LIFE OF BIN LADEN--বিশ্ব মৌলবাদী সন্ত্রাসের নেপথ্য নায়ক --বিন লাদেন জিবনের কিছু স্মৃতি কথা। পর্ব (২) - khalid Saifullah

khalid Saifullah

আল্লাহর তরবারী

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬

LIFE OF BIN LADEN--বিশ্ব মৌলবাদী সন্ত্রাসের নেপথ্য নায়ক --বিন লাদেন জিবনের কিছু স্মৃতি কথা। পর্ব (২)


যেই ভাবা সেই কাজ। লোকটি একটা ব্যাগে কিছু কাপড় চোপড় ও টুকিটাকি জিনিস নিয়ে উটের কাফেলায় করে রওনা দিলেন সদ্য গঠিত রাষ্ট্র সৌদি আরবের উদ্দেশে। এভাবে ভাগ্যান্বেষণে শুরু হলো তার সহস্র মাইলের পথপরিক্রমা। এই মানুষটিই ওসামা বিন লাদেনের বাবা মোহাম্মাদ বিন লাদেন। মোহাম্মাদ বিন লাদেন সৌদি আরবের মাটিতে পৌঁছে প্রথম যে কাজটি পেলেন সেটা আরব আমেরিকান তেল কোম্পানি আরামকোর ‘রাজমিস্ত্রি’র কাজ। দিনে মজুরি পেতেন এক রিয়াল, যার তখনকার মূল্য ছিল ১০ পেন্সের সমান। জীবন যাপনে অত্যন্ত মিতব্যয়ী ছিলেন তিনি। কঠোর কৃচ্ছ্রের মধ্য দিয়ে সঞ্চয় করতেন। সেই সঞ্চয় সার্থকভাবে বিনিয়োগ করতেন। এভাবেই এক সময় তিনি ব্যবসায় নেমে পড়েন। ১৯৫০ এর দশকের প্রথম দিকে মোহাম্মদ লাদেনকে রিয়াদে সৌদি রাজপরিবারের প্রাসাদ নির্মাণের কাজে নিযুক্ত করা হয়। স্থানীয় ফার্মগুলোকে সুকৌশলে ঘায়েল করে তিনি এই নির্মাণ ঠিকাদারী লাভ করেছিলেন। ওটা ছিল এক ধরনের জুয়াখেলার মতো, যেখানে তার জিত হয়েছিলো। মদীনা জেদ্দা মহাসড়ক নির্মাণের চুক্তি থেকে এক বিদেশী ঠিকাদার সরে গেলে মোহাম্মদ লাদেনের জন্য এক বিরাট সুযোগ এসে ধরা দেয়। এই সুযোগ তার বড় ধরনের সাফল্যের সোপান রচনা করে। তিনি ঐ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। ষাটের দশকের প্রথম দিকে তিনি একজন ধনী ব্যক্তি হয়ে দাঁড়ান এবং একজন ব্যতিক্রম ধরনের ধনী। তিনি লিখতে বা পড়তে পারতেন না এবং সারা জীবন টিপসই দিয়ে কাজ করেছেন। তবে তার অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ছিল । ষাটের দশকে তার সঙ্গে কাজ করেছেন এমন একজন ফরাসী ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে এ তথ্যটি জানা যায়। শ্রমিক থেকে ধনী হলেও মোহাম্মদ লাদেন তার শিকড় কোথায় তা কখনই ভুলে যাননি। গরিবদের দেয়ার জন্য তিনি সর্বদাই এক তোড়া নোট বাড়িতে রেখে যেতেন। এ ধরনের দান খয়রাত ইসলামের শিক্ষা। মোহাম্মদ লাদেন ছিলেন অতি ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সুন্নী ইসলামের কঠোর ও রক্ষণশীল ওয়াহাবী ভাবধারায় লালিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি গর্ব করে বলতেন যে, নিজের হেলিকপ্টার কাজে লাগিয়ে তিনি একদিনে ইসলামের তিন পবিত্রতম স্থানে যথা মক্কা, মদীনা এবং জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন। মক্কা ও মদীনায় যাওয়া তার জন্য নিশ্চয়ই বিশেষ পরিতৃপ্তির কারণ ছিলো। কারণ হজ পালন ও রওজা মোবারক জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মক্কা ও মদীনায় আগত লোকদের জন্য বিভিন্ন স্থাপনার সংস্কার ও সম্প্রাসারণ কাজের মধ্য দিয়ে তার কোম্পানির সুনাম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্টতার মধ্য দিয়ে তার ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস নিশ্চিত হয় এবং সেই সঙ্গে তিনি অমিত ধনসম্পদের অধিকরী হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তিনি এতই ধনী ছিলেন যে, দুঃসময়ে সৌদি রাজ পরিবারকে অর্থ সাহায্য দিয়ে তিনি তাদের সঙ্কট ত্রাণে সহয়তা করতেন। তথাপি যে জীর্ণ, পুরানো ব্যাগটি নিয়ে তিনি একদিন ইয়েমেন থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন সেটি তার প্রাসাদোপম বাড়িতে প্রদর্শনীর জন্য রক্ষিত ছিল। শোনা যায়, বড়লোকরা যেভাবে গাড়ি বদলায়, পুরনোটি বাদ দিয়ে নতুনটি কিনে আনে, মোহাম্মাদ লাদেনও সেভাবে বউ বদলাতেন। তার তিন সৌদি স্ত্রী ছিল এবং তারা মোটামুটিভাবে ছিলো স্থায়ী। তবে চতুর্থ স্ত্রীটি নিয়মিত বদলানো হতো। ধনকুবেরের লোকেরা মধ্যপ্রাচ্যের তল্লাট ঘুরে তার পছন্দের কনে যোগাড় করে আনত। কারও কারও বয়স ছিলো পনেরো বছর। তাদের আপদামস্তক বোরখায় ঢাকা থাকত। তবে সবাই ছিল অনিন্দ্যসুন্দরী।


ছেলেবেলা



বিন লাদেনের মায়ের নাম হামিদা। তিনি সৌদিয়ানও নন, ওয়াহাবীও নন। তিনি এক সিরীয় বণিকের কন্যা। অসামান্য সুন্দরী হামিদা ছিলেন অত্যন্ত সরলপ্রকৃতির। বিদুষীও ছিলেন তিনি। ২২ বছর বয়সে মোহাম্মদ লাদেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন মোহাম্মদ লাদেনের দশম বা একাদশ স্ত্রী। তার মানে এই নয় যে, এক সঙ্গে দশ বারোটা বউ রাখতেন মোহাম্মদ লাদেন। তিনি অনেক স্ত্রীকেই তালাক দিয়েছিলেন। তবে তালাক দিলেও জেদ্দা বা হেজাজে তাঁদের জন্য বাসস্থান ও খোরপোষের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই দশম বা একাদশ স্ত্রী হামিদার গর্ভে মোহাম্মদ লাদেনের সপ্তম পুত্র ওসামা বিন লাদেনের জন্ম ১৯৫৭ সালে। পিতার বিপুল বিত্ত ও বৈভবের পরিবেশে বিন লাদেন বড় হয়ে উঠতে থাকেন। ওসামা ১১ বছর বয়সে পিতৃহারা হন। বাবার সান্নিধ্য কখনই খুব বেশি একটা লাভ করেননি তিনি।

১৯৯৮ সালে বিন লাদেনের এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের মাধ্যমে আমেরিকার এবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক লাদেন পরিবারের ওপর একটি দলিল হস্তগত করে। তা থেকে লাদেনের ছেলেবেলার অনেক কথা জানা গেছে। তাঁর বাবা ছিলেন অতিমাত্রায় কর্তৃত্বপরায়ণ। নিজের সব সন্তানকে তিনি এক জায়গায় রাখতে চাইতেন। তাঁর শৃঙ্খলা ছিল অত্যন্ত কঠিন। সন্তানদের সবাইকে কঠোরভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলতে হত। একই সঙ্গে আমোদ প্রমোদও পছন্দ করতেন তিনি। সন্তানদের নিয়ে তিনি সমুদ্র ভ্রমণে যেতেন। মরুভূমি পাড়ি দিতে যেতেন। ছেলে মেয়েদের তিনি বড়দের মতো জ্ঞান করে সেভাবেই তাদের সঙ্গে আচরণ করতেন। তিনি চাইতেন কচি বয়স থেকেই ছেলেমেয়েরা আত্ম বিশ্বাসের পরিচয় দিক। কৈশোরে বিন লাদেনকে জেদ্দায় ‘আল আগ’ নামে এক স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়েছিলো। পাশ্চাত্য স্টাইলের এক অভিজাত সৌদি স্কুল। ১৯৬৮-৬৯ সালে বিন লাদেন যখন এ স্কুলে পড়তেন তখন সেখানে ব্রায়ান কাইফিল্ড শাইলার (৬৯) নামে একজন ইংরেজীর শিক্ষক ছিলেন। তিনি সে সময় লাদেনসহ ত্রিশজন বিত্তবান পরিবারের ছেলেকে সপ্তাহে চারদিন এক ঘণ্টা করে ইংরেজী পড়াতেন। ব্রায়ান শাইলার বিন লাদেনকে ভদ্র ও বিনয়ী হিসাবে উল্লেখ করে বলেছেন, ছেলেটা বেশ লাজুক ছিল। নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করত।

শাইলারের ভাষায়ঃ ‘ক্লাসের যে কোন ছেলের চেয়ে ঢের বেশি বিনয়ী ও ভদ্র ছিল বিন লাদেন। শারীরিক দিক দিয়েও সে ছিল অসাধারণ। অধিকাংশ ছেলের চেয়ে সে ছিল লম্বা, সুদর্শন ও উজ্জ্বল গাত্রবর্ণের অধিকারী। শুধু ভদ্র ও বিনয়ী নয়, তাঁর ভিতরে প্রবল আত্মবিশ্বাসও ছিলো। কাজকর্মে অতি সুচারু, নিখুঁত ও বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলা। নিজেকে মোটেই প্রকাশ করতে চাইত না সে। বেশিরভাগ ছেলে নিজেদের বড় বুদ্ধিমান বলে ভাব দেখাত। বিন লাদেন তাদের মতো ছিল না। কোন প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে সে নিজ থেকে বলত না। তাকে জিজ্ঞেস করা হলেই শুধু বলত।’


বিন লাদেন যে একজন কঠোর ধর্মানুরাগী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন কৈশোরের প্রথমদিকে তেমন কোন লক্ষণ ধরা পড়েনি। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদ লাদেনের পরিবার সদলবলে সুইডেনের তাম্র খনিসমৃদ্ধ ছোট শহর ফালুনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। সে সময় একটা ক্যাডিলাক গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো হাল্কা সবুজ টপ ও নীল রঙের ফ্লেয়ার পরা হাস্যোজ্জ্বল ওসামার একটা ছবি তোলা আছে। ওসামা সে সময় কখনও নিজেকে “স্যামি” বলে উল্লেখ করতেন। ওসামার বয়স তখন ১৪ বছর। এর এক বছর আগে ওসামা ও তাঁর অগ্রজ সালেম প্রথমবারের মতো ফালুনে গিয়েছিলেন। সৌদি আরব থেকে বিমানযোগে কোপেনহেগেনে আনা একটা রোলস্রয়েস গাড়ি চালিয়ে তাঁরা ফালুনে গিয়ে পৌঁছেন। আশ্চর্যের কথা হলো, তাঁরা এস্টোরিয়া নামে একটা সস্তা হোটেলে ছিলেন। হোটেলের মালিক ক্রিস্টিনা আকের ব্রাদ নামে এক মহিলা সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে জানিয়েছেন যে, ওরা দিনের বেলা বাইরে কাজকর্ম করে বেড়াত আর সন্ধার পর নিজেদের রুমে খাওয়া দাওয়া করে কাটাত। মহিলা বলেন, ‘আমার মনে আছে ওদের কথা। সুন্দর দুটো ছেলে। ফালুনের মেয়েরা ওদের খুব পছন্দ করত। ওসামা আমার দু ই ছোট ছেলের সঙ্গে খেলত।’



হোটেলের মালিক সেই মহিলা ছেলে দুটোর রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে তাদের যে সম্পদের পরিচয় পেয়েছিলেন সে কথাও স্মরণ করেছেন তিনি। বলেছেনঃ ‘উইকএন্ডগুলোতে আমরা দেখতাম ওরা ওদের রুমে একটা বাড়তি বিছানায় কাপড় চোপড় বিছিয়ে রাখত। সেলোফিনে প্যাকেট করে রাখা অসংখ্য সাদা সিল্কের শার্ট ছিলো ওদের। মনে হয় প্রতিদিন নতুন একটা শার্ট গায়ে চড়াত। ময়লা কাপড়গুলো কখনও দেখিনি, ওগুলো কি করত কে জানে। বড় একটা ব্যাগ ভর্তি অলঙ্কারও ছিলো তাদের। হীরা, চুনি, পান্নার আংটি ছিল। টাইপিনও ছিল।’ লাদেন ভ্রাতারা ঐ বছর গ্রীষ্মের ছুটি কটাতে লন্ডনেও গিয়েছিলেন। ওখানে টেমস নদীতে তাঁরা নৌকা ভ্রমণও করেছিলেন। এ সময়ের তোলা বিন লাদেন ও তাঁর ভ্রাতাদের ছবিও কারও কারও কাছে পাওয়া গেছে।

উত্তরাধিকার সূত্রে বিন লাদেন কি পরিমাণ ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েছিলেন নিশ্চিতভাবে কেউ কিছু বলতে পারে না। অনেক সময় বলা হয়, বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েছিলেন তিনি। ২৫ কোটি ডলার কি তারও বেশি। কিন্তু প্রকৃত অর্থের পরিমাণ হয়ত তার চেয়ে অনেক কম। অর্থের জন্য কখনও লালায়িত ছিলেন না তরুণ লাদেন। বস্তুত পক্ষে তাঁর পিতা যেভাবে অমিত ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েছিলেন সেই বিষয়গুলো বিন লাদেনকে পীড়িত করতে শুরু করেছিল। সত্তরের দশকের প্রথমভাগে মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল এক সাংস্কৃতিক রুপান্তর ঘটে গিয়েছিলো। তেল রাজস্ব, ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ এবং সর্বোপরি পাশ্চাত্যের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ এই ঘটনাগুলো আগের স্থিরকৃত বিষয়গুলোকে নতুন করে পর্যালোচনা করতে বাধ্য করে। নতুন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে এ প্রশ্ন তুলে ধরে। মোহাম্মদ বিন লাদেনের অসংখ্য ছেলেমেয়ের অধিকাংশই সে প্রশ্নের জবাবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দ্বারা অধিকতর প্রভাবিত হওয়ার জন্য ঝুঁকে পড়ে। পরিবারের বড়রা মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ার ভিক্টোরিয়া কলেজ, হর্ভার্ড, লন্ডন কিংবা মায়ামিতে পড়তে চলে যায়। কিন্তু বিন লাদেন যাননি। সে সময় এ অঞ্চলের আরও হাজার হাজার তরুণের মতো ওসামা বিন লাদেন কঠোর ইসলামী ভাবাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়ছিলেন।


 ------চলমান।


প্রথম পর্ব

কোন মন্তব্য নেই:

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages