 

অন্যত্র তিনি বলেন, وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهِ آلِهَةً لاَ يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلاَ يَمْلِكُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَلاَ نَفْعًا وَلاَ يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَلاَ حَيَاةً وَلاَ نُشُوْرًا ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট। তারা নিজেদের ভালও করতে পারে না মন্দও করতে পারে না। আর জীবন, মরণ ও পুনরুজ্জীবনের মালিকও তারা নয়’ (ফুরক্বান ৩)।

 তিনি আরো বলেন, إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلاَ تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِيْنَ ‘আপনি মৃতদেরকে ডাক শুনাতে পারবেন না এবং বধিরকেও নয়, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যায়’ (নামল ২৭)।

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَالَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ مَا يَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِيْرٍ، إِنْ تَدْعُوْهُمْ لاَ يَسْمَعُوْا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَلاَ يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ- ‘তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আটিরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। ক্বিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে। বস্ত্ততঃ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবে না’ (ফাতির ১৩-১৪)। 

(গ) মৃতব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া বা কাউকে বান্দা নেওয়াজ, গরীবে নেওয়াজ, গাওছুল আযম (সর্বোচ্চ সহযোগিতাকারী) মনে করাও বড় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, যা মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ أَوْثَاناً وَتَخْلُقُوْنَ إِفْكاً إِنَّ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لاَ يَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقاً فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوْهُ وَاشْكُرُوْا لَهُ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ- ‘তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ (আনকাবূত ১৭)।

 আল্লাহ পাক আরো বলেন, وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لاَّ يَسْتَجِيْبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُوْنَ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্ত্তর পূঁজা করে, যে ক্বিয়ামত পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? তারাতো তাদের পূঁজা সম্পর্কেও বেখবর’ (আহকাফ ৫)। 

কোন কিছু চাইতে হ’লে কেবল আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ ‘যখন তুমি কোন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই করবে’।[2]  

সাহায্য চাওয়ার দু’টি অবস্থা হ’তে পারে। একটি ‘দো‘আ’ অপরটি ‘ইস্তিগাছা’। সাধারণভাবে সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার নাম হচ্ছে ‘দো‘আ’। আর দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় আল্লাহর কাছে দো‘আ করার নাম হচ্ছে ‘ইস্তিগাছা’। সুতরাং ইস্তিগাছা শব্দ সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা এবং তাদের নামের সাথে ‘গাওছুল আযম’ ব্যবহার করা জায়েয নয়। এসব কেবল আল্লাহর জন্য হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তিনিই দো‘আকারীর ডাকে সাড়া দেন। তিনিই বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।[3]

(ঘ) আল্লাহ ব্যতীত মৃত বা জীবিত কারো নামে মানত করা শিরক। গায়রুল্লাহর নামে মানত করলে ঐ মানত পূর্ণ করা যাবে না। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيْعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِىَ اللهَ فَلاَ يَعْصِهِ ‘যে ব্যক্তি আললাহর আনুগত্যের কাজে মানত করে, সে যেন তা পূরা করার মাধ্যমে তার আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত করে, সে যেন তার নাফরমানী না করে। (অর্থাৎ মানত পূরা না করে)।[4] 

নযর বা মানত করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হবে, যদি তা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে হয়। আর আল্লাহর নামে মানত করলে তা আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে মানত করলে তা শিরক হবে। বিধায় তা পূর্ণ করা হারাম। এরূপ মান্নতের নিয়ত করে থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে এবং তওবা করতে হবে।[5] 

অনেকে কবরে মোমবাতি, তেল, আগরবাতি, টাকা-পয়সা, গরু-খাসি, মোরগ-মুরগী, কবুতর ইত্যাদি মানত করে। তারা মনে করে এর মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য হাছিল হবে, রোগমুক্তি হবে, হারানো ব্যক্তিকে ফিরে পাবে, মালের নিরাপত্তা লাভ হবে, নিঃসন্তানের সন্তান হবে ইত্যাদি। এসবই শিরক-এর অন্তর্ভুক্ত। নবীগণ সবচেয়ে সম্মানী ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়া সত্যেও তাঁদের কবর সমূহে কোন নযরানা, মানত দেওয়া হয় না। এ ধরনের মানত, নযরানা তারা কবরবাসীর সম্মান ও বরকতের জন্যই করে থাকে এবং তাদের ধারণা এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হবে। যেমন মক্কার মুশরিকদের ধারণা ছিল। তারা বলত, مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللهِ زُلْفَى ‘তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দিবে বলেই আমরা তাদের ইবাদত করি’ (যুমার ৩)। 

এমনকি যেখানে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পূজা করা হ’ত সেখানেও আল্লাহর নামে মানত করা হারাম। বর্তমানে সেখানে পূজা চলুক বা না চলুক। ছাবিত বিন আয-যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূলের যুগে ‘বুয়ানা’ নামক স্থানে একটি উট কুরবানী করার মানত করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে স্থানে এমন কোন মূর্তি ছিল কি, জাহেলী যুগে যার পূজা করা হত’? ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, না। তিনি বললেন ‘সে স্থানে কি তাদের কোন উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হ’ত’? তাঁরা বললেন, না। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি তোমার মানত পূর্ণ কর। কেননা আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত পূর্ণ করা যাবে না। আদম সন্তান যা করতে সক্ষম নয়, এমন মানতও পুরা করা যাবে না’।[6] 

(ঙ) যে স্থানে মুশরিকরা তাদের দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করে সে স্থানটি শিরকের নিদর্শনে পরিণত হয়। কারণ এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেব-দেবীর নৈকট্য লাভ করা এবং আল্লাহর সাথে শরীক করা। একারণেই যদি কোন মুসলমান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তেও উক্ত স্থানে পশু যবেহ করে, তবুও তা হবে মুশরিকদের অনুরূপ কাজ। মুশরিকদের দৃষ্টিতে তাদের পুণ্যময় স্থানের অংশীদার। মুশরিকদের কোন কাজের সাথে বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ মিল তাদের প্রতি আসক্তিরই নামান্তর।[7]

 মৃতব্যক্তির নামে কোন কিছু যবেহ করাও হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত, যেসব জন্তু আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়’। একটু পরেই বলেন, وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلَامِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ ‘যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বণ্টন করা হয় (তাও হারাম)। এসব পাপ কাজ’ (মায়েদাহ ৩)।

 এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ وَلَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ وَلَعَنَ اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا وَلَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الأَرْضِ ‘(১) যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা‘নত

 (২) যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু-প্রাণী যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা‘নত (৩)

 যে ব্যক্তি কোন বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা‘নত (৪) 

যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে, তার উপর আল্লাহর লা’নত’।

[8] উল্লিখিত বিষয় সমূহ সুস্পষ্ট রূপে শিরকে আকবর, যা থেকে বিরত থাকা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা শিরকের ব্যাপারে বলেন, إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيْدًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। তবে অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়’ (নিসা ১১৬)। 

অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ ‘নিশ্চয়ই যেআল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার আবাসস্থল হয় জাহান্নাম। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৭২)।

 ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ مَاتَ وَهْوَ يَدْعُو مِنْ دُوْنِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[9] 

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ- ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। ছাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি জবাবে বললেন, 


(১) ‘আললাহর সাথে শিরক করা, (২) যাদু করা, (৩) অন্যায়ভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন, (৪) সূদ খাওয়া, (৫) ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা, (৬) ধর্মযুদ্ধ কালীন সময়ে (রণক্ষেত্র) থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করা, (৭) সতী-সাধ্বী উদাসীনা মুমিন নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা’।

[ 10] আবু বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ ‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সমূহের কথা বলব না? ছাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয়ই বলুন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন বললেন, ‘আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া...’।[11] জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, 

مَنْ لَقِىَ اللهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি কোন শিরক করা ব্যতীত আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে (মৃত্যুবরণ করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।

[12] আল্লাহ তা‘আলা নবী করীম (ছাঃ)-কেও শিরক থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বললেন এভাবে, لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ‘যদি তুমি শিরক কর, তবে তোমার সমস্ত আমল অবশ্যই বাতিল হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৬৫)।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىْ غَيْرِىْ تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করে যে আমলে আমার সাথে অন্যকে শরীক করেছে, এমন আমল ও যাকে সে শরীক স্থাপন করেছে, আমি উভয়ই প্রত্যাখ্যান করি।[13]



Ad Code

Responsive Advertisement