আসসালামু আলাইকুম,
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহিম।
সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তাআলার যিনি আমাদের ঈমানের মত নেয়ামত দিয়ে ধন্য করেছেন এবং আমাদের জন্য, সর্বোত্তম কিতাব, সর্বোচ্চ সম্মানিত রাসূল এবং সর্বোত্তম শরীয়াত বা বিধিবিধান প্রেরণ করেছেন! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাঁর এবং তাঁর পবিত্র পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আরো বর্ষিত হোক পবিত্র ও উত্তম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সাহাবা আজমাঈন রাঃ এবং তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনদের উপর। আম্মাবাদ
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ আসলেই এক নাকি ভিন্ন?
আমাদের অনেকেরই এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ এক ও অভিন্ন! আর কুফুরি মিডিয়াগুলো এই অপ-প্রচার এত অধিক ছড়িয়েছে যে আমাদের মস্তিষ্কে এটি পুরোপুরিভাবে প্রবেশ করেছে। তো এই বিষয়ে আজ কিছু কথা বলছি যা জ্ঞানীদের জন্য চিন্তার দরজাকে উন্মোচন করবে বলে আশা করছি।
প্রথমেই আমাদেরকে এ দু’টো শব্দের আভিধানিক অর্থ জানতে হবে এবং এর সাথে সাথে পারিভাষিক অর্থও। (যদিও এর ভুল অর্থই বর্তমানে ব্যপক প্রচলিত।) সন্ত্রাস (Terror)- কোন উদ্দেশ্যে মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা। সন্ত্রাসবাদ (Terrorism)-রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য হত্যাকান্ড সংঘটনের পক্ষপাতী। সন্ত্রাসী (Terrorist)- যে বা যারা কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শঙ্কা বা ভীতির সৃষ্টি করে। (দেখুন-বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)
জঙ্গ (Battle) - যুদ্ধ, লড়াই। জঙ্গি (Military) - রণতরী, যোদ্ধা, বীরপুরুষ। জঙ্গিবাদ-( Militarism) রণকৌশল অবলম্বন করা, সুদৃঢ় সামরিক ব্যবস্থা বা আয়োজন। (দেখুন-বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)
একটা কথা মনে পড়ে গেল, যা মনে হলে আমার অনেক হাসি পায় (দু:খও পাই)। আর তা হলো আমাদের (শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত) অধিকাংশই ‘জঙ্গি’ শব্দটিকে ভুল বশত: ‘জংলী’ (যারা জঙ্গলে বসবাস করে) তাদের মনে করে। যার কারণে সহজেই জংলীদের ভুল কর্মকান্ড তাদের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায়। আর এ ভুলটিই কুফুরি মিডিয়ার পক্ষ হয়ে কাজ করছে। তারা বুঝাতে চায় জঙ্গিরাও জংলীদের মতই উগ্র ও অন্যায় কাজ করে।
এবার আসুন এর পারিভাষিক অর্থ জেনে নেই। সন্ত্রাস বলা হয় রাজনৈতিক অবৈধ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য মানুষের মনে এমন ভয় ভীতি বা হত্যাকান্ড সৃষ্টি করা যার কারণে জনগণের সার্বিক উন্নতি (Developing) ও চলাফেরায় মারাত্মক ব্যঘাত সৃষ্টি হয়। অপরদিকে, জঙ্গ বলা হয় ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ (Freedom Fight) বা লড়াই। আর যে বা যারা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে তাদেরকেই বলা হয় যোদ্ধা বা জঙ্গি। অতএব স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ন্যায়ের জন্য ব্যবহৃত এই শব্দটিকে বর্তমানে ভুল দৃষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার কারণে অনেক সঠিক বিষয়গুলোতেও আমাদের মনে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। সন্ত্রাসী কখনোই জঙ্গির (যোদ্ধার) সমতুল্য হতে পারে না। সন্ত্রাসীদের জঙ্গি বললে তাদের মূল্যকে যেন আমরাই বৃদ্ধি করছি। আর জঙ্গিদেরকে সন্ত্রাসী বললে বা মনে করলে তাদের প্রকৃত মূল্যকে আমরাই নষ্ট করছি।
আজ যারা আফগানের মুসলিমদের উপর হামলা চালায় তারাই সন্ত্রাসী, যারা সিরিয়ার নিষ্পাপ মুসলিম শিশুদের রক্ত ঝরায় তারাই সন্ত্রাসী, যারা অন্যায়ভাবে মায়ানমারের মুসলিমদের উপর আক্রমন চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ ও নিধন করে চলছে তারাই সন্ত্রাসী, ফিলিস্তিন কিংবা কাশ্মীরে আজ যারা মুসলিমদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে স্তব্ধ করে রাখতে চায় তারাই সন্ত্রাসী। আর যারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে তারা জঙ্গি, তবে সন্ত্রাসী নয়। আর আজ আমরা কুফুরি মিডিয়ার এ অপ-প্রচারের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এ জঙ্গি মুজাহিদদেরকে সন্ত্রাসী মনে করছি। জঙ্গি বললেই সন্ত্রাসী বুঝতে আমাদের কোন প্রকার ভুল হয় না।
কেন এমন করা হচ্ছে? এর কারণ হলো মুসলিমদের মধ্যে বিভক্ত সৃষ্টি করা এবং নিজেদের একে অপরের মধ্যে অনাস্থার সৃষ্টি করা। তাই আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কে এক মনে করব না। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সন্ত্রাস-ই মনে করব, একে জঙ্গিবাদ মনে করব না। আর পবিত্র শব্দ জঙ্গিবাদকে অবৈধ (Illegal) সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে একত্রিত করব না। এখন বলতে পারেন যে তাহলে জঙ্গিবাদ বলতে যা বোঝানো হয় তাকে আমরা কি বলব? আমি বলব কুফুরি মিডিয়া জঙ্গিবাদ বলতে যদি কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে বোঝায় তাহলে আমরা তাকে জঙ্গিবাদ না বলে সন্ত্রাসবাদ বলব। আর যদি কোন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামিক কোন কর্মকান্ডকে বোঝায় তবে তাকে ভালো মনেই জঙ্গিবাদ মনে করব। অর্থাত জঙ্গিবাদকে কখনোই খারাপ মনে করা যাবে না বরং অরাজকতামূলক কর্মকান্ডকে সন্ত্রাসবাদ মনে করতে হবে। আশা করি যাদের নূন্যতম জ্ঞান রয়েছে তারা উপরোক্ত বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
অতএব একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে,
জঙ্গিবাদ এটা জনগণের বিপক্ষে নয় বরং পক্ষে। অথচ এ শব্দকে আমরা জনগণের বিপক্ষে ব্যবহার করছি যা আমাদের অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে। কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি এর সঠিক অর্থ জানার পর জঙ্গিবাদকে খারাপ মনে করতে পারে না। অনেকে আবার জঙ্গিবাদ বলতে অবৈধ হামলাকে বুঝে থাকে, যা ঠিক নয়। অন্যায় ও অবৈধ হামলাকে জঙ্গিবাদ বলা যায় না বরং সত্য ও ন্যায়ের জন্য অপরাধ দমন মূলক কর্ম কান্ডই হল জঙ্গিবাদ। যেমন কিছুদিন পূর্বে আমাদের দেশে এক এক করে কয়েকজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হল যারা প্রিয় রাসূল (সা:) কে অবমাননাকারী নাস্তিক ছিল। এই হত্যাকান্ডকে আমরা জঙ্গিবাদ বলব তবে ভাল মনে। আর কুত্তালীগ সহ অন্যান্য দলগুলো পরস্পর কিংবা জনসাধারণের উপর যে হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজী, হুমকি ইত্যাদি করে সমাজ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের মধ্যে শঙ্কা বা ভীতি সৃষ্টি করে রেখেছে তাকেই সন্ত্রাসবাদ বলে, জঙ্গিবাদ নয়।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) সর্বপ্রথম যে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তাকে ‘জঙ্গে বদর’ (বদরের যুদ্ধ) বলা হয়। এ যুদ্ধে ৩১৩ জন অস্ত্রহীন মুসলিম জঙ্গি অংশ গ্রহন করেছেন। আর কাফেররা ছিল সশস্ত্র প্রায় হাজার। এখন জঙ্গি বলতে যদি আপনি সন্ত্রাসীকে বুঝে থাকেন তাহলে দেখুন যে আপনার বুঝটা কত মারাত্মক ভুল ছিল যে, এখানে তাহলে (নাউযুবিল্লাহ) প্রিয় নবীকে সন্ত্রাসী বলতে হবে। জঙ্গে উহুদ, জঙ্গে খন্দক কিংবা জঙ্গে তাবুক এগুলো মুসলিমদের শুধু ইতিহাস নয় বরং ঐতিহ্যও। তাই জঙ্গি বা যোদ্ধা হওয়া কিংবা জঙ্গিবাদকে গ্রহন করা ইবাদত এবং প্রিয় রাসূল (সা:) এর আদর্শ। যেমন এর বিপরীতে সন্ত্রাসী হওয়া বা সন্ত্রাসবাদকে গ্রহন করা বা প্রশ্রয় দেওয়া অন্যায় ও গুনাহের কাজ। তাই আসুন আমরা এই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ শব্দ দু’টোর সঠিক ব্যবহার করি এবং এর উপর সঠিক আমল করি। অর্থাত সন্ত্রাসবাদকে রুখতে জঙ্গিবাদকে গ্রহন করি। (আল্লাহ-ই তৌফিক দাতা)
এবার সামনে চল
এসেছি মোরা একতাবদ্ধ নওজোয়ানের দল
বন্ধুর পথ পেরিয়ে আরও সাগরের মহাজল
কতশত বাঁধা ঠেলে এসেছি, এবার সামনে চল।
ভাঙবই আজ অত্যাচারীর অবৈধ শাসনকল
দেখবনা আর মরীচিকা, থাকবেনা আর ছল
রুখতে আমায় পারবে নাকো হাজারো প্রতিবল
চাস যদি মোর সহায় হতে, এবার সামনে চল।
লড়াইয়ে আজ ব্যয় করব আছে যত সম্বল
মৌন হয়ে থাকবনা আর টুটব কালো ছোবল
জাহির তোদের করতেই হবে পূর্বসূরীর বল
বেরিয়েছি আজ মুক্তির পথে হয়েছি উচ্ছৃঙ্খল
পিছন দিকে তাকাসনে আর, এবার সামনে চল।
সমীকরণে মিলাতে হবে অঙ্ক রাশির ফল
অতিমাত্রায় রণযাত্রায় আঘাত হান ডবল
আক্রমণের তুলবই ঝড় এড়িয়ে শত্রু যুগল,
জয় হবে আজ হয় যদি তা দূর্ভেদ্য জঙ্গল,
লোকালয়ও পড়বে না বাদ সমগ্র মন্ডল,
চাস যদি তা করতে অধীন, এবার সামনে চল।
চিনির বলদ থাকবি কিআর? নাইকিরে আকল?
আর কত কাল রইবি পড়ে জড়িয়ে কম্বল
আর কতদিন চাখবি তোরা কুফুরিতন্ত্রের ফল
ঈমানের সাথে মিশাবি কি তোরা অসত্য আর খল?
আমজনতা মরবে কেন খেয়ে মাকাল ফল?
বীরের জাতি থাকবে কেন অসার অচল?
এই নব দল! থাকিসনে অচল, এবার সামনে চল।
নিখাদ ছেড়ে রইবি পড়ে? চুমবি কি নকল?
ষড়রিপুর তাড়নাতে থাকবি কি দোষল?
গুলবাজ আর হসনে তোরা একটু হ সরল
তোরাই কেবল করবি বিমল কৃত্রিম ও আসল
মুরতাদরা বলবে তোদের “এরা তো বিরল”
বেরিয়ে আয় পেরিয়ে আয় আধার-আজল
দুর্বিষহে যাচ্ছে ছেয়ে সমগ্র অঞ্চল
বিষাক্তময়, নেইকো সময়, এবার সামনে চল।
রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব হবে, তপ্ত হবে দল
মোদের দেখে লজ্জা পাবে জ্বলন্ত অনল
ভীরুরা সব আসবে কাছে পেয়ে আশ্রয়স্থল
অজস্র মোদের সংখ্যা হবে, স্রোতের মত চল
সংখ্যাগুরু? সংখ্যালঘু? শংকা কোথায় বল?
মোরাই হব এই মেদিনীর দূর্বার দাবানল
চলব মোরা বলব মোরা থাকবো যে অটল
আল্লাহ যদি থাকেন সহায়, রুখবে কে এই ঢল
তুমুল জোরে, রৌদ্রে পুড়ে, এবার সামনে চল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন