Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

তাগুতকে ধ্বংস এবং চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়ার উপায়




আমাদের মনে রাখতে হবে, আজ পর্যন্ত ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়েই তাগুত তাদের জুলুমের রাজত্ব কায়েম রেখে আসছে তাদের দুইটি ‘হাতের’ সাহায্যেঃ
(1) তাদের সামরিক বাহিনী (আর্মি, নেভী, এয়ারফোর্স, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী, গোয়েন্দা সংস্থা ইত্যাদি)।
(2) তাদের বুদ্ধিজীবী বাহিনী ( জাদুকর, পুরোহিত, পথভ্রষ্ট আলেম ইত্যাদি)।
এই বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর কাজ হলো জনগণকে শিরকের মাঝে ডুবিয়ে রাখা এবং তাদেরকে তাগুতের ব্যাপারে অজ্ঞ করে রাখা; এর ফলে তাগুতকে সব সময়ই বেশীরভাগ মানুষই মেনে নিয়েছে এবং আল্লাহ্র বাণীর আলো থেকে সরে অন্ধকারে চলে গিয়েছে। তবে সব সময়ই অল্প কিছু মু’মিন ছিল যারা আল্লাহ্র উপর ঈমান রাখতো এবং তাগুতকে অস্বীকার করতো- আর তাদের দমন করার জন্যই তাগুতের সামরিক বাহিনী অতীতে ছিল এবং বর্তমানেও আছেঃ
‘‘যারা মু’মিন তারা আল্লাহ্্র পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে;’’[1]
তাই যখন আমরা নবীদের পথে চলতে শুরু করি, এবং এই কালিমার দাওয়াহ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেই, তখন তাগুতের ভীতে ফাটল ধরে এবং জনগণ এদের সীমালঙ্ঘন বুঝতে পারে। এভাবেই তাগুতের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে হারানো যায় এবং তাগুতের দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়া যায়- যেমনটি হয়েছিল ইব্রাহীম (আঃ), মুসা (আঃ) এবং সূরায় বুরুজের সেই ছেলেটির সময় যখন তারা নিজেরা দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও তাদের সময়ের তাগুতের মুখামুখি হয়েছিল। যখন মু’মিনরা এই পথ গ্রহণ করে তখন তাগুতের প্রশাসন ভেঙে পড়ে, জাহিলিয়াতের দল থেকে বের হয়ে মানুষ ইসলামের দলে ঢুকতে থাকে- যেমন হয়েছিল ফিরাউনের জাদুকরদের ক্ষেত্রে এবং মুহাজির ও আনসারদের মাঝে অগ্রবর্তীদের ক্ষেত্রে যাদের মধ্যে অনেকেরই পরিবার ছিল ইসলামের শত্রু।
ঠিক এমন অবস্থতেই মু’মিনদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাগুতের সৈন্যদল, অতীতে এর অনেক নজির দেখা যায়। এসময় তাগুতরা দুর্বল ও অসহায় মুসলিমদের বেছে নিয়ে অত্যাচার শুরু করে, তবে যাদের পারিবারিক সুরক্ষা বা সামাজিক মর্যাদা আছে তেমন মুসলিমদের এরা প্রথমে ছেড়ে দেয়। এমনটিই হয়েছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় এবং শুয়াইব (আঃ) এর সময়ওঃ
‘‘তারা বলল, ‘হে শু’আইব! তুমি যা বল তার অনেক কথা আমরা বুঝি না এবং আমরা তো আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বলই দেখছি। তোমার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতাম, আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও।’’[2]
অত্যাচারের পাশাপাশি তাগুত অনেকের সামনে বিভিন্ন আকর্ষনীয় প্রস্তাব রাখতে পারে; এবং এসব প্রস্তাব বাইরে থেকে দেখে নিরাপদ এবং লাভজনক মনে হলেও, আসলে এগুলো গ্রহণ করা মানে হবে ইব্রাহীম (আঃ) এবং অন্যান্য সব নবীর মিল্লাত থেকে সরে যাওয়া। এই দাওয়াকে ‘কুফর বিত তাগুত’ এবং ‘আল-বারাআ’-র মত কঠোর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিতে এবং এর বিষয়বস্তু হালকা কিছু বিষয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতে তাগুত যে কি ধরনের ষড়যন্ত্র করে চলেছে সে ব্যাপারে পরে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইন্শাআল্লাহ্। তাগুত আমাদের সাথে আপোষ করতে চাইবে, যাতে আমরা যদি নবীদের পথ থেকে সামান্যও সরে যাই, তারা এই সুযোগে আমাদের আরও দূরে নিতে থাকবে এবং একসময় আমরা হয়ে যাবো ইসলামের পোশাকে তাগুতের মুখপাত্র। আল্লাহ্ আমাদের এর থেকে রক্ষা করুক এবং আমাদের মাঝে তলোয়ারকেই মীমাংসার একমাত্র পদ্ধতি বানিয়ে দিক; এই তলোয়ার হয় আমাদের মৃত্যু ঘটাবে সেক্ষেত্রে আমরা অর্জন করব শাহাদাত বরণ করার মর্যাদা, আর তা না হলে আল্লাহ্র শত্রুদের গর্দান ফেলে দিবে আর সেক্ষেত্রে আমরা হব গালিবীন (বিজয়ী)। আমাদের এবং তাদের মাঝে শুধু একটাই সম্পর্ক – যুদ্ধ।
এসব পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই মু’মিনরা বিভিন্ন স্তরে স্তরে বাছাই হয়ে যায়। কেউ কেউ সর্বোচ্চ স্তরে পেঁŠছে যায়, কেউ নিচু স্তরেই থেকে যায়, আবার এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ঈমান থেকে বেরও হয়ে যায় (নাউযুবিল্লাহ)।
মু’মিনরা সংখ্যায় যত অল্পই হোক না কেন, দুর্বল অবস্থাতেও (পার্থিব সম্পদ বা সামর্থ্যের দিক দিয়ে) তারা দুইটি বিষয় কখনই ত্যাগ করতে পারবে নাঃ
প্রথমতঃ মিল্লাতে ইবরাহীম (আঃ)-এর সাথে লেগে থাকা অর্থাৎ তাওহীদ ও কুফর বিত তাগুতের দাওয়াহ প্রকাশ্যে দিতে থাকা এবং যারা এর বিরোধিতা করবে তাদের প্রতি বারা প্রদর্শন করা।
দ্বিতীয়তঃ মিল্লাতে ইবরাহীম (আঃ)- এর সাথে লেগে থাকার অংশ হিসেবে আল্লাহ্র শত্রুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং শত্রুতা স্পষ্ট করে দেয়া। আমাদের রব, পরম দয়ালু, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ আমাদেরকে ‘ক্বিতাল’এর হুকুম দিয়েছেন। যদিও জিহাদের মাধ্যমে অনেক লক্ষ্য অর্জন করা যায়, তবুও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, জিহাদ শুধু অন্য কোন ইবাদতের (যেমনঃ দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার) হাতিয়ার নয়- বরং এটা নিজেই সবচেয়ে বড় ইবাদত, আর এত বড় ইবাদত থেকে অন্যান্য আরো অনেক উপকার হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশ্বজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন যে কিসের মাঝে কি মঙ্গল নিহিত আছে। আমরাও আমাদের সীমিত জ্ঞানেই জিহাদের অনেক সুফল দেখতে পারি। কিন্তু তারপরও, দূরদৃষ্টির অভাবে বেশির ভাগ মানুষই জিহাদের বাহ্যিক কষ্ট ও দুর্ভোগের কথা ভেবে জিহাদকে অপছন্দ করে। আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ
‘‘তোমাদের জন্য কিতালের বিধান দেওয়া হল যদিও তোমাদের নিকট ইহা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।’’[3
সালামাহ ইবনে নুফাইল (রাঃ) বলেছেনঃ যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে বসে ছিলাম তখন একজন মানুষ এসে বলল, ‘‘হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম, ঘোড়াদের অপমান করা হচ্ছে, অস্ত্র ফেলে রাখা হয়েছে আর মানুষ মনে করছে আর জিহাদ নেই এবং সব যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ‘‘তারা মিথ্যা বলছে, যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে। যুদ্ধ তো সবে শুরু হয়েছে। আমার উম্মাহর থেকে একটি দল সবসময়ই সত্যের পথে যুদ্ধ করতে থাকবে এবং আল্লাহ্ কিছু মানুষের ক্বলবকে পথভ্রষ্ট করে দিবেন এবং তাদের থেকে এই দলের জন্য প্রতিদ্বন্দী সরবরাহ করবেন, যতক্ষণ না শেষ সময় ঘনিয়ে আসে এবং আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালেই মঙ্গল লেখা থাকবে। আমাকে ওহী করা হচ্ছে যে, আমি অচিরেই তোমাদের ছেড়ে চলে যাব এবং তোমরা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে আমার অনুগামী হবে। আর জেনে রেখো, মু’মিনদের বাড়ী হবে শাম অঞ্চলে।’’[4]
আন-নাসাঈর টীকা হিসেবে আল-সিন্দি লিখেছেনঃ ‘‘ঘোড়াদের অপমান’’ বলতে বুঝানো হয়েছে ঘোড়াদের অবহেলা করা এবং তাদের গুরুত্বকে খাটো করে দেখা বা যুদ্ধর কাজে তাদের ব্যবহার না করা।
‘‘যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে। যুদ্ধ তো সবে শুরু হয়েছে।’’ -এটা দুইবার বলার উদ্দেশ্য হলো এর উপর গুরুত্ব আরোপ করা। এর থেকে বোঝা যায় যে, যুদ্ধ বাড়তেই থাকবে, কারণ আল্লাহ্ মাত্র কিছুদিন আগে এটা ফরয করেছেন, সুতরাং এতো জলদি কিভাবে এটা শেষ হয়ে যাবে? অথবা এর অর্থ হতে পারে যে, সত্যের যুদ্ধ সবে শুরু হচ্ছে, কারণ এর পূর্বে তারা শুধু নিজেদের এলাকাতেই যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু এখন সময় এসেছে অন্যান্য দূরবর্তী এলাকাতেও যুদ্ধ নিয়ে যাওয়ার।
‘‘আল্লাহ্ কিছু মানুষের ক্বলবকে পথভ্রষ্ট করে দিবেন’’ -এর অর্থ হলো আল্লাহ্ চিরদিনই এমন কিছু মানুষ রাখবেন যাদের বিরুদ্ধে সত্যপন্থীরা তাদের জিহাদ অব্যাহত রাখতে পারে এমনকি এজন্য যদি কারো মনকে ঈমান থেকে কুফরের দিকে ঘুরিয়ে দিতে হয়, আল্লাহ্ সেটাও করবেন। এর মাধ্যমেই আল্লাহ্ মু’মিনদের উপর তাঁর রহমত বর্ষণ করবেন যাতে তারা তাঁর রাস্তায় জিহাদ করার গৌরব অর্জন করতে পারে এবং আল্লাহ্র সন্তুষ্টি পেতে পারে।
‘‘ঘোড়ার কপালে মঙ্গল’’-এর অর্থ হলো পুরস্কার এবং গণীমতের মাল, সম্মান এবং গৌরব।
‘‘মু’মিনদের বাড়ী হবে শাম অঞ্চলে’’ -এখানে কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ের কথা বলা হয়েছে। সেই সময় শাম হবে মুসলিমদের শক্ত ঘাঁটি এবং জিহাদের কেন্দ্রস্থল।
জিহাদের মাধ্যেমে মু’মিনদের জন্য এই দুনিয়াতেও যেসব উপকার হতে পারে সেগুলো হলোঃ



শিরক এবং ফিতনা দূর করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা
‘‘এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিত্না দূরীভুত হয় এবং আল্লাহ্র দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ্ তো তার সম্যক দ্রষ্টা।’’[5]
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল, তারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে। আর তারা যদি এটা করে, তাহলে তাদের জান ও মাল আমার কাছ থেকে নিরাপদ শুধুমাত্র ইসলামের শরীয়াহর দাবী ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহ্র কাছে।’’[6]
• তাগুতদের ধ্বংস করা (যারা কাফিরদের সর্দার)
‘‘তাদের চুক্তির পর তারা যদি তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে বিদ্রূপ করে তবে কাফিরদের প্রধানদের সহিত যুদ্ধ কর; ইহারা এমন লোক যাদের কোন প্রতিশ্রুতি রহিল না; যেন তারা নিবৃত্ত হয়।’’[7]
•কাফিরদের অপমানিত করা, তাদের মনোবল ভেঙে দেয়া এবং মুসলিমদের সম্মান ফিরিয়ে আনা
‘‘তোমরা তাদের সহিত যুদ্ধ করবে। তোমাদের হস্তে আল্লাহ্ উহাদেরকে শাস্তি দিবেন, উহাদেরকে লাঞ্চিত করবেন, উহাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন ও মু’মিনদের চিত্ত প্রশান্ত করবেন, এবং তিনি উহাদের অন্তরের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা তার প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হন, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’’[8]
• দুনিয়া থেকে জুলুম সরিয়ে ফেলা
‘‘তোমাদের কী হল যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল*াহর পথে এবং অসহায় নরনারী এবং শিশুদের জন্য, যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক। এই জনপদ-যার অধিবাসী যালিম, উহা হতে আম\দেরকে অন্যত্র নিয়ে যাও; তোমার নিকট হতে কাউকেও আমাদের অভিভাবক কর এবং আমাদের সহায় কর। যারা মু’মিন তারা আল্লাহ্্র পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল।’’[9]
•কাফিরদের ভীত-সন্ত্রস্ত করা এবং তাদের কুকর্ম করার সাহস হতে না দেয়া
‘‘কিতাবীদের মধ্যে যারা উহাদিগকে সাহায্য করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ হতে অবতরণ করালেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন, এখন তোমরা উহাদের কতককে হত্যা করতেছ এবং কতককে করতেছ বন্দী।’’[10]


‘‘স্মরণ কর, তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং মু’মিনগণকে অবিচলিত রাখ। যারা কুফরী করে আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করব; সুতরাং তোমরা আঘাত কর তাদের স্কন্ধে ও আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে।’’[11]
‘‘তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে এতদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ্র শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এতদ্ব্যতীত অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ্ তাদেরকে জানেন। আল্লাহ্র পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে উহার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।’’[12]
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘……আমাকে বিজয় দেয়া হয়েছে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে ( যা আল্লাহ্ শত্রুদের অন্তরে গেথে দেন)।’’[13]
এগুলো ছাড়াও জিহাদের আরো অনেক উপকার আছে, যা আল্লাহ্ই ভালো জানেন। আল্লাহু আকবার! আমরা যদি জিহাদ আর তরবারি ত্যাগ করি, তাহলে আল্লাহ্ আমাদের ত্যাগ করবেন। জিহাদ না করলে জিহাদের কোন সুফল মু’মিনরা পাবেনা, বরং এর উল্টোটাই ঘটবে (অর্থাৎ শত্রুদের দ্বারা অপমানিত এবং তাদের দাসত্ব )।
‘‘সুতরাং তারা আল্লাহ্র হুকুমে উহাদেরকে পরাভুত করল; দাঊদ জালূতকে হত্যা করল, আল্লাহ্ তাকে রাজত্ব ও হিক্মত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ্ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ্ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল।’’[14]
ইমাম আল-হালিমী তার সুয়াব-আল-ঈমান বইতে লিখেছেনঃ ‘‘আল্লাহ্ সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি যদি মু’মিনদের দ্বারা কাফিরদের দমন না করে রাখতেন অথবা মু’মিনদের দ্বারা ইসলামকে রক্ষা করার ও কাফির বাহিনীকে ধ্বংস করার ক্ষমতা না দিতেন- তাহলে পৃথিবীতে কুফরের রাজত্ব চলতো এবং সত্য দ্বীন হারিয়ে যেতো। এখান থেকেই প্রমাণ হয় যে, ইসলামের টিকে থাকার কারণ হলো জিহাদ- আর এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অবশ্যই ঈমানের একটি স্তম্ভ হিসেবে গন্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে।’’
সুতরাং আমরা এভাবেই তাগুতের দ্বিতীয় হাতকে ভেঙে দেবো, ক্বিতালের মাধ্যমে।
‘‘যারা মু’মিন তারা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পক্ষে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল।’’[15]
মূর্তিপূজকরা তাদের মূর্তিগুলোর ক্ষমতার উপর বিশ্বাসে অটল থাকে যতক্ষন পর্যন্ত না কেউ সেগুলোর দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়। কিন্তু এরপরও কেউ কেউ মূর্তির ক্ষমতাকে ভয় করতে থাকে, যতক্ষন না কেউ এটাকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। একইভাবে আমাদেরও কাজ হবে দাওয়াহর মাধ্যমে তাগুতের মুখোশ উম্মোচন করে দেয়া, এবং সাথে সাথে যুদ্ধ চালিয়ে তাগুতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া, যাতে করে আমরা মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে সর্বোচ্চ, মহান একমাত্র আল্লাহ্র দাসত্বে নিয়ে আসতে পারি। আল্লাহ্ উপরের আয়াতে মু’মিনদের এবং বিশেষত মুজাহিদদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তাগুত এবং তাগুতের ষড়যন্ত্র দু’টোই আসলে অত্যন্ত দুর্বল। অতীতেও তাগুতরা পরাস্ত হয়েছে এবং তাদের অক্ষমতা প্রকাশ হয়ে গেছে, তাদের দুর্বল পরিকল্পনা তাদের নিজেদেরই ক্ষতির কারণ হয়েছে- যেমনটা দেখা যায় নমরুদ, ফেরাউন এবং আসহাবে উখদুদের ঘটনার সেই রাজার ক্ষেত্রে। এবং এখনও ইনশাআল্লাহ্, তাগুত ধ্বংস হয়ে যাবে, কেবলমাত্র যদি মু’মিনরা আল্লাহ্র উপর সম্পূর্ণ ত্বাওয়াক্কুল রাখে, ইসলামের বার্তাকে ছড়িয়ে দেয় এবং তলোয়ার তুলে নেয়। বিশিষ্ট আলেম ইবনুল কাইয়্যিম বলেছেনঃ


আমি জিহাদ চালাবো
আপনার শত্রুর সাথে ততদিন,
আমাকে আপনি
টিকিয়ে রাখবেন যতদিন।
যুদ্ধকেই আমি বানাব আমার পেশা।
বড় বড় জন সমাগমের মাঝেই
আমি প্রকাশ করে দেব তাদের ষড়যন্ত্র,
আর আমার জিহবার ধারে
ছিন্ন করে দেব তাদের শক্তি।
(তাগুতের প্রতি) নিস্ফল ক্রোধে জ্বলতে জ্বলতেই
তোরা ধ্বংস হয়ে যা,
কারণ আমার রব জানেন
তোরা যা লুকাতে চাস,
আর জানেন
যা আছে তোদের অন্তরে।
আর আল্লাহ্ তো আছেন
তাঁর দ্বীন এবং কোরআনের পক্ষে,
আরও আছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম
তার জান এবং কর্তৃত্ব নিয়ে।
সত্য এমন এক খুঁটি
যাকে কেউ ধ্বংস করতে পারবেনা,
এমনকি যদি ছাকালান (জ্বীন ও মানুষ)
এক হয়, তাহলেও না।





সুত্র:

[1] সূরা নিসা ৪ঃ ৭৬
[2] সূরা হুদ ১১ঃ ৯১
[3] সূরা বাকারা ২ঃ ২১৬
[4] সুনান আন-নাসাঈ
[5] সূরা আনফাল ৮ঃ ৩৯
[6] এই হাদীস ইবনে উমার,আবু হুরায়রা, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ, আনাস বিন মালিক, জাবীর ইবনে আব্দুল্লাহ, আউস ইবনে আবু আউস, ইবনে আববাস, সাহল ইবনে সাদ, আল-সুমান ইবনে বশীর, তারিক ইবনে আশিয়াম, আবু বাকরাহ, মুয়ায ইবনে জাবাল এবং সামুরা ইবনে জুনদুব থেকে বর্ণিত- এবং এটি বুখারী, মুসলিম, তিরমীযী, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমেদ, আল-বায়হাকী, ইবনে হিববান, আল-দারকুতনী এবং মুয়াত্তা ইমাম মালিক-এই সব হাদীস গ্রন্থে এটি সংকলন করা হয়েছে। সুতরাং এটি মুতাওয়াতির হাদীস, অর্থৎ সবচেয়ে সহীহ শ্রেণীর হাদীস।
[7] সূরা তাওবা ৯ঃ ১২
[8] সূরা তাওবা ৯ঃ ১৪-১৫
[9] সূরা নিসা ৪ঃ ৭৫-৭৬
[10] সূরা আহ্যাব ৩৩ঃ ২৬
[11] সূরা আনফাল ৮ঃ ১২
[12] সূরা আনফাল ৬ঃ ৬০
[13] বুখারী, কিতাবুল জিহাদ
[14] সূরা বাকারা ২ঃ ২৫১
[15] সূরা নিসা ৪ঃ ৭৬



মন্তব্যসমূহ

‘‘স্মরণ কর, তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং মু’মিনগণকে অবিচলিত রাখ। যারা কুফরী করে আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করব; সুতরাং তোমরা আঘাত কর তাদের স্কন্ধে ও আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে।’’[11]
‘‘তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে এতদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ্র শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এতদ্ব্যতীত অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ্ তাদেরকে জানেন। আল্লাহ্র পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে উহার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।’’[12]

Ad Code

Responsive Advertisement