Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন —আল-বাক্বারাহ ২৪৫


বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম

কে আছে যে আল্লাহকে ﷻ ধার দেবে? তাহলে তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন। আল্লাহই ﷻ কমিয়ে দেন এবং বাড়িয়ে দেন। তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে। [আল-বাক্বারাহ ২৪৫] এই আয়াত পড়ে যে কোনো মুসলিমের লজ্জা পাওয়া উচিত। আল্লাহ ﷻ আমার কাছে ধার চাইছেন? আমি দুনিয়ার লোভে এতটাই স্বার্থপর হয়ে গেছি যে, তিনি ﷻ এই ভাষা ব্যবহার করে আমাকে বলছেন তাঁর পথে খরচ করতে? ধরুন, আপনার মা ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে কাজ করে আপনাকে বড় করেছেন, আপনার পড়ালেখার খরচ যোগান করেছেন। তিনি আপনাকে একটুও কষ্ট করতে দেননি, যেন আপনার পড়াশুনায় কোনো ক্ষতি না হয়, যেন আপনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। আপনার মায়ের এই বিরাট আত্মত্যাগের জন্য আপনি বড় হয়ে শিক্ষিত হলেন, ডিগ্রি অর্জন করলেন, যথেষ্ট সম্পত্তির মালিকও হলেন। আপনার মা আপনার যত এত কষ্ট না করলে আপনি এত উপরে উঠতে পারতেন না। একদিন তিনি আপনাকে অনুরোধ করছেন, ‘বাবা, আমাকে কিছু টাকা ধার দেবে? আমি আগামী বছরই ফেরত দিয়ে দেবো। আর আমি তোমাকে ধারের টাকার দ্বিগুণ ফেরত দেবো। কোনো চিন্তা করো না বাবা। একটু ধার দেবে?’ —যখন মা তাকে এই ভাষায় অনুরোধ করছেন, দ্বিগুণ ফেরত দেওয়ার কথা বলছেন, এথেকেই বোঝা যায়, সে ছেলে হিসেবে কতটা নীচে নেমেছে, কতটা লোভী হয়ে গেছে যে, তাকে এভাবে বোঝাতে হচ্ছে।

আল্লাহ্‌কে ধার দেয়া কি? আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে কয়েকটি খাত দিয়েছেন খরচ করার জন্য। বাবা-মা, পরিবার, নিকট আত্মীয়, এতিম, মিসকিন, দুস্থ পথচারী, জিহাদ — এই সব ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের সম্পত্তি খরচ করাই হচ্ছে আল্লাহর ﷻ পথে খরচ করা। তিনি ﷻ একে ধার বলে এটাই বোঝাচ্ছেন যে, দুনিয়াতে আমরা যখন সম্পত্তি খরচ করি, তখন তা আমাদের কাছ থেকে চলে যায়। কিন্তু যখন আমরা আল্লাহর ﷻ পথে সম্পত্তি খরচ করি, সেটা আমাদের কাছ থেকে চলে যায় না। বরং সেটা ধার হিসেবে জমা হয়। আল্লাহ ﷻ একদিন তাঁকে দেওয়া সমস্ত ধার ফেরত দেবেন, বহুগুণে ফেরত দেবেন। আমাদের অনেকেরই দান করতে গেলে অনেক কষ্ট হয়। কোনো এতিমখানায় দান করলে, বা কোনো গরিব আত্মীয়কে হাজার খানেক টাকা দিলে মনে হয়: কেউ যেন বুকের একটা অংশ ছিঁড়ে নিয়ে গেল। আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে চিন্তা করতে পারি— দুনিয়াতে আমার একটি ক্ষণস্থায়ী কারেন্ট একাউন্ট রয়েছে, এবং আখিরাতে আমার আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট রয়েছে। আমি আল্লাহর ﷻ রাস্তায় যখন খরচ করছি, আমি আসলে আমার দুনিয়ার একাউন্ট থেকে আখিরাতের একাউন্টে ট্রান্সফার করছি মাত্র। এর বেশি কিছু না। আমার সম্পত্তি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না, আমারই থাকছে, যতক্ষণ না আমি দান করে কোনো ধরনের আফসোস করি, বা দান করে মানুষকে কথা শোনাই।[১] একদিন আমরা দেখতে পাবো: আমাদের ওই একাউন্টে কত জমেছে এবং আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে প্রতিটা দানের বিনিময়ে ৭০০ গুণ বেশি মুনাফা দিয়েছেন।[১] সেদিন আমরা শুধুই আফসোস করব, “হায়, আর একটু যদি আখিরাতের একাউন্টে ট্রান্সফার করতাম! তাহলে আজকে এই ভয়ংকর আগুন থেকে বেঁচে যেতাম!” এই আয়াতের আগের আয়াত ক্বিতাল সম্পর্কে আদেশ। এরপরেই আল্লাহ ﷻ তাকে ধার দিতে বলে ক্বিতাল বা যুদ্ধের জন্য আমাদের সম্পত্তি খরচ করতে বলেছেন। যুদ্ধের জন্য প্রচুর খরচ দরকার। বিরাট সামরিক বাহিনী তৈরি, তাদের বেতন, খাওয়ার খরচ, যুদ্ধের সরঞ্জাম কেনা, প্রযুক্তি তৈরি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি, যানবাহনের খরচ ইত্যাদি হাজারো খাতে প্রচুর পরিমাণে খরচ করতে হয়। এই খরচ যোগানের ব্যবস্থা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দায়িত্ব। যথেষ্ট খরচ না করলে মুসলিম বাহিনী শত্রু বাহিনীর তুলনায় দুর্বল হবে, যুদ্ধে হেরে যাবে, তারপর দেশ দখল হয়ে যাবে শত্রুর কাছে। শত্রু তখন আমাদের মেরে, জমি জমা সব দখল করে নিয়ে যাবে। এভাবে আমরা সবদিক থেকেই হারাবো। একারণেই যুদ্ধের জন্য খরচ করার প্রতি এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এই খরচের বিনিময়ে এত বড় পুরষ্কারের কথা বলা হয়েছে। তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে একদিন আপনি রাস্তায় একটা বুড়ো ফকিরকে দেখে কষ্ট পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে, তাকে দোকানে নিয়ে জামাকাপড় কিনে দিলেন। এর বিনিময়ে হয়তো আল্লাহ ﷻ আপনাকে দুনিয়াতে এক কঠিন অসুখে পড়ে, চিকিৎসার পেছনে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। শুধু তাই না, আখিরাতে গিয়ে হয়তো দেখবেন: কয়েকশ একরের ঘন সবুজ বাগানের মাঝখানে এক বিশাল প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। প্রাসাদের দরজায় লেখা, ‘সেই ভিক্ষুকের জন্য’। একদিন আপনি এক গরীব আত্মীয়কে ভীষণ বিপদের সময় সাহায্য করলেন। আপনার টাকা পয়সা টানাটানি থাকার পরেও আপনি বিরাট ঝুঁকি নিয়ে তাকে অনেকগুলো টাকা দিয়ে দিলেন। এর জন্য হয়তো আল্লাহ ﷻ আপনাকে অফিসে বসের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করে চাকরি হারানো থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। আর আখিরাতে গিয়ে দেখবেন: উঁচু পাহাড়ে এক বিশাল ফুল-ফলের বাগান, বাগানের মাঝখানে ঝর্ণা, ঝর্ণার পাশে লম্বা টেবিলে সারি সারি খাবার এবং পানীয় সাজিয়ে রাখা আছে। টেবিলে একটা ছোট নোটে লেখা, ‘সেই আত্মীয়ের জন্য’। আল্লাহ্‌ই কমিয়ে দেন বাড়িয়ে দেন আমাদের যা কিছু আছে – বাড়ি, গাড়ি, টাকাপয়সা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক ক্ষমতা, মানসিক ক্ষমতা, প্রতিভা – এই সব কিছু হচ্ছে রিযক্ব رزق এবং এগুলো সবই আল্লাহর ﷻ দেওয়া।[১] রিযক্ব অর্থ যে সমস্ত জিনিস ধরা ছোঁয়া যায়, যেমন টাকাপয়সা, বাড়ি, গাড়ি, জমি, সন্তান এবং একই সাথে যে সমস্ত জিনিস ধরা ছোঁয়া যায় না, যেমন জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, মেধা।[২] এগুলোর কোনটাই আমরা শুধুই নিজেদের যোগ্যতায় অর্জন করিনি। আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে এই সবকিছু দিয়েছেন। এখন আপনার মনে হতে পারে, “কোথায়? আমি নিজে চাকরি করে, দিনের পর দিন গাধার মতো খেঁটে বাড়ি, গাড়ি করেছি। আমি যদি দিনরাত কাজ না করতাম, তাহলে কি এগুলো এমনি এমনি হয়ে যেত?” ভুল ধারণা। আপনার থেকে অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ পৃথিবীতে আছে, যারা আপনার মতই দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেছে, কিন্তু তারা বাড়ি, গাড়ি করতে পারেনি। আল্লাহ ﷻ কোনো বিশেষ কারণে আপনাকে বাড়ি, গাড়ি করার অনুমতি দিয়েছেন দেখেই আপনি এসব করতে পেরেছেন। তিনি যদি অনুমতি না দিতেন, তিনি যদি মহাবিশ্বের ঘটনাগুলোকে আপনার সুবিধামত না সাজাতেন, আপনি কিছুই করতে পারতেন না। আল্লাহ ﷻ আপনাকে সামর্থ্য দিয়েছেন, সুযোগ দিয়েছেন, আপনি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিশ্রম করেছেন। আল্লাহর ﷻ হুকুম ছিলো আপনার পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন, তাই আপনি অর্থ উপার্জন করছেন। না হলে পারতেন না। একারণেই আল্লাহ ﷻ আল-বাক্বারাহ-এর তৃতীয় আয়াতে বলেছেন যে, তিনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন, সেটা থেকে যেন আমরা খরচ করি। আল্লাহর ﷻ রাস্তায় খরচ করতে গিয়ে যেন আমরা মনে না করি যে, “এগুলো সব আমার, দিবো না কাউকে!” বরং এগুলো সবই আল্লাহর ﷻ। তিনি আপনাকে কিছুদিন ব্যবহার করার জন্য দিয়েছেন। একদিন তিনি সবকিছু নিয়ে যাবেন। আপনার পরিবারের সদস্যরা আপনাকে উলঙ্গ করে, একটা সস্তা সাদা কাপড়ে পেঁচিয়ে, মাটির গর্তে পুঁতে দিয়ে আসবে। কয়েকদিন কান্নাকাটির পর সবাই আবার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, আপনাকে ভুলে যাবে। অনেকসময় আমরা চাকরি হারিয়ে ফেললে, বা ব্যবসায় লোকসান হলে সব দোষ হয় বসের, পার্টনারের, বন্ধুর, না হলে বউয়ের। আমরা মনে করি, অমুকের জন্যই আজকে আমি সব হারিয়ে ফেললাম। আজকে আমার এই দুরবস্থার জন্য সব দোষ তার। তার জন্য আমি এত করলাম, আর সে আমার সাথে এমন করতে পারলো? —এভাবে তার প্রতি আক্রোশ ধরে রেখে বছরের পর বছর পার করি। অনেক সময় বহু বছরের সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলি। আল্লাহ ﷻ এই আয়াতে বলছেন, “আল্লাহই ﷻ কমিয়ে দেন এবং বাড়িয়ে দেন”। আমাদের রিযক্ব আসে আল্লাহর ﷻ কাছ থেকে। তিনি যখন সিদ্ধান্ত নেন রিযক্ব বাড়িয়ে দেবেন, তখন আমাদের দিনকাল ভালো যায়, চাকরি হয়, ব্যবসায় লাভ হতে থাকে, ছেলেমেয়ে উপরে উঠতে থাকে, বিদেশে যাওয়া হয়। যখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন রিযক্ব কমিয়ে দেবেন, তখন চাকরি চলে যায়, ব্যবসা ধ্বসে যায়, ছেলেমেয়ে দূরে চলে যায়, দেশে ফিরে আসতে হয় ইত্যাদি। মানুষের জীবনে রিযক্ব-এর উঠানামা হবেই। আর এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহ ﷻ হাতে। যেই বন্ধুকে আপনি দোষ দিচ্ছেন চাকরি হারানোর জন্য, সেই বন্ধু আসলে রিজক কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার একটি মাধ্যম। যেই পার্টনারের ভুলের জন্য ব্যবসা ধ্বসে গেল, সেই পার্টনারের ভুল ছিল আপনার রিযক্ব কমিয়ে দেওয়ার একটি উপলক্ষ। আমরা যখন খুব ভালভাবে উপলব্ধি করবো যে, আল্লাহ ﷻ হচ্ছেন আর-রাযযাক্ব, একমাত্র রিযক্ব দাতা, তখন আমরা কখনোই দিনকাল খারাপ গেলে অন্য কাউকে দোষ দেবো না। মেনে নেবো যে, এখন আল্লাহ ﷻ আমাকে কম রিযক্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই আমার জীবনে এসব ঘটছে। আল্লাহর ﷻ সিদ্ধান্তের জন্য কাউকে দোষ দেওয়ার কোনো মানে নেই। আল্লাহ ﷻ যখন আবার রিযক্ব বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন আমার অবস্থা আবার ভালো হয়ে যাবে। বরং আমি চিন্তা করে দেখি, এখন আমি কী করতে পারি, যা করলে আল্লাহ ﷻ আমাকে আরও রিযক্ব দেবেন? রিযক্ব বাড়ানোর জন্য আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে কী কী করতে বলেছেন? তার কাছেই তোমরা ফিরে যাবে টাকা পয়সা, বাড়ি-গাড়ি দূরের কথা, আমি তো নিজেই আল্লাহর ﷻ কাছে ফিরে যাবো। তখন কী হবে? কু’রআনে বার বার এই কথাটা আসে, “তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে”। আমাদের সময় নিয়ে এই কথাটার মর্ম উপলব্ধি করার প্রয়োজন, কারণ এটার মর্ম উপলব্ধি করলে আমাদের জীবন পাল্টে যাবে। কিছু মুসলিম আছে যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানে ত্রিশটা রোজা রাখে, কিন্তু গত এক বছরেও কোনোদিন কোনো এতিম খানায় একটা টাকাও দিতে পারেনি। ড্রাইভার, কাজের বুয়া, বাড়ির দারোয়ান তার কাছে বার বার টাকা চাইতে এসে— “দিবো, দিবো, রমজান আসুক” —এই শুনে খালি হাতে ফিরে গেছে। গরিব আত্মীয়স্বজন এসে কয়েকদিন থেকে ফিরে গেছে, কিন্তু কোনো টাকা নিয়ে যেতে পারেনি। মসজিদে বহুবার সে বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য টাকার আবেদন শুনেছে, কিন্তু কোনোদিন পকেটে হাত দিয়ে একটা একশ টাকার নোট বের করে দিতে পারেনি। ঘরের মধ্যে এসি ছেড়ে জায়নামাজে বসে নামাজ পড়া সোজা কাজ, কিন্তু পকেট থেকে হাজার টাকা বের করে গরিব আত্মীয়, প্রতিবেশী, এতিমখানায় দেওয়া যথেষ্ট কঠিন কাজ। এর জন্য ঈমান লাগে। এই ধরনের মানুষদের আল্লাহর ﷻ সাথে সম্পর্ক কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পর্যন্তই। আল্লাহর ﷻ প্রতি তাদের বিশ্বাস এখনও এতটা মজবুত হয়নি যে, তারা আল্লাহর ﷻ উপর বিশ্বাস রেখে হাজার খানেক টাকা নির্দ্বিধায় একটা এতিমখানায় দিয়ে দিতে পারে। কিয়ামতের দিনের প্রতিদান নিয়ে এখনও তাদের সন্দেহ ততটা দূর হয়নি যে, তারা নির্দ্বিধায় গরিব আত্মীয়দের চিকিৎসায় দশ হাজার টাকা লাগলেও, সেটা হাসিমুখে দিয়ে দিতে পারে। তারা যদি সত্যিই মু’মিন হতো, তাহলে তারা প্রতিদিন সকালে উঠে চিন্তা করতো, “আজকে আমি কাকে আল্লাহর ﷻ সম্পদ ফিরিয়ে দিতে পারি? আল্লাহর ﷻ কোন মেহমানকে আজকে আমি খাওয়াতে পারি? কার কাছে গিয়ে আজকে আমি জান্নাতের জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট করতে পারি?” তাহলে কি সব টাকা পয়সা আল্লাহ্‌কে দিয়ে দিব? কু’রআনের একটি আয়াত পড়ে কোনো সিদ্ধান্তে চলে গেলে ভুল সিধান্ত নেওয়া হবে। কু’রআনে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে ভারসাম্য করতে বলেছেন। বহু আয়াত আছে যেখানে আমাদেরকে বাবা-মা, পরিবার, সন্তান এর অধিকার আদায় করতে বলেছেন, তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব দিয়েছেন। বহু আয়াতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে তাঁর এই অসাধারণ পৃথিবী ঘুরে দেখতে বলেছেন, সৃষ্টিজগৎ নিয়ে গবেষণা করতে বলেছেন, তাঁর সৃষ্ট হালাল আনন্দ উপভোগ করতে বলেছেন। সেই আয়াতগুলো মানতে গেলে দুনিয়াতে টাকা খরচ করতে হবে, টাকা জমিয়ে রাখতে হবে। যদি সব টাকা দান করে দেই, তাহলে কোনোদিন সেই আয়াতগুলোর উপর আমল করা হবে না। কু’রআনের একটা বড় অংশের উপর আমল না করেই আমরা মরে যাবো। সুতরাং সম্পত্তি কীভাবে ব্যবহার করবো, কোথায় কতটুকু ব্যবহার করবো, এটা পুরো কু’রআন পড়ে সম্পূর্ণ ধারণা নিয়ে তারপরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো একটা আয়াত পড়ে ঝোঁকের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে হবে না। আমরা হাদিস থেকে উদাহরণ পাই, একজন সাহাবি এই আয়াত শুনে তার দুটো বাগানই আল্লাহর ﷻ পথে দান করে দিতে চাইলে, রাসুল ﷺ তাকে একটি দান করে অন্যটি তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য রেখে দিতে বলেন। এভাবেই আমরা সম্পত্তি নিজেদের প্রয়োজনে এবং আল্লাহর ﷻ পথে খরচ করতে ভারসাম্য করবো।

মন্তব্যসমূহ

Ad Code

Responsive Advertisement