Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

"ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছি কি না, এ প্রশ্ন আমাকে করা হবে না..."


"ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছি কি না, এ প্রশ্ন আমাকে করা হবে না। আমাকে প্রশ্ন করা হবে আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি কি না"..এই কথাটা বা এধরণের একটা কথা নিশ্চয় অনেকেই শুনেছেন।

মোটা দাগে বলা যায় এটা হল "ইসলামাইযেইশান"-এর বা ইসলামীকরনের মূলমন্ত্র। ."খিলাফাহ-খিলাফাহ করার কি আছে, খিলাফাহ নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হবে না আমাকে প্রশ্ন করা হবে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলাম কি না সে ব্যাপারে। অতএব আমি সাধ্যমত সাদাকা করবো, ইসলামী গণতান্ত্রিক দল বানিয়ে কাজ করবো সাধ্যমতো। আল্লাহ- র প্রশ্নের জবাব ঠিক করে রেখেছি, পাশ মার্ক পেয়ে যাবো।" ."ব্যাংক হারাম, ইসলামী ব্যাংক শারীয়াহ সম্মত না এসব বলে কি হবে। ব্যাঙ্কিং কি আপনি একদিনে সরিয়ে দিতে পারবেন? আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন না কি। ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী বন্ড, ইসলামী ষ্টক বানিয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকুন।সিস্টেমের ভেতরে ঢুকে তাদেরকে ইসলামের সৌন্দর্য। কাফির-মুশরিকরা নিশ্চয় ইসলামী ব্যাঙ্কের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে একসময় রিবা বাতিল করে দেবে।"."আল্লাহ-র আইন যে শাসন করে না, সে কাফির - এসব বলে কি হবে? মারমার কাটকাট করে ফিতনা ছড়াবো না কি? আমাকে এটা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে না। আমি ইসলামী রাজনৈতিক দল করবো আর সিস্টেমের ভেতর থেকে সিস্টেম পরিবর্তন করবো। এটাই আমার

জন্য যথেষ্ট হবে।".কাফিরদের শক্তি অনেক বেশি। ওদের সাথে এখন লাগা যাবে না। এখন এদের বিরুদ্ধে লাগতে গেলে আমাদের ক্ষতি। আমাকে সাধ্যাতীত কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে না। তার চেয়ে আগে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করি। ওদের দেশ গিয়ে পড়াশুনা করি। অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হই, কোমর শক্ত করে নেই। তারপর দেখা যাবে। আপাতত এসব বাদ।"."সিরিয়া-আফগানিস্তান-ইরাক-আরাকান-কাশ্মির-বসনিয়া-ফিলিস্তিন এসব জপ করে কি হবে? আমাকে এজন্য প্রশ্ন করা হবে না। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো মানুষকে তাওহীদ বোঝাতে, বিপদে আপদে সাহায্য করতে, দ্বীনের পথে আনতে - তাহলেই হবে।" ..

বলুন তো উপরের অবস্থানগুলোর মধ্যে সমস্যা কোথায়? আল্লাহ 'আযযা ওয়া জাল তো আসলেই বলেছেন তিনি কাউকে সাধ্যাতীত কাজের ভার দেন না (আল-বাক্বারা ২৮৬)। তাহলে সমস্যা কি? .সমস্যাটা হল যখন ইসলামাইযেইশানের দিকে আহবানকারীরা এ যুক্তিগুলো দেন, তখন তারা "সাধ্যমত চেষ্টা" বলতে বোঝান সিস্টেম বা বিদ্যমান ব্যবস্থা যতোটুক অ্যালাও করে ততোটুক চেষ্টা করুন। এখানে "আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করছি"-র বদলে কথাটা আসলে হওয়া উচিত "আপনি আপনার সুবিধামতো যথাসাধ্য চেষ্টা করুন।" আর প্রকৃত পক্ষে এটাই হল ইসলামাইযেইশান - ."গণতন্ত্র, ব্যাঙ্কিং, চ্যারিটি, পাবলিক স্পিকিং, স্কুল, ক্রিটিকাল থিংকিং, পররাষ্ট্র নীতি, টক শো - যা কিছু আছে সব কিছুকে একটা ইসলামী ফ্লেভার দিয়ে দিলেই হোল।

 ফ্লেভার দেয়ার ক্ষেত্রে শারীয়াহর দিকনির্দেশনা অনুসরণ করা হবে যতোটুকু অনুসরণের সু্যগ বিদ্যমান সিস্টেম দেয়। আর বাকিটা? আমি বাকিটার জন্য জিজ্ঞাসিত হবো না। আমি "সাধ্যমত চেষ্টা" চালিয়েছি।"

সুবিধা, সাধ্য, বিদ্যমান কাঠামোর অনুকরন-অনুসরণ আর আল্লাহ-র দ্বীনের মধ্যে সমন্বয়ের যে ইসলামাইযেইশানের নীতি তার সাথে আল্লাহ 'আযযা ওয়া জালের শারীয়াহর আকাশ পাতাল পার্থক্য। শারীয়াহর অবস্থান হলো দ্বীনের কোন একটি হুকুম বা অবস্থানের সাথে কম্প্রোমাইয না করা, প্রয়োজনে দুনিয়ার সাথে কম্প্রোমাইয করা। মুসলিমদের দায়িত্ব হল নিজেদের জীবনকে শারীয়াহ-কমপ্লায়েন্ট করা। ইসলামাইযেইশানের লক্ষ্য থাকে দ্বীনকে দুনিয়া কমপ্লায়েন্ট করা। .গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হল আমাদের সাধ্যমত যে চেষ্টা করার কথা, সেটা আমরা কার পদ্ধতিতে করবো? আল্লাহ-র রাসূলের দেখানো পদ্ধতিতে?? নাকি লিঙ্কন, মার্ক্স, গান্ধী, অ্যাডাম স্মিথ কিংবা কেইন্সের পদ্ধতিতে? শার'ই পদ্ধতি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় তা ত্যাগ করে অপর একটি পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর সেটাকে ইসলামীকরন করে সেটাকে দ্বীন দাবি করা, সেটার ভিত্তিতে হাশরের ময়দানে প্রশ্নোত্তরে পাশ মার্ক আশা করা কতোটা যুক্তিযুক্ত? .যদি এটা একটা ম্যাথম্যাটিকাল মডেল হয় তাহলে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শারীয়াহ হবে ধ্রুবক, আর দুনিয়ার বিষয়সমূহ হবে ভ্যারিয়েবল বা পরিবর্তনীয়। পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে, প্রজন্মের পরিবর্তন হবে, ক্ষমতার পালাবদল হবে, কিন্তু দ্বীনের আবশ্যক বিষয়সমূহ আবশ্যকই থাকবে। বদলে যাবে না। যা ফরয তা এক সময় গিয়ে নফল বা সুন্নাহ হয়ে যাবে না। যা হারাম তা একসময় গিয়ে মাকরূহ বা মুবাহ হয়ে যাবে না। সব সময় অগ্রাধিকার পাবে শারীয়াহ অনুযায়ী কাজ করা। ইসলামের অবস্থান হল, আল্লাহ যে হুকুম দিয়েছে এটা আপনাকে পালন করতেই হবে। এটাতে কোন ছাড় নেই। .কিন্তু ইসলামাইযেইশানের নীতি বলছে -যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, এটা সম্ভব না, ওটা রিয়ালিস্টিক না, তাই আমাদের কাজ হলো যথাসাধ্য চেষ্টা করা এবং সাধ্যমত চেষ্টার দ্বারা শারীয়াহর যতোটা কাছাকাছি থাকা যায়, সে চেষ্টা করা। এখানে অগ্রাধিকার কোনটা পাচ্ছে? শারীয়াহ নাকি সুবিধা? এখানে শারীয়াহর আবশ্যকতার চাইতে প্র্যাগম্যাটিযম বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। নিশ্চিত ভাবেই শারীয়াহ আর ইসলামীকরন এক না। .সবচেয়ে ড্যামেজিং বিষয়টা হল যারা ইসলামাইযেইশানের ধারণার প্রবক্তা ছিলেন তারা এটা সরাসরি স্বীকার করতেন ইসলামাইযেইশান কোন চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হতে পারে না, মূল উদ্দেশ্যও হতে পারে না। বরং এটা হোল একটা সাময়িক সমাধান, এই মুহুর্তে আর কিছু করা যাচ্ছে না দেখে এটা করা হচ্ছে। কিন্তু আজকে ইসলামাইযেইশানের পক্ষের তাত্ত্বিকরা এটাকেই মূল উদ্দেশ্য এবং সমাধান মনে করছেন।.ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মুশরিক পরিবেষ্টিত অবস্থায় মন্দিরে ঢুকে মূর্তি ভেঙ্গেছেন - আল্লাহর রাসূল ﷺ কাবার সামনে একাকী মুশরিকদের সামনে গিয়ে বলেছেন - আমি তোমাদের জন্য জবাই নিয়ে এসেছি [মুসনাদ আহমাদ]। যদি ইসলামাইযেইশানের নীতি শারীয়াহ সম্মত হত, তাহলে ইবাহীম আলাইহিস সালাম, হুদ আলাইহিস সালাম, সালিহ আলাইহিস সালাম পারতেন ক্ষমতাশালী হওয়া পর্যন্ত সুবিধামতো চেষ্টা করে তারপর এক পর্যায়ে গিয়ে পুরো শারীয়াহ মানার। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ পারতেন ক্বুরাইশদের অফার মেনে শাসক হতে, অর্থ সম্পদ এবং ক্ষমতার মালিক হতে। কিন্তু তারা আলাইহিমুস সালাম এই নীতি গ্রহণ করেন নি। কারণ আল্লাহ 'আযযা ওয়া জালের কাছে এই নীতির বৈধতা নেই।.এখানে একটা কথা আসতে পারে রাসূলুল্লাহ ﷺ কেন ১৩ বছর মক্কায় কষ্ট করলেন, কাবার সামনে মূর্তি থাকা অবস্থায় ও সেখানে সালাত আদায় করলেন, জিহাদ করলেন না, হুদুদ কায়েম করলেন না - এটা কি ইসলামাইযেইশানের পক্ষে দালীল না? .

,উত্তর হবে, না। কারণ রাসূলুল্লাহ তখন জিহাদ করেন নি, কাফির-মুশরিকদের মধ্যে বসবাস করেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন, অস্ত্র নিয়ে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন নি, হুদুদ কায়েম করেন নি - কারণ তখনো তাকে 'আল্লাহর পক্ষ থেকে এই কাজগুলোর নির্দেশ দেওয়া হয় নি। তখনো শারীয়াহ নাযিল সম্পন্ন হয় নি। যখনই কোন কাজের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাসূলুল্লাহ তৎক্ষণাৎ তা করেছেন। একই কথা সাহাবাদের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু আমাদের কাছে এখন পূর্ণাঙ্গ শারীয়াহ আছে (আল-মায়'ইদা), মাক্কী জীবনের এই অজুহাত তাই আর খাটে না। বরং আমাদের উপর এখন সম্পূর্ণ শারীয়াহর সকল হুকুম প্রযোজ্য। যা করা আবশ্যক তা ওভাবেই করা আবশ্যক যেভাবে করার নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন। যা ছাড়া আবশ্যক তা ওভাবেই ছাড়া আবশ্যক যেভাবে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। যদি একান্তই না পারি তবে আমদের ক্রমাগত চেষ্টা করতে হবে আলাহ-র নির্দেশ পালনের, কিন্তু না পারার এই অবস্থাকে জায়েজ করার চেষ্টা করা যাবে না। এটাকেই স্বাভাবিক অবস্থা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। ..


  • আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের সাধ্য মতো/সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তির মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শুত্রু এবং তোমাদের শত্রুদের ভেতর ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না। [আল-আনফাল, ৬০].


 আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক। [আত-তাওবাহ, ৪৬]



মন্তব্যসমূহ

Ad Code

Responsive Advertisement