Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

হেগেলিয়ান ডায়ালেক্টিক, “মধ্যমপন্থা” আর সিরাতুল মুস্তাক্বীম


হেগেলিয়ান ডায়ালেক্টিক বলে একটা কনসেপ্ট আছে। ধরুন আপনি নতুন করে ট্যাক্স ১৫% বাড়াতে চান। আপনি জানেন যে ১৫% বৃদ্ধির কথা বললে কেউই মানবে না। তাই আপনি কিছু লবিস্ট নিয়োগ করলেন, যাদের কাজ হবে ট্যাক্স কেন ৩০% বাড়ানো উচিৎ এবং আবশ্যক এটা প্রমানে নানা যুক্তি দাড় করানো। এটার পক্ষে লেখালেখি করা, সিম্পোসিয়াম করা, কনফারেন্স করা। মোট করা ৩০% ট্যাক্স বৃদ্ধির পক্ষে জনসমর্থন তৈরি করা এবং সমর্থনের একটা ফ্রেইমওয়ার্ক তৈরি করা। এবার আপনি আরেক পক্ষকে বলবেন ট্যাক্স কেন ৩০% বাড়ানোর বদলে ১০% কমিয়ে দেয়া উচিৎ সেটার পক্ষে একইভাবে আরেকদল লবিস্ট নিয়োগ করলেন। এরা আগের দলের মতো একই কাজ করবে, তবে ১০% ট্যাক্স হ্রাসের পক্ষে। দুই দলকে তর্কবিতর্ক, রিফিউটেশান-পাল্টা রিফিউটেশান করতে দিন। একজনকে আরেকজনের যুক্তি খন্ডন করতে দিন। শেষমেশ আপনি এসে বলুন, দেখো তোমাদের দুজনের কথাতেই যুক্তি আছে, তাই আসো আমরা একটা কম্প্রোমাইযে আসি, মিডল গ্রাউন্ডে [মধ্যম পন্থা?] আসি। ৩০% বাড়ানোর দরকার আসলে নেই, কম হলেও চলে। আর ১০% কমানো তো আসলে আনরিয়েলিস্টিক। তাই আসো আমরা ১৫% বাড়াই। আর এই দুই পক্ষের ঝগড়ায় বিভ্রান্ত জনগন মনে করলো, হ্যা এটা একটা সেন্সিবল, মডারেশানের কাজ হয়েছে। আপনি যে রেসাল্ট চাচ্ছিলেন তাই পেলেন, কিন্তু চাপিয়ে না দিয়ে আপনি মানুষের consent বা সম্মতি তৈরি করে নিলেন। জিনিয়াস! হেগেলিয়ান ডায়ালেক্টিকের ভাষায়, প্রথমে আপনি যা চালু করতে চাচ্ছিলেন, ১৫% ট্যাক্স বৃদ্ধি, এটা হল এজেন্ডা। এই উদ্দেশ্যে এক পক্ষ ৩০% ট্যাক্স বাড়াতে বলা শুরু করলো। এটা হল থিসিস আরেক দল তাদের বিরোধীতায় ১০% ট্যাক্স কমাতে বললো, এটা হল অ্যান্টি-থিসিস শেষ পর্যন্ত থিসিস আর অ্যান্টি-থিসিসের মিশ্রণে আপনি পেলেন সিনথেসিস, যা হল প্রকৃত পক্ষে আপনার মূল এজেন্ডার বাস্তবায়ন। অর্থাৎ ১৫% ট্যাক্স বৃদ্ধি। থিসিস + অ্যান্টিথিসিস = সিনথেসিস (= এজেন্ডা)। এখানে + চিহ্নের বদলে কিউমিলেটিভ সামেশান আরও অ্যাপ্রোপ্রিয়েট, বাট কাজ চালানোর জন্য আপাতত এটুকু ঠিক আছে। ইসলামে যে মধ্যম পন্থার কথা বলা হয়েছে সেটা হেগেলিয়ান ডায়ালেক্টীকের "সিনথেসিস" না। দুটা পযিশানের মাঝামাঝি নেয়াটা সিরাতুল মুস্তাক্বীম না। সিরাতুল মুস্তাক্বীম একটা স্বতন্ত্র বিষয়, যেটার স্বাধীন অস্তিত্ব, বৈশিস্ট ও পরিচয় আছে। হেগেলিয়ান ডায়ালেক্টিকের ক্ষেত্রে কোন অ্যাবসলিউট মানদন্ড নেই, সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। তাই থিসিস বা অ্যান্টি-থিসিসের যথার্থতা আপনি কোন অ্যাবসলিউট মানদন্ডে মাপতে পারবেন না। ইসলামের শুরুই হয়েছে একটা অ্যাবসোলিউট মানদন্ড নির্ধারণ করে। আল ফুরক্বান - The Criterion. আল ফুরক্বান, রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ এবং সালাফের ইজমা এবং আন্ডারস্ট্যান্ডিং - এই হল আপনার মানদন্ড। একটা টোটাল প্যাকেজ। স্বয়ংসম্পূর্ণ প্যাকেজ, যাতে সংযোজন বা বিয়োজনের কোন জায়গা নেই। এই মানদন্ড একটা নির্দিষ্ট পথকে সিরাতুল মুস্তাক্বীম বলে চিহ্নিত করে দিয়েছে। সুতরাং আমাদের সিরাতুল মুস্তাক্বীমের কনসেপ্ট থিসিস আর অ্যান্টি-থিসিসের উপর নির্ভরশীল না। অর্থাৎ সিরাতুল মুস্তাক্বীমের সংজ্ঞা 'ইরজা [leniency] আর গুলুহ [extremism]-র উপর নির্ভরশীল না। সিরাতুল মুস্তাক্বীম সুসংজ্ঞায়িত এবং নির্দিষ্ট। বরং 'ইরজা এবং গুলুহ-র সংজ্ঞা সিরাতুল মুস্তাক্বীমের উপর নির্ভরশীল। আমরা যখন বলি সিরাতুল মুস্তাক্বীম মধ্যম পন্থা তখন আমরা ডান-বামের সংজ্ঞা আগে ঠিক করে, পরে "মধ্যম"-এর সংজ্ঞা দেই না। আমরা বলি মধ্যম কি এটা পরিস্কারভাবে নির্ধারিত। এর বামে গেলে ইরজা, ডানে গেলে গুলুহ, । সিরাতুল মুস্তাক্বীম এর চাইতে বেশি উদার হলে সেটা 'ইরজা, আর এর চাইতে বেশি কঠোর হলে সেটা গুলুহ। এখন কেউ যদি বলে সমাধান হল গণতন্ত্র, আর কেউ যদি বলে সমাধান হল গণতন্ত্র সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলা,আর তৃতীয় কেউ যদি বলে না সমাধান হল "মধ্যম পন্থা", "ইসলামী গণতন্ত্র" - তাহলে সেটা শাব্দিকভাবে মধ্যম পন্থা হল বটে, কিন্তু সিরাতুল মুস্তাক্বীম হল না। আপনি দুটো জিনিষের মাঝামাঝি একটা জিনিষ নিয়ে সেটাকে সিরাতুল মুস্তাক্বীম বলে চালিয়ে দিতে পারেন না। আপনি সিরাতুল মুস্তাক্বীম এর অংশ সেটাকে বলবেন যেটা কুর'আন সুন্নাহ আর সালাফের আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর বেইসিসে সঠিক বলে প্রমানিত হবে। আগে ইসলামের মানদন্ড অনুযায়ী সঠিক হওয়া বুঝতে হবে, তারপর আপনি সেটাকে মধ্যম পন্থা বলতে পারেন। কোন র‍্যান্ডম মানদন্ড অনুযায়ী কিছু একটা মধ্যম, তাই অটোম্যাটিকালি সেটা সিরাতুল মুস্তাক্বীমের অংশ হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন না। এই সেইম জিনিষটা ফ্রি-মিক্সিং এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাকফিরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, "ইসলামী" ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একজন বললো সব ব্যাঙ্ক হারাম। আরেকজন বললো সব ব্যাঙ্ক হালাল। আরেকজন বললো না সব ব্যাঙ্ক হারাম কিন্তু "ইসলামী' ব্যাঙ্ক ছাড়া - আর এটা আগের দুটোর মাঝামাঝি, তাই এটা মধ্যম পন্থা, সিরাতুল মুস্তাক্বীম - এরকম মনে করা সম্পূর্ণ ভাবে ভুল। ইসলামী ব্যাঙ্ক বা ফ্রি-মিক্সিং যাই হোক না কেন, আগে স্বতন্ত্রভাবে সেটার যথার্থতা ইসলামের মানদন্ডে প্রমাণ করতে হবে। এবং মন্দের ভালো কখনোই আপনার এই যথার্থতা প্রমানের স্টারটিং পয়েন্ট হতে পারে না। ক্ষেত্র বিশেষে কোন কিছুর জায়েজ হওয়া দিয়ে আপনি সম্পূর্ণভাবে সেই জিনিষের হালাল হওয়া প্রমাণ করতে পারেন না। বিশেষ অবস্থায় শুকরের মাংস খাওয়া জায়েজ, এটাকে আপনি আপনার বেইসিস ধরে শুরু করতে পারেন না। এক্সসেপশান থেকে জেনারেল রুলিং আসে না। আল্লাহু মুস্তা'আন। নিশ্চয় আমাদের কোমলতা ও কঠোরতার ভিত্তি আল্লাহ্‌-র দ্বীন। হারামে লিপ্ত ব্যক্তির প্রতি অবশ্যই আমরা কোমল হতে পারি, এবং সেটা দরকারও। কিন্তু হারামের ব্যাপারে কোন কোমলতা চলবে না। একই ভাবে বাধ্য হয়ে হারাম করছে এমন মানুষের সহমর্মিতা প্রাপ্য, কিন্তু যে হারামকে হালাল দাবি করছে তার এই কাজ ঘৃনার জন্য, সহমর্মিতা পাবার যোগ্য না। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মূর্তিপূজারীদের বিভিন্নভাবে আহবান করেছেন। কোমলতার সাথে, ও কঠোরতার সাথে। কিন্তু না তিনি মূর্তির সাথে কোমল ব্যবহার করেছেন, আর না মূর্তিপূজার কনসেপ্টের ব্যাপারে কোমলতা প্রদর্শন করেছেন। তিনি মূর্তিপূজকদের আমন্ত্রন জানিয়েছেন, কিন্তু মূর্তিপূজাকে আক্রমণ করেছেন। শুধু তাই না মূর্তিপূজকের মূর্তিপূজার সাথে সংশ্লিষ্ট ধারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানকে তিনি আক্রমণ করেছেন। আর এটাই মিল্লাতু ইব্রাহীম। কোমলতার সংজ্ঞা আমাদের কাছে এটা না যে আমরা ভুলকে ভুল বলবো না। আর এজন্য যদি আমাদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয় কিম্বা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত বলা হয়, তাহলে তো আমাদের আগে আমাদের চেয়ে কোটি গুণ উত্তম ব্যক্তিদের সমন্ধে একই কথা বলা হয়েছিল। আর তাদের তুলনায় আমরা তো ধূলোবালির চাইতেও অধম - আল্লাহ্‌ তাদের সকলের উপর শান্তি বর্ষণ করুন। আল্লাহ-র দ্বীনের বিষয় তাউয়ীল করে বদলে দেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। দুনিয়া গেলে যাবে কিন্তু এই দ্বীনের সাথে কম্প্রোমাইয করা সম্ভব না, এবং দ্বীনকে দুনিয়া-কমপ্লায়েন্ট করাও সম্ভব না। যে যাই বলুক না কেন, যতোই সেটা কনভিনিয়েন্ট হোক না কেন, বা যতোই জেল-যুলুম-রিমান্ড কিম্বা হত্যার ভয় দেখানো হোক না কেন। নিঃসন্দেহে এটাই মিল্লাতু ইব্রাহীম।

পশ্চিমা “মরাল সুপিরিওরিটি”-র ফ্যালাসি


পশ্চিমা বিশ্ব এবং মুসলিম বিশ্বে তাদের অন্ধ অনুসারীরা ইসলামকে আক্রমণ করার সময় কয়েকটা ধরাবাঁধা আর্গুমেন্ট ব্যবহার করে। এগুলোর বেশীরভাগই হল প্রাচ্যবিদ বা ওরিয়েন্টালিস্টদের দ্বারা ব্যবহৃত নানা বস্তাপচা যুক্তি, যেগুলোকে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং তথ্যগত ভাবে ভুল। যুক্তিগত বা নৈতিক উৎকর্ষ না, ফ্যাকচুয়াল অ্যাকিউরিসি না, এই আর্গুমেন্টগুলোর মূল চালিক শক্তি হল এগুলোর ইনবিল্ট ইসলামবিদ্বেষ। দুঃখজনক আমাদের সমাজে এরকম মানুষের অভাব নেই যারা হাসি মুখে এবং খুশি মনে পশ্চিমা বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক গোলামীকে মেনে নিয়েছেন। পশ্চিমাদের যেকোন দাবি তারা বিনাবাক্য ব্যয়ে মেনে নিতে রাজি। এই কারণে আর্গুমেন্টগুলোর প্রচার আমাদের শিক্ষিত সমাজের মধ্যেও বেশ ভালো মতোই হয়েছে। ইসলামবিদ্বেষীদের এরকম একটি আর্গুমেন্ট হল মরাল সুপিরিওরিটি-র আর্গুমেন্ট। পশ্চিমা উদারনৈতিক চিন্তাধারা [Liberalism] এবং সেক্যুলারিসমকে নৈতিকভাবে ইসলামের চাইতে শ্রেষ্ঠতর দাবি করা। লিবারেলিসম আর সেক্যুলারিসমের এথিকাল সিস্টেমকে ইসলামের দেয়া নৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর দাবি করা। ইসলামবিদ্বেষীরা দুই ভাবে এই দাবির পক্ষে যুক্তি দেয়ার চেস্টা করে। প্রথমত তারা ইসলামকে আক্রমণ করে। “ইসলাম নারী স্বাধীনতা দেয় না, ইসলাম চোরের হাত কাটতে বলে, ইসলাম অমানবিক, ইসলাম বর্বর, ইসলাম চারটা বিয়ের অনুমতি দিয়েছে, ইসলামে বাক স্বাধীনতা নেই, ইসলামের জিহাদের কথা আছে...” এরকম বিভিন্ন কথা বলে। এটা হল নৈতিক ভাবে ইসলাম অধম এটা প্রমাণ করার জন্য চেস্টা। দ্বিতীয়ত, তারা বিভিন্ন ভাবে প্রমাণ করার চেস্টা করে কেন তাদের দর্শন এবং নৈতিক চিন্তাধারা উন্নততর। তারা কত নৈতিক, তারা কত উদার, তারা নীতির প্রশ্নে কতোটা আপোষহীন, তারা মানবাধিকারে কত বিশ্বাসী, মানবতার ধারকবাহক – এসব ব্যপারে বিভিন্ন দাবি করে। আমরা সবাই এদুটো অ্যাপ্রোচের সাথেই পরিচিত। আমরা সবাই কমবেশী এই আর্গুমেন্টগুলো শুনেছি। অনেকে হয়তো কিছুটা প্রভাবিতও হয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা কি আসলে পশ্চিমাদের, এবং তাদের বাদামী চামড়ার অন্ধ অনুসারীদের এই বক্তব্যগুলোকে সমর্থন করে? কোন জাতি বা সভ্যতা কতোটা নৈতিক এটা পরিমাপ করার একটা ভালো উপায় হল সেই জাতি বা সভ্যতা তার অধিনস্ত এবং দুর্বলদের সাথে কি রকম আচরণ করে সেটা লক্ষ্য করা। যাদের উপর তারা কতৃত্ব অর্জন করেছে তাঁদের সাথে কি রকম আচরণ করে সেটা থেকে কোন জাতি আসলেই কতোটা নৈতিক সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। প্রয়োজনের তাগিদে কেউ তার নৈতিকতা কতোটা কম্প্রোমাইয করে সেখান থেকেও আপনি একটা ধারনা পাবেন। নিচের লিঙ্কটি হচ্ছে ২০ শে সেপটেম্বর, ২০১৫ তে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি আর্টিকেলের। http://tinyurl.com/psqpqqd লিঙ্ক থেকে আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়তে পারবেন, আমি এখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে মূল বিষয়টা বলছি। যেকোন দেশে আগ্রাসন চালানোর সময় আগ্রাসী ভিনদেশী সেনাদল কিছু স্থানীয় লোককে ব্যবহার করে। তারা এসব কোলাবরেটরদের মিত্র বা অ্যালাই বলে থাকে। আফগানিস্তানের মুসলিম তথা তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অ্যামিরিকানরাও কিছু স্থানীয় দালালদের ব্যবহার করছে। অ্যামিরিকার এসব মিত্রদের অনেকেরই হবি হচ্ছে ধর্ষণ । বিশেষ করে কমবয়েসী ছেলেদের ধর্ষণ করা। অ্যামিরিকানদের এই মিত্রদের কম্যান্ডাররা কমবয়েসী শিশু এবং কিশোরদের নিজেদের যৌনদাস হিসেবে ব্যবহার করতো। তাঁদেরকে ২৪ ঘন্টা বিছানার সাথে শেকল দিয়ে বেধে রাখতো আর রাতে ধর্ষণ করা হতো। এবং এই কাজগুলো হতো অ্যামিরিকানদের বেইসের ভেতরে। অর্থাৎ অ্যামিরিকানদের সেনাঘাটিতে, অ্যামিরিকানদের মিত্ররা, অ্যামেরিকানদের উপস্থিতিতে শিশুদের ধর্ষণ করতো। শুধু তাই না, অ্যামিরিকান সেনাবাহিনী এই বিকৃতকাম, ধর্ষক ও সমকামিদের বিভিন্ন গ্রামের নেতৃত্বের পদে বসাতো। তাই এটা বলা অনুচিত হবে না যে, এই শিশু কিশোরদের উপর নির্যাতনের জন্য অ্যামেরিকা দায়ী। এরকম একটি মেরিন বেইসে কিছু কিশোর মুক্ত হবার চেস্টা করার সময় একজন অ্যামেরিকান সেনাকে গুলি করে হত্যা করে। ঐ সেনা মারা যাবার প্রেক্ষিতেই নিউইয়র্ক টাইমসের এই আর্টিকেলটি লেখা। এমন না যে তারা মুসলিম শিশুদের অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আর্টিকেলটি লিখেছে। অনেকে মনে করতে পারেন এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দেখা যাক অ্যামেরিকানরা অন্য যে দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়েছে সেখানে কি অবস্থা। ইরাকে অ্যামেরিকান আগ্রাসন চলাকালীন সময়ে কুখ্যাত আবু গ্রাইব কারাগারে অ্যামেরিকানর বন্দীদের উপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালানো হয়। যা সে সময় বিশ্ব মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। কিন্তু যা মূল ধারার মিডিয়াতে আলোচিত হয় নি সেটা হল অ্যামেরিকান সেনারা আবু গ্রাইব কারাগের শুধু মুসলিম নারীদেরকেই ধর্ষণ করে নি, বরং তাঁদের সামনে তাঁদের ছোট ছেলেদের ধর্ষণ করেছে এবং সেটার ভিডিও করেছে। লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের অক্ষমতা ক্ষমা করুন। http://tinyurl.com/otfeory http://tinyurl.com/qyqrjh এ ব্যাপারে পুলিৎযার জয়ী সাংবাদিক সিমোর হারশ এর বক্তব্যঃ http://tinyurl.com/nnhh59u আচ্ছা এমনকি হতে পারে এটা শুধু অ্যামেরিকানরা করছে, অথবা এটা শুধু ইরাক এবং আফগানিস্তানেই ঘটেছে? আচ্ছা আমরা একটু অন্যদিকে তাকাই। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বাহিনী এমন একটি সেনবাহিনী যা পরিচালিত জাতিসংঘের আদর্শ অনুযায়ী। যেমন সোভিয়েত আর্মির পেছনে চালিকা শক্তি ছিল সোশ্যালিসম, যা ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শ। তেমনিভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর চালিকা শক্তি হল জাতিসংঘের আদর্শ – সেক্যুলার হিউম্যানিসম বা “ধর্ম নিরপেক্ষ মানবতাবাদ”। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বাহিনির সদস্যরা সেক্যুলার হিউম্যানিসমের মহাম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে যেসব অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গেছেন সেখানে ধর্ষণের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে এসেছেন। মালি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো বিভিন্ন জায়গায় এই শান্তিরক্ষীরা এই কাজ করেছে। হাইতিতে প্রায় এক দশক ধরে এই ধর্ষণ চলছে। http://tinyurl.com/kq3zytd http://tinyurl.com/nqthgh9 http://tinyurl.com/ndahex4 http://tinyurl.com/q72ojgb এই ধর্ষণের স্বীকার শুধু নারীরা না। প্রতিটি ক্ষেত্রে শিশুদের ধর্ষণ করা হয়েছে। একটু প্যাটার্নটা লক্ষ্য করুন। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিকটিম হলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নারী, শিশু এবং বন্দীরা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা দাবি করেছে তারা এসব দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যাচ্ছে, গণতন্ত্র আনার জন্য যাচ্ছে, মানবাধিকারের জন্য যাচ্ছে। অর্থাৎ এই মহান আদর্শগুলো দ্বারা বলীয়ান সেনারা সবচেয়ে দুর্বল মানুষগুলোকে তাঁদের সবচাইতে দুর্বল সময়ে আক্রমণ করেছে। এবং মানবতা, শান্তি, গন্ততন্ত্র এই আদর্শগুলো তাঁদের এই পৈশাচিকতা, এই প্রিডেটরি বিহেইভিয়ারকে থামাতে পারে নি। সবচাইতে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল তারা তো এসব ঘটনা চেপে রাখার চেস্টা করেছেই, কিন্তু প্রকাশিত হবার পরও তারা এই ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে ইচ্ছুক না। তারা কিন্তু বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায় তাদের সেনাবাহিনী কত নৈতিক, কত মানবতাবাদী। মুসলিমরা জঙ্গী আর তারা মানবতাবাদী। অথচ তাদের সেনাবাহিনী, তাদের আদর্শের ধারকরাই, আফগানিস্তান ও ইরাকে তেজস্ক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে, ওয়াইট ফসফরাস ব্যবহার করে, শিশুদের ধর্ষণ করে, নারীদের ধর্ষণ করে সেটার ভিডিও করে, নিজেরা নিজেদের ধর্ষণ করে, ড্রোন হামলা করে নিয়মিত শিশু হত্যা করে, ঘন জনবসতি পূর্ণ এলাকায় নির্বিচারে বম্বিং করে। এতো কিছু করার পরও তারা মানবিক। তারা মানবতাবাদী তারা মহান, আর মুসলিমরা বিশ্বাস করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড, তালিবান মনে করে চুরির শাস্তি হাত কাঁটা, আমরা মনে করি শারীয়াহ মানবজাতির একমাত্র সংবিধান – এজন্য আমরা বর্বর, মধ্যযুগীয়, জঙ্গি!. পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্ট, ইসলামবিদ্বেষী এবং তাদের বাদামী চামড়ার সন্তানরা আমাদের খুব করে বোঝানোর চেস্টা করেন ইসলামকে মানুষকে বন্দী করে, অসম্মানিত করে, অধিকার কেড়ে নেয় আর পশ্চিমাদের আদর্শগুলো মানুষকে সম্মানিত করে। বাস্তবতা হল পশ্চিমাদের আদর্শ মানুষ চরমভাবে অসম্মান করে এবং তাঁকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে নামিয়ে আনে। এসব আদর্শ পুরুষকে লম্পট এবং নারীকে পণ্যে পরিণত করে। এই আদর্শগুলো মানুষকে “অধিকার, মানবতা, স্বাধীনতা-র মতো কিছু সুন্দর সুন্দর শব্দ শুনিয়ে অন্ধ ও বধির বানিয়ে রাখে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত অর্থ-সম্পদ-নারীর পেছনে ছুটে চলা এক ঘোরগ্রস্থ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করে। এই আদর্শগুলো ন্যায়বিচার দেয় না, সুসাশন দেয় না, নৈতিক উৎকর্ষতা আনে না বরং উল্টোটা করে। এই আদর্শ এমন কিছু মানুষ তৈরি করে যারা মুখে মানবতা আর মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু কাজের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। তাদের বর্বরতা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ক্রুসেইডার পূর্বপুরুষদের হিংস্র পাশবিকতাকেও ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে ইসলাম প্রকৃত ভাবে মানুষকে মুক্ত করে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করে। নারীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়, সুরক্ষিত রাখে এবং মানবচরিত্রের অন্ধকার দিকটিকে লাগাম দিয়ে রাখে। ইসলাম মানুষকে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনে। সৃষ্টির উপাসনা থেকে মুক্ত করে মানুষকে এক আল্লাহ-র ইবাদাতে নিয়োজিত করে। অর্থ, সম্পদ, সম্মান, ক্ষমতার পেছনে ছোটার বদলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মানুষকে প্রতিযোগিতা করতে শেখায়। এ কারণে যেসব বিকৃতকাম, সমকামি, শিশুকামিদের অ্যামেরিকান সেনারা মিত্র হিসেবে গ্রহণ করে তালিবান তাদের খুঁজে বের করে হত্যা করে। অ্যামেরিকানরা যেখানে পপি চাষ থেকে অর্থ উপার্জন করে তালিবানের শাসনামলে সেই পপি চাষ নেমে আসে শুন্যের কোঠায়। অ্যামেরিকা তার তথাকথিত সুপিরিওর শাসন ব্যবস্থা দিয়ে প্রায় এক দশক চেস্টা করেও প্রহিবিশানের সময় মদ নিষিদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তালিবান মাত্র কয়েক বছরে পপি চাষ বন্ধ করে ফেলে। ব্রিটীশরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করে আর তালিবানের কাছে বন্দী ইয়োভন রিডলী ইসলাম গ্রহণ করে। এটা হল এক সুস্পষ্ট পার্থক্য এই দুই আদর্শের মধ্যে। নিশ্চয় এটা একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য, এবং নিশ্চয় এর মাঝে প্রমাণ আছে তাঁদের জন্য যারা নিজেদের বিচার-বুদ্ধি-বিবেককে এখনো সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাদের কাছে বন্ধক দেননি। বাহ্যিক চাকচিক্য, চটকদার কথা, মানবতা ও শান্তির রেটরিক এবং পশ্চিমাদের বৈষয়িক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্যে আমরা বিভ্রান্ত হই। বিশেষ করে আমরা যারা সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত হই তাঁদের মাথায় ছোটবেলা থেকেই গেঁথে দেয়া হয় যে সফলতার সংজ্ঞা হল পশ্চিমাদের মতো হওয়া। একই সাথে এই শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজ আমাদের শেখায় পশ্চিমাদের সব দাবিগুলোকে ধ্রুব বাস্তব সত্য হিসেবে মেনে নিতে। কোন অপ্রিয় প্রশ্ন উত্থাপন না করতে। আমরা পশ্চিমাদের বড় বড় স্কাইস্ক্রেইপার আর বিশাল অর্থনীতি দেখি, কিন্তু এগুলোর পেছনে ঔপনিবেশিক এবং নব্য-ঔপনিবেশিক লুটপাটের ভূমিকা দেখি না। আমরা রেনেসন্স আর এনালাইটেনমেন্ট থেকে শেখার কথা বলি কিন্তু রেনেসন্স আর এনলাইটেমেন্ট মুসলিমদের কাছে কতোটা ঋণী সেটা জানার চেস্টা করি না। আমরা জেনেভা কনভেনশানের কথা বলি, কিন্তু জেনেভা কনভেনশানের প্রায় সাড়ে ১৩০০ বছর আগে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ যে মানবাধিকার এবং যুদ্ধবন্দীর অধিকারের ব্যাপারেয়া মানব ইতিহাসের সর্বোৎকৃষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে গেছেন এটা নিয়ে বলতে সংকোচ বোধ করি। জন স্টুয়ারট মিল, বেন্থাম, লিঙ্কনম, প্লেইটো, মার্ক্স যেখানে এতো কারুকার্যময় ব্যাখ্যা দিয়েছেন এগুলোর মাঝে আল্লাহ-র দেয়া সরল ব্যাখ্যা, যা বেদুইন আর বিজ্ঞানী, সবার কাছেই বোধগম্য, আমাদের আকর্ষণ করে না। আমাদের মধ্যে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স কাজ করে। আমরা নিজেদের ক্ষুদ্র, অপাংতেয় মনে করি। আমরা মনে করি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ হবার উপায় হল পশ্চিমাদের অনুসরণ করা। আমাদের সফল হবার উপায় হল ফিরিঙ্গীদের মতো হবার চেস্টা করা। তাই আমাদের সমাজে পশ্চিমাদের অনেক বাদামী চামড়ার সন্তান আছেন যারা পশ্চিমাদের ইসলাম বিদ্বেষ অনুসরণ করাকে সভ্যতা, সাফল্য আর জ্ঞানের মাপকাঠি মনে করেন, এতে অবাক হবার কিছু নেই। এই মানুষগুলো পশ্চিমা বিশ্বকে প্রভু হিসেবে, পশ্চিমা আদর্শকে জীবনবিধান, দ্বীন, হিসেবে গ্রহন করেছে। এই বাদামী ফিরিঙ্গী, নাস্তিক এবং কাফিরদের কথাবার্তা, প্রচার প্রচারণা এবং মিডিয়ার প্রভাবের কারণে অনেক সাধারণ মুসলিম প্রভাবিত হয়ে পড়েন। কিন্তু আপনি যদি অন্ধভাবে ওরিয়েন্টালিস্ট এবং তাদের গোলামদের বক্তব্য গ্রহণ না করে একটু খুঁটিয়ে দেখার চেস্টা করেন, তাহলে দেখবেন, মিথ্যা, প্রতারণা, অনৈতিকতা, পাশবিকতা, এবং পাপাচার কিভাবে এই সভ্যতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে, দেখবেন কিভাবে অন্ধকার এই সভ্যতাকে ঘিরে রেখেছে। আমি এখানে তাদের সেনাদের আচরণের মাধ্যমে মাত্র একটি উদাহরণ দিয়েছি, এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। আপনি যদি একটু চিন্তা করেন তাহলে এই বুলি সর্বস্ব আদর্শের অন্তঃসারহীনতা আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে পড়বে। এরা যেসব আদর্শের ক্যানভাসিং করছে এগুলো গত দুইশ বছরে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ আর নোংরামি ছাড়া পৃথিবীকে কিছু দিতে পারে নি। যেখানে ইসলামের সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে ১৩০০ বছরের খিলাফাহ-র ইতিহাস। ১৩০০ বছর ধরে শারীয়াহ এর আলোকে ইসলাম দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ ও রাস্ট্রের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কারো যদি আসলেই প্রশ্ন জাগে কোন আদর্শ মানব জীবনের সমাধান দেয়ার ব্যাপারে সফল, তাহলে সে ইতিহাস দেখে নিক। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, ইসলামই প্রথম মানবাধিকার নিশ্চিত করেছে, ইসলাম নারীকে সম্মান এবং স্বাধীনতা দিয়েছে, ইসলাম ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে, ইসলাম প্রথম ওয়েলফেয়ার স্টেইটের ধারণা এনেছে এবং বাস্তবায়ন করেছে, ইসলাম রাস্ট্রীয় ভাবে জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ইসলাম মানবজাতিকে সর্বোত্তম আদর্শ দিয়েছে। ইসলামই একমাত্র ব্যবস্থা যা মানবজীবনের সমস্যার সফলতার সাথে সমাধান করেছে, বহিঃশত্রুর মোকাবেলা করে টিকে থেকেছে, নিজ আদর্শের বিস্তার করেছে। ইসলাম এই কাজগুলো বাস্তবে করেছে। ইসলাম পশ্চিমাদের আদর্শের মতো কথায় সীমাবদ্ধ না। ইসলাম কাজের মাধ্যমে তাঁর আদর্শিক উৎকর্ষ প্রমাণ করেছে । পশ্চিমা চিন্তাধারা জীবনবিধানের ব্যাপারে অনেকগুলো মডেল দিয়েছে কিন্তু কোনটাই বাস্তব সমাধান তো দেয়-ই নি বরং নতুন সমস্যা সৃষ্টি করেছে। আর ইসলাম একটি মডেল দিয়েছে এবং ১৩০০ বছর ধরে সেই মডেলের বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানব জাতির সমস্যার সমাধান দিয়েছে। একজন চিন্তাশীল ব্যক্তির জন্য প্রমাণ হিসেবে এটুকুই যথেস্ট। এবং ইন শা আল্লাহ, ইসলামী খিলাফাহ আবারো প্রতিষ্ঠিত হবে, আল্লাহ-র মাটিতে আল্লাহ- র শারীয়াহ আবারো কায়েম হবে। আমরা সমর্থন করি আর না করি এটা আল্লাহ-র প্রতিশ্রুতি যা হবেই। যে বিষয়টা নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা হল আমরা নিজেদের কিভাবে দেখতে চাই। আমরা কি নিজেদের সম্মানিত অবস্থায় দেখতে চাই, আমরা কি মাথা তুলে মর্যাদা এবং গর্বের সাথে বাঁচতে চাই? নাকি আমরা চাই পশ্চিমা দাসত্ব মেনে নেয়ার মাধ্যমে অপমান আর অন্ধ অণুসরণের এক জীবন? আল্লাহ আমাদের ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেনঃ “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে…” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০] তাই আমাদের সম্মান ইসলামেই নিহিত। আমাদের জন্য আল্লাহ ইসলামকে মনোনীত করেছেন, তাই আর যা কিছুরই অনুসরণ আমরা করি না কেন আমরা কখনোই সফল হতে পারবো না। “নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম... “ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯] রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তোমরা যখন ধারে ক্রয়-বিক্রয় করবে, গাভীর লেজ ধরে থাকবে, কৃষি কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে, তখন আল্লাহ্ তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দেবেন এবং তা তোমরা হটাতে পারবে না, যতক্ষন না তোমরা নিজের দ্বীনের দিকে ফিরে আস।(আহমদ, আবু দাউদ, আল হাকিম) আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল আমাদের সবাইকে বোঝার তাউফিক্ব দান করুন, আমিন।

নাস্তিকতার বুদ্ধিবৃত্তিক হাতসাফাই ১ – “পৃথিবীতে এতো ধর্মের মাঝে কোন ধর্মটি সঠিক?”


নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী এবং সংশয়বাদীদের কিছু রেডিমেইড ‘যুক্তি’ থাকে। যখন স্রষ্টা, পরকাল ও স্রষ্টার আনুগত্যের আবশক্যতার কথা বলা হয় তৎক্ষণাৎ এই মুখস্থ উত্তরগুলো তারা পেশ করেন, এবং মোক্ষম জবাব দিয়ে প্রতিপক্ষকে লা-জওয়াব করা গেছে এটা ভেবে পরিতৃপ্তি অনুভব করেন। এছাড়া যারা বিশ্বাস রাখেন কিন্তু বিশ্বাস সম্পর্কে তেমন একটা জ্ঞান রাখেন না, তাদের মনে সংশয় সৃষ্টি করতেও নাস্তিকরা এসব রেডিমেইড “যুক্তি” ব্যবহার করেন। এরকম মুখস্থ “যুক্তি”-র সংখ্যা সীমিত হওয়াতে দেখা যায় ঘুরেফিরে একই “যুক্তি” বিভিন্ন আঙ্গিকে সামনে আসছে। এরকম একটি “যুক্তি” হল – সম্ভাব্য উত্তরের সংখ্যাধিক্য ও পারস্পরিক ভাবে সাংঘর্ষিক হবার “যুক্তি”। শুনতে যতো জটিল মনে হয় আসলে বাস্তবে বিষয়টা ততোটা জটিল না। সাধারণত এই “যুক্তি” প্রশ্ন আকারে উপস্থাপন করা হয়। যেমন - পৃথিবীতে এতো ধর্মের মাঝে কোন ধর্মটি সঠিক? প্রতিটি ধর্ম নিজ নিজ স্রষ্টার কথা বলে, প্রতিটি ধর্মের অনুসারীরা দাবি করে একমাত্র তাদের ধর্মই সঠিক, একমাত্র তাদের ধর্ম অনুসরণ করেই মুক্তি পাওয়া যাবে। এর মাঝে আপনার ধর্ম যে সঠিক তার প্রমান কি? নাস্তিকদের এই যুক্তিটির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে এবং আন্তরিকভাবে যদি কোন সাধারণ বুদ্ধিবিবেচনাসম্পন্ন ব্যক্তি চিন্তা করেন তাহলে তার মনে দ্বিতীয় আরেকটি এই প্রশ্নের উদয় হবার করা (তবে এক্ষেত্রে চিন্তার ক্ষেত্রে কিছুটা নিরপেক্ষ হওয়া এবং স্রষ্টার প্রশ্নের উত্তর খোজার ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া আবশ্যক)। প্রশ্নটি হল, এই প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য কি? প্রশ্নকারী কি এই প্রশ্নের মাধ্যমে ওই বিষয়গুলোর উত্তর খুজতে সচেষ্ট যে প্রশ্নগুলো নিয়ে ধর্ম আলোচনা করে? অথবা যে প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আস্তিক ও নাস্তিকদের মতপার্থক্য? স্রষ্টা, স্রষ্টার আনুগত্য, সৃষ্টির সূচনা, মানব অস্ত্বিতের লক্ষ্য, মৃত্যু, পরকাল, নৈতিকতা, ভালো ও মন্দ – ইত্যাদি বিষয়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট উত্তর খোজার লক্ষ্যে কি এ প্রশ্ন করা হচ্ছে? নাকি এটা কি কথার পিঠে বলা একটি কথা – একটি রেটোরিকাল যুক্তি? প্রশ্নটা আরো স্পেসিফিক ভাবে করি। যেই যুক্তি বা প্রশ্নটা নাস্তিকরা উত্থাপন করছেন সেটা কি আদৌ সত্যকে খোজার সাথে সম্পর্কিত? নাকি সেটা একটা নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে, নির্দিষ্ট একটা কথোপকথনে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা একটি যুক্তি? সহজ ভাষায় এই প্রশ্নের পেছনে উদ্দেশ্য বা intent কি সত্যের অন্বেষণ নাকি তর্কে জেতা? আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন প্রশ্নকারী ইতিমধ্যেই তার প্রশ্নের মাধ্যমে সম্ভাব্য সব উত্তরকে ভুল সাব্যস্ত করে বসে আছেন। এ প্রশ্নটা এমনভাবে তৈরি করা যাতে করে সম্ভাব্য যেকোন উত্তরকে গ্রহণ না করার জাস্টিফিকেশান তৈরি করা যায়। আপনি যে উত্তরই দিন না কেন সে বলবে – “তুমি এটা বলছো কিন্তু আরেকজন তো আরেকটা বলবে। তো আমি তোমাদের কার কথা শুনবো।” অর্থাৎ উত্তর খোজাটা আদৌ প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য না। সে আসলে আপনি কি উত্তর দেবেন তা শুনতে, কিংবা আপনার উত্তর সঠিক কি না তা পরীক্ষা করে দেখতেও আগ্রহী না। বরং তার উদ্দেশ্য হল সম্ভাব্য উত্তরগুলোর সংখ্যাধিক্য এবং পারস্পরিকভাবে সাংঘর্ষিক হবার বিষয়টি উত্থাপন করে সম্ভাব্য সকল উত্তর সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি করা। ধরুন আপনি একজন নাস্তিক। একজন ধর্মে বিশ্বাসী লোক – সেটা যেকোন ধর্ম হতে পারে – আপনাকে এসে প্রশ্ন করলো আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না কে? অথবা ধরুন আপনাকে প্রশ্ন করা হল আপনি কি বিশ্বাস করেন? এক্ষেত্রে ধর্মে বিশ্বাসী লোককে উপরের প্রশ্ন করে আপনি ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিতে পারবেন – “কোন ঈশ্বরে বিশ্বাস করবো? কোন ধর্মে বিশ্বাস করবো? এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর কি? সঠিক উত্তর কিভাবে বের করবো, যখন সবাই বলছে তার উত্তরই সঠিক?” এটুুকু বলে ধর্মে বিশ্বাসী লোকটাকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দেওয়ার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাস্তিকরা বলে – “অতএব ধর্ম-টর্ম এগুলো মানুষ নিজের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন, আর মানুষকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য এখন এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। আল্লাহ-ঈশ্বর-ভগবান এসব কিছু নেই, সব মানুষের বানানো...” ইত্যাদি। প্রশ্ন হল যে প্রশ্ন থেকে এই আলোচনার শুরু সেই প্রশ্ন থেকে কি যৌক্তিকভাবে এই উপসংহারে পৌঁছানো যায়? অনেক ধর্ম থাকা, এবং এ ধর্মগুলোর বক্তব্য সাংঘর্ষিক হওয়া কি সবধর্মের ভুল হবার প্রমান? আলোচনা সম্ভবত একটু বেশি তাত্ত্বিক হয়ে যাচ্ছে, আমি একটা উদাহরণ দিয়ে জিনিষটা বোঝানোর চেষ্টা করি। মনে করুন সমুদ্রপাড়ের একটি শহর। ধরুন হাজার বছর আগের কথা। একদিন সকালে শহরবাসী আবিষ্কার করলো একটি ছোট্ট নৌকা সৈকতে এসে ভিড়েছে। নৌকাতে অচেতন দুটি প্রাণী। একজন মূমুর্ষু ব্যক্তি এবং তার বুকে আনুমানিক ছয় মাসের একটি শিশু। লোকজন তাদেরকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষন পরই লোকটি মারা গেলেন। তবে মৃত্যুর আগে কিছু সময়ের জন্য জ্ঞান ফিরে পেয়ে কিছু তথ্য জানিয়ে গেলেন। শিশুটির মা তাদের সাথেই জাহাজে ছিলেন। জহাডুবি হওয়াতে তিনি এবং তার সন্তান জাহাজের অন্যান্য যাত্রীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। তিনি শহরের লোকেদের প্রতিজ্ঞা করালেন তার সন্তানকে দেখে রাখার এবং সন্তানের মা আসলে তার কাছে সন্তানটি তুলে দেবার। শহরের লোকজন আর কোন তথ্য লোকটির কাছ থেকে জানার আগেই তিনি মারা গেলেন। ধরা যাক, এক বছর পর এক জাহাজে চেপে একশ জন মহিলা হাজির হলেন এবং সকলেই সেই শিশুটির মাতৃত্বের দাবি করে বসলো। একশ জনের একশ জনই নিজের দাবিকে আত্মবিশ্বাসের সাথে সত্য বলে প্রচার করতে থাকলো। নিজের দাবির স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি-প্রমান উপস্থাপন করলো। শহরের লোকজন পড়লো মহাসমস্যায়। কি করা যায় তা ঠিক করার জন্য এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক ডাকা হল। বৈঠকে শহরের মেয়র দাঁড়িয়ে বললেন – উপস্থিত লোকসকল! আসুন দেখা যাক আমরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কি জানি। আমরা জানি - ক) একশ জনের প্রত্যেকেরই এ শিশুর মা হওয়া সম্ভব না। যদি একজনের দাবি সঠিক হয় তাহলে অবধারিত ভাবে বাকি ৯৯ জনের দাবি ভুল। খ) এই একশো জনের মধ্যে আসলেই এ শিশুর মা উপস্থিত আছে – কেবলমাত্র তাদের দাবির ভিত্তিতে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। গ) এই একশোজনের মাঝে শিশুটির প্রকৃত মা উপস্থিত নেই- এটাও নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। ঘ) কোন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে এ শিশুটির মা, সেটাও নিছক দাবির ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। ঙ) যদি শিশুটির প্রকৃত মা এই একশো জনের মাঝে উপস্থিত থাকে তাহলে এটা আবশ্যক যে ৯৯% দাবিকারী এখানে মিথ্যা বলছে। আর যদি শিশুটির মা এখানে উপস্থিত না থাকে তাহলে এখানে ১০০% দাবিকারীই মিথ্যা বলছে। হে শহরবাসী আপনারা বলুন আমরা কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে পারি? মেয়রের কথার পর নেমে আসলো পিনপতন নীরবতা। মিনিট খানেক সবাই যেন গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকলো। তারপর এক শিশু দাড়িয়ে বললো, আমি জানি এ সমস্যা সমাধান কি। যেহেতু সবাই বলছে তার দাবিই সঠিক, যেহেতু প্রত্যেকের দাবি অন্যান্যদের দাবির সাথে সাংঘর্ষিক এবং যেহেতু এখানে কমপক্ষে ৯৯% দাবিদার মিথ্যাবাদী - অতএব স্পষ্টভাবে প্রমান হয় যে এই শিশুটির আসলে কোন মা-ই নেই। আমরা ধরে নেবো নৌকায় চেপে আসা সেই ব্যক্তিও মিথ্যা বলেছে এবং মাতৃত্বের দাবিকারীরাও সবাই মিথ্যা বলছে। আর আমরা বিশ্বাস করবো এই শিশুটির কোন মা নেই, এবং তার কোন পিতাও নেই। পিতা ও মাতা ছাড়াই এ শিশু এসেছে। আর যেহেতু শিশুটির কোন মা নেই, পিতাও নেই, তাই সেই ব্যক্তির কাছে আমরা যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এটা মানতেও আমরা আর বাধ্য নেই। এই শিশুটির কথাকে কি যৌক্তিক? হত পারে সে অবুঝ, পাগল, প্রতিবন্ধী অথবা সে সঠিক উত্তর খুজতেই চায় না। কিন্তু তাকে কি আদৌ সত্যান্বেষী বলা যায়? নাস্তিকদের “যুক্তিটি” এবং যুক্তির ভিত্তিতে দেওয়া তাদের উপসংহার হল এই শিশুর কথার মতো। যেহেতু সবাই নিজেকে ঠিক দাবি করছে, যেহেতু অনেকে দাবি করছে -তাই সব ধর্মই নিশ্চিতভাবে ভুল এবং কোন স্রষ্টা নেই! ধর্মের সংখ্যাধিক্য এবং ধর্মগুলোর বক্তব্য পারস্পরিক সাংঘর্ষিক হওয়া প্রতিটি ধর্মের ভুল হবার প্রমান না, যদিও এটা অবধারিত যে সবগুলো ধর্ম সঠিক হতে পারেন না। একই ভাবে অনেকগুলো ধর্ম থাকা, প্রতিটি ধর্মের বিভিন্ন বক্তব্য থাকা স্রষ্টার অনস্তিত্বের প্রমান না। যদি সমুদ্রপাড়ের শহরের মানুষ আসলেই সমস্যার সমাধান করতে চায় তবে তাদেরকে হয় মাতৃত্বের দাবিকারীরা কি কি দলিল-প্রমান উত্থাপন করেছে তা পরীক্ষা করতে হবে, অথবা অন্য কোন পদ্ধতিতে শিশুটির মাতৃপরিচয় সম্পর্কে তাদের নিশ্চিত হতে হবে। সমস্যা বেশ জটিল তাই ধরে নিলাম এই শিশুর মা নেই, বাবা নেই – এটা কোন সমাধান না। তাই নাস্তিকরা যা বলে তা না কোন প্রমান, না কোন সঠিক উত্তর। বরং তারা প্রমানহীন, যৌক্তিকতাহীন আরেকটি দাবি, আরেকটি বিলিফ সিস্টেম বা ধর্মবিশ্বাস নিয়ে আসেন। আর তা হলঃ কোন স্রষ্টা নেই, অতএব স্রষ্টাকে মানার প্রয়োজনও নেই। কিন্তু যেখানে তারা ভাওতাবাজি করেন বুঝে কিংবা না বুঝে তা হল – দুনিয়ার সব ধর্মকে যদি তারা ভুল প্রমান করেনও (যেটা তারা করতে পারেন না) তবুও কিন্তু স্রষ্টার অনস্তিত্ব – স্রষ্টা নেই – এটা প্রমাণিত হয় না। সুতরাং অন্য ধর্মে কেন ভুল বা প্রত্যেক ধর্মের ভুল হবার ৯৯% সম্ভাবনা আছে – এধরণের কথা না বলে তাদের উচিৎ এটা প্রমান করে দেখানো যে স্রষ্টা নেই। কিন্তু তারা এই কাজটা করেন না। তারা বরং আলোচনাকে ডাইভার্ট করেন বা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করেন, এবং কথার মারপ্যাঁচ এবং রেটোরিকাল যুক্তি দিয়ে সংশয় সৃষ্টির চেষ্টা করেন। কিন্তু অপরের দাবির ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি তাদের দাবির পক্ষে প্রমান না। অর্থাৎ নাস্তিকদের অবস্থানটা হল এই – তারা বিশ্বাস করেন স্রষ্টা নেই। কিন্তু তারা তাদের এই দাবির পক্ষে প্রমান উত্থাপন করতে পারেন না। তারা স্রষ্টা আছে এই দাবিকে ভুলও প্রমান করতে পারেন না, এবং মহাবিশ্বের উৎস ও সূচনার কারন হিসেবেও কোন সন্তোষজনক উত্তর তারা দিতে পারেন না। বরং তারা একটা স্ট্যাটিস্টিকাল পয়েন্টে তর্কটা নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। তারা বলতে চান – যদি অনেক ধর্ম থাকে আর এর মধ্যে শুধু একটি ধর্মই সঠিক হতে পারে, তাহলে স্ট্যাটিস্টিকালি একজন নাস্তিকের অবিশ্বাস ততোটাই যৌক্তিক যতোটা একজন বিশ্বাসীর বিশ্বাস। দুটোরই ভুল হবার সম্ভাবনা। [তাদের এই অবস্থানের মাঝেও একটা ভুল আছে, তবে সেই আলোচনাতে এখন যাচ্ছি না।] সমস্যাটা হল কোন চায়ের আড্ডায়, কিংবা তর্কবিতর্কের ক্ষেত্রে এধরনের আর্গুমেন্টের ব্যবহার হয়তো একজন নাস্তিকের পযিশানকে অপরের সামনে জাস্টিফাই করার ক্ষেত্রে কার্যকর, কিন্তু মূল বিষয়ে – অর্থাৎ স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্কের বিষয়ে - পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোন কিছুই এ ধরণের আর্গুমেন্ট থেকে পাওয়া যায় না। আপনি যদি দুনিয়ার সব ধর্মকে ভুল প্রমাণিত করেনও তাও কিন্তু এই মৌলিক প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়া হয় না। এই স্ট্যাটিস্টিকাল পয়েন্টটা এমন সব প্রশ্নের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যে প্রশ্নের সঠিক উত্তর একটি। কারন যেকোন প্রশ্নের একটি মাত্র উত্তর সঠিক হবার অর্থ অবশ্যই অন্য সকল উত্তর ভুল। ধরুন একটি কাঁচের জারে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিভিন্ন আকার ও রঙের ছোট ছোট রাবারের বল আছে। আপনি যদি জারটি এক নজর দেখিয়ে তারপর মানুষকে প্রশ্ন করেন – বলুন তো এখানে কয়টি বল আছে? তাহলে এ প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তরের সংখ্যা অসীম। যদি ১০০০ জনকে প্রশ্ন করেন হয়তো ১০০০টা ভিন্ন ভিন্ন উত্তর পাবেন। কিন্তু তার অর্থ কি এ প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর নেই? অবশ্যই না। অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বল সেই জারে থাকবে, এই সংখ্যা বদলাবে না। অবশ্যই সঠিক উত্তর একটিই হবে এবং তা ছাড়া বাকি সব উত্তর ভুল হবে। সম্ভাব্য উত্তরের সংখ্যাধিক্য ও তাদের পারস্পরিক সাংঘর্ষিক হওয়া প্রমান করে না যে, সঠিক উত্তর নেই।[1] ধর্মের অনুসরণ, ধর্মীয় অনুশাসন পালন এগুলো স্রষ্টায় বিশ্বাসের পরবর্তী ধাপ। আবশ্যক প্রথম ধাপ তর্কে জেতা কিংবা নিজের অবস্থানকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা বুদ্ধিবৃত্তিক হাতসাফাই কিন্তু নিশ্চিতভাবেই সত্যের অন্বেষণ না। একজন সত্যান্বেষী ব্যক্তি যিনি সংশয়ে আছেন তিনি প্রথমে এই প্রথম ধাপের মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন। আর একজন ক্যারিয়ার নাস্তিক বুদ্ধিবৃত্তিক হাতসাফাইয়ের মাধ্যমে তর্কে জেতার চেষ্টা করবে। সুতরাং যদি কোন নাস্তিক পরবর্তীতে এই প্রশ্ন আপনার সামনে উপস্থাপন করেন তাহলে যদি কেউ তর্কে জিততে চান তাহলে তাকে বলুন – যদি আমি ধরে নেই দুনিয়ার সব ধর্মই ভুল, তবুও তো সব ধর্মের ভুল হওয়া তোমার বিশ্বাসকে (নাস্তিকতার বিশ্বাস – স্রষ্টা নেই, পরকাল নেই, স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির দায়বদ্ধতাও নেই) সত্য প্রমান করে না। তাই তাদের ভুল তোমার পক্ষে প্রমান না। বরং তুমি তোমার দাবির পক্ষে প্রমান পেশ করো। আর যদি তুমি সেটা না পারো তাহলে অন্ধ বিশ্বাসী আর অন্ধ অবিশ্বাসী তোমার মধ্যে পার্থক্য কি? আর তাই যদি আসলেই কেউ সত্যান্বেষী হন তাহলে এসব মুখস্থ প্রশ্ন বাদ দিয়ে তার উচিত ভিন্ন একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। রেটোরিকাল কুতর্ক ছেড়ে মূল বিষয়ে প্রশ্ন করা, শেকড় থেকে শুরু করা। প্রশ্নটি হল – এই মহাবিশ্বের অরিজিন কি? পৃথিবী, সৌরজগত, ছায়াপথ নীহারিকা থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রন, প্রোটন পর্যন্ত - ম্যাক্রো স্কেল থেকে শুরু করে ন্যানো স্কেল পর্যন্ত – এসব কিছু কি নিজ থেকে সৃষ্টি হয়েছে? নাকি এগুলো নাকি এগুলো সবসময় ছিল এবং সবসময় থাকবে? নাকি এগুলো নির্দিষ্ট এক পর্যায়ে শুরু হয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময় পর বিলীন হয়ে যাবে – আর এর পুরোটাই হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে? নাকি এসব কিছুর একজন স্রষ্টা আছেন? <><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><> [1] নাস্তিকরা বলতে পারেন এই উদাহরণ তৈরি করা হয়েছে পিতামাতা ছাড়া শিশু জন্মাতে পারে না এই প্রমানিত বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে। জারের উদাহরনেও জারের মধ্যে বল আছে আগে এটা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্রষ্টা আছে সেটা একইভাবে প্রমাণিত না। তাই এটি একটি False Analogy. সেই ক্ষেত্রে উত্তর হবে, এটি False Analogy না, কারন এ থেকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানের চেষ্টা করা হচ্ছে না। শিশুর জন্য যেহেতু পিতামাতা থাকা আবশ্যক, তাই অবশ্যই মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা থাকা আবশ্যক – এই যুক্তি এখানে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে শুধু বলা হচ্ছে দাবিদার অনেক হওয়া, কিংবা অধিকাংশ বা সকল দাবিকারীর দাবির মিথ্যা হওয়াও প্রমান করে না যে শিশুটি পিতামাতা ছাড়া জন্মেছে।সম্ভাব্য উত্তর অনেক হওয়া প্রমান করে না যে জারে কয়টি বল আছে এই প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর নেই। একইভাবে অনেক ধর্ম থাকা এবং তাদের বক্তব্য পারস্পরিকভাবে সাংঘর্ষিক হওয়াও কোন ভাবেই প্রমান করে না যে স্রষ্টা নেই। স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রশ্নটা কোন নির্দিষ্ট ধর্মের সঠিক বা বেঠিক হবার উপর নির্ভরশীল না কোন ভাবে সংযুক্তও না। বরং আমরা এটাই বলছি যে ধর্মের সংখ্যা, ধর্মের বক্তব্য, তাদের পারস্পরিক সংঘাত ইত্যাদি ছেড়ে মূল আলোচনায় আসুন। অহেতুক পানি ঘোলা করা বাদ দিয়ে, মূল প্রশ্নের মীমাংসা করুন, একজন বা একাধিক স্রষ্টা আছেন কি না, সেই আলোচনায় আসুন। https://www.youtube.com/channel/UCGbIXAXZxoWtJQeQfCqP9bg

কত বার এমন হয়েছে যে, ছোট একটা দল বড় বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছে আল্লাহর অনুমতিতে —আল-বাক্বারাহ ২৪৬-২৫২

মুসলিমদের উপর যখন অমুসলিমরা নির্যাতন করে, তাদের সম্পত্তি লুট করে নিয়ে যায়, কর্তৃত্ব দখল করে নেয়, বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়, তখন মুসলিমরা কীভাবে যুদ্ধ করে তাদের অধিকার আদায় করবে, তা আল্লাহ ﷻ আল-বাক্বারাহ’তে তালুত এবং দাউদ ﷺ-এর ঘটনার মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়েছেন। এই আয়াতগুলো থেকে আমরা জানতে পারি: তারা কোন প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ করেছিলেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে একটি মুসলিম সম্প্রদায় হাতে অস্ত্র তুলে যুদ্ধ করতে পারে। মাত্র ছয়টি আয়াতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে ইতিহাসের সেই অসাধারণ ঘটনার পরিষ্কার বর্ণনা দেবেন, যেই ঘটনা নিয়ে বাইবেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বিভ্রান্তিকর বর্ণনা আছে। এই আয়াতগুলো থেকে একজন নেতা অনেক উপলব্ধির বিষয় পাবেন। একই সাথে অনুসারীরাও বিভিন্ন প্রকারের নেতাদের সম্পর্কে সাবধান হতে পারবেন—
বনি ইসরাইলের ওই গোত্র প্রধানদের কথা ভেবে দেখেছ, যারা তাদের নবীকে বলেছিল, “আমাদের জন্য এক রাজা নির্ধারণ করে দিন, যেন আমরা আল্লাহর ﷻ পথে যুদ্ধ করতে পারি।” তিনি বলেন, “যদি এমন হয় যে, তোমাদের উপর যুদ্ধ করার আদেশ আসলো, কিন্তু তারপরেও তোমরা যুদ্ধ করলে না, তখন?” তারা বলল, “কেন আমরা আল্লাহর ﷻ পথে যুদ্ধ করবো না, যখন কিনা আমাদের ঘরবাড়ি থেকে আমাদেরকে এবং আমাদের সন্তানদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে?” তারপর যখন তাদের উপর যুদ্ধ করার আদেশ আসলো, কয়েকজন বাদে বেশিরভাগই পিঠটান দিলো। আল্লাহ ﷻ অন্যায়কারীদের ভালো করে চেনেন। [আল-বাক্বারাহ ২৪৬] এই আয়াতে বেশ কিছু শেখার ব্যাপার রয়েছে। কখন আল্লাহ ﷻ যুদ্ধ করার অধিকার দেন? যখন মুসলিমদের উপর আক্রমণ হয়, তাদের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে দখল হয়ে যায়, তখন তারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় যুদ্ধ করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ করার জন্য পরিষ্কার প্রমাণ কু’রআনে রয়েছে। এথেকেই দেখা যায়, ক্বিতাল বা যুদ্ধ হচ্ছে মূলত আত্মরক্ষামূলক। এর আগের আয়াতগুলোতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ক্বিতাল বা যুদ্ধ করার কঠিন আদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে সাবধান করেছেন, আমরা যেন যুদ্ধের সময় দায়িত্ব পালন না করে পালিয়ে না যাই। ঠিক এরপরেই তিনি আমাদেরকে যুদ্ধের একটি ঘটনা বলে পরিষ্কার করে দিচ্ছেন, কখন কোন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করার অনুমতি তিনি দিয়েছেন। কিছু উগ্রপন্থী নেতা এর আগের আয়াতগুলো, যেমন: “তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা মৃত্যুর ভয়ে হাজারে হাজারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল? তখন আল্লাহ ﷻ তাদেরকে বললেন, “মরো”। তারপরে একদিন তিনি তাদেরকে জীবিত করলেন। আল্লাহ ﷻ মানুষের অনেক কল্যাণ করেন, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ কৃতজ্ঞতা দেখায় না। [আল-বাক্বারাহ ২৪৩] আর আল্লাহর ﷻ পথে যুদ্ধ (ক্বিতাল) করো। জেনে রেখো, আল্লাহ ﷻ সব শুনছেন, সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৪৪]” —এগুলো বলে মানুষকে আক্রমণাত্মক জিহাদের দোহাই দিয়ে মুসলিমদেরকে দিয়ে অবৈধ হামলা, নিরীহ মানুষ হত্যা ইত্যাদির দিকে উস্কে দেয়। কিন্তু তারা খুব সাবধানে এরপরের আয়াতগুলো এড়িয়ে যায়, কারণ পরের আয়াতে আল্লাহ ﷻ পরিষ্কার করে কখন, কোন প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ করা বৈধ, সেটা জানিয়ে দিয়েছেন। আরেকটি শেখার ব্যাপার হলো: মানুষের মধ্যে অনেক নেতা থাকবে, যারা নির্যাতিত মানুষদেরকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য, যুদ্ধ করার জন্য অনেক রক্ত গরম করা বক্তৃতা দেবে। কিন্তু যখনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার পরিস্থিতি হবে, তখন তাদের আসল চেহারা বের হয়ে যাবে। এরা যুদ্ধের আদেশ আসলে নিজেরা পিঠটান দেবে, অথবা সুকৌশলে নিজেরা যুদ্ধে না গিয়ে, অন্যদেরকে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। এথেকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই, যেসব তথাকথিত নেতারা ‘জিহাদ! জিহাদ!’ করে মুসলিমদেরকে এত ডাকাডাকি করছেন, তারা নিজেরা কেন জিহাদে যাচ্ছেন না? বসে বসে এত বই না লিখে, এত লেকচার না দিয়ে, নিজেরা কেন যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন না? যখনই কেউ আমাদেরকে জিহাদে যাওয়ার জন্য বুদ্ধি দেওয়া শুরু করবে, কীভাবে বর্ডার পার হতে হয়, কীভাবে প্লেনে করে গোপনে অমুক দেশে যেতে হয়, কীভাবে হোটেলে হামলা করতে হয়, তাদেরকে আমাদের প্রথম প্রশ্ন করতে হবে, “আমাকে যেই বুদ্ধি দিচ্ছেন, সেটা নিজে করছেন না কেন? গলাবাজি না করে আগে নিজে করে দেখান?” তাদের নবী তাদেরকে বললেন, “আল্লাহ ﷻ তালুত-কে তোমাদের রাজা নির্ধারণ করেছেন।” কিন্তু তারা বলল, “সে কীভাবে আমাদের রাজা হতে পারে, যেখানে রাজত্ব করার অধিকার তার থেকে আমাদের বেশি? তার তো অনেক সম্পত্তিও নেই?” তিনি বললেন, “তোমাদের চেয়ে তাকে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত আল্লাহই ﷻ নিয়েছেন এবং তাকে তিনি ﷻ অনেক জ্ঞান এবং শারীরিক শক্তি দিয়েছেন।” আল্লাহ ﷻ যাকে চান, তাকেই রাজত্ব দান করেন। আল্লাহ ﷻ সবকিছুর ব্যাপারে সব জ্ঞান রাখেন। [আল-বাক্বারাহ ২৪৭] একজন নবী ঘোষণা দিলেন যে, আল্লাহ ﷻ নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন রাজাকে! নবী বেঁচে থাকতেও কোনো এক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব একজন রাজা দিতে পারে। এথেকে দেখা যায়, নবী থাকার সময়ও রাজতন্ত্র বৈধ, এবং রাজার আনুগত্য করতে মানুষ বাধ্য, যতক্ষণ না রাজা মানুষকে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করতে বলছে। একজন নবীর মতো সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা রাজত্বের নেতৃত্ব নিজে না নিয়ে যে অন্য কোনো যোগ্য নেতাকে দিতে পারে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই আয়াত। এই আয়াত থেকে প্রমাণ মেলে যে, ধর্মীয় দিক থেকে একজন অনেক উপরে উঠলেই সে সব কিছুর যোগ্য হয়ে যায় না। একটি দেশের রাজা বা খালিফা হওয়ার যোগ্যতা শুধুই একজন আলেমের থাকবে, তা নয়। বরং অন্য কারো আরও বেশি যোগ্যতা থাকতে পারে।[১৭] রাজার কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে, সেটাও আল্লাহ ﷻ এখানে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অনেক সম্পত্তি থাকাটা রাজা হওয়ার জন্য মোটেও দরকার নেই। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, বেশিরভাগ রাজারা ছিলেন বিরাট ধনকুবের। বিপুল পরিমাণের সম্পদ নিয়ে তারা জৌলুশের জীবন পার করে গেছেন। কিন্তু ইসলামে সম্পত্তির সাথে নেতৃত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং নেতৃত্বের জন্য দরকার জ্ঞান এবং শক্তি। যদি রাজার জ্ঞান না থেকে শুধুই শক্তি থাকে, তাহলে সেই শক্তি ব্যবহার হবে বিরাট অন্যায় ঘটাতে। আর যদি জ্ঞান থাকে, শক্তি না থাকে, তাহলে শুধু জ্ঞান দিয়ে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে না, এবং সে একজন অনুসরণ করার মতো ব্যক্তিত্ব হবে না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ রাসুল ﷺ। তিনি পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও নিয়মিত প্রচণ্ড গরমে মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে নিজে যুদ্ধ করার মতো সবল ছিলেন। মরুভূমিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা এক কথা, আর যুদ্ধের সরঞ্জাম পরে দিনের পর দিন যুদ্ধ করা আরেক কথা। এর জন্য যথেষ্ট শক্ত সামর্থ্য দেহ থাকা দরকার। অথচ আজকে আমরা হাজ্জ করতে গেলে এয়ারকন্ডিশন্ড হোটেল থেকে বের হয়ে মসজিদ পর্যন্ত গিয়েই হাঁপিয়ে যাই। আমরা অনেকেই রাসুলের ﷺ খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়ার সুন্নাহ মানি, যেটা একটা ভুয়া সুন্নাহ। মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে, দিনের বেশিরভাগ সময় বসে থেকে ভুঁড়ি বানাই। অথচ রাসুল ﷺ যে নিয়মিত শারীরিক চর্চা করতেন, নিজেকে শক্ত সামর্থ্য রাখতেন, সেই সুন্নাহ আমরা ভুলে গেছি। যুদ্ধে যাওয়া তো দূরের কথা, মসজিদে দিনে পাঁচবার যাওয়ার মতো স্বাস্থ্যও আমাদের অনেকের নেই।
তাদের নবী তাদেরকে বললেন, “তার নেতৃত্বের প্রমাণ হলো যে, তাদের কাছে তাবুত (সিন্দুক) আসবে, যাতে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রশান্তি, এবং মুসা ও হারুনের অনুসারীদের রেখে যাওয়া কিছু জিনিস। সেটা ফেরেশতারা বয়ে আনবে। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে তাদের জন্য এক বিরাট নিদর্শন রয়েছে, যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।” [আল-বাক্বারাহ ২৪৮] এই তাবুত বা সিন্দুক নিয়ে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে। বাইবেলে এনিয়ে অনেক কাহিনী আছে, যেগুলোর শুদ্ধটা যাচাই করা কঠিন। Arc of Covenant নামে পরিচিত অলৌকিক ক্ষমতার এই সিন্দুকের ইতিহাস রক্তাক্ত। বেশ কয়েকবার এটি হাত বদল হয়েছে এবং যে রাজত্ব এটা জয় করেছে, সেই রাজত্ব শান্তি এবং বিশেষ ক্ষমতা পেয়েছে বলে বাইবেলে অনেক ঘটনা আছে। একারণে এই অলৌকিক সিন্দুকের দখল নিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। তবে মুসলিমদের জন্য এই সব ইতিহাস জানার প্রয়োজন নেই। আমাদের শুধু দেখতে হবে, এই আয়াতে আমাদের উপলব্ধি করার কী রয়েছে। কু’রআন মানুষকে গল্প বলে মনোরঞ্জন করার জন্য পাঠানো হয়নি। কু’রআনের প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি শব্দ বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যেন মানুষ নিজেদের সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারে। আমরা এই আয়াত থেকে উপলব্ধি করতে পারি যে, তালুত-কে যখন নবী রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেন, তখন তারা তা মেনে নিলো না। একজন নবীর নির্দেশ মানতেও তারা রাজি ছিল না। যতক্ষণ না তাদেরকে এই সিন্দুক অলৌকিকভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। এথেকে শেখার হলো, কিছু নেতা থাকবে, যাদেরকে বাইরে থেকে দেখে ধর্মের অনুসারী মনে হবে। কিন্তু যখনই ধর্ম তাদেরকে নিজেদের সম্মান, স্বার্থ বিসর্জন দিতে বলবে, তখনি তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে যাবে। পরিষ্কার প্রমাণ থাকার পরেও তারা সেটা মানতে চাইবে না।
তারপর যখন তালুত তার বাহিনী নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন, তখন তিনি বললেন , “আল্লাহ ﷻ তোমাদেরকে একটি নদী দিয়ে পরীক্ষা করবেন। যে সেই নদী থেকে পান করবে, সে আর আমার দলের নয়। কিন্তু যে সেটার স্বাদ নেবে না, সে আমার দলের। তবে যে এক আঁজলা পান করবে, তার দোষ হবে না।” কিন্তু কয়েকজন বাদে বাকি সবাই পেট ভরে পানি খেলো। তারপর যখন সে এবং তার সাথের বিশ্বাসীরা পার হলো, তখন তারা বলল, “আমাদের কোনো ক্ষমতাই নেই জালুত এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে।” কিন্তু যারা নিশ্চিত ছিল যে তারা আল্লাহর ﷻ সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, তারা বলল,“কত বার এমন হয়েছে যে, ছোট একটা দল বড় বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছে আল্লাহর ﷻ অনুমতিতে। আল্লাহ ﷻ ধৈর্য-নিষ্ঠাবানদের সাথে আছেন।” [আল-বাক্বারাহ ২৪৯] একজন নেতার জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ হলো তার বাহিনীর ভেতরে নিষ্ঠাবান অনুসারীদের চিহ্নিত করা এবং কারা তাকে প্রয়োজনের সময় অনুসরণ করবে না, সেটা আগেভাগেই বের করে ফেলা। এই মানুষগুলোকে যত আগে সম্ভব বাহিনী থেকে বের করে দিতে হবে। না হলে তারা বাহিনীর সম্পদ নষ্ট করবে, মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দেবে, তারপর দরকারের সময় নিজেরা তো পালাবেই, অন্যের মনোবলও ভেঙ্গে দেবে। তালুত তার বাহিনীর মধ্যে কে নিষ্ঠাবান, আর কে বিপদে পড়লে পিঠটান দেবে, সেটা বের করার জন্য তাদেরকে এক পরীক্ষা দিলেন। যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীকে অনেক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। এই যাত্রা পথে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী হলো পানি। বাহিনীর ঘোড়া, উট, গরু, হাতি, মানুষ সবার জন্য পানি দরকার। পানি হলো একটি সেনাবাহিনীর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাই সেনাবাহিনী যখন কোনো নদী বা জলাশয় খুঁজে পায়, তারা যতটুকু পারে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে নেয়। কিন্তু তালুত তার বাহিনীকে এক ভীষণ কঠিন পরীক্ষা দিলেন। চোখের সামনে নদী ভর্তি পানি টলটল করছে, কিন্তু তারা সেই পানি পান করতে পারবে না। এবং তারা সেটা করবে না শুধুই তাদের সেনাপতিকে বিশ্বাস করে, তার প্রতি আনুগত্য দেখানোর জন্য। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের কাছে মনে হয়েছিল যে, সেটা কোনো যৌক্তিক দাবি নয়। বাস্তবতা দেখতে হবে। এখন যুদ্ধ চলছে। সবাই তৃষ্ণার্ত। পানির এত বড় একটা সুযোগ ছেড়ে দেওয়াটা বিরাট বোকামি। এই সব ভেবে তারা সেনাপতির নির্দেশকে অমান্য করলো। এথেকেই বেড়িয়ে পড়লো তাদের মধ্যে কে সত্যিই সেনাপতির প্রতি পুরোপুরি অনুগত, আর কে নিজের প্রবৃত্তির প্রতি অনুগত। যারা এত বড় লোভ, পিপাসার কষ্ট সামাল দিতে পেরেছিল শুধুই সেনাপতির প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে, তারাই ছিল প্রকৃত বিশ্বাসী অনুসারী। তারাই যুদ্ধে এসেছিল সঠিক নিয়ত নিয়ে — আল্লাহর ﷻ সন্তুষ্টি অর্জন এবং নেতার প্রতি আনুগত্যের দায়িত্ববোধ থেকে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, তালুত বলেছিলেন, “কিন্তু যে সেটার স্বাদ নেবে না, সে আমার দলের।” তিনি বলেননি, যে সেটা ‘পান’ করবে না। তিনি তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এক দুই আঁজলা পানি পান পান করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যেটা দেখতে চাইছিলেন সেটা হলো, কে আছে যে নিজের প্রবৃত্তির দাস হয়ে, তার আদেশ অমান্য করে পেট ভরে পানি খাবে। —এথেকেই তার বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি পানি ছুঁয়ে না দেখার অবাস্তব পরীক্ষা দেননি। তার পরীক্ষা ছিল শুধুই মুনাফিক, প্রবৃত্তির দাসদের বাছাই করে ছেঁটে ফেলার পরীক্ষা। এই পরীক্ষা থেকে তালুত বাছাই করে নিলেন সেই সব নিষ্ঠাবান সৈন্যদেরকে, যারা তার সাথে যুদ্ধ করার যোগ্য। তাদেরকে নিয়ে তিনি নদী পার হয়ে যুদ্ধের ময়দানে গেলেন। সেখানে গিয়ে তাদের অনেকে জালুত এবং তার বিশাল বাহিনী দেখে আশা হারিয়ে ফেললো। অনেকেই সেখান থেকে পালিয়ে গেল, এইভেবে যে, দুই বাহিনীর মধ্যে লোকবলের এত বিশাল পার্থক্য থাকলে কোনোভাবেই যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। এটা বরং আত্মহত্যা। কিন্তু তারপরেও তালুতের সাথে কয়েকজন ইস্পাত দৃঢ় মনোবলের সৈন্য ছিলেন, যারা ঈমানের এই ভয়ঙ্কর কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে তালুতের সাথে যুদ্ধে যোগ দিলেন। এরা এক অসাধারণ কথা বললেন— “কত বার এমন হয়েছে যে, ছোট একটা দল বড় বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছে আল্লাহর ﷻ অনুমতিতে।” আমরা অনেক সময় সঙ্ঘবদ্ধ অমুসলিম শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের তুচ্ছ মনে করি। আশা হারিয়ে ফেলি এই ভেবে যে, আমাদের পক্ষে কোনোদিনও ওদের বিরুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। ওদের আছে বিশাল বাহিনী, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, সারা পৃথিবীর অর্থনীতি ওদের দখলে। ইউনাইটেড নেশন্স ওদের কথায় ওঠাবসা করে। ওরা কোনো জায়গায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে সাথে সাথে অন্য দেশগুলোও তাদের সাথে যোগ দেয়। আর এদিকে মুসলিমরা বড়ই একা, বিভক্ত, প্রযুক্তিতে একেবারেই পিছিয়ে, অর্থনীতিতে দুর্বল, সারা পৃথিবীতে অপমানিত, ঘৃণিত। এই দুর্বল বিশ্বাস থেকে আমরা অনেকেই নিজেদের উপর অন্যায় হলে, এমনকি আক্রমণ হলেও প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করি না। কোনো ধরনের প্রতিরোধ করাটা আমাদের কাছে আত্মহত্যার সামিল বলে মনে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটা সময় নষ্ট মনে হয়। কিন্তু এই আয়াতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে অসাধারণ এক শিক্ষা দিয়েছেন। ইতিহাসে এক বার, দুইবার নয়, বহুবার ছোট একটি দল বিরাট বাহিনীকে পরাজিত করেছে, যখন সেই ছোট বাহিনী ইসলাম সমর্থিত উপায়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছে। তালুত-এর যুদ্ধ, বদর-এর যুদ্ধ এগুলো সবই উজ্জ্বল উদাহরণ যে, আল্লাহ ﷻ নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ান। সত্যিকারের ঈমানদার বান্দাদেরকে নিজে সাহায্য করেন। তার সাহায্যে ঈমানদার বান্দারা বিরাট বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেও অলৌকিকভাবে জয়ী হয়। সুতরাং যারা ইসলাম সম্মত আত্মরক্ষামূলক ক্বিতাল বা যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন, তাদের কোনো ভয় নেই। আল্লাহ ﷻ তাদেরকে জয়ী করবেনই। কু’রআনেই সেই অঙ্গীকার রয়েছে। আর যারা ইসলাম সম্মত যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন না, তাদের নিয়ত যতই ভালো থাকুক না কেন, তারা আসলে নিজেরা আত্মহত্যা করে পুরো মুসলিম জাতির জন্য বিরাট ফাসাদ তৈরিতে সহযোগিতা করতে যাচ্ছেন। আয়াতের এই অংশটি উগ্রপন্থী দলরা অপব্যবহার করে মুসলিমদের মিথ্যা আশ্বাস দিতে। তারা তাদের অবৈধ মারামারিতে সরল প্রাণ মুসলিমদের বাগিয়ে নেওয়ার জন্য আয়াতের এই অংশ ব্যবহার করে। আয়াতে এই অংশ কোট করার আগে আমাদেরকে দেখতে হবে, তারা আমাদেরকে যেই যুদ্ধে অংশ নিতে বলছে, তার সাথে এই আয়াতে তালুত-এর যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের কতখানি মিল রয়েছে। এই আয়াতের প্রেক্ষাপটের অনুরূপ অবস্থা তৈরি হয়েছে কি? মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে কি কোনো কাফির বাহিনী যুদ্ধ করতে এসেছে? আমরা কি সত্যিই আত্মরক্ষায় যুদ্ধ করছি? মুসলিম বাহিনীর নেতা কি রাসুল ﷺ এর এক আদর্শ অনুসারী? যিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি নিশ্চয়ই কোনো নবী বা রাসুল নন। তাহলে তিনি কি তালুত-এর মতো একজন মুসলিম রাজা, যাকে আল্লাহ ﷻ এবং রাসুল পরিষ্কার কর্তৃত্ব দিয়েছেন? মুসলিম জাতি কি তার আনুগত্য মেনে নিয়েছে? —এই সব শর্ত পূরণ না করে কেউ এই আয়াতের দোহাই দিয়ে কোনো ধরনের হামলা করতে বললে বুঝতে হবে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজের কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করা। না হয় সে নিজেই ব্যাপক বিভ্রান্ত। ইসলামের সঠিক জ্ঞান তার মধ্যে নেই, অথবা তার ব্যক্তিগত আক্রোশ তাকে অন্ধ করে দিয়েছে। তালুতের সাথে শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়া সেই সম্মানিত বিশ্বাসীরা যুদ্ধে যাওয়ার সময় আল্লাহর ﷻ কাছে সাহায্য চেয়ে যে দু’আ করেছিলেন, সেই দু’আ আল্লাহ ﷻ কু’রআনে সারা মানবজাতির জন্য বাধাই করে রেখেছেন, যা মানুষ যুগ যুগ ধরে কিয়ামত পর্যন্ত পড়ে আল্লাহর ﷻ কাছে সাহায্য চাইবে—
তারপর যখন তারা জালুদ আর তার বাহিনীর সামনে দাঁড়ালো, তারা বলল, “ও আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য-নিষ্ঠা বর্ষণ করুন। আমাদেরকে দৃঢ় পায়ে অবিচল রাখুন। আমাদেরকে কাফিরদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করুন।” [আল-বাক্বারাহ ২৫০] তাদের প্রথম চাওয়া ছিল, أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا “আমাদের উপর সবর বর্ষণ করুন।” أَفْرِغْ হচ্ছে ঢেলে দেওয়া, বোতল ঢেলে খালি করে ফেলা।[৫][১] আল্লাহর ﷻ কাছে তারা শুধু সবর চাইলেন না, বরং বললেন তাদের উপর ক্রমাগত সবর বর্ষণ করে, তাদের অন্তর পূর্ণ করে দিন। যত সবর আছে, সব দিয়ে দিন। —কষ্টের সময় সবর বড়ই প্রয়োজন। আর সবর সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। আমাদের জীবনে যখন কোনো বড় বিপদ আসে, কষ্টে চারিদিকে অন্ধকার দেখতে থাকি, তখন মুরব্বিদেরকে বলতে শোনা যায়, “সবর করো, সব ঠিক হয়ে যাবে।” দেশে-বিদেশে মুসলিমদেরকে মেরে শেষ করে ফেলা হচ্ছে, কু’রআন পোড়ানো হচ্ছে, রাস্তাঘাটে টুপি-দাঁড়িওলা কাউকে দেখলে পেটানো হচ্ছে, আর মসজিদের ইমামদেরকে জুম্মার খুতবায় বলতে শোনা যাচ্ছে, “সবর করেন ভাই সাহেবরা। সব ঠিক হয়ে যাবে। ইসলামের বিজয় নিকটেই—ইন শাআ আল্লাহ।” ব্যাপারটা এমন যে, আমরা ধৈর্য নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে শুধু নামাজ পড়লেই আল্লাহ ﷻ আমাদের হয়ে আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন। এই অত্যন্ত প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোর মূল কারণ হচ্ছে ‘সবর’ শব্দের অর্থ ঠিকমত না জানা এবং কু’রআনের এই আয়াতে ব্যবহৃত বিশেষ কিছু শব্দের অর্থগুলো ঠিকমত না বোঝা। সবর শব্দটির সাধারণত অর্থ করা হয়: ধৈর্য ধারণ করা। কিন্তু সবর অর্থ মোটেও শুধুই ‘ধৈর্য ধারণ করা’ নয় যে, আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব, অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে যাবো, অবস্থার পরিবর্তনে কিছুই করবো না, এই ভেবে যে: একদিন আল্লাহ ﷻ সব ঠিক করে দেবেন। প্রাচীন আরবরা যখন ‘সবর’ বলত, তখন এর মধ্যে কোনো দুর্বলতার ইঙ্গিত ছিল না। প্রাচীন আরব কবি হাতিম আত-তাঈ এর একটি কবিতায়[৭] আছে— তলোয়ার নিয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সবর করলাম, কষ্ট এবং যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল, স্থির হয়ে গেল। আরেকটি কবিতা জুহাইর ইবন আবি সুল্মা[৭] এর লেখা— শক্তিশালী যুদ্ধের ঘোড়ায় চেপে রাজার মেয়ে-জামাইরা যুদ্ধের ময়দানে সবর করল, যখন অন্যরা আশা হারিয়ে ফেলেছিল। উপরের উদাহরণে সবর-এর ব্যবহার দেখলেই বোঝা যায়, সবর মানে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা নয়। সবর এর অর্থ হচ্ছে: প্রতিকূলতার মধ্যে ধৈর্য নিয়ে, লক্ষ্য ঠিক রেখে, অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সুযোগের অপেক্ষা করা।[৫][৭] সবরের তিনটি অংশ রয়েছে: ১) ধৈর্যের সাথে কষ্ট, দুর্ভোগ সহ্য করা, ২) অবস্থার পরিবর্তন করতে গিয়ে কোনো পাপ করে না ফেলা, ৩) আল্লাহর ﷻ আনুগত্য থেকে সরে না যাওয়া।[৪]
তারপর তারা আল্লাহর ﷻ অনুমতিতে ওদেরকে পরাজিত করলেন। দাউদ জালুতকে হত্যা করলেন। আল্লাহ ﷻ তাকে রাজত্ব, প্রজ্ঞা দিলেন, এবং তাকে তিনি যা চাইলেন শেখালেন। যদি আল্লাহ ﷻ কিছু মানুষকে দিয়ে অন্যদেরকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে পৃথিবীতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হতো। কিন্তু আল্লাহ ﷻ বিশ্ববাসীর প্রতি অনেক কল্যাণ করেন। [আল-বাক্বারাহ ২৫১] পৃথিবীতে কোনো জাতি অঢেল ক্ষমতা, সমৃদ্ধি, প্রাচুর্যতে থেকে ন্যায়, নিষ্ঠা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। বেশিরভাগ জাতি কয়েক যুগ যেতে না যেতেই অন্যায়, অশ্লীলতায় ডুবে গেছে। সেটা অমুসলিমদের বেলায় যেমন হয়েছে, মুসলিমদের বেলায়ও হয়েছে। একারণেই আল্লাহ ﷻ মানুষের মধ্যে কিছু দল তৈরি করেন, যারা সেই সমৃদ্ধশালী অন্যায়কারী জাতিগুলোকে পরাজিত করে আবার ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। আরেক জাতি তৈরি হয়। তারপর যুগ পার হয়। একসময় দেখা যায় সেই জাতি নিজেরাই আবার অন্যায়ে ডুবে গেছে। তখন আরেক দল এসে তাদেরকে পরাজিত করে আবার ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। এভাবে ইতিহাসের চাকা ঘুরতে থাকে। আল্লাহ ﷻ যদি এভাবে শক্তিশালী অন্যায়কারী জাতিগুলোকে বার বার পরাজিত না করতেন, তাহলে সারা পৃথিবীতে ব্যাপক অন্যায় ছড়িয়ে পড়তো।
এই হচ্ছে আল্লাহর ﷻ নিদর্শন, যা তিনি তোমার (মুহাম্মাদ সা:) উপর যথাযথভাবে তিলাওয়াত করেন। তুমি অবশ্যই রাসুলদের একজন। [আল-বাক্বারাহ ২৫২] সুত্র: [১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স

কিন্তু তাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হলো, কেউ বিশ্বাস করলো, কেউ অবিশ্বাস করলো — আল-বাক্বারাহ ২৫৩

সেই রাসুলগণ, তাদের কয়েকজনকে আমি অন্যদের থেকে বেশি অনুগ্রহ করেছি। তাদের মধ্যে এমন কয়েকজন আছে, যাদের সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন। এবং তাদের কাউকে তিনি বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। মরিয়মের সন্তান ঈসা-কে আমি পরিস্কার প্রমাণ দিয়েছি এবং পবিত্র রূহ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে তাদের পরে যেসব জাতি এসেছিল, তারা কেউ একে অন্যের বিরুদ্ধে মারামারি করত না, তাদের কাছে পরিস্কার প্রমাণ আসার পরেও। কিন্তু তাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হলো, কেউ বিশ্বাস করলো, কেউ অবিশ্বাস করলো। যদি আল্লাহ চাইতেন, তাহলে তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে মারামারি করত না, কিন্তু আল্লাহ যা চান, তাই করেন। [আল-বাক্বারাহ ২৫৩] যখন রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর কার্টুন আঁকা হয়, তাঁর নামে আজেবাজে কথা ছড়ানো হয়, অপমানজনক চলচ্চিত্র বানানো হয়, তখন কিছু মুসলিমদের রক্ত গরম হয়ে যায়। অনেকেই রাস্তায় বেড়িয়ে অন্য নিরীহ মুসলিমদের গাড়ি, দোকান ভেঙ্গে রাসূলের ﷺ প্রতি তাদের অগাধ ভালবাসার প্রমাণ দেখান। রাসূলের ﷺ শিক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে অ্যাম্বাসি ভাংচুর করেন, যেন যারা রাসূলের ﷺ অপমান করে, তারা আর ভয়ে কখনো এরকম কাজ করার দুঃসাহস না দেখায়। যদিও সেরকম কিছু কোনোদিন হয়নি, বরং যারা এই কাজগুলো করে, তারা আরও বেশি প্রশ্রয় পেয়ে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেছে। মুসলিমরা প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে কয়েক হাজার মানুষ তাদের কথা জানতো। প্রতিক্রিয়া দেখানোর পর সারা পৃথিবীতে সংবাদ শিরোনাম হয়ে তাদের ব্যবসা কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। রাসূলের ﷺ বিরুদ্ধে নোংরামি আরও বেড়ে গেছে। মুসলিমরা তাদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করে রাসূলের ﷺ অপমান গুটি কয়েক মানুষের থেকে কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। তাহলে কী রাসূলের ﷺ অপমান হলে আমরা প্রতিবাদ করব না? অবশ্যই করবো, কিন্তু করার সময় প্রজ্ঞা দেখাতে হবে, মূর্খতা দেখালে হবে না। একইসাথে আমাদের সব নবীর প্রতি নিরপেক্ষ হতে হবে। বহু বছর আগে থেকেই ঈসা ﷻ এর বিকৃতি করে কার্টুন দিয়ে বাজার ভরে গেছে, হলিউডের চলচ্চিত্রগুলোতে তাকে নিয়ে নিয়মিত ব্যাঙ্গ করা হয়। এগুলো নিয়ে মুসলিমদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। ব্যাপারটা এমন যে, ঈসা ﷻ হচ্ছেন খ্রিস্টানদের সমস্যা, মুসলিমদের তাকে নিয়ে কোনো চিন্তা না করলেও চলবে। ঈসা ﷻ এর অপমান হলে তো খ্রিস্টানদের অপমান হয়, মুসলিমদের তাতে কিছু যায় আসে না। অন্য কোনো নবীর সম্মান রক্ষা করা মুসলিমদের ঈমানী দায়িত্ব না। আল্লাহ ﷻ এই আয়াতে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন এনারা সবাই রাসূল। এনাদের কাউকে তিনি একে অন্যের থেকে বেশি অনুগ্রহ করেছেন, কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই রাসূল। পৃথিবীতে প্রথম যেই মানুষের সাথে একাধিকবার মহাজাগতিক যোগাযোগ হয়েছে, তিনি হচ্ছেন মুসা ﷻ| তার সাথে আল্লাহ ﷻ নিজে কথা বলেছেন, কোনো ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া। মানবজাতির সাথে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার সরাসরি যোগাযোগ ইতিহাসে মাত্র তিনবার ঘটেছে।[১১] মরিয়মের সন্তান ঈসা-কে আমি পরিস্কার প্রমাণ দিয়েছি এবং পবিত্র রূহ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। সবচেয়ে বড় অলৌকিক নিদর্শন নিয়ে এসেছিলেন ঈসা ﷻ, যিনি পিতা ছাড়াই জন্ম হয়েছিলেন। তিনি শিশু অবস্থায় মায়ের কোল থেকেই কথা বলতেন, বনী ঈসরাইলদের শিক্ষা দিতেন। তিনি জন্ম হয়েছিলেন তাওরাত এবং ইঞ্জিল-এর হাফিয অবস্থায়। তাকে অন্য রাসূলের ﷺ মত বহু বছর ধরে ফেরেশতার মাধ্যমে ওহী পেয়ে কষ্ট করে মুখস্ত করে হাফিয হতে হয়নি। আল্লাহ ﷻ তাঁকে তাওরাত এবং ইঞ্জিল দুটোই শিখিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। শিশুকাল থেকেই তিনি বনী ঈসরাইলের গুরুদের তাওরাতের বোঝায় ভুল ধরিয়ে দিতেন। তিনি অসুস্থকে সুস্থ করে দিয়েছেন, অন্ধকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন, এমনকি মৃতকে জীবিত করে দিয়েছিলেন আল্লাহর ﷻ ইচ্ছায়। তিনিই একমাত্র রাসূল ﷺ যিনি মারা যাননি, যাকে আল্লাহ ﷻ উঠিয়ে নিয়ে নিজের সান্নিধ্যে রেখেছেন। এই সব রাসূলদের ﷺ আল্লাহ ﷻ বিরাট সম্মান দিয়েছেন। কিন্তু মুসলিমরা আজকে তাদেরকে কতখানি সম্মান দেয়? প্রতিনিয়ত তাদের অপমান করে কার্টুন, চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে, জঘন্য কালিমা দিয়ে বই লেখা হচ্ছে। চোখে পড়ার মত প্রতিবাদ করতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এই আয়াতে আল্লাহ ﷻ রাসুলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ কে শেখাচ্ছেন যে, তিনি সেই সব মহাসম্মানিত অতিমানবদের প্রতিনিধি। তাঁকে আল্লাহ ﷻ অনেক বড় সম্মান দিয়েছেন শেষ নবী হিসেবে পাঠিয়ে। মুসা ﷺ এবং ঈসা ﷺ এর মত মহাসম্মানিত পুরুষদের থেকেও তিনি বেশি সম্মান পেয়েছেন, কারণ তিনি এসেছেন কুর’আন নিয়ে, যা সারা মানবজাতির জন্য সারা জীবন পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে। তাঁর সাথে আল্লাহ ﷻ নিজে কথা বলেছেন, যেরকম কিনা মুসা ﷺ এর সাথে কথা বলেছিলেন। তাকে ঈসা ﷺ এর মত অলৌকিক কাজ করে দেখানোর ক্ষমতা দিয়েছেন। একইসাথে তাকে এবং আমাদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি দিয়েছেন যে— যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে তাদের পরে যেসব জাতি এসেছিল, তারা কেউ একে অন্যের বিরুদ্ধে মারামারি করত না, তাদের কাছে পরিস্কার প্রমাণ আসার পরেও। এখান থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসুলদের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সব মানুষকে সারা জীবনের জন্য পাকা মুসলিম বানিয়ে ফেলা আল্লাহর ﷻ উদ্দেশ্য নয়। যদি আল্লাহ ﷻ চাইতেন, তাহলে তিনি ﷻ অবশ্যই এমন কিছু করতে পারতেন যে, কোনোদিন কেউ কোনো ধরনের মতপার্থক্য তৈরি করতে পারত না। তাদের তিনি ﷻ বাধ্য করতে পারতেন, যেন তারা সবাই ধর্মের সব ব্যাপারে একমত হয়ে বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো। কিন্তু আল্লাহর ﷻ ইচ্ছা ছিল না মানুষকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলা, যেন মানুষ কোনো ধরনের মতপার্থক্য করার সুযোগ না পেয়ে সবসময় পাকা মুসলিম হয়ে থাকতে বাধ্য হয়ে যায়। যদি তাই হতো, তাহলে এই দুনিয়াটা আর কোনো পরীক্ষা থাকত না। জান্নাতে যাওয়াটা আর কোনো অর্জন হতো না। সবাই জান্নাতের ফ্রি টিকিট পেয়ে যেত। মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে, মতপার্থক্যের ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে, মানুষকে ধর্মের সব ব্যাপারে একমত করতে বাধ্য করাটা আল্লাহর ﷻ ইচ্ছা নয়। আল্লাহ কোনো স্বৈরাচারী শাসক নন। তিনি মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন, বিবেক এবং পথনির্দেশ দিয়েছেন ভালো-মন্দ বোঝার জন্য।[৮] তিনি মানুষকে একে অন্যের ক্লোন হিসেবে তৈরি করেননি। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে স্বতন্ত্রতা, স্বকীয়তা, নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা আছে। মানুষের কাজ হচ্ছে নিজ নিজ স্বতন্ত্রতাকে ধরে রেখে, সেটাকে ঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে মানবজাতির জন্য অবদান রেখে যাওয়া।[৬] অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন আল্লাহ ﷻ এমন কিছু করলেন না, যেন ধর্মের মধ্যে এত বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, এত মাযহাব তৈরি না হয়, কুর’আন, হাদিসের এত ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি না হয়? কেন আল্লাহ ﷻ সাধারণ মানুষকে এত সমস্যার মধ্যে ফেলে দিলেন? চারিদিকে এত মত, এত দল, কুর’আনের এত ধরনের ব্যাখ্যা, হাদিস নিয়ে এত সন্দেহ, আলিমদের মধ্যে এত মারামারি — সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল? আল্লাহ ﷻ কেন এতসব সমস্যা তৈরি হতে দিলেন? ধর্ম নিয়ে মানুষ যখন এধরনের প্রশ্ন করে, তখন তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আপনি যা চান সেটা হতে হলে সমাধান কী হবে? শুধু কোনো কিছু চাইলেই হবে না, সমাধান দিতে হবে। তারপর সেই সমাধান নিয়ে চিন্তা করলেই বের হয়ে যাবে সেই সমাধানে কত সমস্যা আছে। যেমন, যদি আমরা ধর্মের মধ্যে কোনো ধরনের মতপার্থক্য তৈরি করার সুযোগ হতে দিতে না চাই, তাহলে সমাধান হচ্ছে— ১) পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে কুর’আন এবং হাদিস পড়ে ঠিক একই উপলব্ধি পেতে হবে, সামান্যতম এদিক ওদিক হওয়া যাবে না। প্রত্যেক মানুষের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা একই হতে হবে, যেন সবাই একই সিদ্ধান্ত এবং উপলব্ধিতে পৌঁছে। ২) পৃথিবীর কোনো মানুষ যেন কুর’আন বা হাদিসের কোনো ব্যাখ্যা লিখতে না পারে, যাতে করে কোনো ধরনের মত পার্থক্য তৈরি হওয়ার সুযোগ হয়। লিখলেও প্রতিটা মানুষ ঠিক একই কথা লিখবে। কেউ ভিন্ন কিছু লিখতে গেলেই তার হাত অচল হয়ে যাবে। ৩) পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ, সমাজ, জাতির অবস্থা ঠিক একইরকম হতে হবে, যেন কুর’আন এবং হাদিস প্রতিটি মানুষ, সমাজ এবং জাতির বেলায় ঠিক একইভাবে প্রযোজ্য হয়। ৪) পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষকে স্বার্থহীন, সৎ হতে হবে, যেন কেউ নিজের স্বার্থে কোনো ধরনের উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা দিতে না পারে। আমরা একটু চিন্তা করলেই দেখতে পারি, কেন উপরের একটিও হওয়া সম্ভব নয়। (১) হওয়া সম্ভব নয়, কারণ মানুষ রোবট না। মানুষের চিন্তা ভাবনা অত্যন্ত জটিল, প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, প্রত্যেকের চিন্তার গভীরতা, আবেগের মাত্রা ভিন্ন। একারণে দুটো মানুষের চিন্তাভাবনা কখনই সবসময় একই রকম হবে না। যেমন, যদি দশ জন মানুষকে বলা হয়, “কালকে দমকা হাওয়া সহ ভারি বৃষ্টি হবে”, কেউ ভাববে কালকে এমন বৃষ্টি হবে যে, রাস্তায় হাঁটু পানি হয়ে যাবে। কেউ ভাববে কালকে ভারি বৃষ্টি হলেও পানি জমবে না, সুতরাং স্কুল, কলেজ, অফিস খোলা থাকবে। সুতরাং একজন ফাতওয়া দিবে যে, কালকে বাসার বাইরে বের হওয়া যাবে না। অন্যজন ফাতওয়া দিবে যে, কালকে বাসার বাইরে বের হতে হবেই, স্কুল, কলেজ, অফিস সব খোলা রাখতে হবে। দুই ফাতওয়ার সমর্থকদের মধ্যে শুরু হবে দ্বন্দ্ব। একদল আরেকদলকে উগ্রপন্থি বলবে, উগ্রপন্থি দল অন্যদলকে সরকারের চামচা বলবে। সাধারণ মানুষ পড়ে যাবে বিপাকে। পরিস্কার ভাষায় ‘ভারি বৃষ্টি’ বলার পরেও একেক মানুষ সেটাকে একেকভাবে নেবে। যদি দশটা রোবটকে এই কথা বলা হতো, তাহলে দশটা রোবট ঠিক একইভাবে বুঝত। কিন্তু মানুষ রোবট না। এই যদি হয় বৃষ্টির মত একটা সাধারণ ব্যাপারে মতপার্থক্য, তাহলে ধর্মের মত এত জটিল ব্যাপারে মত পার্থক্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। এমনটা নয় যে, শুধু ধর্ম নিয়েই মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য। বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সুত্র, আবিস্কার, পর্যবেক্ষণ নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য আছে। বিগ ব্যাংগ-এর সমর্থকদের ইনফ্লেশন থিওরির সমর্থকরা জোরালো ভাষায় মূর্খ বলে দাবি করে। ইনফ্লেশনের সমর্থকদের বিগ ব্যাংগ -এর সমর্থকরা পাগল বলে দাবি করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে বহু রোগের কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে চুলাচুলি অবস্থা। একজন আরেকজন ভুল প্রমাণ করে পেপার লিখে, তখন আরেকজন অন্যজনকে ভুল প্রমাণ করে পেপার লেখে। দুই পক্ষই কীভাবে যেন পিএইচডি পেয়ে যায়। মানুষের যেই বিষয়েই জ্ঞান আছে, সেই বিষয়েই মতপার্থক্য আছে। (২) হওয়া সম্ভব না, কারণ তাহলে কেউ যখনি কুর’আন বা হাদিস নিয়ে চিন্তা করতে যাবে, তার চিন্তাভাবনা আটকে দিতে হবে। লিখতে গেলে হাত অচল করে দিতে হবে। মানুষকে কুর’আন বা হাদিস নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তা করতে দিলে, লিখতে দিলে ভিন্ন ভিন্ন অনুবাদ, বুঝ আসবেই, কারণ মানুষের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, পক্ষপাতিত্ব থাকবেই। কুর’আন এবং হাদিসকে দেওয়া হয়েছে পথপ্রদর্শক বা গাইড (আরবিতে আল-হুদা) হিসেবে, যেন মানুষ তার পরিস্থিতি অনুসারে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতির উপযোগী সমাধান বের করে নিতে পারে। যেমন, কুর’আন, হাদিস বা চার ইমামদের মাযহাবে কোথাও ট্রাফিক আইন নেই। তাই বলে কি মুসলিম দেশে কোনো ট্রাফিক আইন থাকবে না? অমুসলিম বা কুফরিতে জর্জরিত সরকার ট্রাফিক আইন দিলে সেটা মুসলিমরা বর্জন করবে? তারা নিজেদের ইচ্ছেমত যেভাবে ইচ্ছা গাড়ি চালাবে? —কিছু মুসলিম দলের কাছে কুর’আন, সুন্নাহ’র বাইরে মানুষের বানানো যে কোনো ধরনের আইন হচ্ছে তাগুত-এর আইন, যা মানতে তারা বাধ্য তো নয়ই বরং সেই আইন না মানাই ঈমানী দায়িত্ব। কিন্তু বেশিরভাগ মতবাদ অনুসারে শারিয়াহ’র সাথে সংঘর্ষ নেই এবং মানুষের কল্যাণ, নিরাপত্তার জন্য নির্ধারিত সব আইন সম্পূর্ণ ইসলাম সম্মত এবং মুসলিমরা মানতে বাধ্য। ট্রাফিক আইন, কপিরাইট আইন এগুলো সব মানতে মুসলিমরা বাধ্য।[৩৮৫][৩৮৬] সুতরাং মানুষের উপলব্ধিতে পার্থক্য থাকবেই। এই পার্থক্যের কারণ হচ্ছে মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা, যা আল্লাহই মানুষকে দিয়েছেন।[৩] (৩) হওয়া সম্ভব না, কারণ প্রতিটি মানুষ যদি ক্লোন হতো, প্রত্যেকে একে অন্যের হুবহু কপি হতো, ঠিক একই চিন্তাভাবনা করত, তারপরেও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বসবাসের কারণে, পরিস্থিতির ভিন্নতার জন্য মানুষ ভিন্নভাবে চিন্তা করতে বাধ্য হতো। চিন্তার ভিন্নতা থেকে মতপার্থক্য আসবে, মানুষ ধর্মীয় পথনির্দেশকে নিজের পরিস্থিতির মত করে বুঝে নেবে। যদি মানুষের মধ্যে চিন্তার ভিন্নতা না থাকত, সব পরিস্থিতিতে যদি মানুষ একই চিন্তা করত, একই সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করত, তাহলে মানুষ টিকে থাকতে পারত না। মানবজাতির টিকে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে চিন্তার পার্থক্য, সৃজনশীলতা।[৬] (৪) হওয়া সম্ভব না, কারণ মানুষ ফেরেশতা না। এমনকি ফেরেশতারাও ভিন্ন ভিন্নভাবে চিন্তা করে। ফেরেশতারা রোবট না। তাদের মধ্যেও আল্লাহর ﷻ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়, তারা তাদের ‘চিন্তা’ গোপন রাখে, যেমন কিনা আমরা আদম-এর সৃষ্টির আয়াতে দেখেছি। তাহলে মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য তো হবেই। “কিন্তু তাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হলো, কেউ বিশ্বাস করলো, কেউ অবিশ্বাস করলো।” মানুষের মধ্যে মারামারি, মতপার্থক্য এমনিতেই হয়নি। এটা আল্লাহর ﷻ ইচ্ছার অধীনেই হয়েছে। আল্লাহ ﷻ মানুষকে তৈরি করেছেন তাঁর ﷻ পথনির্দেশ গ্রহণ বা বর্জন করার ক্ষমতা দিয়ে। তিনি মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন একাধিক পথের মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে। এর মানে এই নয় যে, মতপার্থক্য আল্লাহ ﷻ পছন্দ করেন। আল্লাহর পথনির্দেশ না নেওয়া, মতবিরোধ করা আল্লাহ মোটেও পছন্দ করেন না, এবং তিনি কুর’আনে কয়েকটি আয়াতে সেটা জানিয়েছেন।[১৭] কিন্তু মানুষের মধ্যে যে গুণের পার্থক্য, চিন্তাভাবনার স্বতন্ত্রতা, মেধা, আবেগের পার্থক্য — এগুলো সবই আল্লাহর ﷻ ডিজাইন। মানুষকে পৃথিবীতে যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে, তা পালন করার জন্য মানুষের মধ্যে এত বৈচিত্র্যতা থাকতে হবেই। সভ্যতার উন্নয়ন, প্রযুক্তির বিকাশ, দুর্যোগ মোকাবেলা —এসবের জন্য দরকার মানবীয় গুণাবলীর মধ্যে পার্থক্য, চিন্তার পার্থক্য, চিন্তার স্বাধীনতা। ধর্মীয় ব্যাপারে মতপার্থক্য হচ্ছে এই সব প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে যে সমস্যা তৈরি হয়, সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য আল্লাহ ﷻ মানবজাতির কাছে নবী পাঠান, যেন মানবজাতি সঠিক পথ থেকে দূরে চলে গেলে, নবীর সাহায্যে আবার সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। যারা সৎ, নিষ্ঠাবান, তারা আল্লাহর ﷻ ইচ্ছায় সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। যারা স্বার্থপর, লোভী, অন্যায়কারী, তারা আল্লাহর ﷻ ইচ্ছাতেই পারে না সঠিক পথে ফিরে আসতে। এভাবেই ন্যায় বিচার হয়, মানুষ ন্যায়বিচার পায় এবং আল্লাহ ﷻ মানুষের প্রতি ন্যায় বিচার করেন। “আল্লাহ ﷻ মানুষের প্রতি কখনোই বিন্দুমাত্র অন্যায় করেন না, বরং মানুষই নিজের প্রতি অন্যায় করে।” — সুরাহ ইউনুস ১০:৪৪ সুত্র: [১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স [৩৮৫] Ruling on buying copied computer programs – islamqa.info. (2016). Islamqa.info. Retrieved 4 October 2016, from https://islamqa.info/en/81614 [৩৮৬] Ruling on avoiding paying penalties and fines for traffic infractions – islamqa.info. (2016). Islamqa.info. Retrieved 4 October 2016, from https://islamqa.info/en/130222

মুসলিম রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিমালা




  ২২টি ধারা, যার উপর স্বীকৃত সকল ইসলামী দল একমত  

ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধানে নিম্নবর্ণিত বিধানাবলির সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকা আবশ্যক।
১. একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনই বিধানদাতা। প্রকৃতির বিধান তো তাঁরই, মানবজাতির জীবনযাপনের বিধানও একমাত্র তিনিই দান করতে পারেন।
২. রাষ্ট্রের সকল বিধি-বিধানের ভিত্তি হবে কুরআন-সুন্নাহ। কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না এবং কোনো ব্যবস্থাপনাগত বিধানও কুরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী হতে পারবে না।
৩. রাষ্ট্র কোনো শ্রেণী, ভাষা, ভূ-খন্ড বা এ জাতীয় কোনো চেতনার ভিত্তিতে গঠিত হবে না। রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হবে সেই সব বিধান ও লক্ষ্য, যার বুনিয়াদ ইসলামপ্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা।
৪. ইসলামী রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য হবে কুরআন-সুন্নাহয় নির্দেশিত ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও অসত্যের মূলোৎপাটন। ইসলামের শিআর ও নিদর্শনসমূহের স্বমহিমায় পুনরুজ্জীবন এবং স্বীকৃত ইসলামী দলগুলোর জন্য তাদের নিজস্ব মতাদর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা।
৫. ইসলামী রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্য হবে, বিশ্ব মুসলিমের সাথে ঐক্য ও একাত্মতাকে সুদৃঢ় করা এবং রাষ্ট্রের মুসলিম অধিবাসীদের মাঝে জাহহেলিয়াতের বিভেদ-বিভাজনের প্রেরণা যথা-বংশ, ভাষা, অঞ্চল ও অন্যান্য পার্থিব বৈশিষ্ট্যভিত্তিক বিভেদ-চেতনার পথ রুদ্ধ করে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. রাষ্ট্র জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এমন সকল নাগরিকের অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার দায়িত্বশীল হবে, যারা উপার্জনে সক্ষম নয়, কিংবা কর্মহীনতা বা অন্য কোনো কারণে বর্তমানে আয়-উপার্জনে অক্ষম।
৭. রাষ্ট্রের নাগরিকগণ ইসলাম প্রদত্ত সকল অধিকার লাভ করবেন। অর্থাৎ আইনী সীমারেখার মধ্যে জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, ইবাদত ও উপাসনার অধিকার, ব্যক্তি-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের অধিকার, নিরাপদে চলাচলের অধিকার, সভা-সমাবেশের অধিকার, আয়-উপার্জনের অধিকার, উন্নতির ক্ষেত্রগুলোতে সমতা এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণের অধিকার।
৮. উপরোক্ত কোনো নাগরিক অধিকার ইসলামী আইনের বৈধ সনদ ছাড়া কোনোভাবেই হরণ করা যাবে না। কোনো অপরাধের অভিযোগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ও আদালতের রায় ছাড়া কোনো প্রকারের শাস্তি দেওয়া যাবে না।
৯. স্বীকৃত ইসলামী দলগুলো আইনের ভেতর থেকে সম্পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। অনুসারীদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের অধিকার তাদের থাকবে। তারা তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রচার করতে পারবে। তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান তাদের ফিকহী মাযহাব অনুযায়ী হবে এবং এ রকম ব্যবস্থাও উপযোগী হবে যে, তাদের বিচারকই এই ফয়সালা করবেন।
১০. রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদেরও আইনের মধ্যে থেকে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তাদের নিজস্ব সমস্যার সমাধান তাদের ধর্মীয় বিধান ও প্রথা অনুযায়ী করার অধিকার থাকবে।
১১. রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদের সাথে শরীয়তের গন্ডির মধ্যে যে সব চুক্তি করা হয়েছে তা মেনে চলা অপরিহার্য। ৭ নং ধারায় যে সব নাগরিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, দেশের অমুসলিম নাগরিকরাও তা সমানভাবে লাভ করবেন।


১২. রাষ্ট্রপ্রধানকে অবশ্যই মুসলিম পুরুষ হতে হবে, যার সততা, যোগ্যতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সম্পর্কে নাগরিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা (আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদি) আস্থাশীল থাকবেন।
১৩. রাষ্ট্রপ্রধানই হবেন রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলার মূল দায়িত্বশীল। তবে তিনি তার দায়িত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নিকট অর্পণ করতে পারবেন।
১৪. রাষ্ট্রপ্রধানের রাষ্ট্র পরিচালনা একনায়কসূলভ হবে না। বরং তা হবে শূরা ভিত্তিক অর্থাৎ তিনি শূরার সদস্য ও মনোনীত প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করে তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।
১৫. রাষ্ট্রপ্রধান সম্পূর্ণ সংবিধান বা তার অংশবিশেষ বাতিল করে শূরাবিহীন রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকারী হবেন না।
১৬. যারা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন তারা অধিকাংশের মতের ভিত্তিতে তাকে অপসারণের ক্ষমতাও সংরক্ষণ করবেন।
১৭. নাগরিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান সাধারণ মুসলমানদের সমপর্যায়ের হবেন এবং আইনের জবাবদিহিতার উর্ধ্বে হবেন না।
১৮. সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং সাধারণ নাগরিক সবার জন্য অভিন্ন আইন ও নীতি প্রযোজ্য হবে এবং উভয় শ্রেণীর উপর সাধারণ আদালতই তা কার্যকর করবে।
১৯. বিচার বিভাগ প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বাধীন থাকবে, যাতে বিচারিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের দ্বারা প্রভাবিত না হয়।
২০. এমন কোনো মতবাদ ও
চিন্তাধারা প্রচার নিষিদ্ধ থাকবে, যা ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি ও আদর্শ ধ্বংসের কারণ হয়।
২১. রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশ ও বিভাগ একই রাষ্ট্রের প্রশাসনিক অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। গোষ্ঠি, ভাষা বা বংশভিত্তিক আলাদা আলাদা অংশ নয়। শুধু ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কার্যনির্বাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা বৈধ হবে। তারা কখনো কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার লাভ করবে না।
২২. সংবিধানের এমন কোনো ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে না, যা কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী।
 
[হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম রচিত ‘ইসলাম আওর সিয়াসী নযরিয়াত’ থেকে গৃহীত ও অনূদিত। অনুবাদ : মাওলানা আনসারুল্লাহ হাসান]

বেরলভী মতবাদ : ভিত্তিহীন আকীদা ও ভ্রান্ত ধ্যানধারণা




বেরলভী[1]জামাত যাদেরকে রেজাখানী বা রেজভীও বলা হয়, যারা নিজেদেরকে সুন্নী বা আহলে সুন্নাত বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। তাদের অনেক ভিত্তিহীন আকীদা, ভ্রান্ত ধ্যানধারণা ও মনগড়া রসম-রেওয়ায রয়েছে। খুব সংক্ষেপে তার একটি তালিকা এখানে তুলে ধরা হল।

ভিত্তিহীন আকীদা
১. গায়রুল্লাহর জন্য ইলমে গায়েবের আকীদা
আহলে হকের আকীদা হচ্ছে, আলিমুল গাইব অর্থাৎ অদৃশ্য জগতের বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞাত একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তাঁর জন্য অদৃশ্য বলতে কিছুই নেই। দৃশ্য-অদৃশ্যের পার্থক্য মাখলুকের জন্য। আল্লাহ সমানভাবে আলিমুল গাইব ও আলিমুশ শাহাদাহ। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সবকিছুই তাঁর কাছে প্রকাশ্য। ইলমে যাতী  ও ইলমে মুহীত তথা নিজস্ব ও সর্বব্যাপী ইলম একমাত্র আল্লাহ পাকেরই। আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নয়। তবে নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে অদৃশ্য জগতের বহু জ্ঞান দান করেছেন। আর নবীগণের মধ্যে সাইয়েদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খাতামাতুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাকাম এ বিষয়ে সকলের ঊর্ধ্বে। আল্লাহ পাক তাঁকে যে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন সমষ্টিগতভাবে অন্য কোনো রাসূলকেও তা দান করা হয়নি। কিন্তু এরপরও এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলিমুল গাইব ছিলেন বা “ভবিষ্যতে যা হবে ও অতীতে যা হয়েছে সকল বিষয়ে তিনি জ্ঞাত ছিলেন। তাঁর সামনে যা ঘটত তা যেমন তিনি জানতেন, দূরের-কাছের অন্য সবকিছুই জানতেন; যা ওহী আসত তা যেমন জানতেন, যা ওহী হত না তাও তেমনি জানতেন”!! কারণ, এ তো হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর বিশেষ সিফাতের মধ্যে শরীক করা এবং কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিরুদ্ধাচরণ। কেননা কুরআনে কারীম থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, আলিমুল গাইব একমাত্র আল্লাহ পাকেরই গুণবাচক নাম। তেমনি অসংখ্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, অতীত ও ভবিষ্যতের অনেক কিছু আল্লাহ পাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাননি। কারণ, ঐসব বিষয় তার নবুওত ও রেসালাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। যেমন কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত কোনো আয়াত বা সূরা তাঁর কাছে ওহীরূপে আসার পূর্বে তা তাঁর জানা ছিল না। উল্লেখিত সহীহ আকীদার উপর মাওলানা মনযূর নোমানী রাহ. লিখিত ‘বাওয়ারিকুল গায়েব’গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে একটি দুটি নয়, চল্লিশটি আয়াতে কারীমা অনুবাদ ও ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ঐ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে উপরোক্ত সহীহ আকীদার পক্ষে একশ পঞ্চাশ খানা হাদীস অনুবাদ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া এই বিষয়ে হযরত মাওলানা সরফরায খান সফদার রাহ.-এর কিতাব ‘ইযালাতুর রাইব আন ইলমিল গাইব’ তো আলেমদের হাতে আছেই।

উল্লেখিত ঈমানী আকীদার সম্পূর্ণ বিপরীত বেরলভীদের আকীদা  হচ্ছে- দৃশ্য-অদৃশ্য সকল কিছুর ইলম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেয়া হয়েছে। একই সাথে অতীতে যা কিছু হয়েছে ও কিয়ামত পর্যন্ত ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সব বিষয়ে তিনি সম্যক অবগত ছিলেন! সৃষ্টির সূচনা থেকে জান্নাত জাহান্নামে প্রবেশ পর্যন্ত সামান্যতম বিষয়ও তার জ্ঞানের বহির্ভূত ছিল না। উক্ত বাতিল আকীদা প্রচারের জন্য স্বয়ং আহমদ রেযা খান একাধিক বই লিখেছে। যেমন ‘ইম্বাউল মুস্তফা’ ও ‘আদ দাওলাতুল মাক্কিয়াহ বিল মাদ্দাতিল গাইবিয়্যাহ’। আরো দেখা যায়, প্রসিদ্ধ বেরলভী আলেম মৌলভী নাঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী  রচিত ‘আলকালিমাতুল উল্য়া’ পৃ. ৩, ৪৩, ও ৬৩। এবং কাজী ফযল আহমদ লুধিয়ানভী রচিত ‘আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত’ পৃ. ১৩৭





২. হাযির-নাযির শীর্ষক আকীদা
পরিভাষায় হাযির-নাযির ঐ সত্তাকে বলে যার শক্তি ও জ্ঞান সর্বাবস্থায় সকল স্থানকে বেষ্টন করে আছে। কোনো কিছু তাঁর ইলম ও কুদরতের বাইরে নয়। তিনি সকল কিছু দেখেন। কোনো কিছুই তাঁর দৃষ্টির আড়ালে থাকতে পারে না। এমন সত্তা একমাত্র আল্লাহ তাআলা । এটি অতি  স্পষ্ট ও অকাট্য এবং কুরআন-হাদীসের অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এ কারণে উল্লেখিত অর্থে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে হাযির-নাযির মনে করা সুস্পষ্ট ভ্রান্তি ও শিরকী আকীদা। এই আকীদার ভ্রান্তি ও ভিত্তিহীনতা বোঝার জন্য দেখা যেতে পারে মাওলানা সরফরায খান লিখিত কুরআন ও হাদীসের দলীলসমূহের এক উত্তম সংকলন ‘তাবরীদুন নাওয়াযির ফী তাহকীকিল হাযির ওয়ান নাযির’।
কিন্তু আফসোস, বেরলভীরা উল্লেখিত শিরকী আকীদার প্রবক্তা। তারা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই নয়, বুযুর্গানে দ্বীনকেও হাযির-নাযির মানে।
মশহুর বেরলভী আলেম আহমদ ইয়ার খান লিখেন,
عالم میں حاضر و ناظر کے شرعی معنی یہ ہے کہ قوت قدسیہ والا ایک ہی جگہ رہ کر تمام عالم کو اپنے کف دست کی طرح دیکھے اور دور و قریب کی آوازیں سنے یا ایک آن میں تمام عالم کو سیر کرے اور صدہا کوس پر حاجت مندوں کی حاجت روائی کرے، یہ رفتار خواہ صرف روحانی ہو یا جسم مثالی کے ساتھ ہو یا ایسی جسم سے ہو جو قبر میں مدفون ہو یا کسی  جگہ موجود ہے ان سب معنے کا ثبوت بزرگان دین کے لۓ قرآن و احادیث اور اقوال علماء سے ہے. (جاء الحق ج১ ص ১৩১ )
অর্থাৎ, জগতে হাযির-নাযির থাকার শরয়ী অর্থ হচ্ছে, পবিত্র শক্তির অধিকারী কোনো সত্তা একই স্থানে অবস্থান করে সমস্ত দুনিয়াকে নিজের হাতের তালুর মত দেখেন। দূরের ও কাছের সমস্ত আওয়ায শোনেন। আবার মুহূর্তের মাঝে সমস্ত পৃথিবী ভ্রমণ করতে পারেন। শত শত মাইল দূর থেকে প্রয়োজনগ্রস্তের প্রয়োজন পূরণ করেন। এ ভ্রমণ শুধু রুহানীভাবে হোক অথবা মিছালী দেহের সাথে, অথবা এমন দেহের সাথে যা কোনো কবরে সমাহিত বা কোনো স্থানে মওজুদ। হাযির-নাযিরের উল্লেখিত অর্থ কুরআন হাদীস ও উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে বুযুর্গানে দ্বীনের জন্য প্রমাণিত। (জা-আল্ হক, আহমদ ইয়ার খান, খ. ১ পৃ. ১৩১ )
সম্মানিত পাঠক লক্ষ করুন, উল্লেখিত ভ্র্রান্ত আকীদাকে কীভাবে কুরআন হাদীস ও উলামায়ে কেরামের উক্তির উপর আরোপ করে দেওয়া হল,
سُبْحٰنَكَ هٰذَا بُهْتَانٌ عَظِیْمٌ.




৩. মোখতারে কুল শীর্ষক আকীদা
ইসলামের সুস্পষ্ট ও সর্বজন বিদিত একটি আকীদা, যার পক্ষে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণাদী ছাড়াও অনেক আয়াত ও হাদীসের স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, তা এই যে, সৃষ্টিজগতের সকল কিছুর মালিক-মোখতার একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল  আলামীন। কিন্তু বেরলভী জামাতের আকীদা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে  মোখতারে কুল মনে করে।
 আহমদ রেযা খান লিখেছেন,
حضور ہر قسم کی حاجت روائی فرما سکتے ہیں، دنیا و آخرت کی مرادیں سب حضور کے اختیار میں ہیں. (برکات الإمداد لأهل الاستمداد ص (৮০
অর্থাৎ হুযুর সকল প্রকার প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম। দুনিয়া-আখিরাতের সকল মকসুদ ও উদ্দেশ্য তাঁরই ইখতিয়ারাধীন। -বারাকাতুল ইমদাদ লিআহলিল ইসতিমদাদ, আহমদ রেযা খান পৃ. ৮
আরো বলেছেন-
رب العزۃ جل جلالہ نے اپنے کرم کے خزانے اپنی نعمتوں کے خوان حضور کے قبضے ميں دۓ جس کو چاہیں دیں اور جس کو چاہیں نہ دیں ، کوئی حکم نافذ نہیں ہوتا مگر حضور کے دربار سے، کوئی نعمت کوئی دولت کسی کو کبھی نہیں ملتی مگر حضور کی سرکار  سے صلے اللہ علیہ و سلم   ( ملفوظات ج ৪ ص ৭০-৭১ )
অর্থাৎ মহাপরাক্রমশালী প্রভু আপন দানের ভা-ার নিআমতের খাযানা হুযুরের কব্জায় দিয়ে দিয়েছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা দিবেন যাকে ইচ্ছা দিবেন না। সমস্ত ফায়সালা কার্যকর হয় একমাত্র হুযুরের দরবার থেকেই। আর যে কেউ যখনই কোনো নিআমত কোনো দৌলত পায় তা পায় হুযুরের রাজ-ফরমান থেকেই। -মালফুজাত, আহমদ রেযা খান খ. ৪ পৃ. ৭০-৭১
আহমদ রেযা খান সাহেবের উপরোক্ত বাক্যগুলো পড়–ন, এরপর কুরআনে কারীমের আয়াতসমূহের উপর চিন্তা করুন। দেখুন কুরআন কী বলে আর আহমদ রেযা খান সাহেব কী বলেন!



قُلْ اِنَّمَاۤ اَدْعُوْا رَبِّیْ وَ لَاۤ اُشْرِكُ بِهٖۤ اَحَدًا قُلْ اِنِّیْ لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّ لَا رَشَدًا قُلْ اِنِّیْ لَنْ یُّجِیْرَنِیْ مِنَ اللهِ اَحَدٌ وَّ لَنْ اَجِدَ مِنْ دُوْنِهٖ مُلْتَحَدًا اِلَّا بَلٰغًا مِّنَ اللهِ وَ رِسٰلٰتِهٖ ؕ وَ مَنْ یَّعْصِ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ فَاِنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاۤ اَبَدًا.
বলে দাও, আমি তো কেবল আমার প্রতিপালকের ইবাদত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না। বলুন, আমি মালিক নই তোমাদের ক্ষতি সাধনের আর না সুপথে আনয়নের। বলে দাও, আল্লাহ থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না আর আমিও তাকে ছাড়া আর কোনো আশ্রয়স্থল পাব না। অবশ্য (আমাকে যে জিনিসের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, তা হল) আল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা পৌঁছানো ও তাঁর বাণী প্রচার। কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্যতা করলে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। যেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। -সূরা জিন (৭২) : ২০-২৩
২.    قُلْ لَّا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَائِنُ الله.ِ
বলুন, আমি তোমাদের বলি না যে, আমার কাছে রয়েছে আল্লাহর ভা-ারসমূহ। -সূরা আনআম (৬) : ৫০
 ৩.   قُلْ لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَّبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُون.َ
বলুন, আমি আমার নিজের ভাল-মন্দের মালিক নই; কিন্তু আল্লাহ যা চান।  আমি যদি গায়েব জানতাম তবে প্রচুর ভাল-ভাল জিনিস নিয়ে নিতাম এবং কোনো কষ্ট আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা- যারা আমার কথা মানে তাদের জন্য। -সূরা আরাফ (৭) : ১৮৮




৪.  اِنَّكَ لَا تَهْدِیْ مَنْ اَحْبَبْتَ وَ لٰكِنَّ اللهَ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَاء ُوَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِیْنَ.
তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎপথ অনুসারীগণকে। -সূরা কাসাস (২৮) : ৫৬
বেরলভী জামাত শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই নয়, অনেক বুযুর্গানে দ্বীনকেও মোখতারে কুল ও কুন ফায়াকুনের অধিকারী মনে করে। এ প্রসঙ্গে আহমদ রেযা খানের পুত্র মুস্তফা রেযা খান লেখেন-
اولیاء میں ایک مرتبہ ہے التکوین کا جو چیز جس وقت چاہتے ہیں فورا ہو جا تی ہے ، جسے کن کہا وہی ہو گیا  (شرح استمداد ص ২৮ )
অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কেরামের একটি মাকাম হচ্ছে আসহাবে ‘তাকভীন’গণের মাকাম। তারা যখন যা ইচ্ছা করেন তৎক্ষণাত তা হয়ে যায়। যে সম্পর্কেই ‘কুন’ ‘হও’ বলেন তা-ই হয়ে যায়। -শরহে ইসতিমদাদ পৃ. ২৮
 বরং খোদ আহমদ রেযা খান শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী রাহ. সম্পর্কে লিখেছেন-
ذی تصرف بھی ، ماذون بھی، مختار بھی
کار عالم کا مدبر بھی عبد القادر
অর্থাৎ শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী সৃষ্টির উপর কর্তৃত্বের অধিকারী। অনুমতি প্রাপ্ত ও ইচ্ছা-ইখতিয়ারের অধিকারী এবং জগতের কার্যাবলীর পরিচালকও। -হাদায়েকে বখশিশ, আহমদ রেযা খান ১ : ২৭
বেরলভী জামাত যেহেতু গায়রুল্লাহকে মোখতারে কুল তথা সর্বক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাই গায়রুল্লাহকে প্রয়োজন পূরণকারী ও বিপদ-আপদ বিদূরণকারী বলেও বিশ্বাস করে, তাই তারা উপায় উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়েও মৃত ও জীবিত বুযুর্গদের কাছে প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করাকে জায়েয মনে করে, যা “إياك نستعين”-এর মধ্যে ঘোষিত ‘তাওহীদুল ইসতিআনাহ’-এর পরিপন্থী স্পষ্ট র্শিক। তাদের এই শিরকী আকীদার উল্লেখ আহমদ রেযা খানের ‘আল আমনু ওয়াল উলা’ (الأمن والعلى لناعتي المصطفى بدافع البلاء) এবং মুস্তফা রেযা খানের ‘শরহে ইসতিমদাদ’ ইত্যাদি বইপত্রে রয়েছে।




৪. নূর-বাশার শীর্ষক আকীদা
কুরআনে কারীমের ঘোষণা ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতা এই যে, আল্লাহর রাসূল বাশার তথা মানব ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন সাইয়েদুল বাশার মানবকুল শিরোমণি। আল্লাহ পাক তাঁকে হেদায়েতের নূর ও ‘সিরাজুম মুনীর’ রূপে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু বেরলভী জনসাধারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মানবসত্তার অস্বীকারকারী। তাদের আকীদা- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্তাকে নূর দ্বারা তৈরি করা হয়েছে, যা কুরআন-হাদীসের  ঘোষণার সম্পূর্ণ বিরোধী।
এ সম্পর্কে সহীহ আকীদ জানতে দেখুন :
মাওলানা সরফরায খান রচিত ‘নূর ও বাশার’। মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী কৃত ‘বাশারিয়্যাতে আম্বিয়া কুরআন মাজীদ মে’, সাইয়েদ লাল শাহ বুখারীর ‘বাশারিয়্যাতে রাসূল’ ও মাওলানা মতিউর রহমানের ‘প্রচলিত জাল হাদীস’।




 ৫. কবর পূজা ও অন্যান্য র্শিক
বেরলভী জনসাধারণের একটি বড় অংশ মাজার পূজারী। বেরলভী সম্প্রদায়ের আলেমরা তাদের জনসাধারণকে যখন এই সবক দিয়েছে যে, প্রত্যেক বুযুর্গই হাযির-নাযির । মোখতারে কুল। হাজত পূরণকারী ও বিপদাপদ বিদূরণকারী। তখন তারা মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য ও বালা মসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বুযুর্গানে দ্বীনের কবরে তাওয়াফ ও সেজদা২[2] কবরওয়ালার কাছে প্রার্থনা ও ফরিয়াদ, তাদের নাম জপা, গায়রুল্লাহর নামে মান্নত মানা, এবং গায়রুল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য পশু কুরবানীর মতো প্রকাশ্য শিরকী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।
উল্লেখিত কর্মগুলো শিরক হওয়া দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। এ বিষয়ে কুরআন হাদীসের প্রমাণাদী জানার জন্য নিম্নোক্ত গ্রন্থাবলী দ্রষ্টব্য :
মাওলানা মনযুর নোমানী রাহ. লিখিত ‘কুরআন আপসে কিয়া কাহতা হ্যায়’ ও ‘দ্বীন ও শরীয়ত’। মাওলানা সরফরায খান লিখিত ‘ইতমামুল বুরহান ফী রদ্দি তাউযীহুল বয়ান’ ও ‘রাহে সুন্নাত’। এই অধম লিখিত ‘তাসাউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ’
ভ্রান্ত ধ্যানধারণা
উল্লেখিত ভিত্তিহীন আকীদাগুলো ছাড়াও যে সকল ভ্রান্ত ধারণার উপর বেরলভী চিন্তা-ঘরানার ভিত্তি তন্মধ্যে  শুধু একটি মৌলিক ভ্রান্তি উল্লেখ করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে বিদআতের সংজ্ঞার তাহরীফ ও বিকৃতি। এই বিকৃতি সাধনের কারণে বেরলভী জামাতের আলেমগণ বিদআত ও কুসংস্কারের পক্ষের দলে পরিণত হয়েছেন।
খায়রুল কুরুন তথা সাহাবায়ে কেরাম তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনের সোনালী যুগ থেকে আজ পর্যন্ত  বিদআতের যে সংজ্ঞা ও পরিচয় প্রতিষ্ঠিত তা হচ্ছে, শরঈ দলীল-প্রমাণ দ্বারা যে বিষয়টি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রমাণিত নয় এমন কিছুকে দ্বীনের হুকুম মনে করে করার নামই বিদআত। বিষয়টি আকাইদ সংক্রান্ত হোক বা ইবাদত সংক্রান্ত, অথবা ইবাদতের সময় ও পদ্ধতি সংক্রান্ত হোক, কিংবা তা হোক দ্বীনের অন্য কোনো শাখার সাথে সম্পৃক্ত কোনো বিষয়। (দ্র. আল ই‘তিসাম, শাতেবী; আল মাদখাল, ইবনুল হাজ্জ; মেরকাত, মোল্লা আলী কারী; রাহে সুন্নাত, সরফরায খান; মুতালাআয়ে বেরলভিয়্যাত, খালেদ মাহমুদ; ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম, মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানবী)











কিন্তু আহমদ রেযা খান ও তার সহযোগী মৌলভীরা এই সংজ্ঞা এভাবে  বিকৃত করেছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আকীদা, ইবাদাত অথবা ইবাদাতের বিশেষ কোনো পদ্ধতি নিষিদ্ধ হওয়ার উপর কোনো আয়াত বা হাদীস না থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এমন বিষয়কে দ্বীনের হুকুম সাব্যস্ত করতে অসুবিধা নেই। এবং এটাকে বিদআত বলারও অবকাশ নেই।
[আল আমনু ওয়াল উলা, আহমদ রেযা খান, পৃ. ১৫৭-১৫৮; জা-আল হক, মুফতী আহমাদ ইয়ার খান খ. ১ পৃ. ২৩০, ২৫৩, ২৫৪; ইশতেহারে আতইয়াব, মুফতী নাঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী পৃ. ১৯ (মুতালাআয়ে বেরলভিয়্যাত খ. ৩ পৃ. ২১৫-৩৩৮-এর মাধ্যমে)]
অথচ যা কিছু নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আয়াত বা হাদীস থাকবে তা তো হারাম বা মাকরূহে তাহরিমী হবে। বিদআত তো নিষিদ্ধ এই জন্য যে শরঈ দলীল ছাড়া একে শরীয়তের অংশ সাব্যস্ত করা হয়েছে । বেরলভী সম্প্রদায় বিদআতের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তা সরাসরি হাদীসের খেলাফ। হাদীসে বর্ণিত হচ্ছে-
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ.
অর্থাৎ যে কেউ দ্বীন নয় এমন কিছুকে আমাদের এই দ্বীনে অন্তর্ভুক্ত করলে তা পরিত্যাজ্য। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১৮

বিদআত ও কুসংস্কারের পক্ষপাত
বেরলভী উলামা মাশায়েখের প্রধান কীর্তি সম্ভবত এটাই যে, তারা দ্বীনের বিষয়ে এই নতুন নিয়ম উদ্ভাবনের মাধ্যমে (অর্থাৎ কোনো কিছু বিদআত বলার জন্য তার নিষিদ্ধতার উপর স্বতন্ত্র আয়াত বা হাদীস থাকা চাই), শরঈ প্রমাণাদীর তাহরীফ ও বিকৃতির মাধ্যমে, শরঈ উসূল ও মৌলনীতিকে পদদলিত করে এবং ভিত্তিহীন ও অবাস্তব কিছু বর্ণনার আশ্রয় নিয়ে সমাজে প্রচলিত বিদআত রসম-রেওয়ায এবং মুনকার ও গর্হিত কর্মকাণ্ডের পক্ষে জোরদার ভূমিকা গ্রহণ করেছে এবং এগুলোকে ইলমী সনদ দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যে সমস্ত বিদআতকে তারা মুবাহ-মুসতাহসান বলে সমাজে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। এখানে নিম্নে নমুনাস্বরূপ কিছু বিষয় তুলে ধরা হল।




১. ঈদে মিলাদুন্নবী নামে ইসলামে নতুন ঈদের আবিষ্কার।
২. রসমী মিলাদকেই দ্বীন মনে করা।
৩. উরস করা।
৪. মাজার পাকা করা ও তার উপর গম্বুজ নির্মাণ করা।
৫. কবরে বাতি জ্বালানো।
৬. কবরের উপর চাদর বিছানো ও ফুল ছড়ানো।
৭. মাযারে এক ধরনের মু‘তাকিফ বনে থাকা।
৮. জানাযার পরে দুআর রসম।
৯. কবরের উপরে আযান দেওয়ার রসম।
১০. আযান ও ইকামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন করে উভয় চোখে লাগানো।
১১. ঈসালে সাওয়াবের জন্য কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করে বিনিময় গ্রহণ করাকে বৈধ মনে করা।
১২. খাবার সামনে নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ফাতেহা পড়ার রসম।
১৩. আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালামের রসম।




বেরলভী উলামা ও মাশায়েখের কিতাবাদী উল্লেখিত বেদআতসমূহের পক্ষপাতপূর্ণ। এর অধিকাংশ বিষয়ের উল্লেখ তো তাদের প্রসিদ্ধ বই ‘জা-আল হকে’ রয়েছে। এ ছাড়াও মৌলভী আব্দুস সামী‘ সাহেবের লেখা ‘আনওয়ারে সাতেআ’ও দেখা যেতে পারে। আর ঐ সমস্ত বিষয় বিদআত হওয়ার প্রমাণাদী জানতে চাইলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কিতাবাদী দেখুন। উদাহরণস্বরূপ :
১. আল জুন্নাহ্ লি আহলিস সুন্নাহ, মুফতী আব্দুল গণি, সাবেক ছদরে মুদাররিস, মাদারাসায়ে আমিনীয়া দিল্লী।
২. বারাহীনে কাতিআহ, মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী।
৩. ইসলাহুর রুসূম, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী।
৪. রাহে সুন্নাত, মাওলানা সরফরায খান।
৫. ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম, মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানবী।
আকাবিরে দ্বীনকে কাফের আখ্যা দেওয়া এবং মুসলমানদের মাঝে বিভেদ-বিভক্তির অপপ্রয়াস
আহমদ রেযা খান বেরলভী সাহেব যে ঘৃণ্য কাজগুলো করেছেন সেগুলোর অন্যতম হল, আকাবিরে উম্মতকে কাফের আখ্যায়িত করা। মুসলমানদের বিভক্ত করার এবং না জানি আরো কী কী ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যে আকাবিরে উম্মতকে কাফের আখ্যা দেওয়ার তার প্রবল আগ্রহ ছিল এবং এটি তার জীবনের অতি স্পষ্ট ব্যস্ততা ছিলো।
সুতরাং কোনো ভুল বুঝাবুঝির কারণে নয়, বরং জেনে শুনে নিতান্তই হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে হযরত মাওলানা ইসমাঈল শহীদ রাহ., মাওলানা কাসেম নানুতবী রাহ., মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহ. ও মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. প্রমুখ আকাবিরে উম্মতকে কাফের আখ্যায়িত করেন। এই সমস্ত বুজুর্গানে দ্বীনের জীবনে তো কুফুরীর গন্ধ আসে এরূপ কোনো কিছুই ছিল না। এরপরও কীভাবে তিনি এমন ব্যক্তিদের কাফের বলতে পারেন?
তাকে এর জন্য মিথ্যাচার ও বিকৃতির আশ্রয় নিতে হয়েছে। আকাবিরে উম্মতের কথাগুলো কাটছাঁট করে, নিজের পক্ষ থেকে কুফুরী বাক্য বানিয়ে তাদের সাথে সম্বন্ধ করে ‘হুসামুল হারামাইন’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছে, যার প্রতিবাদে আকাবিরে দ্বীন ‘আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেন এবং খান সাহেবের মিথ্যাচার ও বিকৃতিসমূহ উম্মোচিত করে দেন।




আল্লামা খালেদ মাহমুদ সাহেবের লেখা ‘ইবারতে আকাবির’, মাওলানা সরফরায খানের ‘ইবারতে আকাবির’, মাওলানা মনযুর নোমানীর ‘মারেকাতুল কলম’ বা ‘ফায়সাল কুন মুনাযারা’। মাওলানা মুরতাযা হাসান চাঁদপুরীর অনেকগুলো পুস্তিকা ও হাকীমুল উম্মত মাওলানা থানবী রাহ.-এর ‘বাসতুল বানান’ ও ‘তাগয়িরুল উনওয়ান’ প্রভৃতি কিতাব এ প্রসঙ্গে লিখিত। যেগুলোতে খান বেরলভীর তাকফীরী কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা অত্যন্ত ইল্ম ও ইনসাফ ভিত্তিক করা হয়েছে এবং দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আকাবিরে উম্মতকে কাফের বলার ক্ষেত্রে আহমদ রেযা খান ছিলেন মিথ্যা অপবাদ আরোপকারী ও বিকৃতি সাধনকারী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এখনও বেরলভী জনসাধারণ আকাবিরে উম্মতকে কাফের বলে নিজেদের দ্বীন ঈমান বরবাদ করছে।
এ সংক্ষিপ্ত তালিকায় কয়েকটি মাত্র বিষয়ের উল্লেখ করা হল। বেরলভী মতবাদ সম্পর্কে আরো অধিক জানতে হলে পড়তে পারেন ডা. খালেদ মাহমুদ লিখিত ‘মুতালাআয়ে বেরলভিয়্যাত’ যা অনেক আগেই ছেপে এসেছে। এ গ্রন্থটি বেরলভী মতবাদ সম্পর্কে একটি বিশ্বকোষ যা ঐতিহাসিক তথ্য ও প্রমাণ সমৃদ্ধ।
আর زلزله বইয়ের মিথ্যা অপবাদসমূহের স্বরূপ জানার জন্য পড়ুন : মাওলানা মুহাম্মাদ আরেফ সাম্ভলী নদভী কৃত
 بريلوي فتنہ كا نيا روپ
উল্লেখ্য, বেরলভী ঘরানার কোনো কোনো আলেম এসব শিরক ও বিদআতের অনেক কিছুরই প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু বেরলভী জনসাধারণের উপর তাদের বিশেষ কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায় না। কত ভালো হত যদি অন্যান্য বেরলভী আলেমগণও এ আলেমগণের সমর্থন করতেন এবং তাদের চিন্তাগুলো প্রচার করার চেষ্টা করতেন। এ প্রসঙ্গে আমরা পাকিস্তানের বেরলভী ঘরানার প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম নাঈমিয়া করাচীর শাইখুল হাদীস আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদীর কথা উল্লেখ করতে পারি। তার কিতাব শরহে সহীহ মুসলিম সাত খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি ‘ইলমে গাইব’, ‘নূর ও বাশার’, ‘গায়রুল্লাহর জন্য মান্নত’ ইত্যাদি বিষয়ে বেরলভীদের মাঝে প্রচলিত ধ্যানধারণার বিপরীত মতামতকেই দলীলসহ সমর্থন করেছেন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين



টীকা :

[1] ইমাম মুজাহিদ হযরত মাওলানা সায়্যেদ আহমাদ শহীদ বেরলভী (জন্ম ১২০১ হি.- শাহাদত ১২৪৬ হি.) রায়বেরেলীর অধিবাসী ছিলেন। এজন্য তিনিও ‘বেরলভী’বলে প্রসিদ্ধ। কিন্তু আহমদ রেযা খান সাহেব (জন্ম: ১২৭২ হি. মোতাবেক ১৮৫৬ খৃ. মৃত্যু: ১৩৪০ হি. মোতাবেক ১৯২১ খৃ.) রায়বেরেলীর নয় বরং ‘বেরেলীর’অধিবাসী ছিলেন। তাকে বেরলভী বলা হয় বেরেলী এলাকার হিসেবে। বেরলভী জামাত তারই অনুসারী। (আবদুল মালেক)
[2] ২ গায়রুল্লাহর জন্য ‘সিজদায়ে তাহিয়্যা’ বা সম্মানের সেজদা হারাম হওয়ার বিষয়ে আহমদ রেযা খান সাহেবের স্বতন্ত্র পুস্তিকা রয়েছে। যার নাম الزبدة الزكية لتحريم سجود التحية কিন্তু এ পুস্তিকার কোনো প্রভাব মাযারপন্থী বেরলভীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় না।








শাহ নেয়ামাতুল্লাহ ওয়ালী (রহঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী : বাংলাদেশ পরিস্থিতি এবং গাজওয়াতুল হিন্দ




আমাদের দুর্ভাগ্যই বলা চলে!
পাকিস্তানি মুসলিম ভাইদের মাঝে
কাসীদাগুলো বেশ পরিচিত, প্রসিদ্ধ
এবং সমাদৃত অথচ বাংলাদেশে এ
সম্পর্কে আমাদের কোনো খোঁজই
নেই।

ক্বসীদায়ে শাহ নেয়ামতুল্লাহ রহমতুল্লাহি
আলাইহি - বিষ্ময়কর ভবিষ্যৎবাণী সম্বলিত
এক কাশফ ও ইলহামের ক্বাসিদা।
জগৎ বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত শাহ
নেয়ামতুল্লাহ রহমতুল্লাহি আজ থেকে
হিজরী ৮৮৬ বছর পূর্বে হিজরী ৫৪৮ সালে
( হিজরী ৫৪৮ সাল মোতাবেক ১১৫২ সালে
খ্রিস্টাব্দে) এক ক্বাসিদা (কবিতা) রচনা
করেন।
কালে কালে তার এ ক্বসিদা এক
একটি ভবিষ্যৎবাণী ফলে গেছে
আশ্চর্যজনকভাবে। মুসলিম জাতি বিভিন্ন
দুর্যোগকালে এ ক্বাসিদা পাঠ করে ফিরে
পেয়েছেন তাদের হারানো প্রাণশক্তি,
উদ্দীপিত হয়ে ওঠেছে নতুন আশায়। ইংরেজ
শাসনের ক্রান্তিকালে এ ক্বাসিদা
মুসলমানদের মধ্যে মহাআলোড়ন সৃষ্টি করে।
এর অসাধারণ প্রভাব লক্ষ্য করে ব্রিটিশ বড়
লাট লর্ড কার্জনের শাসনামলে (১৮৯৯-১৯০৫)
এ ক্বাসিদা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
দীর্ঘ কবিতাকে আরবী ও ফারসী ভাষায় বলা হয়
ক্বাসিদা। ফারসী ভাষায় রচিত হযরত
শাহনেয়ামত উল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি
এর সুদীর্ঘ কবিতায় ভারত উপমহাদেশসহ
সমগ্র বিশ্বের ঘটিতব্য বিষয় সম্পর্কে অনেক
ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে।
-------------------------------------------
(বঙ্গানুবাদ বইটি আজ থেকে ৪৩ বছর আগের।
কবিতাটিতে মোট ৫৮টি প্যারা আছে।)

(প্যারা: ১)
পশ্চাতে রেখে এই ভারতের
অতীত কাহিনী যত
আগামী দিনের সংবাদ কিছু
বলে যাই অবিরত

টীকা: ভারত= ভারতীয় উপমহাদেশ

(প্যারা: ২+৩)
দ্বিতীয় দাওরে হুকুমত হবে
তুর্কী মুঘলদের
কিন্তু শাসন হইবে তাদের
অবিচার যুলুমের
ভোগে ও বিলাসে আমোদে-প্রমোদে
মত্ত থাকিবে তারা
হারিয়ে ফেলিবে স্বকীয় মহিমা
তুর্কী স্বভাব ধারা

টীকা: দ্বিতীয় দাওর= ভারতীয়
উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের দ্বিতীয়
অধ্যায়। শাহবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরি
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আমল (১১৭৫
সাল) থেকে সুলতান ইব্রাহীম লোদীর
শাসনকাল (১৫২৬ সাল) পর্যন্ত প্রথম দাওর।
এবং সম্রাট বাবর শাসনকাল (১৫২৬ সাল)
থেকে ভারতে মুসলিম দ্বিতীয় দাওর। মুঘল
শাসকদের অনেকই আল্লাহ ওয়ালা-ওলী
আল্লাহ ছিলেন। তবে কেউ কেউ প্রকৃত
ইসলামী আইনকানুন ও শরীয়তি আমল থেকে
দূরে সরে গিয়েছিলেন।
আর হাদীস শরীফেই আছে: যখন মুসলমানরা
ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে, তখন তার
উপর গজব স্বরূপ বহিশত্রুকে চাপিয়ে দেয়া
হবে।

(প্যারা: ৪)
তাদের হারায়ে ভিন দেশী হবে
শাসন দণ্ডধারী
জাকিয়া বসিবে, নিজ নামে তারা
মুদ্রা করিবে জারি
ভিন দেশী: ইংরেজদের বোঝানো হয়েছে

(প্যারা: ৫+৬)
এরপর হবে রাশিয়া-জাপানে
ঘোরতর এক রণ
রুশকে হারিয়ে এ রণে বিজয়ী
হইবে জাপানীগণ
শেষে দেশ-সীমা নিবে ঠিক করে
মিলিয়া উভয় দল
চুক্তিও হবে, কিন্তু তাদের
অন্তরে রবে ছল

টীকা: বিশ শতকের প্রারম্ভে এ যুদ্ধ
সংঘটিত হয়। জাপান কোরিয়ার উপর
আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পীত সাগর,
পোট অব আর্থার ও ভলডিভস্টকে
অবস্থানরাত রুশ নৌবহরগুলো আটক করার
মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে রাশিয়া
জাপানের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

(প্যারা: ৭+৮)
ভারতে তখন দেখা দিবে প্লেগ
আকালিক দুর্যোগ
মারা যাবে তাতে বহু মুসলিম
হবে মহাদুর্ভোগ

টীকা: ১৮৯৮-১৯০৮ সাল পর্যন্ত ভারতে
মহামারী আকারে প্লেগের প্রাদুর্ভাব
ঘটে। এতে প্রায় ৫ লক্ষ লোকের
জীবনাবসান হয়। ১৭৭০ সালে ভারতে
মহাদুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়। বংগ প্রদেশে তা
ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ থেকে উদ্ভুত
মহামারিতে এ প্রদেশের প্রায় এক-
তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারায়।

(প্যারা: ৮)
এরপর পরই ভয়াবহ এক
ভূকম্পনের ফলে
জাপানের এক তৃতীয় অংশ
যাবে হায় রসাতলে

টীকা: ১৯৪৪ সালে জাপানের টোকিও এবং
ইয়াকুহামায় প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সংঘটিত
হয়।

(প্যারা: ৯)
পশ্চিমে চার সালব্যাপী
ঘোরতর মহারণ
প্রতারণা বলে হারাবে এ রণে
জীমকে আলিফগণ

টীকা: ১৯১৪-১৯১৮ সাল পর্যন্ত চার
বছরাধিকাল ধরে ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
সংঘটিত হয়। জীম= জার্মানি,
আলিফ=ইংল্যান্ড।

(প্যারা: ১০)
এ সমর হবে বহু দেশ জুড়ে
অতীব ভয়ঙ্কর
নিহত হইবে এতে এক কোটি
ত্রিশ লাখ নারী-নর

টীকা: ব্রিটিশ সরকারের তদন্ত প্রতিবেদন
অনুযায়ি প্রথম মহাযুদ্ধে প্রায় ১ কোটি ৩১
লক্ষ লোক মারা যায়।

(প্যারা: ১১)
অতঃপর হবে রণ বন্ধের
চুক্তি উভয় দেশে
কিন্তু তা হবে ক্ষণভঙ্গুর
টিকিবে না অবশেষে

টীকা: ১৯১৯ সালে প্যারিসের ভার্সাই
প্রাসাদে প্রথম মহাযুদ্ধের অবসানের
লক্ষ্যে ‘ভার্সাই সন্ধি’ হয়, কিন্তু তা
টিকেনি।

(প্যারা: ১২)
নিরবে চলিবে মহাসমরের
প্রস্তুতি বেশুমার
‘জীম’ ও আলিফে খ- লড়াই
ঘটিবে বারংবার

(প্যারা: ১৩)
চীন ও জাপানে দু’দেশ যখন
লিপ্ত থাকিবে রণে
নাসারা তখন রণ প্রস্তুতি
চালাবে সঙ্গোপনে

টীকা: নাসারা মানে খ্রিষ্টান

(প্যারা: ১৪)
প্রথম মহাসমরের শেষে
একুশ বছর পর
শুরু হবে ফের আরো ভয়াবহ
দ্বিতীয় সমর

টীকা: ১ম মহাযুদ্ধ সমাপ্তি হয় ১৯১৮ সালের
১১ নভেম্বর, এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সূচনা হয়
১৯৩৯ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর। দুই যুদ্ধের
মধ্যবর্তি সময় ২১ বছর।



(প্যারা: ১৫)
হিন্দ বাসী এই সমরে যদিও
সহায়তা দিয়ে যাবে
তার থেকে তারা প্রার্থিত কোন
সুফল নাহিকো পারে

টীকা: ভারতীয়রা ব্রিটিশ সরকারের
প্রদত্ত যে সকল আশ্বাসের প্রেক্ষিতে
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তাদের সহায়তা
করেছিল, যুদ্ধের পর তা বাস্তবায়ন করেনি।

(প্যারা: ১৬)
বিজ্ঞানীগণ এ লড়াইকালে
অতিশয় আধুনিক
করিবে তৈয়ার অতি ভয়াবহ
হাতিয়ার আনবিক

টীকা: মূল কবিতায় ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে
‘আলোতে বকর’ যার শাব্দিক অর্থ বিদ্যুৎ
অস্ত্র, অনুবাদক বিদ্যুৎ অস্ত্রের পরিবর্তে
‘আনবিক অস্ত্র তরজমা করেছে। দ্বিতীয়
মহাযুদ্ধে আমেরিকা হিরোসিমা-নাগাসা
কিতে আনবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এতে
লাখ লাখ বেসামরিক লোক নিহত হয়।
কবিতায় বিদ্যুৎ অস্ত্র বলতে মূলত আনবিক
অস্ত্রই বুঝানো হয়েছে।

(প্যারা: ১৭)
গায়েবী ধনির যন্ত্র বানাবে
নিকটে আসিবে দূর
প্রাচ্যে বসেও শুনিতে পাইবে
প্রতীচীর গান-সুর

টীকা: গায়েবী ধনীর যন্ত্র রেডিও-টিভি

(প্যারা: ১৮+১৯)
মিলিত হইয়া ‘প্রথম আলিফ’
‘দ্বিতীয় আলিফ’ দ্বয়
গড়িয়া তুলিবে রুশ-চীন সাথে
আতাত সুনিশ্চয়
ঝাপিয়ে পড়িবে ‘তৃতীয় আলিফ’
এবং দু’জীম ঘারে
ছুড়িয়া মারিবে গজবী পাহাড়
আনবিক হাতিয়ারে।

টীকা: প্রথম আলিফ= ইংল্যান্ড
দ্বিতীয় আলিফ=আমেরিকা
তৃতীয় আলিফ= ইটালি
দুই জীম=জার্মানি ও জাপান

(প্যারা: ১৯- এর শেষ)
অতি ভয়াবহ নিষ্ঠুরতম
ধ্বংসযজ্ঞ শেষে
প্রতারণা বলে প্রথম পক্ষ
দাড়াবে বিজয়ী বেশে

(প্যারা: ২০)
জগৎ জুড়িয়া ছয় সালব্যাপী
এই রণে ভয়াবহ
হালাক হইবে অগিণত লোক
ধন ও সম্পদসহ

টীকা: জাতিসংঘের হিসেব মতে দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি লোক মারা
গিয়েছিল।

(প্যারা: ২১)
মহাধ্বংসের এ মহাসমর
অবসানে অবশেষে
নাসারা শাসক ভারত ছাড়িয়া
চলে যাবে নিজ দেশে
কিন্তু তাহারা চিরকাল তরে
এদেশবাসীর মনে
মহাক্ষতিকর বিষাক্ত বীজ
বুনে যাবে সেই সনে

টীকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৫
সালে, আর ভারত উপমহাদেশ থেকে
নাসারা তথা ইংরেজ খ্রিস্টানরা চলে
যায় ১৯৪৭ এ। এই প্যারার দ্বিতীয় অংশের
ব্যাখ্যা দুই রকম আছে।

ক) এই অঞ্চলের বিভেদ তৈরী জন্য ইংরেজ
খ্রিস্টানরা কাশ্মীরকে হিন্দুদের দিয়ে
প্যাচ বাধিয়ে যায়।

খ) ইংরেজরা চলে গেলেও তাদের সংস্কৃতি
এমনভাবে রেখে গেছে যে এই উপমহাদেশে
লোকজন এখনও সব যায়গায় ব্রিটিশ নিয়ম-
কানুন-ভাষা-সংস্কৃতি অনুসরণ করে।

(প্যারা: ২২)
ভারত ভাঙ্গিয়া হইবে দু’ভাগ
শঠতায় নেতাদের
মহাদুর্ভোগ দুর্দশা হবে
দু’দেশেরি মানুষের

টীকা: দেশভাগের সময় মুসলমানরা আরো
অনেক বেশি এলাকা পেত। কিন্তু সেই সময়
অনেক মুসলমান নেতার গাদ্দারির কারণে
অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা
হিন্দুদের অধীনে চলে যায়। ফলে কষ্টে পরে
সাধারণ মুসলমানরা। এখনও ভারতের
মুসলমানরা সেই গাদ্দারির ফল ভোগ করছে।

(প্যারা: ২৩)
মুকুটবিহীন নাদান বাদশা
পাইবে শাসনভার
কানুন ও তার ফর্মান হবে
আজেবাজে একছার

টীকা: এই প্যারা থেকে ভারত বিভাগ
থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ধরা যায়। এই সময়
এই অঞ্চলে মুসলমানদের ঝা-াবাহী কোন
সরকার আসেনি। মুকুটবিহীন নাদান
বাদশাহ বলতে অনেকে ‘গণতন্ত্র’কে
বুঝিয়েছে। আব্রাহাম লিংকনের তৈরী
গণতন্ত্রকে জনগণের তন্ত্র বলা হলেও
প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে জন-নিপীড়নের তন্ত্র।
এই গণতন্ত্রের নিয়ম কানুন যে আজেবাজে
সে সম্পর্কে শেষ লাইনে ইঙ্গিত করা
হয়েছে।

(প্যারা: ২৪)
দুর্নীতি ঘুষ কাজে অবহেলা
নীতিহীনতার ফলে
শাহী ফর্মান হবে পয়মাল
দেশ যাবে রসাতলে
টীকা: সমসাময়িক দুর্নীতি বুঝানো
হয়েছে।

(প্যারা: ২৫)
হায় আফসোস করিবেন যত
আলেম ও জ্ঞানীগণ
মূর্খ বেকুফ নাদান লোকেরা
করিবে আস্ফালন।

(প্যারা: ২৬)
পেয়ারা নবীর উম্মতগণ
ভুলিবে আপন শান
ঘোরতর পাপ পঙ্গিলতায়
ডুবিবে মুসলমান

(প্যারা: ২৭)
কালের চক্রে ¯স্নেহ-তমীজের
ঘটিবে যে অবসান
লুণ্ঠিত হবে মানী লোকদের
ইজ্জত সম্মান

(প্যারা: ২৮)
উঠিয়া যাইবে বাছ ও বিচার
হালাল ও হারামের
লজ্জা রবে না, লুণ্ঠিত হবে
ইজ্জত নারীদের

(প্যারা: ২৯)
পশুর অধম হইবে তাহারা
ভাই-বোনে, মা-বেটায়
জেনা ব্যাভিচারে হইবে লিপ্ত
পিতা আর কন্যায়

(প্যারা: ৩০)
নগ্নতা আল অশ্লীলতায়
ভরে যাবে সব গেহ
নারীরা উপরে সেজে রবে সতী
ভেতরে বেচিবে দেহ

(প্যারা: ৩১)
উপরে সাধুর লেবাস ভেতরে
পাপের বেসাতি পুরা
নারী দেহ নিয়ে চালাবে ব্যবসা
ইবলিস বন্ধুরা

(প্যারা: ৩২)
নামায ও রোজা, হজ্জ্ব যাকাতের
কমে যাবে আগ্রহ
ধর্মের কাজ মনে হবে বোঝা
দারুন দুর্বিষহ

(প্যারা: ৩৩)
কলিজার খুন পান করে বলি
শোন হে বৎসগণ
খোদার ওয়াস্তে ভুলে যাও সব
নাসারার আচরণ

(প্যারা: ৩৪)
পশ্চিমা ঐ অশ্লীলতা ও
নগ্নতা বেহায়ামি
ডোবাবে তোদের, খোদার কঠোর
গজব আসিবে নামি

(প্যারা: ৩৫)
ধ্বংস নিহত হবে মুসলিম
বিধর্মীদের হাতে
হবে নাজেহাল, ছেড়ে যাবে দেশ
ভাসিবে রক্তপাতে

(প্যারা: ৩৬)
মুসলমানের জান-মাল হবে
খেলনা- মুল্যহত
রক্ত তাদের প্রবাহিত হবে
সাগর ¯স্রোতের মত

টীকা: হাদীস শরীফে আছে: পাঁচটি কারণে
পাঁচটি জিসিস হয়। “১) যদি যাকাত না
দেয়া হয়, তবে অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি দেখা
দেয়; ২) যদি মাপে কম দেয়া হয়, তবে
দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, ৩) যদি বেপর্দা-
বেহায়াপনা বেড়ে যায়, তবে দুরারোগ্য
ব্যাধি দেখা দেয়, ৪) যদি একেক জন একেক
রকম ফতওয়া দেয়, তবে মতবিরোধ দেখা দেয়,
আর ৫) যদি মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার
সাথে যে ওয়াদা করেছিল, সেউ ওয়াদা
থেকে দূরে সরে যায় (অর্থ্যাৎ কোরআন
হাদীস থেকে দূরে সরে কাফেরদের আমল
করে) তবে তাদের উপর গজব স্বরূপ বিদেশী
শত্রু চাপিয়ে দেয়া হয়।”

(প্যারা: ৩৭)
এরপর যাবে ভেগে নারকীরা
পাঞ্জাব কেন্দ্রের
ধন সম্পদ আসিবে তাদের
দখলে মুমিনদের
টীকা: এখানে পাঞ্জাব কেন্দ্রের বলতে
কাশ্মীর মনে করা হয়।

(প্যারা: ৩৮)
অনুরূপ হবে পতন একটি
শহর মুমিনদের
তাহাদের ধনসম্পদ যাবে
দখলে হিন্দুদের

টীকা: ১৯৪৮ সালে মুসলিম সুলতান
নিজামের অধীনস্ত হায়দারাবাদ শহরটি
দখল করে নেয় হিন্দুরা। সে সময় প্রায় ২ লক্ষ
মুসলমানকে শহীদ করে মুশরিক হিন্দুরা, ১
লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করে, হাজার
হাজার মসজিদ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে
দেয়। শুধু নিজামের প্রাসাদ থেকে নিয়ে
যায় ৪ ট্রাক সোনা গয়না।

(প্যারা: ৩৯)
হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ সেখানে
চালাইবে তারা ভারি
ঘরে ঘরে হবে ঘোর কারবালা
ক্রন্দন আহাজারি

টীকা: এখানে সমগ্র ভারতে মুসলমানদের
ঘরে ঘরে যে হিন্দুরা নির্যাতন করছে সেই
বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।


(প্যারা: ৪০)
মুসলিম নেতা-অথচ বন্ধু
কাফেরের তলে তলে
মদদ করিবে অরি কে সে এক
পাপ চুক্তির ছলে

টীকা: বর্তমান সময়ে এই উপমহাদেশে এ
ধরনের নেতার অভাব নেই। যারা উপর দিয়ে
মুসলমানদের নেতা সেজে থাকে, কিন্তু
ভেতর দিয়ে কাফিরদের এক নম্বর দালাল।
সমগ্র ভারতে এর যথেষ্ট উদাহরণ আছে,
উদাহরণ আছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ
ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও।

(প্যারা: ৪১)
প্রথম অক্ষরেখায় থাকিবে
শীনে’র অবস্থান
পঞ্চাশতম অক্ষে থাকিবে
নূন’ও বিরাজমান
ঘটিবে তখন এসব ঘটনা
মাঝখানে দু’ঈদের
ধিক্কার দিবে বিশ্বের লোক
জালিম হিন্দুদের

টীকা: বর্তমানে এই সময়টি চলে এসেছে।
এতদিন হিন্দুরা তাদের মুসলিম নির্যাতনের
ঘটনাগুলো লুকিয়ে রাখত। কিন্তু এখন আর
লুকানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রকাশ হয়ে
যাচ্ছে। এখন সবাই এই জালিম হিন্দুদের
জঘণ্য অপকর্মের জন্য তাদের ধিক্কার
দিচ্ছে।

(প্যারা: ৪২)
মহরম মাসে হাতিয়ার হাতে
পাইবে মুমিনগণ
ঝঞ¦ারবেগে করিবে তাহারা
পাল্টা আক্রমণ

(প্যারা: ৪৩)
সৃষ্টি হইবে ভারত ব্যাপিয়া
প্রচ- আলোড়ন
‘উসমান’ এসে নিবে জেহাদের
বজ্র কঠিন পণ

(প্যারা: ৪৪)
‘সাহেবে কিরান-‘হাবীবুল্লাহ’
হাতে নিয়ে শমসের
খোদায়ী মদদে ঝাপিয়ে পড়িবে
ময়দানে যুদ্ধে

টীকা: এখানে মুসলমানদের সেনাপতির
কথা বলা হয়েছে। যিনি হবেন 'সাহেবে
কিরান' বা 'সৌভাগ্যবান'। সেই মহান
সেনাপতির নাম বা উপাধি হবে
‘হাবীবুল্লাহ’।

(প্যারা: ৪৫)
কাপিবে মেদিনী সীমান্ত বীর
গাজীদের পদভারে
ভারতের পানে আগাইবে তারা
মহারণ হুঙ্কারে

টীকা: আক্রমণকারীরা ভারত
উপমহাদেশের হিন্দু দখলকৃত এলাকার বাইরে
থাকবে এবং হিন্দু দখলকৃত এলাকা দখল
করতে হুঙ্কার দিয়ে এগিয়ে যাবে।

(প্যারা-৪৬)
পঙ্গপালের মত ধেয়ে এসে
এসব ‘গাজীয়েদ্বীন’
যুদ্ধে জিনিয়া বিজয় ঝাণ্ডা
করিবেন উড্ডিন

(প্যারা-৪৭)
মিলে এক সাথে দক্ষিণী ফৌজ
ইরানী ও আফগান
বিজয় করিয়া কবজায় পুরা
আনিবে হিন্দুস্তান
টীকা: হিন্দুস্তান সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের
দখলে আসবে।

(প্যারা-৪৮)
বরবাদ করে দেয়া হবে দ্বীন
ঈমানের দুশমন
অঝোর ধারায় হবে আল্লা’র
রহমাত বরিষান

(প্যারা-৪৯)
দ্বীনের বৈরী আছিল শুরুতে
ছয় হরফেতে নাম
প্রথম হরফ গাফ সে কবুল
করিবে দ্বীন ইসলাম

টীকা: ছয় অক্ষর বিশিষ্ট একটি নাম যার
প্রথম অক্ষরটি হবে ‘গাফ’ এমন এক হিন্দু
বণিক ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম পক্ষে
যোগদান করবেন। তিনি কে তা এখন বুঝা
যাচ্ছে না।

(প্যারা-৫০)
আল্লা’র খাস রহমাতে হবে
মুমিনেরা খোশদিল
হিন্দু রসুম-রেওয়াজ এ ভুমে
থাকিবে না একতিল
টীকা: ভারত বর্ষে হিন্দু ধর্ম তো দূরে
হিন্দুদের কোন রসম রেওয়াজও থাকবে না।

(সুবহানাল্লাহ)

(প্যারা-৫১)
ভারতের মত পশ্চিমাদেরো
ঘটিবে বিপর্যয়
তৃতীয় বিশ্ব সমর সেখানে
ঘটাইবে মহালয়

টীকা: বর্তমান সময়ে স্পষ্ট সেই তৃতীয় সমর
চলছে। অর্থ্যাৎ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে মুসলমাদের
বিরুদ্ধে কাফিররা যুদ্ধ করছে তথা জুলুম-
নির্যাতন করছে। এই জুলুম নির্যাতন বা
তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধই একসময় তাদের ধ্বংসের
কারণ হবে। এখানে বলা হচ্ছে মহালয় বা
কেয়ামত শুরু হবে যাতে পশ্চিমারা
ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

(প্যারা-৫২)
এ রণে হবে ‘আলিফ’ এরূপ
পয়মাল মিসমার
মুছে যাবে দেশ, ইতিহাসে শুধু
নামটি থাকিবে তার

টীকা: এ যুদ্ধের কারণে আলিফ = আমেরিকা
এরূপ ধ্বংস হবে যে ইতিহাসে শুধু তার নাম
থাকবে, কিন্তু বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব
থাকবে না। বর্তমানে মুছে যাওয়ার আগাম
বার্তা স্বরূপ দেশটিতে আমরা বিভিন্ন
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক মন্দা
চরমভাবে দেখতে পাচ্ছি।

(প্যারা-৫৩)
যত অপরাধ তিল তিল করে
জমেছে খাতায় তার
শাস্তি উহার ভুগতেই হবে
নাই নাই নিস্তার
কুদরতী হাতে কঠিন দণ্ড
দেয়া হবে তাহাদের
ধরা বুকে শির তুলিয়া নাসারা
দাড়াবে না কভু ফের

টীকা: এখানে স্পষ্ট যিনি এই শাস্তি
দিবেন তা হবে কুদরতি হাতে। আল্লাহ
তায়ালার ক্ষেত্রে কুদরত = নবী রাসূলের
ক্ষেত্রে মুজিজা = অলী আল্লাহ গণের
ক্ষেত্রে কারামত। এখানে কাফিরদের
শাস্তি কোন ওলী আল্লাহ কারামতের
মাধ্যমেই দিবেন এটাই বুঝানো হয়েছে। এই
শাস্তির কারণে নাসারা বা খ্রিস্টানরা
আর কখনই মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না।

(প্যারা-৫৪)
যেই বেঈমান দুনিয়া ধ্বংস করিল আপন
কামে
নিপাতিত শেষকালে সে নিজেই
জাহান্নামে

(প্যারা-৫৫)
রহস্যভেদী যে রতন হার গাথিলাম আমি তা
- - যে
গায়েবী মদদ লভিতে, আসিবে উস্তাদসম
কাজে।

(প্যারা-৫৬)
অতিসত্বর যদি আল্লা'র মদদ পাইতে চাও
তাহার হুকুম তালিমের কাজে নিজেকে
বিলিয়ে দাও

টীকাঃ বর্তমানে সমস্ত ফিতনা হতে
হিফাজত হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে সমস্ত
হারাম কাজ থেকে খাস তওবা করা। সেটা
হারাম আমল হোক কিংবা কাফের মুশরিক
প্রনিত বিভিন্ন নিয়ম কানুন হোক।

(প্যারা-৫৭)
'কানা জাহুকার' প্রকাশ ঘটার সালেই
প্রতিশ্রুত
ইমাম মাহাদি দুনিয়ার বুকে হবেন আবির্ভূত

টীকাঃ 'কানা জাহুকার' সূরা বনী
ইসরাইলের ৮১ নং আয়াতের শেষ অংশ। যার
অর্থ মিথ্যার বিনাশ অনিবার্য। পূর্ব
আয়াতটির অর্থ 'সত্য সমাগত মিথ্যা
বিলুপ্ত'। যখন মিথ্যার বিনাশ কাল উপস্থিত

হবে তখন উপযুক্ত সময়েই আবির্ভূত হবেন
'মাহদী' বা 'পথ প্রদর্শক'। উনার
আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে চলমান বাতিল
ধ্বংস হবে।

(প্যারা-৫৮)
চুপ হয়ে যাও ওহে নেয়ামত এগিও না মোটে
আর
ফাঁস করিও না খোদার গায়বী রহস্য --
আসরার
এ কাসিদা বলা করিলাম শেষ 'কুনুত
কানযাল' সালে
(অদ্ভুত এই রহস্য গাঁথা ফলিতেছে কালে
কালে)

টীকাঃ 'কুনুত কানযাল সাল' অর্থাৎ হিজরি
সন ৫৪৮ সাল মোতাবেক ১১৫৮ সাল হচ্ছে এ
কাসিদার রচনা কাল। এটা আরবি হরফের
নাম অনুযায়ী সাংকেতিক হিসাব। আরবী
হরফের নাম অনুযায়ী কাফ = ২০, নুন = ৫০, তা
= ৪০০, কাফ = ২০, যা = ৭, আলিফ = ১। সর্বমোট
= ৫৪৮।

মূলত ওলী আল্লাহগণ মহান আল্লাহ
তায়ালার পক্ষ থেকে ইলমে লাদুন্নী নামক
এক ধরনের বিশেষ জ্ঞান পেয়ে থাকেন।
হযরত শাহ্ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) ছিলেন
সেই ধরনের একজন ওলী আল্লাহ। উনি সেই
ইলমে লাদুন্নী জ্ঞান এর কিছু অংশ প্রকাশ

করেছেন।

সুত্র...


Ad Code

Responsive Advertisement