Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

কুখ্যাত জাল হাদীস- মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না


মুহাম্মাদ ﷺ সৃষ্টি না করলে আল্লাহ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। মুহাম্মাদ ﷺ এর নূর থেকে সমস্ত সৃষ্টি জগত সৃষ্টি হয়েছেআয-যাহাবি বলেন, এই হাদিসের বর্ণনাকারির মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন মুসলিম আল  ফিরি আছে, যে একজন কুখ্যাত মিথ্যাবাদী। ইবন হিব্বান বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন  মুসলিম অনেক হাদিস জাল করে প্রচার করে গেছে, যেগুলো সে দাবি করতো সে লাইথ  এবং মালিক এর কাছ থেকে শুনেছে। আলবানিও এই হাদিসটিকে জাল বলে প্রমাণ  করেছেন। ইমাম যাহাবি এবং ইবন তাইমিয়াহ একে বাতিল-মিথ্যা হাদিস বলেছেন।এই হাদিসটি একটি বড় হাদিসের অংশবিশেষ, যেটার ঘটনা হচ্ছে এরকম—যখন আদম  ﷺ  নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে অন্যায় করলেন, তখন তিনি আল্লাহর ﷻ কাছে ক্ষমা  চেলেন এই বলে যে, “হে প্রভু, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই, তোমার উপর  মুহম্মদের ﷺ এর অধিকারের দোহাই দিয়ে।

” তখন আল্লাহ ﷻ নাকি বলেছিলেন, “হে  আদম, তুমি মুহম্মদের ব্যপারে কিভাবে জানলে, যাকে আমি এখনও সৃষ্টি করিনি?”  আদম ﷺ নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, “হে প্রভু, তুমি যখন আমাকে তোমার নিজের হাতে  বানিয়েছিলে এবং তোমার রুহকে আমার ভেতরে ফুঁ দিয়েছিলে, আমি তখন মাথা উচু  করেছিলাম এবং দেখেছিলাম তোমার কুরসিতে লেখা—আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং  মুহাম্মাদ তার রাসুল। সেখান থেকে আমি বুঝেছিলাম যে—তুমি তোমার পাশে কারো  নাম ব্যবহার করবে না, যদি না সে তোমার সবচেয়ে পছন্দের কেউ না হয়।” তখন  নাকি আল্লাহ ﷻ বলেছিলেন, “ও আদম, তুমি ঠিক কথা বলেছ। আমার সৃষ্টির মধ্যে  সবচেয়ে পছন্দ হল মুহাম্মাদ। আমার উপর তার অধিকারের দোহাই দিয়ে আমাকে  ডাকো। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। আর যদি মুহাম্মাদকে না বানাতাম, তাহলে আমি  তোমাকে বানাতাম না।”এটি একটি সম্পূর্ণ জাল হাদিস। শুধু এই হাদিসটিই নয়, এধরনের আরও অনেক  রূপকথার হাদিস রয়েছে, যেখানে মুহাম্মাদ ﷺ  কে আল্লাহর ﷻ কাছাকাছি একজন  অতিমানবীয় অলৌকিক সৃষ্টি প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। বিশেষ করে বেশ কিছু  সুফি মতবাদ আছে, যারা এই ধরণের অনেক জাল হাদিসকে ব্যবহার করে নবী ﷺ—কে  উসিলা করে তার মাধ্যমে আল্লাহর ﷻ কাছে দাবি করার জন্য। এই ধরণের ভুল  তাওয়াসসুল (আল্লাহর নিকটবর্তী হবার চেষ্টা) হারাম। যেমন, “হে আল্লাহ,  তোমার পেয়ারের নবীর কসম, আমরা তার উম্মত, তার উসিলায় আমাদের গুনাহ ক্ষমা  করে দাও”, “হে আল্লাহ, তুমি তোমার নবীকে অমুক দিয়েছিলে, তার উসিলায়  আমাদেরকে তমুক দাও” ইত্যাদি।

আমরা কখনই নবীর ﷺ কোনো গুণ বা অবদানের দোহাই  দিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে পারবো না। শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের ইবাদতের  বদলে আল্লাহর ﷻ কাছে চাওয়া যাবে। যেমন, “আমার রোজার বিনিময়ে আমার সব  গুনাহ মাফ করে দিন”, “আমার হজ্জের বিনিময়ে আমাকে সুস্থ করে দিন” ইত্যাদি।  মনে রাখবেন, আমাদের আল্লাহর ﷻ উপর কোনই অধিকার নেই, কারণ আমরা কেউই আদর্শ  মুসলমান নই যে, আমরা আল্লাহর ﷻ কাছে কোনো দাবি রাখার মত মুখ করতে পারি।উপরের জাল হাদিসটি কু’রআনের বিরোধী, কারণ আল্লাহ ﷻ নিজে আদম ﷺ এবং তার  স্ত্রীকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে তাঁর কাছে মাফ চেতে হবে এবং তারপর তিনি তাদের  দুজনকেই ক্ষমা করে, তাদের উপর রহমত করেছিলেন এবং তাদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান  দিয়েছিলেন। আল্লাহ ﷻ নিজে আদমকে ﷺ এই দু’আটি শিখিয়েছিলেন তাঁর কাছে সঠিক  ভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য—    প্রভু, আমরা আমাদের নফসের প্রতি অন্যায় করেছি।

 আপনি যদি  আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের উপর আপনার রহমত না দেন, তাহলে আমরা  নিশ্চয়ই ধ্বংস হয়ে যাবো। [৭:২৩]আর যেসব হাদিস বলে নবীকে ﷺ সৃষ্টি না করলে আল্লাহ ﷻ কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না, তারা কু’রআনের এই আয়াতগুলোর বিরোধিতা করে –    আমি মানুষ এবং জ্বিন সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার দাসত্ব করার জন্য। [৫১:৫৬]যারা বলে আল্লাহ ﷻ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন নবী ﷺ এর জন্য এবং তাকে না  বানালে তিনি মানুষ, জ্বিন কিছুই বানাতেন না—তারা শিরক করে। একইভাবে যারা  বলে, আল্লাহ ﷻ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন নবী ﷺ এর নূর থেকে, তাদের এই দাবির কোন  সমর্থন কু’রআনে নেই, কারণ আল্লাহ ﷻ কু’রআনে পরিস্কার বলে দিয়েছেন তিনি  কেন এবং কিভাবে সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন। কু’রআনের কোথাও নবী ﷺ এর নূরের  কোন উল্লেখ নেই।    অবিশ্বাসীরা কি দেখেনা যে আকাশ এবং পৃথিবী একসাথে সংযুক্ত  ছিল এবং ‘আমি’ তাদেরকে বিদীর্ণ করে আলাদা করেছি এবং আমি সকল প্রান সৃষ্টি  করেছি পানি থেকে? তারপরেও কি তারা বিশ্বাস করবে না? [২১:৩০] 

   তিনি আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন এক বিশেষ উদ্দেশে। যেদিন তিনি বলবেন হও, সেদিন তা (ধ্বংস) হয়ে যাবে। …  [৬:৭৩]     তিনি আকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যখন তিনি কিছু আদেশ করেন, তিনি শুধু বলেন “হও” আর তা হয়ে যায়। [২:১১৭]আর যারা দাবি করে যে, তারা জানে আল্লাহ ﷻ কিভাবে বা কিসের থেকে সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন, তারা মিথ্যা বলেঃ    আমি তাদেরকে আকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টির সাক্ষি রাখিনি এবং  তাদের নিজেদের সৃষ্টিরও সাক্ষি রাখিনি। যারা অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে  তাদেরকে আমি আমার সহকারী হিসেবে নেই না। [১৮:৫১]সুতরাং কেউ জানেনা সৃষ্টি জগত কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এমন কি কেউ জানে না  সে নিজে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ জানে না মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে,  জ্বিন জানে না জ্বিন কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ কাউকে তাদের সৃষ্টির  সময় সাক্ষি রাখেননি অর্থাৎ তারা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা তারা দেখেনি,  শুনে নি এবং জানেও না


মন্তব্যসমূহ

Ad Code

Responsive Advertisement