Ad Code

Responsive Advertisement

সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

এক নজরে জিহাদের আয়াত সমূহ!!!






খালিদ সাইফুল্লাহ
  যারা মনে করেন ইসলামে জিহাদ নাই তারা আয়াতগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখুন.: আল কুরআনে জিহাদ সম্পর্কিত কিছু আয়াত:.১/ সূরা বাকারা,আয়াত:-১৯০-১৯৫,২১৬- ২১৮, ২৪৪, ২৪৬, ২৪৯-২৫১।.২/ সূরা আল ইমরান,আয়াত:-১৩,১১১,১২১- ১২৮, ১৩৯- ১৪৭,১৫১- ১৫২, ১৫৫- ১৫৬, ১৬০,১৬৬-১৬৮,১৭৩-১৭৫ , ১৯৫, ২০০।.৩/সূরা আননিসা, আয়াত:-৭১, ৭৪-৭৭, ৮৪, ৯১, ৯৫- ৯৬, ১০৪।.৪/ সূরা মায়িদা, আয়াত:-৩৫, ৫৪।.৫/সূরা আনফাল, আয়াত:--- ০৫- ০৬,১২, ১৫- ১৮, ৩৯, ৪৫, ৫৬-৬০,৬৫-৬৬,৭৩-৭৪।.৬/ সূরা আত - তাওবা, আয়াত:-০৫,১২-১৬, ২০, ২৩- ২৪, ২৬ , ২৯ , ৩৬ , ৩৮-৪১, ৪৪, ৭৩, ৮১, ৮৮-৮৯, ৯১,১১১, ১২৩।.৭/ সূরা নহল, আয়াত:--- ১১০.৮/ সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ---৭৯-৮০।.৯/সূরা হজ্জ্ব, আয়াত:--- ৩৮-৪০,৭৮।.১০/ সূরা ফুরকান, আয়াত:--- ৫২।.১১/সূরাআনকাবুত, আয়াত:--- ৬৯।.১২/সূরা আহযাব,আয়াত:--০৯-১৫,১৮- ২০,২২-২৭।.১৩/সূরাসা'বা, আয়াত: ১০-১১।.১৪/ সূরা মুহাম্মদ, আয়াত:-০৪-০৭,২০-২১, ৩১, ৩৫, ৩৮।.১৫/সূরাফাতহ, আয়াত:--- ১৬-২৩।.১৬/ সূরা হুজুরাত, আয়াত:--- ০৯, ১৫।.১৭/সূরাক্বমার, আয়াত:--- ৪৩-৪৫.১৮/সূরাহাদীদ, আয়াত:--- ১০, ২৫।.১৯/ সূরা হাশর, আয়াত:--- ০২, ১৪।.২০/ সূরা আছ ছ্বফ, আয়াত:-০৪,১০-১৪।.২১/সূরাআত ত্বাহরীম,আয়াত:---০৯।.

আল্লাহ তায়ালা বলেন,আর তোমাদের কি হল যে,তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকরছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ওশিশুরা আর্তনাদ করে বলছে, হেআমাদের প্রতিপালক!আমাদেরকে এই জালেমঅধিবাসীদের থেকে বের করুনএবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষথেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণকরে দিন। আর আপনার পক্ষ থেকেএকজন সাহায্যকারী নির্ধারণকরে দিন।।(সূরা নিসা আয়াত নং-৭৫).আল্লাহ্ পাক বলেন, যদি তারাতোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তবে তোমরাওতাদেরকে হত্যা করো,অবিশ্বাসীদের জন্যএটাই প্রতিফল। (সুরা বাকারাঃ১৯১).আল্লাহ যদি এক দলকে অপর দলেরদ্বারা প্রতিহত না করতেন,তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্তহয়ে যেতো।(সুরা বাকারাঃ ২৫১).জিহাদ সম্পর্কিত কোরআন এর সকল আয়াতের রেফারেন্স •.


জিহাদ করার সুস্পষ্ট আদেশ ও না করার পরিনতি-২:১৫৪,২:১৯০-১৯৪, ২:২১৬, ২:২৪৪, ৩:১৪২, ১৯৫,৪:৭১-৭৬, ৪:৭৭-৭৮, ৪:৯৫, ৪:১০০,৮:১২-১৬, ৮:৩৯-৪০, ৯:১৯-২০, ৯:২৯,৯:৩৮-৪২, ৯:৪৪-৪৯, ৯:৭৩, ৯:৮১-৮৯, ৯:৯৩,৯:৯৫-৯৬, ৯:১১১, ৯:১২৩, ২২:৩৯, ২৫:৫২,৪৭:৪-৮, ৪৭:২০-২১, ৪৭:৩১-৩৬,৪৮:১৬-১৭, ৬১:৪, , ৬১:১০-১৪, ৬৬:৯ •.জিহাদকারী সৈনিকদের সাহার্যকারী আল্লাহ্স্বয়ং-৩:১৩, ৩:১১১, ৪:৪৫, ৮:৫-১০,৮:১১-১৯, ৯:২৫-২৬, ২৪:৫৫, ২৯:৬৯,৩৩:৯-১০, ৪০:৫১, ৪৮:৪-৭, ৬৭:২০, •.জিহাদ কার বিরুদ্ধে কেন এবং কার জন্য-২:২২১৬, ২:২১৮, ৯:২৯, ২৬:৬৯,২৯:৬ •.জিহাদকারীদের সাথে নামাজিদের তুলনা-৯:১৯-২১ •.জিহাদ কালীন সর্তকতা ও করনীয়-৪:৮০-৮৪, ৯:৩-৬ •.জিহাদ.ঘোষনার জন্য নির্জাতিত মানুষের প্রার্থনা-২:২৪৬ , ৩:১৯৫, ৪৭:২০ •.জিহাদ থেকে অনুপস্থিত থাকার জন্য নানা রকমবাহানা-৯:৪২-৪৯, ৯:৮৬-৯৩, ৪৮:১১ •.জিহাদ থেকে পার্থিব উন্নতি প্রধান্য পেলে তার পরিনতি-৯:৩৮-৪২ •.জিহাদ থেকে বিরত থাকার হকদার কে-৯:৯১-৯২,৪৮:১৬-১৭ •.জিহাদে অনিচ্ছুক তিন জনের অনুতাপ ও ক্ষমা লাভ-৯:১১৮ •.জিহাদে অনিচ্ছুক মানুষ পশুর অধম-১০০:১-৬ •.জিহাদে অনিচ্ছুকদের পরিচয় ও পরিণতি-৯:৩৯-৪২, ৯:৯০-৯৩, ৯:৯৪-৯৬.জিহাদে অবিশ্বাস কারীরা আল্লাহর সাহার্য পাবেনা-৪৮:২২-২৩



.জিহাদে অর্থ সাহার্য করা ও না করারফলালফল-২:২৪৫, ৮:৬০, ৯:২০-২২, ৯:৪১,৪৭:৩৮, ৫৭:১০, ৫৭:১১-১২, ৬১:১০-১২,৬৪:১৭ •.জিহাদে আল্লাহ্ মুজাহিদদের কিভাবে সাহার্যকরেন-৩:১২৬-১২৭, ৩:১৫০-১৫৫,৮:৪২-৪৫, ২৭:১৬-২০, ৩৩:৯ •.জিহাদে ইমানদার ও মুনাফিকদের পার্থক্যনির্নয় হয়-৩:১৫৬-১৬৮, ৩:১৭৩-১৭৫,৮:৪৭, ৩৩:১০-১৫ •.জিহাদে ইমানদারগণ বিজয়ি হলে মুনাফিকরা কি বলে-৮:৪৯ •.জিহাদে কখন মুজাহিদদের পরাজয় হয়-৩:১৫২-১৫৩, ৩:১৬৫, ৮:১১ •.জিহাদে বন্ধিদের সাথে ব্যবহার বিধি-৮:৬৭, ৮:৭০-৭১, ৯:৫-৬,৪৭:৪ •.জিহাদে বিজয় সংখ্যাধিক্যের উপর নির্ভর করেনা-২:২৪৯-২৫১, ৮:৪৬-৪৮, ৮:৫৯-৬০,৮:৬৫-৬৬, ৯:২৫-২৬ •.জিহাদে ভিত হয়ে সন্ধি প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ-৪৭:৩৫ •.জিহাদে গনিমতের মালের বন্টন বিধি-৮:১,৮:৪১, ৮:৬৯, ৪৮:১৫, ৪৮:২০-২১, ৫৯:৬-৮ •.জিহাদে মৃত্যুর ভয় অবাঞ্চিত-২:২৪৩ •.জিহাদে যোগদান করতে দেয়া হয়নি কাদেরকে-৯:৪৩-৪৭ • .জিহাদে জন্য পোশাক ও অস্ত্র নির্মান করার আদেশ-১৬:৮১, ২১:৮০, ৩৪:১০-১১,৫৭:২৫ •.জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন কারীর পরিনাম-৪:১০৪,৮:১৫-১৬, ৮:৪৫-৪৭, ৮:৬০-৬২,.জিহাদের সময় কাফের ও মুনাফিকদের সম্পর্কে বিশেষ বিধি-৪:৮৯-৯১,.জিহাদের সময় ধৈর্য ধারন করা আবশ্যক-৩:১৪৬-১৪ ৮,৩:১৯১-১৯৫, ৪:৯৫-৯৬, ৯:১৯-২০ •.জিহাদের সৈনীকদের শ্রেষ্টত্বমর্যাদা ও পুরস্কার-৩:১৪৬- ১৪৮,৩:১৯১-১৯৫, ৪:৯৪-৯৬, ৯:১৯-২০, ৬১:৪.সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিন।আল্লাহর বানী প্রচারে সহায়তা করুন।

.

আমি কেন জঙ্গি হলাম?


 জঙ্গিবাদের অভিযোগ থেকে কখন আপনি মুক্ত হবেন?

 
 তাগুতের হাতে গ্রেফতারের পূর্বে এক শহীদ আরব মুজাহিদের লেখা শেষ প্রবন্ধ অনুকরণে-
(মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারলে বোঝার আছে অনেক কিছু, চিন্তাশীল সকল ভাইকে সম্পূর্ণটা পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি)
এক
কেন আমি ওয়ান্টেড পার্সন?
চার দিক থেকে জবাব আসতে লাগলঃ সন্ত্রাস......... সন্ত্রাস ...... (জঙ্গিবাদ)। তুমি সন্ত্রাসী (জঙ্গি)। আর সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সন্ত্রাসকে দমন করা, জঙ্গিবাদের নির্মূল করা।
 ঠিক আছে .........।
সন্ত্রাসের এই অপরাধ থেকে আমি মুক্ত হতে চাই, যার ফলে আমি আজ মোস্ট ওয়ান্টেড, আমাকে বন্দি ও হত্যা করা সরকারের দায়িত্ব।  বলুন, কি সেই সন্ত্রাসটি?
 উত্তরঃ মানুষ হত্যা ...............।
 কিন্তু ..............., সৌদি সরকারও তো মানুষ হত্যা করে .........।
তারা শায়েখ ইউসুফ আল-ওয়াইরী, বীর মুজাহিদ দান্দানী সহ অন্যান্য আলেম ও মুজাহিদীনদেরকে হত্যা করেছে। তাহলে সৌদি সরকারও সন্ত্রাসী সুতরাং আমরা  যখন উভয়েই সন্ত্রাসী  আমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে কাঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে সামনে বাড়া,তাহলে আমি তাদের কাছে ওয়ান্টেড হলাম কেন? নাকি সৌদি সরকার আমার থেকে ভিন্ন?
কেননা সৌদি সরকার যাদেরকে হত্যা করেছে তারা সন্ত্রাসী?   ভাল কথা ...।   আমিও তো সন্ত্রাসীদেরকেই হত্যা করেছি।আমেরিকানরা কি সন্ত্রাসী নয়?
 ইরাক, আফগানস্থান ফিলিস্তিন সহ অন্যান্য ভূখণ্ডে অ্যামেরিকা যে সন্ত্রাস করেছে,
 এর চেয়ে বড় কোন সন্ত্রাস হতে পারে?!! আমিও সন্ত্রাসীদেরকে হত্যা করলাম, সৌদি সরকারও সন্ত্রাসীদেরকে হত্যা করল!!
 তাহলে আমি কেন সন্ত্রাসী হব? অথচ আমরা উভয় একই কাজ করছি,
 সন্ত্রাসীদেরকে হত্যা করছি?!! বরং সৌদি সরকারই এমন অনেককে হত্যা করছে যারা সন্ত্রাসী নয় ......।
 তারা মার্কিন বাহিনীকে সহায়তার মাধ্যমে ইরাকের সধারন জনগণকে হত্যা করেনি?!!
 নাকি সৌদি সরকার আমাকে ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী হিসাবে কাল তালিকাভুক্ত করেছে এ কারণে,আমি ঐ সৈনিকদেরকে হত্যা করেছি যারা অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদেরকে পাহারা ও নিরাপত্তা দিত?!!     তাহলে সৌদি সরকার কি ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে হত্যা করেনি,
 যারা সন্ত্রসীদেরকে পাহারা দিত?!! যেমনটি করেছে তারা কাসীমের মধ্যে।
 অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদের পাহারাদার আর অন্যান্য সন্ত্রাসীদের পাহারাদারদের মাঝে,
 কি এমন পার্থক্য বিদ্যমান?!!!
 দুই
 মনে হয়, এখন আমি বুঝতে পেরেছি ............।
 সৌদি সরকার আমাকে ওয়ান্টেড ঘোষণা দিয়েছে কারণ আমি সন্ত্রাসীদের বন্ধু, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল,আর নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসীর বন্ধুও সন্ত্রাসী।
 কিন্তু সৌদি সরকার ঘোষণা দেয়নি কি, অ্যামেরিকা তাদের বন্ধু?!!
পৃথিবীর সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী কি অ্যামেরিকা নয়?!!
সৌদি ও অ্যামেরিকার মধ্যকার প্রতিটি ক্ষেত্রে মন্ত্রীরা গভীর সম্পর্কের ব্যাপারটা কি নিশ্চিত করেনি?!!
অনুগ্রহ করে আমাকে জবাব দাওঃ
 কেন আমি ওয়ান্টেড হলাম?!!!
 আমি যেমন সন্ত্রাসী সৌদি সরকারও কি একই রকম সন্ত্রাসী নয়?!!
 তাহলে সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে তাদের ভ্রাতাকে কীভাবে তারা তাড়া করে?
 আমি হত্যা করেছি অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদের পাহারাদারদেরকে,
সৌদি হুকুমত হত্যা করছে শরয়ী ইসলামী ‘সন্ত্রাসীদের” আশ্রয় দাতাদেরকে।
আমি যেমন সন্ত্রাসীদেরকে ভালবাসি তাদের প্রতি সহানভুতি প্রকাশ করি,
সৌদি সরকার মার্কিন সন্ত্রাসীদেরকে ভালবাসে, তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। বরং তারা এই বন্ধুত্ব নিয়ে গর্ব প্রকাশ করে থাকে।
 তিন
 হতে পারে-আমি ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী,
 কারণ আমি মুসলিমদের দেশে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছি।
 কিন্তু ..................।
 ইরাক মুসলিমদের দেশ,
 অ্যামেরিকা ইরাকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
 জঙ্গি বিমান থেকে মিসাইলের আঘাতে পুরো দেশকে চূর্ণবিচূর্ণ করেছে।
 অথচ সৌদি, অ্যামেরিকাকে ওয়ান্টেড হিসাবে আখ্যায়িত করে না।
 এমনকি শত্রু পর্যন্ত ভাবে না বরং তাদেরকে সাহায্য করে।
 সৌদি সরকারের কাছে কোন প্রমাণ আছে, যে আমি সন্ত্রাসীদেরকে কোন সাহায্য করেছি?
 যদি থাকে তাহলে ভাল কথা,
 একই ভাবে সৌদি সরাকারও অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদেরকে,
 সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।
 আমি কি তাদের আশ্রয় দিয়েছি?
 সৌদি সরকার মার্কিন বাহিনীকে আশ্রয় দিয়েছে।
 আমি কি তাদের অস্ত্রের হেফাজত করেছি?
 সৌদি সরকার সৌদিকে অ্যামেরিকার অস্ত্রগুদাম বানিয়েছে।
 তারা কি আমার কাছ থেকে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে?
 মার্কিন বিমানগুলো সৌদি থেকে ইরাকে যেয়ে তাদের সন্ত্রাস পরিচালনা করছে।
 আমি কি তাদেরকে মাল দিয়ে সাহায্য করছি?
 অথচ ইরাক-আফগানের যুদ্ধে সৌদি হচ্ছে,
 অ্যামেরিকান সন্ত্রাসীদেরকে সাহায্যকারী অন্যতম একটি রাষ্ট্র।
 ওহে সৌদি শাসকগুষ্ঠি! তোমরা লক্ষ্য কর, আমরা আর তোমরা উভয়েই সন্ত্রাসের অংশীদার!
 হ্যাঁ তবে যদি আমি তোমাদের থেকে আগে বেড়ে থাকি আলহামদুলিল্লাহ্! কেননা আমি মুসলিম।
চার
 হ্যাঁ এখন আমার বুঝে এসেছে......!
 আমি সন্ত্রাসী, কেননা আমি সৌদি শাসকদেরকে তাকফীর করেছি।
  কিন্তু ..................!
 উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তো সৌদি সরকারও সাদ্দামকে তাকফীর করেছিল?!!
 সৌদি সরকার সাদ্দামকে কেন তাকফীর করল?
 এই কারণে তাকফীর করেছে, সে আল্লাহ্ তায়ালার বিধান ছাড়া ভিন্ন বিধানে শাসন পরিচালনা করে? সৌদি সরকারও তো আল্লাহ্ তায়ালার বিধান ব্যতিরেকে ভিন্ন বিধানে শাসন পরিচালনা করে থাকে।
 আর আমি তো তাকফীরে এই ফাতওয়া পেয়েছি সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়েখ মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম আলে-শাইয়েখ রহঃ এর ফাতওয়া থেকে, যার ফলে এই ফাতওয়া সৌদি সরকার বাজারে নিষিদ্ধ করেছে।  শায়েখ আবদুল্লাহ বিন হামীদ সহ অন্যান্য শায়েখদের থেকেও একই ফাতওয়া বিদ্যমান আছে।

আর আমি দেখছি বিলাদুল হারামাইনের অধিকাংশ বিষয়ে,
 মানব রচিত আইন দ্বারা ফায়সালা করা হয়।
 তাহলে কেন তারা সাদ্দামকে তাকফীর করল?
 উত্তরঃ এ কারণে, সে একজন বাথিস্ট?
 বাথিস্ট কি? এই শব্দে তো ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে কোন কারণ বিদ্যমান নেই।
 তারা কি এ কারণেই কুফর মনে করে না যে, বাথিস্টদের কাছে সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বর মাপকাঠি হচ্ছে দ্বীনের পরিবর্তে জাতীয়তা। ?
 সৌদির কাছেও তো সম্পর্ক ও বন্ধুত্বয়ের মাপকাঠি,দ্বীনের পরিবর্তে দেশ ও আরব জাতীয়তার উপর।

বাথিস্টরা কি এ জন্য কাফের,
 কেননা তাদের কাছে একজন আজমি মুসলিমের চেয়ে আরবি কাফের শ্রেষ্ঠ?
 আরব জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সৌদি শাসকদের কাছে একজন আরবি কাফের
 একজন বাংলাদেশী মুসলিমের চেয়ে উত্তম।

হ্যাঁ যদি আমি এ কারণেই সন্ত্রাসী হই যে,
 আমি সৌদি সরকারকে কাফের মনে করি।
 তাহলে সৌদি সরকারও এ জন্য সন্ত্রাসী যে,
 তারা সাদ্দাম হুসাইন কে কাফের মনে করে।

বরং সৌদি সরকার এ ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে------
 ১১ সেপ্টেম্বরের মোবারক আক্রমণ পরিচালনাকারী বীরদেরকে
 সুলতান বিন আব্দুল আযীয তাকফীর করেছে,
 সে বলেছে তারা নাকি ইসলামী মিল্লাত থেকে খারেয হয়ে গেছে।
 তাহলে যে ভাবে আমি ওয়ান্টেড একই ভাবে সুলতান বিন আব্দুল আযীযও যেন ওয়ান্টেড হয়।
 রিয়াদের মধ্যে মার্কিন ক্রসেডারদের উপর আক্রমণ পরিচালনাকারীদেরকে আব্দুল্লাহ তাকফীর করেছে। সুতরাং আমার মত যেন আবদুল্লাহ ওয়ান্টেড হিসাবে গণ্য হয়।
 ওরে সন্ত্রাসীর দল!!!
 আমাকে ঐ সন্ত্রাস বোঝাও! যেটার কারণে আমাকে তোমরা ওয়ান্টেড আখ্যায়িত করছ।?!!!  আমি যা করেছি তা কি অ্যামেরিকা করেনি?!!
 বরং এর চেয়ে অনেক অনেক বেশী করেছে।
 তাহলে তারা কেন সন্ত্রাসী (জঙ্গি) হচ্ছে না।?!!!
 কেন অ্যামেরিকার প্রতি সহানভুতি প্রকাশ অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে না?!
 যেভাবে আমার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ অপরাধ বলে গণ্য হচ্ছে?!!!

  আমাকে কি তোমরা নাসারা (খ্রিস্টান) হতে বলছ?
 কুফরী করতে বলছ? তাহলে অ্যামেরিকার মত আমি এই সন্ত্রাসের অপরাধ থেকে মুক্তি পাব?!!
 এটাই কি সৌদি সরকার আমার থেকে আশা করে?!
 ইহুদী-নাসারা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম গ্রহণ কর।

সৌদি সরকার সন্ত্রাস করেছে।
 সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে সহানুভূতি দেখিয়েছে।
 সন্ত্রাসীদেরকে সাহায্য করেছে।
 তাদেরকে মাল দিয়ে শক্তিশালী করেছে।
 মার্কিন সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে সব করেছে।
 তথাপি কেন তারা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হবে না?!!
 এই কারণে কি, তারা হচ্ছে একটা হুকমত বা সরকার?!!

তাহলে আমার উপরও তো আবশ্যক হচ্ছে,
 যে কোন ভাবে ক্ষমতা দখল করা।
 যাতে আমিও এই সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাই।

পাঁচ
 আচ্ছা ঠিক আছে ...............।।
 যা আলোচনা হল সব বাদ।!!!

যদিও আমি কোন অভিযোগ ব্যতিরেকেই অভিযুক্ত,
 যে সৌদি সরকার আমাকে ওয়ান্টেড আখ্যায়িত করেছে,
 যদিও সে আমার চেয়ে অনেক বেশী অপরাধে অপরাধী
 তথাপি আমি নিজেকে সমর্পণ করব ............।!

তবে আমি কিছু শর্ত দেব ----------।
 আমি এমন শর্ত দেব না, যার হক শরীয়ত আমাকে দেয়নি।

আমর প্রথম শর্ত হবে,
 আমার ফায়সালা করতে হবে শরয়ী মাহকামাতে,
 ইনসাফের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশ্য মাহকামা।

আমার আর একটি শর্ত হচ্ছে,
আমাকে নির্যাতন করা যাবে না।

আমার শেষ শর্ত হচ্ছে,
আমার যে সমস্ত আপনজনকে সরকার জিম্মি হিসাবে আটক করেছে,
তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে।

হ্যাঁ এগুলোই আমার শর্ত।

কিন্তু আমার আশংকা হচ্ছে,
সৌদি সরকার আমাকে জেলে ভরবে,
আমার সকল শর্ত অস্বীকার করবে।
তাহলে আমার পক্ষে কীভাবে সম্ভব হবে,
সরকারকে এই শর্ত পুরনে বাধ্য করতে
অথচ আমি জিন্দানখানায় শিকলাবদ্ধ।

একটা সমাধান পেয়েছি --------।
 আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এর সাথে সম্পর্ক আছে এমন কোন শায়খের কাছে যাব।
 তিনি হতে পারেন, সাফার আল- হাওালী।
 আমি তার কাছে আমার শর্তগুলো পেশ করব,
 তাকে এ ব্যাপারে সরকারের সাথে আলোচনা করতে বলব।

তিনি যে এটা করতে সক্ষম হবেন, আমি এই নিশ্চয়তা পাব কীভাবে?
 হ্যাঁ এটা করা যেতে পারে যে,সরকার শর্ত মানলে তাকে এ ব্যাপারে মিডিয়ার মধ্যে প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে হবে।
 কিন্তু..................!
 এই একই কাজ কি ফাকআসী করেননি?
 ফাকআসীর শর্তগুলো হেওালি কি সৌদি পত্রিকার সমূহের মধ্যে প্রকাশ করেননি?
 তথাপি ফাকআসী তার হক সমূহের নিশ্চয়তা পেয়েছে কি?!!
 না পায়নি!!!
 স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি নায়েফ দৃশ্যপটে এলো,
 এসে হেওালিকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করল।
 ফাকআসীর শর্ত সমূহ অস্বীকার করল।
 নায়েফের দাবি অনুযায়ী হেওালি মিথ্যা বলেছিল কি?
 না এটাই স্বাভাবিক যে নায়েফ হেওালিকে মিথ্যার অপবাদ দিয়েছে?
 তাহলে দুর্বল কারাবন্দী ফাকআসীর ক্ষেত্রে কি অবস্থা হয়েছে?!!
 আর কে আছে এমন, যে ফাকআসীর শর্তের নিশ্চয়তা দেবে, তার জামিন নেবে?
 আমি আত্মসমর্পণের চিন্তা থেকে সরে এসেছি,
 কারণ আমি যে সতর্কতাই নিতে চাই, ফাকআসী তাই গ্রহণ করেছিল।
 কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
 তাই মৃত্যুই আমার কাছে উত্তম ও অধিক প্রিয় ............।

  ছয়
 যদিও আমি আত্মসমর্পণের চিন্তা বাদ দিয়েছি,
 কিন্তু সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে মুক্ত হবার দিঢ় সংকল্প থেকে পিছে সরে আসতে পারিনি।
 সন্ত্রাসের সকল উপকরণ দ্বারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে অ্যামেরিকা।
 তাদেরকে সন্ত্রাসের সকল সংজ্ঞা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায়।
 অথচ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো অ্যামেরিকার ভালবাসা অর্জনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত,
 আমাকে অপরাধী সাব্যস্তকারী সৌদি সরকার এ ক্ষেত্রে আরও অগ্রগামী।
 অ্যামেরিকার সাথে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক ও ভালবাসা তাদের জন্য গর্বের ব্যাপার কেন?
 অথচ আমার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ অপরাধ!!!
 যে রাষ্ট্র মার্কিন সন্ত্রসিদেরকে সাহায্য করে,
 তার সাথে সম্পর্ক রাখা জনগণের উপর ওয়াজিব কেন?!!
 আর শরয়ী জঙ্গিদের (সন্ত্রাসীদের) ব্যাপারে সামান্য সহানুভূতি প্রকাশ
 জনগণের জন্য হারাম কেন?!!
 সন্ত্রাসী সৌদি সরকারকে সাহায্য করা,
 কেন জনগণের উপর আবশ্যক?
 আর আমাদেরকে সাহায্য করা হারাম?!!

  আমি কারণ খুঁজে পেয়েছি ......
 হ্যাঁ... হ্যাঁ...  আমি এখন কারণ বুঝতে পেরেছি .........।
 আমি উসামা রহঃ এর আওয়াজ শুনতে পেলাম ----------- 
 
  إنَّ الناس يميلون مع القوي ..  إرهابُنا جريمة .. وإرهاب أمريكا أمر مشروع ..  أبرياؤهم أبرياء .. وأبرياؤنا ليسوا أبرياء .. 
মানুষেরা ঝোঁকে শক্তিশালীর দিকে ...।।
আমাদের “সন্ত্রাস” হচ্ছে অপরাধ
আর অ্যামেরিকার সন্ত্রাস হচ্ছে বৈধ।
তাদের নিরাপরাধ জনসাধারণ নিরাপরাধ
আর আমাদের নিরাপরাধ জনসাধারণ অপরাধী।!!

আল্লাহ্ তায়ালা আপনার প্রতি রহম করুন, হে উসামা!
এখন বুঝেছি কবিতার পংতি।
এখন চিনেছি ঘোড়ার লাগাম।
এখন পেয়েছি সমস্যার সমাধান!

হ্যাঁ এখন বুঝেছি......।।
 আমাকে শক্তিশালী হতে হবে।
যখন তুমি শক্তিশালী হবে,
তখন তুমি যাই কর সন্ত্রাসী হবে না।
ঠিক আছে!!!
কিন্তু আমি যে দুর্বল এটা তাদেরকে কে বলল?
হয়ত আমি শক্তিশালী কিন্তু সেটা তারা জানে না!!?

আচ্ছা!!
তাদেরকে আমার শক্তি দেখাতে হবে,
যেমন তারা অ্যামেরিকার শক্তি দেখেছে।
 আর তখনি আমার সাথে ক্ষমতাশীলরা
উষ্ম বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করবে।
তখনি সৌদি শাসক নড়েচড়ে বসবে,
আমার সাথে চুক্তি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

এই শাসকেই তো শ্যরন এর সাথে চুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে ছিল।
ইয়াহুদী সন্ত্রাসী শ্যরন কি একজন মুসলিম জঙ্গির চেয়ে ভাল?!!!

সন্ত্রাসের (জঙ্গিবাদের) অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার এক মাত্র উপায় হচ্ছে ---
তোমাকে শক্তিশালী হতে হবে।

ঠিক আছে ......।
কিছু সময় অপেক্ষা কর ............।
অচিরেই ইনশাআল্লাহ্ তোমরা আমরা শক্তি দেখতে পাবে ......।।
এটাই ইসলামী সন্ত্রাসীর বার্তা...।।
হে আল্লাহ্!
আপনি মুজাহিদিন সন্ত্রাসীদের ত্রাসকে আপনার পথে কবুল করুন।
হে আল্লাহ্! আপনি নিহত জঙ্গিদের রূহগুলোকে আপনার পথে গ্রহণ করুন। 
কপিরাইট @আহমাদ নাবীল

পশ্চিমা “মরাল সুপিরিওরিটি”-র ফ্যালাসি


পশ্চিমা বিশ্ব এবং মুসলিম বিশ্বে তাদের অন্ধ অনুসারীরা ইসলামকে আক্রমণ করার সময় কয়েকটা ধরাবাঁধা আর্গুমেন্ট ব্যবহার করে। এগুলোর বেশীরভাগই হল প্রাচ্যবিদ বা ওরিয়েন্টালিস্টদের দ্বারা ব্যবহৃত নানা বস্তাপচা যুক্তি, যেগুলোকে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং তথ্যগত ভাবে ভুল। যুক্তিগত বা নৈতিক উৎকর্ষ না, ফ্যাকচুয়াল অ্যাকিউরিসি না, এই আর্গুমেন্টগুলোর মূল চালিক শক্তি হল এগুলোর ইনবিল্ট ইসলামবিদ্বেষ। দুঃখজনক আমাদের সমাজে এরকম মানুষের অভাব নেই যারা হাসি মুখে এবং খুশি মনে পশ্চিমা বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক গোলামীকে মেনে নিয়েছেন। পশ্চিমাদের যেকোন দাবি তারা বিনাবাক্য ব্যয়ে মেনে নিতে রাজি। এই কারণে আর্গুমেন্টগুলোর প্রচার আমাদের শিক্ষিত সমাজের মধ্যেও বেশ ভালো মতোই হয়েছে। ইসলামবিদ্বেষীদের এরকম একটি আর্গুমেন্ট হল মরাল সুপিরিওরিটি-র আর্গুমেন্ট। পশ্চিমা উদারনৈতিক চিন্তাধারা [Liberalism] এবং সেক্যুলারিসমকে নৈতিকভাবে ইসলামের চাইতে শ্রেষ্ঠতর দাবি করা। লিবারেলিসম আর সেক্যুলারিসমের এথিকাল সিস্টেমকে ইসলামের দেয়া নৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর দাবি করা। ইসলামবিদ্বেষীরা দুই ভাবে এই দাবির পক্ষে যুক্তি দেয়ার চেস্টা করে। প্রথমত তারা ইসলামকে আক্রমণ করে। “ইসলাম নারী স্বাধীনতা দেয় না, ইসলাম চোরের হাত কাটতে বলে, ইসলাম অমানবিক, ইসলাম বর্বর, ইসলাম চারটা বিয়ের অনুমতি দিয়েছে, ইসলামে বাক স্বাধীনতা নেই, ইসলামের জিহাদের কথা আছে...” এরকম বিভিন্ন কথা বলে। এটা হল নৈতিক ভাবে ইসলাম অধম এটা প্রমাণ করার জন্য চেস্টা। দ্বিতীয়ত, তারা বিভিন্ন ভাবে প্রমাণ করার চেস্টা করে কেন তাদের দর্শন এবং নৈতিক চিন্তাধারা উন্নততর। তারা কত নৈতিক, তারা কত উদার, তারা নীতির প্রশ্নে কতোটা আপোষহীন, তারা মানবাধিকারে কত বিশ্বাসী, মানবতার ধারকবাহক – এসব ব্যপারে বিভিন্ন দাবি করে। আমরা সবাই এদুটো অ্যাপ্রোচের সাথেই পরিচিত। আমরা সবাই কমবেশী এই আর্গুমেন্টগুলো শুনেছি। অনেকে হয়তো কিছুটা প্রভাবিতও হয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা কি আসলে পশ্চিমাদের, এবং তাদের বাদামী চামড়ার অন্ধ অনুসারীদের এই বক্তব্যগুলোকে সমর্থন করে? কোন জাতি বা সভ্যতা কতোটা নৈতিক এটা পরিমাপ করার একটা ভালো উপায় হল সেই জাতি বা সভ্যতা তার অধিনস্ত এবং দুর্বলদের সাথে কি রকম আচরণ করে সেটা লক্ষ্য করা। যাদের উপর তারা কতৃত্ব অর্জন করেছে তাঁদের সাথে কি রকম আচরণ করে সেটা থেকে কোন জাতি আসলেই কতোটা নৈতিক সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। প্রয়োজনের তাগিদে কেউ তার নৈতিকতা কতোটা কম্প্রোমাইয করে সেখান থেকেও আপনি একটা ধারনা পাবেন। নিচের লিঙ্কটি হচ্ছে ২০ শে সেপটেম্বর, ২০১৫ তে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি আর্টিকেলের। http://tinyurl.com/psqpqqd লিঙ্ক থেকে আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়তে পারবেন, আমি এখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে মূল বিষয়টা বলছি। যেকোন দেশে আগ্রাসন চালানোর সময় আগ্রাসী ভিনদেশী সেনাদল কিছু স্থানীয় লোককে ব্যবহার করে। তারা এসব কোলাবরেটরদের মিত্র বা অ্যালাই বলে থাকে। আফগানিস্তানের মুসলিম তথা তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অ্যামিরিকানরাও কিছু স্থানীয় দালালদের ব্যবহার করছে। অ্যামিরিকার এসব মিত্রদের অনেকেরই হবি হচ্ছে ধর্ষণ । বিশেষ করে কমবয়েসী ছেলেদের ধর্ষণ করা। অ্যামিরিকানদের এই মিত্রদের কম্যান্ডাররা কমবয়েসী শিশু এবং কিশোরদের নিজেদের যৌনদাস হিসেবে ব্যবহার করতো। তাঁদেরকে ২৪ ঘন্টা বিছানার সাথে শেকল দিয়ে বেধে রাখতো আর রাতে ধর্ষণ করা হতো। এবং এই কাজগুলো হতো অ্যামিরিকানদের বেইসের ভেতরে। অর্থাৎ অ্যামিরিকানদের সেনাঘাটিতে, অ্যামিরিকানদের মিত্ররা, অ্যামেরিকানদের উপস্থিতিতে শিশুদের ধর্ষণ করতো। শুধু তাই না, অ্যামিরিকান সেনাবাহিনী এই বিকৃতকাম, ধর্ষক ও সমকামিদের বিভিন্ন গ্রামের নেতৃত্বের পদে বসাতো। তাই এটা বলা অনুচিত হবে না যে, এই শিশু কিশোরদের উপর নির্যাতনের জন্য অ্যামেরিকা দায়ী। এরকম একটি মেরিন বেইসে কিছু কিশোর মুক্ত হবার চেস্টা করার সময় একজন অ্যামেরিকান সেনাকে গুলি করে হত্যা করে। ঐ সেনা মারা যাবার প্রেক্ষিতেই নিউইয়র্ক টাইমসের এই আর্টিকেলটি লেখা। এমন না যে তারা মুসলিম শিশুদের অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আর্টিকেলটি লিখেছে। অনেকে মনে করতে পারেন এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দেখা যাক অ্যামেরিকানরা অন্য যে দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়েছে সেখানে কি অবস্থা। ইরাকে অ্যামেরিকান আগ্রাসন চলাকালীন সময়ে কুখ্যাত আবু গ্রাইব কারাগারে অ্যামেরিকানর বন্দীদের উপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালানো হয়। যা সে সময় বিশ্ব মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। কিন্তু যা মূল ধারার মিডিয়াতে আলোচিত হয় নি সেটা হল অ্যামেরিকান সেনারা আবু গ্রাইব কারাগের শুধু মুসলিম নারীদেরকেই ধর্ষণ করে নি, বরং তাঁদের সামনে তাঁদের ছোট ছেলেদের ধর্ষণ করেছে এবং সেটার ভিডিও করেছে। লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের অক্ষমতা ক্ষমা করুন। http://tinyurl.com/otfeory http://tinyurl.com/qyqrjh এ ব্যাপারে পুলিৎযার জয়ী সাংবাদিক সিমোর হারশ এর বক্তব্যঃ http://tinyurl.com/nnhh59u আচ্ছা এমনকি হতে পারে এটা শুধু অ্যামেরিকানরা করছে, অথবা এটা শুধু ইরাক এবং আফগানিস্তানেই ঘটেছে? আচ্ছা আমরা একটু অন্যদিকে তাকাই। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বাহিনী এমন একটি সেনবাহিনী যা পরিচালিত জাতিসংঘের আদর্শ অনুযায়ী। যেমন সোভিয়েত আর্মির পেছনে চালিকা শক্তি ছিল সোশ্যালিসম, যা ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শ। তেমনিভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর চালিকা শক্তি হল জাতিসংঘের আদর্শ – সেক্যুলার হিউম্যানিসম বা “ধর্ম নিরপেক্ষ মানবতাবাদ”। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বাহিনির সদস্যরা সেক্যুলার হিউম্যানিসমের মহাম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে যেসব অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গেছেন সেখানে ধর্ষণের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে এসেছেন। মালি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো বিভিন্ন জায়গায় এই শান্তিরক্ষীরা এই কাজ করেছে। হাইতিতে প্রায় এক দশক ধরে এই ধর্ষণ চলছে। http://tinyurl.com/kq3zytd http://tinyurl.com/nqthgh9 http://tinyurl.com/ndahex4 http://tinyurl.com/q72ojgb এই ধর্ষণের স্বীকার শুধু নারীরা না। প্রতিটি ক্ষেত্রে শিশুদের ধর্ষণ করা হয়েছে। একটু প্যাটার্নটা লক্ষ্য করুন। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিকটিম হলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নারী, শিশু এবং বন্দীরা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা দাবি করেছে তারা এসব দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যাচ্ছে, গণতন্ত্র আনার জন্য যাচ্ছে, মানবাধিকারের জন্য যাচ্ছে। অর্থাৎ এই মহান আদর্শগুলো দ্বারা বলীয়ান সেনারা সবচেয়ে দুর্বল মানুষগুলোকে তাঁদের সবচাইতে দুর্বল সময়ে আক্রমণ করেছে। এবং মানবতা, শান্তি, গন্ততন্ত্র এই আদর্শগুলো তাঁদের এই পৈশাচিকতা, এই প্রিডেটরি বিহেইভিয়ারকে থামাতে পারে নি। সবচাইতে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল তারা তো এসব ঘটনা চেপে রাখার চেস্টা করেছেই, কিন্তু প্রকাশিত হবার পরও তারা এই ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে ইচ্ছুক না। তারা কিন্তু বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায় তাদের সেনাবাহিনী কত নৈতিক, কত মানবতাবাদী। মুসলিমরা জঙ্গী আর তারা মানবতাবাদী। অথচ তাদের সেনাবাহিনী, তাদের আদর্শের ধারকরাই, আফগানিস্তান ও ইরাকে তেজস্ক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে, ওয়াইট ফসফরাস ব্যবহার করে, শিশুদের ধর্ষণ করে, নারীদের ধর্ষণ করে সেটার ভিডিও করে, নিজেরা নিজেদের ধর্ষণ করে, ড্রোন হামলা করে নিয়মিত শিশু হত্যা করে, ঘন জনবসতি পূর্ণ এলাকায় নির্বিচারে বম্বিং করে। এতো কিছু করার পরও তারা মানবিক। তারা মানবতাবাদী তারা মহান, আর মুসলিমরা বিশ্বাস করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড, তালিবান মনে করে চুরির শাস্তি হাত কাঁটা, আমরা মনে করি শারীয়াহ মানবজাতির একমাত্র সংবিধান – এজন্য আমরা বর্বর, মধ্যযুগীয়, জঙ্গি!. পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্ট, ইসলামবিদ্বেষী এবং তাদের বাদামী চামড়ার সন্তানরা আমাদের খুব করে বোঝানোর চেস্টা করেন ইসলামকে মানুষকে বন্দী করে, অসম্মানিত করে, অধিকার কেড়ে নেয় আর পশ্চিমাদের আদর্শগুলো মানুষকে সম্মানিত করে। বাস্তবতা হল পশ্চিমাদের আদর্শ মানুষ চরমভাবে অসম্মান করে এবং তাঁকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে নামিয়ে আনে। এসব আদর্শ পুরুষকে লম্পট এবং নারীকে পণ্যে পরিণত করে। এই আদর্শগুলো মানুষকে “অধিকার, মানবতা, স্বাধীনতা-র মতো কিছু সুন্দর সুন্দর শব্দ শুনিয়ে অন্ধ ও বধির বানিয়ে রাখে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত অর্থ-সম্পদ-নারীর পেছনে ছুটে চলা এক ঘোরগ্রস্থ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করে। এই আদর্শগুলো ন্যায়বিচার দেয় না, সুসাশন দেয় না, নৈতিক উৎকর্ষতা আনে না বরং উল্টোটা করে। এই আদর্শ এমন কিছু মানুষ তৈরি করে যারা মুখে মানবতা আর মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু কাজের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। তাদের বর্বরতা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ক্রুসেইডার পূর্বপুরুষদের হিংস্র পাশবিকতাকেও ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে ইসলাম প্রকৃত ভাবে মানুষকে মুক্ত করে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করে। নারীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়, সুরক্ষিত রাখে এবং মানবচরিত্রের অন্ধকার দিকটিকে লাগাম দিয়ে রাখে। ইসলাম মানুষকে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনে। সৃষ্টির উপাসনা থেকে মুক্ত করে মানুষকে এক আল্লাহ-র ইবাদাতে নিয়োজিত করে। অর্থ, সম্পদ, সম্মান, ক্ষমতার পেছনে ছোটার বদলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মানুষকে প্রতিযোগিতা করতে শেখায়। এ কারণে যেসব বিকৃতকাম, সমকামি, শিশুকামিদের অ্যামেরিকান সেনারা মিত্র হিসেবে গ্রহণ করে তালিবান তাদের খুঁজে বের করে হত্যা করে। অ্যামেরিকানরা যেখানে পপি চাষ থেকে অর্থ উপার্জন করে তালিবানের শাসনামলে সেই পপি চাষ নেমে আসে শুন্যের কোঠায়। অ্যামেরিকা তার তথাকথিত সুপিরিওর শাসন ব্যবস্থা দিয়ে প্রায় এক দশক চেস্টা করেও প্রহিবিশানের সময় মদ নিষিদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তালিবান মাত্র কয়েক বছরে পপি চাষ বন্ধ করে ফেলে। ব্রিটীশরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করে আর তালিবানের কাছে বন্দী ইয়োভন রিডলী ইসলাম গ্রহণ করে। এটা হল এক সুস্পষ্ট পার্থক্য এই দুই আদর্শের মধ্যে। নিশ্চয় এটা একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য, এবং নিশ্চয় এর মাঝে প্রমাণ আছে তাঁদের জন্য যারা নিজেদের বিচার-বুদ্ধি-বিবেককে এখনো সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাদের কাছে বন্ধক দেননি। বাহ্যিক চাকচিক্য, চটকদার কথা, মানবতা ও শান্তির রেটরিক এবং পশ্চিমাদের বৈষয়িক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্যে আমরা বিভ্রান্ত হই। বিশেষ করে আমরা যারা সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত হই তাঁদের মাথায় ছোটবেলা থেকেই গেঁথে দেয়া হয় যে সফলতার সংজ্ঞা হল পশ্চিমাদের মতো হওয়া। একই সাথে এই শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজ আমাদের শেখায় পশ্চিমাদের সব দাবিগুলোকে ধ্রুব বাস্তব সত্য হিসেবে মেনে নিতে। কোন অপ্রিয় প্রশ্ন উত্থাপন না করতে। আমরা পশ্চিমাদের বড় বড় স্কাইস্ক্রেইপার আর বিশাল অর্থনীতি দেখি, কিন্তু এগুলোর পেছনে ঔপনিবেশিক এবং নব্য-ঔপনিবেশিক লুটপাটের ভূমিকা দেখি না। আমরা রেনেসন্স আর এনালাইটেনমেন্ট থেকে শেখার কথা বলি কিন্তু রেনেসন্স আর এনলাইটেমেন্ট মুসলিমদের কাছে কতোটা ঋণী সেটা জানার চেস্টা করি না। আমরা জেনেভা কনভেনশানের কথা বলি, কিন্তু জেনেভা কনভেনশানের প্রায় সাড়ে ১৩০০ বছর আগে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ যে মানবাধিকার এবং যুদ্ধবন্দীর অধিকারের ব্যাপারেয়া মানব ইতিহাসের সর্বোৎকৃষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে গেছেন এটা নিয়ে বলতে সংকোচ বোধ করি। জন স্টুয়ারট মিল, বেন্থাম, লিঙ্কনম, প্লেইটো, মার্ক্স যেখানে এতো কারুকার্যময় ব্যাখ্যা দিয়েছেন এগুলোর মাঝে আল্লাহ-র দেয়া সরল ব্যাখ্যা, যা বেদুইন আর বিজ্ঞানী, সবার কাছেই বোধগম্য, আমাদের আকর্ষণ করে না। আমাদের মধ্যে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স কাজ করে। আমরা নিজেদের ক্ষুদ্র, অপাংতেয় মনে করি। আমরা মনে করি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ হবার উপায় হল পশ্চিমাদের অনুসরণ করা। আমাদের সফল হবার উপায় হল ফিরিঙ্গীদের মতো হবার চেস্টা করা। তাই আমাদের সমাজে পশ্চিমাদের অনেক বাদামী চামড়ার সন্তান আছেন যারা পশ্চিমাদের ইসলাম বিদ্বেষ অনুসরণ করাকে সভ্যতা, সাফল্য আর জ্ঞানের মাপকাঠি মনে করেন, এতে অবাক হবার কিছু নেই। এই মানুষগুলো পশ্চিমা বিশ্বকে প্রভু হিসেবে, পশ্চিমা আদর্শকে জীবনবিধান, দ্বীন, হিসেবে গ্রহন করেছে। এই বাদামী ফিরিঙ্গী, নাস্তিক এবং কাফিরদের কথাবার্তা, প্রচার প্রচারণা এবং মিডিয়ার প্রভাবের কারণে অনেক সাধারণ মুসলিম প্রভাবিত হয়ে পড়েন। কিন্তু আপনি যদি অন্ধভাবে ওরিয়েন্টালিস্ট এবং তাদের গোলামদের বক্তব্য গ্রহণ না করে একটু খুঁটিয়ে দেখার চেস্টা করেন, তাহলে দেখবেন, মিথ্যা, প্রতারণা, অনৈতিকতা, পাশবিকতা, এবং পাপাচার কিভাবে এই সভ্যতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে, দেখবেন কিভাবে অন্ধকার এই সভ্যতাকে ঘিরে রেখেছে। আমি এখানে তাদের সেনাদের আচরণের মাধ্যমে মাত্র একটি উদাহরণ দিয়েছি, এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। আপনি যদি একটু চিন্তা করেন তাহলে এই বুলি সর্বস্ব আদর্শের অন্তঃসারহীনতা আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে পড়বে। এরা যেসব আদর্শের ক্যানভাসিং করছে এগুলো গত দুইশ বছরে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ আর নোংরামি ছাড়া পৃথিবীকে কিছু দিতে পারে নি। যেখানে ইসলামের সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে ১৩০০ বছরের খিলাফাহ-র ইতিহাস। ১৩০০ বছর ধরে শারীয়াহ এর আলোকে ইসলাম দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ ও রাস্ট্রের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কারো যদি আসলেই প্রশ্ন জাগে কোন আদর্শ মানব জীবনের সমাধান দেয়ার ব্যাপারে সফল, তাহলে সে ইতিহাস দেখে নিক। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, ইসলামই প্রথম মানবাধিকার নিশ্চিত করেছে, ইসলাম নারীকে সম্মান এবং স্বাধীনতা দিয়েছে, ইসলাম ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে, ইসলাম প্রথম ওয়েলফেয়ার স্টেইটের ধারণা এনেছে এবং বাস্তবায়ন করেছে, ইসলাম রাস্ট্রীয় ভাবে জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ইসলাম মানবজাতিকে সর্বোত্তম আদর্শ দিয়েছে। ইসলামই একমাত্র ব্যবস্থা যা মানবজীবনের সমস্যার সফলতার সাথে সমাধান করেছে, বহিঃশত্রুর মোকাবেলা করে টিকে থেকেছে, নিজ আদর্শের বিস্তার করেছে। ইসলাম এই কাজগুলো বাস্তবে করেছে। ইসলাম পশ্চিমাদের আদর্শের মতো কথায় সীমাবদ্ধ না। ইসলাম কাজের মাধ্যমে তাঁর আদর্শিক উৎকর্ষ প্রমাণ করেছে । পশ্চিমা চিন্তাধারা জীবনবিধানের ব্যাপারে অনেকগুলো মডেল দিয়েছে কিন্তু কোনটাই বাস্তব সমাধান তো দেয়-ই নি বরং নতুন সমস্যা সৃষ্টি করেছে। আর ইসলাম একটি মডেল দিয়েছে এবং ১৩০০ বছর ধরে সেই মডেলের বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানব জাতির সমস্যার সমাধান দিয়েছে। একজন চিন্তাশীল ব্যক্তির জন্য প্রমাণ হিসেবে এটুকুই যথেস্ট। এবং ইন শা আল্লাহ, ইসলামী খিলাফাহ আবারো প্রতিষ্ঠিত হবে, আল্লাহ-র মাটিতে আল্লাহ- র শারীয়াহ আবারো কায়েম হবে। আমরা সমর্থন করি আর না করি এটা আল্লাহ-র প্রতিশ্রুতি যা হবেই। যে বিষয়টা নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা হল আমরা নিজেদের কিভাবে দেখতে চাই। আমরা কি নিজেদের সম্মানিত অবস্থায় দেখতে চাই, আমরা কি মাথা তুলে মর্যাদা এবং গর্বের সাথে বাঁচতে চাই? নাকি আমরা চাই পশ্চিমা দাসত্ব মেনে নেয়ার মাধ্যমে অপমান আর অন্ধ অণুসরণের এক জীবন? আল্লাহ আমাদের ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেনঃ “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে…” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০] তাই আমাদের সম্মান ইসলামেই নিহিত। আমাদের জন্য আল্লাহ ইসলামকে মনোনীত করেছেন, তাই আর যা কিছুরই অনুসরণ আমরা করি না কেন আমরা কখনোই সফল হতে পারবো না। “নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম... “ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯] রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তোমরা যখন ধারে ক্রয়-বিক্রয় করবে, গাভীর লেজ ধরে থাকবে, কৃষি কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে, তখন আল্লাহ্ তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দেবেন এবং তা তোমরা হটাতে পারবে না, যতক্ষন না তোমরা নিজের দ্বীনের দিকে ফিরে আস।(আহমদ, আবু দাউদ, আল হাকিম) আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল আমাদের সবাইকে বোঝার তাউফিক্ব দান করুন, আমিন।

তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন —আল-বাক্বারাহ ২৪৫


বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম

কে আছে যে আল্লাহকে ﷻ ধার দেবে? তাহলে তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন। আল্লাহই ﷻ কমিয়ে দেন এবং বাড়িয়ে দেন। তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে। [আল-বাক্বারাহ ২৪৫] এই আয়াত পড়ে যে কোনো মুসলিমের লজ্জা পাওয়া উচিত। আল্লাহ ﷻ আমার কাছে ধার চাইছেন? আমি দুনিয়ার লোভে এতটাই স্বার্থপর হয়ে গেছি যে, তিনি ﷻ এই ভাষা ব্যবহার করে আমাকে বলছেন তাঁর পথে খরচ করতে? ধরুন, আপনার মা ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে কাজ করে আপনাকে বড় করেছেন, আপনার পড়ালেখার খরচ যোগান করেছেন। তিনি আপনাকে একটুও কষ্ট করতে দেননি, যেন আপনার পড়াশুনায় কোনো ক্ষতি না হয়, যেন আপনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। আপনার মায়ের এই বিরাট আত্মত্যাগের জন্য আপনি বড় হয়ে শিক্ষিত হলেন, ডিগ্রি অর্জন করলেন, যথেষ্ট সম্পত্তির মালিকও হলেন। আপনার মা আপনার যত এত কষ্ট না করলে আপনি এত উপরে উঠতে পারতেন না। একদিন তিনি আপনাকে অনুরোধ করছেন, ‘বাবা, আমাকে কিছু টাকা ধার দেবে? আমি আগামী বছরই ফেরত দিয়ে দেবো। আর আমি তোমাকে ধারের টাকার দ্বিগুণ ফেরত দেবো। কোনো চিন্তা করো না বাবা। একটু ধার দেবে?’ —যখন মা তাকে এই ভাষায় অনুরোধ করছেন, দ্বিগুণ ফেরত দেওয়ার কথা বলছেন, এথেকেই বোঝা যায়, সে ছেলে হিসেবে কতটা নীচে নেমেছে, কতটা লোভী হয়ে গেছে যে, তাকে এভাবে বোঝাতে হচ্ছে।

আল্লাহ্‌কে ধার দেয়া কি? আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে কয়েকটি খাত দিয়েছেন খরচ করার জন্য। বাবা-মা, পরিবার, নিকট আত্মীয়, এতিম, মিসকিন, দুস্থ পথচারী, জিহাদ — এই সব ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের সম্পত্তি খরচ করাই হচ্ছে আল্লাহর ﷻ পথে খরচ করা। তিনি ﷻ একে ধার বলে এটাই বোঝাচ্ছেন যে, দুনিয়াতে আমরা যখন সম্পত্তি খরচ করি, তখন তা আমাদের কাছ থেকে চলে যায়। কিন্তু যখন আমরা আল্লাহর ﷻ পথে সম্পত্তি খরচ করি, সেটা আমাদের কাছ থেকে চলে যায় না। বরং সেটা ধার হিসেবে জমা হয়। আল্লাহ ﷻ একদিন তাঁকে দেওয়া সমস্ত ধার ফেরত দেবেন, বহুগুণে ফেরত দেবেন। আমাদের অনেকেরই দান করতে গেলে অনেক কষ্ট হয়। কোনো এতিমখানায় দান করলে, বা কোনো গরিব আত্মীয়কে হাজার খানেক টাকা দিলে মনে হয়: কেউ যেন বুকের একটা অংশ ছিঁড়ে নিয়ে গেল। আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে চিন্তা করতে পারি— দুনিয়াতে আমার একটি ক্ষণস্থায়ী কারেন্ট একাউন্ট রয়েছে, এবং আখিরাতে আমার আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট রয়েছে। আমি আল্লাহর ﷻ রাস্তায় যখন খরচ করছি, আমি আসলে আমার দুনিয়ার একাউন্ট থেকে আখিরাতের একাউন্টে ট্রান্সফার করছি মাত্র। এর বেশি কিছু না। আমার সম্পত্তি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না, আমারই থাকছে, যতক্ষণ না আমি দান করে কোনো ধরনের আফসোস করি, বা দান করে মানুষকে কথা শোনাই।[১] একদিন আমরা দেখতে পাবো: আমাদের ওই একাউন্টে কত জমেছে এবং আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে প্রতিটা দানের বিনিময়ে ৭০০ গুণ বেশি মুনাফা দিয়েছেন।[১] সেদিন আমরা শুধুই আফসোস করব, “হায়, আর একটু যদি আখিরাতের একাউন্টে ট্রান্সফার করতাম! তাহলে আজকে এই ভয়ংকর আগুন থেকে বেঁচে যেতাম!” এই আয়াতের আগের আয়াত ক্বিতাল সম্পর্কে আদেশ। এরপরেই আল্লাহ ﷻ তাকে ধার দিতে বলে ক্বিতাল বা যুদ্ধের জন্য আমাদের সম্পত্তি খরচ করতে বলেছেন। যুদ্ধের জন্য প্রচুর খরচ দরকার। বিরাট সামরিক বাহিনী তৈরি, তাদের বেতন, খাওয়ার খরচ, যুদ্ধের সরঞ্জাম কেনা, প্রযুক্তি তৈরি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি, যানবাহনের খরচ ইত্যাদি হাজারো খাতে প্রচুর পরিমাণে খরচ করতে হয়। এই খরচ যোগানের ব্যবস্থা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দায়িত্ব। যথেষ্ট খরচ না করলে মুসলিম বাহিনী শত্রু বাহিনীর তুলনায় দুর্বল হবে, যুদ্ধে হেরে যাবে, তারপর দেশ দখল হয়ে যাবে শত্রুর কাছে। শত্রু তখন আমাদের মেরে, জমি জমা সব দখল করে নিয়ে যাবে। এভাবে আমরা সবদিক থেকেই হারাবো। একারণেই যুদ্ধের জন্য খরচ করার প্রতি এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এই খরচের বিনিময়ে এত বড় পুরষ্কারের কথা বলা হয়েছে। তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে একদিন আপনি রাস্তায় একটা বুড়ো ফকিরকে দেখে কষ্ট পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে, তাকে দোকানে নিয়ে জামাকাপড় কিনে দিলেন। এর বিনিময়ে হয়তো আল্লাহ ﷻ আপনাকে দুনিয়াতে এক কঠিন অসুখে পড়ে, চিকিৎসার পেছনে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। শুধু তাই না, আখিরাতে গিয়ে হয়তো দেখবেন: কয়েকশ একরের ঘন সবুজ বাগানের মাঝখানে এক বিশাল প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। প্রাসাদের দরজায় লেখা, ‘সেই ভিক্ষুকের জন্য’। একদিন আপনি এক গরীব আত্মীয়কে ভীষণ বিপদের সময় সাহায্য করলেন। আপনার টাকা পয়সা টানাটানি থাকার পরেও আপনি বিরাট ঝুঁকি নিয়ে তাকে অনেকগুলো টাকা দিয়ে দিলেন। এর জন্য হয়তো আল্লাহ ﷻ আপনাকে অফিসে বসের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করে চাকরি হারানো থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। আর আখিরাতে গিয়ে দেখবেন: উঁচু পাহাড়ে এক বিশাল ফুল-ফলের বাগান, বাগানের মাঝখানে ঝর্ণা, ঝর্ণার পাশে লম্বা টেবিলে সারি সারি খাবার এবং পানীয় সাজিয়ে রাখা আছে। টেবিলে একটা ছোট নোটে লেখা, ‘সেই আত্মীয়ের জন্য’। আল্লাহ্‌ই কমিয়ে দেন বাড়িয়ে দেন আমাদের যা কিছু আছে – বাড়ি, গাড়ি, টাকাপয়সা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক ক্ষমতা, মানসিক ক্ষমতা, প্রতিভা – এই সব কিছু হচ্ছে রিযক্ব رزق এবং এগুলো সবই আল্লাহর ﷻ দেওয়া।[১] রিযক্ব অর্থ যে সমস্ত জিনিস ধরা ছোঁয়া যায়, যেমন টাকাপয়সা, বাড়ি, গাড়ি, জমি, সন্তান এবং একই সাথে যে সমস্ত জিনিস ধরা ছোঁয়া যায় না, যেমন জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, মেধা।[২] এগুলোর কোনটাই আমরা শুধুই নিজেদের যোগ্যতায় অর্জন করিনি। আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে এই সবকিছু দিয়েছেন। এখন আপনার মনে হতে পারে, “কোথায়? আমি নিজে চাকরি করে, দিনের পর দিন গাধার মতো খেঁটে বাড়ি, গাড়ি করেছি। আমি যদি দিনরাত কাজ না করতাম, তাহলে কি এগুলো এমনি এমনি হয়ে যেত?” ভুল ধারণা। আপনার থেকে অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ পৃথিবীতে আছে, যারা আপনার মতই দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেছে, কিন্তু তারা বাড়ি, গাড়ি করতে পারেনি। আল্লাহ ﷻ কোনো বিশেষ কারণে আপনাকে বাড়ি, গাড়ি করার অনুমতি দিয়েছেন দেখেই আপনি এসব করতে পেরেছেন। তিনি যদি অনুমতি না দিতেন, তিনি যদি মহাবিশ্বের ঘটনাগুলোকে আপনার সুবিধামত না সাজাতেন, আপনি কিছুই করতে পারতেন না। আল্লাহ ﷻ আপনাকে সামর্থ্য দিয়েছেন, সুযোগ দিয়েছেন, আপনি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিশ্রম করেছেন। আল্লাহর ﷻ হুকুম ছিলো আপনার পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন, তাই আপনি অর্থ উপার্জন করছেন। না হলে পারতেন না। একারণেই আল্লাহ ﷻ আল-বাক্বারাহ-এর তৃতীয় আয়াতে বলেছেন যে, তিনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন, সেটা থেকে যেন আমরা খরচ করি। আল্লাহর ﷻ রাস্তায় খরচ করতে গিয়ে যেন আমরা মনে না করি যে, “এগুলো সব আমার, দিবো না কাউকে!” বরং এগুলো সবই আল্লাহর ﷻ। তিনি আপনাকে কিছুদিন ব্যবহার করার জন্য দিয়েছেন। একদিন তিনি সবকিছু নিয়ে যাবেন। আপনার পরিবারের সদস্যরা আপনাকে উলঙ্গ করে, একটা সস্তা সাদা কাপড়ে পেঁচিয়ে, মাটির গর্তে পুঁতে দিয়ে আসবে। কয়েকদিন কান্নাকাটির পর সবাই আবার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, আপনাকে ভুলে যাবে। অনেকসময় আমরা চাকরি হারিয়ে ফেললে, বা ব্যবসায় লোকসান হলে সব দোষ হয় বসের, পার্টনারের, বন্ধুর, না হলে বউয়ের। আমরা মনে করি, অমুকের জন্যই আজকে আমি সব হারিয়ে ফেললাম। আজকে আমার এই দুরবস্থার জন্য সব দোষ তার। তার জন্য আমি এত করলাম, আর সে আমার সাথে এমন করতে পারলো? —এভাবে তার প্রতি আক্রোশ ধরে রেখে বছরের পর বছর পার করি। অনেক সময় বহু বছরের সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলি। আল্লাহ ﷻ এই আয়াতে বলছেন, “আল্লাহই ﷻ কমিয়ে দেন এবং বাড়িয়ে দেন”। আমাদের রিযক্ব আসে আল্লাহর ﷻ কাছ থেকে। তিনি যখন সিদ্ধান্ত নেন রিযক্ব বাড়িয়ে দেবেন, তখন আমাদের দিনকাল ভালো যায়, চাকরি হয়, ব্যবসায় লাভ হতে থাকে, ছেলেমেয়ে উপরে উঠতে থাকে, বিদেশে যাওয়া হয়। যখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন রিযক্ব কমিয়ে দেবেন, তখন চাকরি চলে যায়, ব্যবসা ধ্বসে যায়, ছেলেমেয়ে দূরে চলে যায়, দেশে ফিরে আসতে হয় ইত্যাদি। মানুষের জীবনে রিযক্ব-এর উঠানামা হবেই। আর এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহ ﷻ হাতে। যেই বন্ধুকে আপনি দোষ দিচ্ছেন চাকরি হারানোর জন্য, সেই বন্ধু আসলে রিজক কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার একটি মাধ্যম। যেই পার্টনারের ভুলের জন্য ব্যবসা ধ্বসে গেল, সেই পার্টনারের ভুল ছিল আপনার রিযক্ব কমিয়ে দেওয়ার একটি উপলক্ষ। আমরা যখন খুব ভালভাবে উপলব্ধি করবো যে, আল্লাহ ﷻ হচ্ছেন আর-রাযযাক্ব, একমাত্র রিযক্ব দাতা, তখন আমরা কখনোই দিনকাল খারাপ গেলে অন্য কাউকে দোষ দেবো না। মেনে নেবো যে, এখন আল্লাহ ﷻ আমাকে কম রিযক্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই আমার জীবনে এসব ঘটছে। আল্লাহর ﷻ সিদ্ধান্তের জন্য কাউকে দোষ দেওয়ার কোনো মানে নেই। আল্লাহ ﷻ যখন আবার রিযক্ব বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন আমার অবস্থা আবার ভালো হয়ে যাবে। বরং আমি চিন্তা করে দেখি, এখন আমি কী করতে পারি, যা করলে আল্লাহ ﷻ আমাকে আরও রিযক্ব দেবেন? রিযক্ব বাড়ানোর জন্য আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে কী কী করতে বলেছেন? তার কাছেই তোমরা ফিরে যাবে টাকা পয়সা, বাড়ি-গাড়ি দূরের কথা, আমি তো নিজেই আল্লাহর ﷻ কাছে ফিরে যাবো। তখন কী হবে? কু’রআনে বার বার এই কথাটা আসে, “তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে”। আমাদের সময় নিয়ে এই কথাটার মর্ম উপলব্ধি করার প্রয়োজন, কারণ এটার মর্ম উপলব্ধি করলে আমাদের জীবন পাল্টে যাবে। কিছু মুসলিম আছে যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানে ত্রিশটা রোজা রাখে, কিন্তু গত এক বছরেও কোনোদিন কোনো এতিম খানায় একটা টাকাও দিতে পারেনি। ড্রাইভার, কাজের বুয়া, বাড়ির দারোয়ান তার কাছে বার বার টাকা চাইতে এসে— “দিবো, দিবো, রমজান আসুক” —এই শুনে খালি হাতে ফিরে গেছে। গরিব আত্মীয়স্বজন এসে কয়েকদিন থেকে ফিরে গেছে, কিন্তু কোনো টাকা নিয়ে যেতে পারেনি। মসজিদে বহুবার সে বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য টাকার আবেদন শুনেছে, কিন্তু কোনোদিন পকেটে হাত দিয়ে একটা একশ টাকার নোট বের করে দিতে পারেনি। ঘরের মধ্যে এসি ছেড়ে জায়নামাজে বসে নামাজ পড়া সোজা কাজ, কিন্তু পকেট থেকে হাজার টাকা বের করে গরিব আত্মীয়, প্রতিবেশী, এতিমখানায় দেওয়া যথেষ্ট কঠিন কাজ। এর জন্য ঈমান লাগে। এই ধরনের মানুষদের আল্লাহর ﷻ সাথে সম্পর্ক কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পর্যন্তই। আল্লাহর ﷻ প্রতি তাদের বিশ্বাস এখনও এতটা মজবুত হয়নি যে, তারা আল্লাহর ﷻ উপর বিশ্বাস রেখে হাজার খানেক টাকা নির্দ্বিধায় একটা এতিমখানায় দিয়ে দিতে পারে। কিয়ামতের দিনের প্রতিদান নিয়ে এখনও তাদের সন্দেহ ততটা দূর হয়নি যে, তারা নির্দ্বিধায় গরিব আত্মীয়দের চিকিৎসায় দশ হাজার টাকা লাগলেও, সেটা হাসিমুখে দিয়ে দিতে পারে। তারা যদি সত্যিই মু’মিন হতো, তাহলে তারা প্রতিদিন সকালে উঠে চিন্তা করতো, “আজকে আমি কাকে আল্লাহর ﷻ সম্পদ ফিরিয়ে দিতে পারি? আল্লাহর ﷻ কোন মেহমানকে আজকে আমি খাওয়াতে পারি? কার কাছে গিয়ে আজকে আমি জান্নাতের জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট করতে পারি?” তাহলে কি সব টাকা পয়সা আল্লাহ্‌কে দিয়ে দিব? কু’রআনের একটি আয়াত পড়ে কোনো সিদ্ধান্তে চলে গেলে ভুল সিধান্ত নেওয়া হবে। কু’রআনে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে ভারসাম্য করতে বলেছেন। বহু আয়াত আছে যেখানে আমাদেরকে বাবা-মা, পরিবার, সন্তান এর অধিকার আদায় করতে বলেছেন, তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব দিয়েছেন। বহু আয়াতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে তাঁর এই অসাধারণ পৃথিবী ঘুরে দেখতে বলেছেন, সৃষ্টিজগৎ নিয়ে গবেষণা করতে বলেছেন, তাঁর সৃষ্ট হালাল আনন্দ উপভোগ করতে বলেছেন। সেই আয়াতগুলো মানতে গেলে দুনিয়াতে টাকা খরচ করতে হবে, টাকা জমিয়ে রাখতে হবে। যদি সব টাকা দান করে দেই, তাহলে কোনোদিন সেই আয়াতগুলোর উপর আমল করা হবে না। কু’রআনের একটা বড় অংশের উপর আমল না করেই আমরা মরে যাবো। সুতরাং সম্পত্তি কীভাবে ব্যবহার করবো, কোথায় কতটুকু ব্যবহার করবো, এটা পুরো কু’রআন পড়ে সম্পূর্ণ ধারণা নিয়ে তারপরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো একটা আয়াত পড়ে ঝোঁকের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে হবে না। আমরা হাদিস থেকে উদাহরণ পাই, একজন সাহাবি এই আয়াত শুনে তার দুটো বাগানই আল্লাহর ﷻ পথে দান করে দিতে চাইলে, রাসুল ﷺ তাকে একটি দান করে অন্যটি তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য রেখে দিতে বলেন। এভাবেই আমরা সম্পত্তি নিজেদের প্রয়োজনে এবং আল্লাহর ﷻ পথে খরচ করতে ভারসাম্য করবো।

কত বার এমন হয়েছে যে, ছোট একটা দল বড় বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছে আল্লাহর অনুমতিতে —আল-বাক্বারাহ ২৪৬-২৫২

মুসলিমদের উপর যখন অমুসলিমরা নির্যাতন করে, তাদের সম্পত্তি লুট করে নিয়ে যায়, কর্তৃত্ব দখল করে নেয়, বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়, তখন মুসলিমরা কীভাবে যুদ্ধ করে তাদের অধিকার আদায় করবে, তা আল্লাহ ﷻ আল-বাক্বারাহ’তে তালুত এবং দাউদ ﷺ-এর ঘটনার মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়েছেন। এই আয়াতগুলো থেকে আমরা জানতে পারি: তারা কোন প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ করেছিলেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে একটি মুসলিম সম্প্রদায় হাতে অস্ত্র তুলে যুদ্ধ করতে পারে। মাত্র ছয়টি আয়াতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে ইতিহাসের সেই অসাধারণ ঘটনার পরিষ্কার বর্ণনা দেবেন, যেই ঘটনা নিয়ে বাইবেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বিভ্রান্তিকর বর্ণনা আছে। এই আয়াতগুলো থেকে একজন নেতা অনেক উপলব্ধির বিষয় পাবেন। একই সাথে অনুসারীরাও বিভিন্ন প্রকারের নেতাদের সম্পর্কে সাবধান হতে পারবেন—
বনি ইসরাইলের ওই গোত্র প্রধানদের কথা ভেবে দেখেছ, যারা তাদের নবীকে বলেছিল, “আমাদের জন্য এক রাজা নির্ধারণ করে দিন, যেন আমরা আল্লাহর ﷻ পথে যুদ্ধ করতে পারি।” তিনি বলেন, “যদি এমন হয় যে, তোমাদের উপর যুদ্ধ করার আদেশ আসলো, কিন্তু তারপরেও তোমরা যুদ্ধ করলে না, তখন?” তারা বলল, “কেন আমরা আল্লাহর ﷻ পথে যুদ্ধ করবো না, যখন কিনা আমাদের ঘরবাড়ি থেকে আমাদেরকে এবং আমাদের সন্তানদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে?” তারপর যখন তাদের উপর যুদ্ধ করার আদেশ আসলো, কয়েকজন বাদে বেশিরভাগই পিঠটান দিলো। আল্লাহ ﷻ অন্যায়কারীদের ভালো করে চেনেন। [আল-বাক্বারাহ ২৪৬] এই আয়াতে বেশ কিছু শেখার ব্যাপার রয়েছে। কখন আল্লাহ ﷻ যুদ্ধ করার অধিকার দেন? যখন মুসলিমদের উপর আক্রমণ হয়, তাদের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে দখল হয়ে যায়, তখন তারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় যুদ্ধ করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ করার জন্য পরিষ্কার প্রমাণ কু’রআনে রয়েছে। এথেকেই দেখা যায়, ক্বিতাল বা যুদ্ধ হচ্ছে মূলত আত্মরক্ষামূলক। এর আগের আয়াতগুলোতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ক্বিতাল বা যুদ্ধ করার কঠিন আদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে সাবধান করেছেন, আমরা যেন যুদ্ধের সময় দায়িত্ব পালন না করে পালিয়ে না যাই। ঠিক এরপরেই তিনি আমাদেরকে যুদ্ধের একটি ঘটনা বলে পরিষ্কার করে দিচ্ছেন, কখন কোন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করার অনুমতি তিনি দিয়েছেন। কিছু উগ্রপন্থী নেতা এর আগের আয়াতগুলো, যেমন: “তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা মৃত্যুর ভয়ে হাজারে হাজারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল? তখন আল্লাহ ﷻ তাদেরকে বললেন, “মরো”। তারপরে একদিন তিনি তাদেরকে জীবিত করলেন। আল্লাহ ﷻ মানুষের অনেক কল্যাণ করেন, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ কৃতজ্ঞতা দেখায় না। [আল-বাক্বারাহ ২৪৩] আর আল্লাহর ﷻ পথে যুদ্ধ (ক্বিতাল) করো। জেনে রেখো, আল্লাহ ﷻ সব শুনছেন, সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৪৪]” —এগুলো বলে মানুষকে আক্রমণাত্মক জিহাদের দোহাই দিয়ে মুসলিমদেরকে দিয়ে অবৈধ হামলা, নিরীহ মানুষ হত্যা ইত্যাদির দিকে উস্কে দেয়। কিন্তু তারা খুব সাবধানে এরপরের আয়াতগুলো এড়িয়ে যায়, কারণ পরের আয়াতে আল্লাহ ﷻ পরিষ্কার করে কখন, কোন প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ করা বৈধ, সেটা জানিয়ে দিয়েছেন। আরেকটি শেখার ব্যাপার হলো: মানুষের মধ্যে অনেক নেতা থাকবে, যারা নির্যাতিত মানুষদেরকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য, যুদ্ধ করার জন্য অনেক রক্ত গরম করা বক্তৃতা দেবে। কিন্তু যখনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার পরিস্থিতি হবে, তখন তাদের আসল চেহারা বের হয়ে যাবে। এরা যুদ্ধের আদেশ আসলে নিজেরা পিঠটান দেবে, অথবা সুকৌশলে নিজেরা যুদ্ধে না গিয়ে, অন্যদেরকে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। এথেকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই, যেসব তথাকথিত নেতারা ‘জিহাদ! জিহাদ!’ করে মুসলিমদেরকে এত ডাকাডাকি করছেন, তারা নিজেরা কেন জিহাদে যাচ্ছেন না? বসে বসে এত বই না লিখে, এত লেকচার না দিয়ে, নিজেরা কেন যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন না? যখনই কেউ আমাদেরকে জিহাদে যাওয়ার জন্য বুদ্ধি দেওয়া শুরু করবে, কীভাবে বর্ডার পার হতে হয়, কীভাবে প্লেনে করে গোপনে অমুক দেশে যেতে হয়, কীভাবে হোটেলে হামলা করতে হয়, তাদেরকে আমাদের প্রথম প্রশ্ন করতে হবে, “আমাকে যেই বুদ্ধি দিচ্ছেন, সেটা নিজে করছেন না কেন? গলাবাজি না করে আগে নিজে করে দেখান?” তাদের নবী তাদেরকে বললেন, “আল্লাহ ﷻ তালুত-কে তোমাদের রাজা নির্ধারণ করেছেন।” কিন্তু তারা বলল, “সে কীভাবে আমাদের রাজা হতে পারে, যেখানে রাজত্ব করার অধিকার তার থেকে আমাদের বেশি? তার তো অনেক সম্পত্তিও নেই?” তিনি বললেন, “তোমাদের চেয়ে তাকে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত আল্লাহই ﷻ নিয়েছেন এবং তাকে তিনি ﷻ অনেক জ্ঞান এবং শারীরিক শক্তি দিয়েছেন।” আল্লাহ ﷻ যাকে চান, তাকেই রাজত্ব দান করেন। আল্লাহ ﷻ সবকিছুর ব্যাপারে সব জ্ঞান রাখেন। [আল-বাক্বারাহ ২৪৭] একজন নবী ঘোষণা দিলেন যে, আল্লাহ ﷻ নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন রাজাকে! নবী বেঁচে থাকতেও কোনো এক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব একজন রাজা দিতে পারে। এথেকে দেখা যায়, নবী থাকার সময়ও রাজতন্ত্র বৈধ, এবং রাজার আনুগত্য করতে মানুষ বাধ্য, যতক্ষণ না রাজা মানুষকে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করতে বলছে। একজন নবীর মতো সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা রাজত্বের নেতৃত্ব নিজে না নিয়ে যে অন্য কোনো যোগ্য নেতাকে দিতে পারে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই আয়াত। এই আয়াত থেকে প্রমাণ মেলে যে, ধর্মীয় দিক থেকে একজন অনেক উপরে উঠলেই সে সব কিছুর যোগ্য হয়ে যায় না। একটি দেশের রাজা বা খালিফা হওয়ার যোগ্যতা শুধুই একজন আলেমের থাকবে, তা নয়। বরং অন্য কারো আরও বেশি যোগ্যতা থাকতে পারে।[১৭] রাজার কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে, সেটাও আল্লাহ ﷻ এখানে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অনেক সম্পত্তি থাকাটা রাজা হওয়ার জন্য মোটেও দরকার নেই। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, বেশিরভাগ রাজারা ছিলেন বিরাট ধনকুবের। বিপুল পরিমাণের সম্পদ নিয়ে তারা জৌলুশের জীবন পার করে গেছেন। কিন্তু ইসলামে সম্পত্তির সাথে নেতৃত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং নেতৃত্বের জন্য দরকার জ্ঞান এবং শক্তি। যদি রাজার জ্ঞান না থেকে শুধুই শক্তি থাকে, তাহলে সেই শক্তি ব্যবহার হবে বিরাট অন্যায় ঘটাতে। আর যদি জ্ঞান থাকে, শক্তি না থাকে, তাহলে শুধু জ্ঞান দিয়ে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে না, এবং সে একজন অনুসরণ করার মতো ব্যক্তিত্ব হবে না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ রাসুল ﷺ। তিনি পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও নিয়মিত প্রচণ্ড গরমে মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে নিজে যুদ্ধ করার মতো সবল ছিলেন। মরুভূমিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা এক কথা, আর যুদ্ধের সরঞ্জাম পরে দিনের পর দিন যুদ্ধ করা আরেক কথা। এর জন্য যথেষ্ট শক্ত সামর্থ্য দেহ থাকা দরকার। অথচ আজকে আমরা হাজ্জ করতে গেলে এয়ারকন্ডিশন্ড হোটেল থেকে বের হয়ে মসজিদ পর্যন্ত গিয়েই হাঁপিয়ে যাই। আমরা অনেকেই রাসুলের ﷺ খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়ার সুন্নাহ মানি, যেটা একটা ভুয়া সুন্নাহ। মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে, দিনের বেশিরভাগ সময় বসে থেকে ভুঁড়ি বানাই। অথচ রাসুল ﷺ যে নিয়মিত শারীরিক চর্চা করতেন, নিজেকে শক্ত সামর্থ্য রাখতেন, সেই সুন্নাহ আমরা ভুলে গেছি। যুদ্ধে যাওয়া তো দূরের কথা, মসজিদে দিনে পাঁচবার যাওয়ার মতো স্বাস্থ্যও আমাদের অনেকের নেই।
তাদের নবী তাদেরকে বললেন, “তার নেতৃত্বের প্রমাণ হলো যে, তাদের কাছে তাবুত (সিন্দুক) আসবে, যাতে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রশান্তি, এবং মুসা ও হারুনের অনুসারীদের রেখে যাওয়া কিছু জিনিস। সেটা ফেরেশতারা বয়ে আনবে। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে তাদের জন্য এক বিরাট নিদর্শন রয়েছে, যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।” [আল-বাক্বারাহ ২৪৮] এই তাবুত বা সিন্দুক নিয়ে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে। বাইবেলে এনিয়ে অনেক কাহিনী আছে, যেগুলোর শুদ্ধটা যাচাই করা কঠিন। Arc of Covenant নামে পরিচিত অলৌকিক ক্ষমতার এই সিন্দুকের ইতিহাস রক্তাক্ত। বেশ কয়েকবার এটি হাত বদল হয়েছে এবং যে রাজত্ব এটা জয় করেছে, সেই রাজত্ব শান্তি এবং বিশেষ ক্ষমতা পেয়েছে বলে বাইবেলে অনেক ঘটনা আছে। একারণে এই অলৌকিক সিন্দুকের দখল নিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। তবে মুসলিমদের জন্য এই সব ইতিহাস জানার প্রয়োজন নেই। আমাদের শুধু দেখতে হবে, এই আয়াতে আমাদের উপলব্ধি করার কী রয়েছে। কু’রআন মানুষকে গল্প বলে মনোরঞ্জন করার জন্য পাঠানো হয়নি। কু’রআনের প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি শব্দ বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যেন মানুষ নিজেদের সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারে। আমরা এই আয়াত থেকে উপলব্ধি করতে পারি যে, তালুত-কে যখন নবী রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেন, তখন তারা তা মেনে নিলো না। একজন নবীর নির্দেশ মানতেও তারা রাজি ছিল না। যতক্ষণ না তাদেরকে এই সিন্দুক অলৌকিকভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। এথেকে শেখার হলো, কিছু নেতা থাকবে, যাদেরকে বাইরে থেকে দেখে ধর্মের অনুসারী মনে হবে। কিন্তু যখনই ধর্ম তাদেরকে নিজেদের সম্মান, স্বার্থ বিসর্জন দিতে বলবে, তখনি তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে যাবে। পরিষ্কার প্রমাণ থাকার পরেও তারা সেটা মানতে চাইবে না।
তারপর যখন তালুত তার বাহিনী নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন, তখন তিনি বললেন , “আল্লাহ ﷻ তোমাদেরকে একটি নদী দিয়ে পরীক্ষা করবেন। যে সেই নদী থেকে পান করবে, সে আর আমার দলের নয়। কিন্তু যে সেটার স্বাদ নেবে না, সে আমার দলের। তবে যে এক আঁজলা পান করবে, তার দোষ হবে না।” কিন্তু কয়েকজন বাদে বাকি সবাই পেট ভরে পানি খেলো। তারপর যখন সে এবং তার সাথের বিশ্বাসীরা পার হলো, তখন তারা বলল, “আমাদের কোনো ক্ষমতাই নেই জালুত এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে।” কিন্তু যারা নিশ্চিত ছিল যে তারা আল্লাহর ﷻ সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, তারা বলল,“কত বার এমন হয়েছে যে, ছোট একটা দল বড় বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছে আল্লাহর ﷻ অনুমতিতে। আল্লাহ ﷻ ধৈর্য-নিষ্ঠাবানদের সাথে আছেন।” [আল-বাক্বারাহ ২৪৯] একজন নেতার জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ হলো তার বাহিনীর ভেতরে নিষ্ঠাবান অনুসারীদের চিহ্নিত করা এবং কারা তাকে প্রয়োজনের সময় অনুসরণ করবে না, সেটা আগেভাগেই বের করে ফেলা। এই মানুষগুলোকে যত আগে সম্ভব বাহিনী থেকে বের করে দিতে হবে। না হলে তারা বাহিনীর সম্পদ নষ্ট করবে, মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দেবে, তারপর দরকারের সময় নিজেরা তো পালাবেই, অন্যের মনোবলও ভেঙ্গে দেবে। তালুত তার বাহিনীর মধ্যে কে নিষ্ঠাবান, আর কে বিপদে পড়লে পিঠটান দেবে, সেটা বের করার জন্য তাদেরকে এক পরীক্ষা দিলেন। যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীকে অনেক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। এই যাত্রা পথে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী হলো পানি। বাহিনীর ঘোড়া, উট, গরু, হাতি, মানুষ সবার জন্য পানি দরকার। পানি হলো একটি সেনাবাহিনীর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাই সেনাবাহিনী যখন কোনো নদী বা জলাশয় খুঁজে পায়, তারা যতটুকু পারে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে নেয়। কিন্তু তালুত তার বাহিনীকে এক ভীষণ কঠিন পরীক্ষা দিলেন। চোখের সামনে নদী ভর্তি পানি টলটল করছে, কিন্তু তারা সেই পানি পান করতে পারবে না। এবং তারা সেটা করবে না শুধুই তাদের সেনাপতিকে বিশ্বাস করে, তার প্রতি আনুগত্য দেখানোর জন্য। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের কাছে মনে হয়েছিল যে, সেটা কোনো যৌক্তিক দাবি নয়। বাস্তবতা দেখতে হবে। এখন যুদ্ধ চলছে। সবাই তৃষ্ণার্ত। পানির এত বড় একটা সুযোগ ছেড়ে দেওয়াটা বিরাট বোকামি। এই সব ভেবে তারা সেনাপতির নির্দেশকে অমান্য করলো। এথেকেই বেড়িয়ে পড়লো তাদের মধ্যে কে সত্যিই সেনাপতির প্রতি পুরোপুরি অনুগত, আর কে নিজের প্রবৃত্তির প্রতি অনুগত। যারা এত বড় লোভ, পিপাসার কষ্ট সামাল দিতে পেরেছিল শুধুই সেনাপতির প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে, তারাই ছিল প্রকৃত বিশ্বাসী অনুসারী। তারাই যুদ্ধে এসেছিল সঠিক নিয়ত নিয়ে — আল্লাহর ﷻ সন্তুষ্টি অর্জন এবং নেতার প্রতি আনুগত্যের দায়িত্ববোধ থেকে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, তালুত বলেছিলেন, “কিন্তু যে সেটার স্বাদ নেবে না, সে আমার দলের।” তিনি বলেননি, যে সেটা ‘পান’ করবে না। তিনি তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এক দুই আঁজলা পানি পান পান করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যেটা দেখতে চাইছিলেন সেটা হলো, কে আছে যে নিজের প্রবৃত্তির দাস হয়ে, তার আদেশ অমান্য করে পেট ভরে পানি খাবে। —এথেকেই তার বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি পানি ছুঁয়ে না দেখার অবাস্তব পরীক্ষা দেননি। তার পরীক্ষা ছিল শুধুই মুনাফিক, প্রবৃত্তির দাসদের বাছাই করে ছেঁটে ফেলার পরীক্ষা। এই পরীক্ষা থেকে তালুত বাছাই করে নিলেন সেই সব নিষ্ঠাবান সৈন্যদেরকে, যারা তার সাথে যুদ্ধ করার যোগ্য। তাদেরকে নিয়ে তিনি নদী পার হয়ে যুদ্ধের ময়দানে গেলেন। সেখানে গিয়ে তাদের অনেকে জালুত এবং তার বিশাল বাহিনী দেখে আশা হারিয়ে ফেললো। অনেকেই সেখান থেকে পালিয়ে গেল, এইভেবে যে, দুই বাহিনীর মধ্যে লোকবলের এত বিশাল পার্থক্য থাকলে কোনোভাবেই যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। এটা বরং আত্মহত্যা। কিন্তু তারপরেও তালুতের সাথে কয়েকজন ইস্পাত দৃঢ় মনোবলের সৈন্য ছিলেন, যারা ঈমানের এই ভয়ঙ্কর কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে তালুতের সাথে যুদ্ধে যোগ দিলেন। এরা এক অসাধারণ কথা বললেন— “কত বার এমন হয়েছে যে, ছোট একটা দল বড় বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছে আল্লাহর ﷻ অনুমতিতে।” আমরা অনেক সময় সঙ্ঘবদ্ধ অমুসলিম শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের তুচ্ছ মনে করি। আশা হারিয়ে ফেলি এই ভেবে যে, আমাদের পক্ষে কোনোদিনও ওদের বিরুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। ওদের আছে বিশাল বাহিনী, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, সারা পৃথিবীর অর্থনীতি ওদের দখলে। ইউনাইটেড নেশন্স ওদের কথায় ওঠাবসা করে। ওরা কোনো জায়গায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে সাথে সাথে অন্য দেশগুলোও তাদের সাথে যোগ দেয়। আর এদিকে মুসলিমরা বড়ই একা, বিভক্ত, প্রযুক্তিতে একেবারেই পিছিয়ে, অর্থনীতিতে দুর্বল, সারা পৃথিবীতে অপমানিত, ঘৃণিত। এই দুর্বল বিশ্বাস থেকে আমরা অনেকেই নিজেদের উপর অন্যায় হলে, এমনকি আক্রমণ হলেও প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করি না। কোনো ধরনের প্রতিরোধ করাটা আমাদের কাছে আত্মহত্যার সামিল বলে মনে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটা সময় নষ্ট মনে হয়। কিন্তু এই আয়াতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে অসাধারণ এক শিক্ষা দিয়েছেন। ইতিহাসে এক বার, দুইবার নয়, বহুবার ছোট একটি দল বিরাট বাহিনীকে পরাজিত করেছে, যখন সেই ছোট বাহিনী ইসলাম সমর্থিত উপায়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছে। তালুত-এর যুদ্ধ, বদর-এর যুদ্ধ এগুলো সবই উজ্জ্বল উদাহরণ যে, আল্লাহ ﷻ নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ান। সত্যিকারের ঈমানদার বান্দাদেরকে নিজে সাহায্য করেন। তার সাহায্যে ঈমানদার বান্দারা বিরাট বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেও অলৌকিকভাবে জয়ী হয়। সুতরাং যারা ইসলাম সম্মত আত্মরক্ষামূলক ক্বিতাল বা যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন, তাদের কোনো ভয় নেই। আল্লাহ ﷻ তাদেরকে জয়ী করবেনই। কু’রআনেই সেই অঙ্গীকার রয়েছে। আর যারা ইসলাম সম্মত যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন না, তাদের নিয়ত যতই ভালো থাকুক না কেন, তারা আসলে নিজেরা আত্মহত্যা করে পুরো মুসলিম জাতির জন্য বিরাট ফাসাদ তৈরিতে সহযোগিতা করতে যাচ্ছেন। আয়াতের এই অংশটি উগ্রপন্থী দলরা অপব্যবহার করে মুসলিমদের মিথ্যা আশ্বাস দিতে। তারা তাদের অবৈধ মারামারিতে সরল প্রাণ মুসলিমদের বাগিয়ে নেওয়ার জন্য আয়াতের এই অংশ ব্যবহার করে। আয়াতে এই অংশ কোট করার আগে আমাদেরকে দেখতে হবে, তারা আমাদেরকে যেই যুদ্ধে অংশ নিতে বলছে, তার সাথে এই আয়াতে তালুত-এর যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের কতখানি মিল রয়েছে। এই আয়াতের প্রেক্ষাপটের অনুরূপ অবস্থা তৈরি হয়েছে কি? মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে কি কোনো কাফির বাহিনী যুদ্ধ করতে এসেছে? আমরা কি সত্যিই আত্মরক্ষায় যুদ্ধ করছি? মুসলিম বাহিনীর নেতা কি রাসুল ﷺ এর এক আদর্শ অনুসারী? যিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি নিশ্চয়ই কোনো নবী বা রাসুল নন। তাহলে তিনি কি তালুত-এর মতো একজন মুসলিম রাজা, যাকে আল্লাহ ﷻ এবং রাসুল পরিষ্কার কর্তৃত্ব দিয়েছেন? মুসলিম জাতি কি তার আনুগত্য মেনে নিয়েছে? —এই সব শর্ত পূরণ না করে কেউ এই আয়াতের দোহাই দিয়ে কোনো ধরনের হামলা করতে বললে বুঝতে হবে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজের কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করা। না হয় সে নিজেই ব্যাপক বিভ্রান্ত। ইসলামের সঠিক জ্ঞান তার মধ্যে নেই, অথবা তার ব্যক্তিগত আক্রোশ তাকে অন্ধ করে দিয়েছে। তালুতের সাথে শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়া সেই সম্মানিত বিশ্বাসীরা যুদ্ধে যাওয়ার সময় আল্লাহর ﷻ কাছে সাহায্য চেয়ে যে দু’আ করেছিলেন, সেই দু’আ আল্লাহ ﷻ কু’রআনে সারা মানবজাতির জন্য বাধাই করে রেখেছেন, যা মানুষ যুগ যুগ ধরে কিয়ামত পর্যন্ত পড়ে আল্লাহর ﷻ কাছে সাহায্য চাইবে—
তারপর যখন তারা জালুদ আর তার বাহিনীর সামনে দাঁড়ালো, তারা বলল, “ও আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য-নিষ্ঠা বর্ষণ করুন। আমাদেরকে দৃঢ় পায়ে অবিচল রাখুন। আমাদেরকে কাফিরদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করুন।” [আল-বাক্বারাহ ২৫০] তাদের প্রথম চাওয়া ছিল, أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا “আমাদের উপর সবর বর্ষণ করুন।” أَفْرِغْ হচ্ছে ঢেলে দেওয়া, বোতল ঢেলে খালি করে ফেলা।[৫][১] আল্লাহর ﷻ কাছে তারা শুধু সবর চাইলেন না, বরং বললেন তাদের উপর ক্রমাগত সবর বর্ষণ করে, তাদের অন্তর পূর্ণ করে দিন। যত সবর আছে, সব দিয়ে দিন। —কষ্টের সময় সবর বড়ই প্রয়োজন। আর সবর সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। আমাদের জীবনে যখন কোনো বড় বিপদ আসে, কষ্টে চারিদিকে অন্ধকার দেখতে থাকি, তখন মুরব্বিদেরকে বলতে শোনা যায়, “সবর করো, সব ঠিক হয়ে যাবে।” দেশে-বিদেশে মুসলিমদেরকে মেরে শেষ করে ফেলা হচ্ছে, কু’রআন পোড়ানো হচ্ছে, রাস্তাঘাটে টুপি-দাঁড়িওলা কাউকে দেখলে পেটানো হচ্ছে, আর মসজিদের ইমামদেরকে জুম্মার খুতবায় বলতে শোনা যাচ্ছে, “সবর করেন ভাই সাহেবরা। সব ঠিক হয়ে যাবে। ইসলামের বিজয় নিকটেই—ইন শাআ আল্লাহ।” ব্যাপারটা এমন যে, আমরা ধৈর্য নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে শুধু নামাজ পড়লেই আল্লাহ ﷻ আমাদের হয়ে আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন। এই অত্যন্ত প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোর মূল কারণ হচ্ছে ‘সবর’ শব্দের অর্থ ঠিকমত না জানা এবং কু’রআনের এই আয়াতে ব্যবহৃত বিশেষ কিছু শব্দের অর্থগুলো ঠিকমত না বোঝা। সবর শব্দটির সাধারণত অর্থ করা হয়: ধৈর্য ধারণ করা। কিন্তু সবর অর্থ মোটেও শুধুই ‘ধৈর্য ধারণ করা’ নয় যে, আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব, অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে যাবো, অবস্থার পরিবর্তনে কিছুই করবো না, এই ভেবে যে: একদিন আল্লাহ ﷻ সব ঠিক করে দেবেন। প্রাচীন আরবরা যখন ‘সবর’ বলত, তখন এর মধ্যে কোনো দুর্বলতার ইঙ্গিত ছিল না। প্রাচীন আরব কবি হাতিম আত-তাঈ এর একটি কবিতায়[৭] আছে— তলোয়ার নিয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সবর করলাম, কষ্ট এবং যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল, স্থির হয়ে গেল। আরেকটি কবিতা জুহাইর ইবন আবি সুল্মা[৭] এর লেখা— শক্তিশালী যুদ্ধের ঘোড়ায় চেপে রাজার মেয়ে-জামাইরা যুদ্ধের ময়দানে সবর করল, যখন অন্যরা আশা হারিয়ে ফেলেছিল। উপরের উদাহরণে সবর-এর ব্যবহার দেখলেই বোঝা যায়, সবর মানে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা নয়। সবর এর অর্থ হচ্ছে: প্রতিকূলতার মধ্যে ধৈর্য নিয়ে, লক্ষ্য ঠিক রেখে, অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সুযোগের অপেক্ষা করা।[৫][৭] সবরের তিনটি অংশ রয়েছে: ১) ধৈর্যের সাথে কষ্ট, দুর্ভোগ সহ্য করা, ২) অবস্থার পরিবর্তন করতে গিয়ে কোনো পাপ করে না ফেলা, ৩) আল্লাহর ﷻ আনুগত্য থেকে সরে না যাওয়া।[৪]
তারপর তারা আল্লাহর ﷻ অনুমতিতে ওদেরকে পরাজিত করলেন। দাউদ জালুতকে হত্যা করলেন। আল্লাহ ﷻ তাকে রাজত্ব, প্রজ্ঞা দিলেন, এবং তাকে তিনি যা চাইলেন শেখালেন। যদি আল্লাহ ﷻ কিছু মানুষকে দিয়ে অন্যদেরকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে পৃথিবীতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হতো। কিন্তু আল্লাহ ﷻ বিশ্ববাসীর প্রতি অনেক কল্যাণ করেন। [আল-বাক্বারাহ ২৫১] পৃথিবীতে কোনো জাতি অঢেল ক্ষমতা, সমৃদ্ধি, প্রাচুর্যতে থেকে ন্যায়, নিষ্ঠা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। বেশিরভাগ জাতি কয়েক যুগ যেতে না যেতেই অন্যায়, অশ্লীলতায় ডুবে গেছে। সেটা অমুসলিমদের বেলায় যেমন হয়েছে, মুসলিমদের বেলায়ও হয়েছে। একারণেই আল্লাহ ﷻ মানুষের মধ্যে কিছু দল তৈরি করেন, যারা সেই সমৃদ্ধশালী অন্যায়কারী জাতিগুলোকে পরাজিত করে আবার ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। আরেক জাতি তৈরি হয়। তারপর যুগ পার হয়। একসময় দেখা যায় সেই জাতি নিজেরাই আবার অন্যায়ে ডুবে গেছে। তখন আরেক দল এসে তাদেরকে পরাজিত করে আবার ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। এভাবে ইতিহাসের চাকা ঘুরতে থাকে। আল্লাহ ﷻ যদি এভাবে শক্তিশালী অন্যায়কারী জাতিগুলোকে বার বার পরাজিত না করতেন, তাহলে সারা পৃথিবীতে ব্যাপক অন্যায় ছড়িয়ে পড়তো।
এই হচ্ছে আল্লাহর ﷻ নিদর্শন, যা তিনি তোমার (মুহাম্মাদ সা:) উপর যথাযথভাবে তিলাওয়াত করেন। তুমি অবশ্যই রাসুলদের একজন। [আল-বাক্বারাহ ২৫২] সুত্র: [১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স

সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ: আসলেই এক নাকি ভিন্ন?-মুজাহিদ আবু ইয়াহইয়া হাফিজাহুল্লাহ



আসসালামু আলাইকুম,
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহিম।

সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্ সুবহান ওয়া  তাআলার যিনি আমাদের ঈমানের মত নেয়ামত দিয়ে ধন্য করেছেন এবং আমাদের জন্য,  সর্বোত্তম কিতাব, সর্বোচ্চ সম্মানিত রাসূল এবং সর্বোত্তম শরীয়াত বা  বিধিবিধান প্রেরণ করেছেন! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই,  তিনি এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।  তাঁর এবং তাঁর পবিত্র  পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আরো বর্ষিত হোক পবিত্র ও উত্তম  বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সাহাবা আজমাঈন রাঃ এবং তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনদের উপর।  আম্মাবাদ

সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ আসলেই এক নাকি ভিন্ন?

আমাদের অনেকেরই এই ভুল ধারণা রয়েছে যে,  সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ এক ও অভিন্ন! আর কুফুরি মিডিয়াগুলো এই অপ-প্রচার এত  অধিক ছড়িয়েছে যে আমাদের মস্তিষ্কে এটি পুরোপুরিভাবে প্রবেশ করেছে। তো এই  বিষয়ে আজ কিছু কথা বলছি যা জ্ঞানীদের জন্য চিন্তার দরজাকে উন্মোচন করবে বলে  আশা করছি।

প্রথমেই আমাদেরকে এ দু’টো শব্দের আভিধানিক  অর্থ জানতে হবে এবং এর সাথে সাথে পারিভাষিক অর্থও। (যদিও এর ভুল অর্থই  বর্তমানে ব্যপক প্রচলিত।) সন্ত্রাস (Terror)- কোন উদ্দেশ্যে মানুষের মনে  ভীতি সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা। সন্ত্রাসবাদ (Terrorism)-রাজনৈতিক ক্ষমতা  লাভের জন্য হত্যাকান্ড সংঘটনের পক্ষপাতী। সন্ত্রাসী (Terrorist)- যে বা  যারা কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শঙ্কা বা ভীতির সৃষ্টি করে। (দেখুন-বাংলা  একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)

জঙ্গ (Battle) - যুদ্ধ, লড়াই। জঙ্গি  (Military) - রণতরী, যোদ্ধা, বীরপুরুষ। জঙ্গিবাদ-( Militarism) রণকৌশল  অবলম্বন করা, সুদৃঢ় সামরিক ব্যবস্থা বা আয়োজন। (দেখুন-বাংলা একাডেমী  ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)

একটা কথা মনে পড়ে গেল, যা মনে হলে আমার  অনেক হাসি পায় (দু:খও পাই)। আর তা হলো আমাদের (শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত)  অধিকাংশই ‘জঙ্গি’ শব্দটিকে ভুল বশত: ‘জংলী’ (যারা জঙ্গলে বসবাস করে) তাদের  মনে করে। যার কারণে সহজেই জংলীদের ভুল কর্মকান্ড তাদের মস্তিষ্কে ঘুরপাক  খায়। আর এ ভুলটিই কুফুরি মিডিয়ার পক্ষ হয়ে কাজ করছে। তারা বুঝাতে চায়  জঙ্গিরাও জংলীদের মতই উগ্র ও অন্যায় কাজ করে।

এবার আসুন এর পারিভাষিক অর্থ জেনে নেই।  সন্ত্রাস বলা হয় রাজনৈতিক অবৈধ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য মানুষের মনে এমন ভয়  ভীতি বা হত্যাকান্ড সৃষ্টি করা যার কারণে জনগণের সার্বিক উন্নতি  (Developing) ও চলাফেরায় মারাত্মক ব্যঘাত সৃষ্টি হয়। অপরদিকে, জঙ্গ বলা হয়  ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ (Freedom Fight) বা লড়াই। আর যে বা যারা  সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে তাদেরকেই বলা হয় যোদ্ধা বা জঙ্গি।  অতএব স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ন্যায়ের জন্য ব্যবহৃত এই শব্দটিকে বর্তমানে  ভুল দৃষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার কারণে অনেক সঠিক বিষয়গুলোতেও আমাদের  মনে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। সন্ত্রাসী কখনোই জঙ্গির (যোদ্ধার) সমতুল্য  হতে পারে না। সন্ত্রাসীদের জঙ্গি বললে তাদের মূল্যকে যেন আমরাই বৃদ্ধি  করছি। আর জঙ্গিদেরকে সন্ত্রাসী বললে বা মনে করলে তাদের প্রকৃত মূল্যকে  আমরাই নষ্ট করছি।

আজ যারা আফগানের মুসলিমদের উপর হামলা  চালায় তারাই সন্ত্রাসী, যারা সিরিয়ার নিষ্পাপ মুসলিম শিশুদের রক্ত ঝরায়  তারাই সন্ত্রাসী, যারা অন্যায়ভাবে মায়ানমারের মুসলিমদের উপর আক্রমন চালিয়ে  তাদের উচ্ছেদ ও নিধন করে চলছে তারাই সন্ত্রাসী, ফিলিস্তিন কিংবা কাশ্মীরে  আজ যারা মুসলিমদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে স্তব্ধ করে রাখতে চায় তারাই  সন্ত্রাসী। আর যারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে  তারা জঙ্গি, তবে সন্ত্রাসী নয়। আর আজ আমরা কুফুরি মিডিয়ার এ অপ-প্রচারের  প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এ জঙ্গি মুজাহিদদেরকে সন্ত্রাসী মনে করছি। জঙ্গি  বললেই সন্ত্রাসী বুঝতে আমাদের কোন প্রকার ভুল হয় না।

কেন এমন করা হচ্ছে? এর কারণ হলো মুসলিমদের  মধ্যে বিভক্ত সৃষ্টি করা এবং নিজেদের একে অপরের মধ্যে অনাস্থার সৃষ্টি  করা। তাই আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কে এক মনে করব না। সন্ত্রাসী  কর্মকান্ডকে সন্ত্রাস-ই  মনে  করব, একে জঙ্গিবাদ মনে করব না। আর পবিত্র  শব্দ জঙ্গিবাদকে অবৈধ (Illegal) সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে একত্রিত করব  না। এখন বলতে পারেন যে তাহলে জঙ্গিবাদ বলতে যা বোঝানো হয় তাকে আমরা কি বলব?  আমি বলব কুফুরি মিডিয়া জঙ্গিবাদ বলতে যদি কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে বোঝায়  তাহলে আমরা তাকে জঙ্গিবাদ না বলে সন্ত্রাসবাদ বলব। আর যদি কোন সত্য ও  ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামিক কোন কর্মকান্ডকে বোঝায় তবে তাকে ভালো মনেই  জঙ্গিবাদ মনে করব। অর্থাত জঙ্গিবাদকে কখনোই খারাপ মনে করা যাবে না বরং  অরাজকতামূলক কর্মকান্ডকে সন্ত্রাসবাদ মনে করতে হবে। আশা করি যাদের নূন্যতম  জ্ঞান রয়েছে তারা উপরোক্ত বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

অতএব একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে,


জঙ্গিবাদ  এটা জনগণের বিপক্ষে নয় বরং পক্ষে। অথচ এ শব্দকে আমরা জনগণের বিপক্ষে  ব্যবহার করছি যা আমাদের অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে। কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন  ব্যক্তি এর সঠিক অর্থ জানার পর জঙ্গিবাদকে খারাপ মনে করতে পারে না। অনেকে  আবার জঙ্গিবাদ বলতে অবৈধ হামলাকে বুঝে থাকে, যা ঠিক নয়। অন্যায় ও অবৈধ  হামলাকে জঙ্গিবাদ বলা যায় না বরং সত্য ও ন্যায়ের জন্য অপরাধ দমন মূলক কর্ম  কান্ডই হল জঙ্গিবাদ। যেমন কিছুদিন পূর্বে আমাদের দেশে এক এক করে কয়েকজনকে  কুপিয়ে হত্যা করা হল যারা প্রিয় রাসূল (সা:) কে অবমাননাকারী নাস্তিক ছিল।  এই হত্যাকান্ডকে আমরা জঙ্গিবাদ বলব তবে ভাল মনে। আর কুত্তালীগ সহ অন্যান্য  দলগুলো পরস্পর কিংবা জনসাধারণের উপর যে হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজী, হুমকি  ইত্যাদি করে সমাজ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের মধ্যে শঙ্কা বা ভীতি  সৃষ্টি করে রেখেছে তাকেই সন্ত্রাসবাদ বলে, জঙ্গিবাদ নয়।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:)  সর্বপ্রথম যে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তাকে ‘জঙ্গে বদর’ (বদরের যুদ্ধ) বলা  হয়। এ যুদ্ধে ৩১৩ জন অস্ত্রহীন মুসলিম জঙ্গি অংশ গ্রহন করেছেন। আর কাফেররা  ছিল সশস্ত্র প্রায় হাজার। এখন জঙ্গি বলতে যদি আপনি সন্ত্রাসীকে বুঝে থাকেন  তাহলে দেখুন যে আপনার বুঝটা কত মারাত্মক ভুল ছিল যে, এখানে তাহলে  (নাউযুবিল্লাহ) প্রিয় নবীকে সন্ত্রাসী বলতে হবে। জঙ্গে উহুদ, জঙ্গে খন্দক  কিংবা জঙ্গে তাবুক এগুলো মুসলিমদের শুধু ইতিহাস নয় বরং ঐতিহ্যও। তাই জঙ্গি  বা যোদ্ধা হওয়া কিংবা জঙ্গিবাদকে গ্রহন করা ইবাদত এবং প্রিয় রাসূল (সা:) এর  আদর্শ। যেমন এর বিপরীতে সন্ত্রাসী হওয়া বা সন্ত্রাসবাদকে গ্রহন করা বা  প্রশ্রয় দেওয়া অন্যায় ও গুনাহের কাজ। তাই আসুন আমরা এই সন্ত্রাসবাদ ও  জঙ্গিবাদ শব্দ দু’টোর সঠিক ব্যবহার করি এবং এর উপর সঠিক আমল করি। অর্থাত  সন্ত্রাসবাদকে রুখতে জঙ্গিবাদকে গ্রহন করি। (আল্লাহ-ই তৌফিক দাতা)
এবার সামনে চল






এসেছি মোরা একতাবদ্ধ নওজোয়ানের দল
বন্ধুর পথ পেরিয়ে আরও সাগরের মহাজল
কতশত বাঁধা ঠেলে এসেছি, এবার সামনে চল।
ভাঙবই আজ অত্যাচারীর অবৈধ শাসনকল
দেখবনা আর মরীচিকা, থাকবেনা আর ছল
রুখতে আমায় পারবে নাকো হাজারো প্রতিবল
চাস যদি মোর সহায় হতে, এবার সামনে চল।
লড়াইয়ে আজ ব্যয় করব আছে যত সম্বল
মৌন হয়ে থাকবনা আর টুটব কালো ছোবল
জাহির তোদের করতেই হবে পূর্বসূরীর বল
বেরিয়েছি আজ মুক্তির পথে হয়েছি উচ্ছৃঙ্খল
পিছন দিকে তাকাসনে আর, এবার সামনে চল।
সমীকরণে মিলাতে হবে অঙ্ক রাশির ফল
অতিমাত্রায় রণযাত্রায় আঘাত হান ডবল
আক্রমণের তুলবই ঝড় এড়িয়ে শত্রু যুগল,
জয় হবে আজ হয় যদি তা দূর্ভেদ্য জঙ্গল,
লোকালয়ও পড়বে না বাদ সমগ্র মন্ডল,
চাস যদি তা করতে অধীন, এবার সামনে চল।
চিনির বলদ থাকবি কিআর? নাইকিরে আকল?
আর কত কাল রইবি পড়ে জড়িয়ে কম্বল
আর কতদিন চাখবি তোরা কুফুরিতন্ত্রের ফল
ঈমানের সাথে মিশাবি কি তোরা অসত্য আর খল?
আমজনতা মরবে কেন খেয়ে মাকাল ফল?
বীরের জাতি থাকবে কেন অসার অচল?
এই নব দল! থাকিসনে অচল, এবার সামনে চল।
নিখাদ ছেড়ে রইবি পড়ে? চুমবি কি নকল?
ষড়রিপুর তাড়নাতে থাকবি কি দোষল?
গুলবাজ আর হসনে তোরা একটু হ সরল
তোরাই কেবল করবি বিমল কৃত্রিম ও আসল
মুরতাদরা বলবে তোদের “এরা তো বিরল”
বেরিয়ে আয় পেরিয়ে আয় আধার-আজল
দুর্বিষহে যাচ্ছে ছেয়ে সমগ্র অঞ্চল
বিষাক্তময়, নেইকো সময়, এবার সামনে চল।
রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব হবে, তপ্ত হবে দল
মোদের দেখে লজ্জা পাবে জ্বলন্ত অনল
ভীরুরা সব আসবে কাছে পেয়ে আশ্রয়স্থল
অজস্র মোদের সংখ্যা হবে, স্রোতের মত চল
সংখ্যাগুরু? সংখ্যালঘু? শংকা কোথায় বল?
মোরাই হব এই মেদিনীর দূর্বার দাবানল
চলব মোরা বলব মোরা থাকবো যে অটল
আল্লাহ যদি থাকেন সহায়, রুখবে কে এই ঢল
তুমুল জোরে, রৌদ্রে পুড়ে, এবার সামনে চল।

তাগুতকে ধ্বংস এবং চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়ার উপায়




আমাদের মনে রাখতে হবে, আজ পর্যন্ত ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়েই তাগুত তাদের জুলুমের রাজত্ব কায়েম রেখে আসছে তাদের দুইটি ‘হাতের’ সাহায্যেঃ
(1) তাদের সামরিক বাহিনী (আর্মি, নেভী, এয়ারফোর্স, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী, গোয়েন্দা সংস্থা ইত্যাদি)।
(2) তাদের বুদ্ধিজীবী বাহিনী ( জাদুকর, পুরোহিত, পথভ্রষ্ট আলেম ইত্যাদি)।
এই বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর কাজ হলো জনগণকে শিরকের মাঝে ডুবিয়ে রাখা এবং তাদেরকে তাগুতের ব্যাপারে অজ্ঞ করে রাখা; এর ফলে তাগুতকে সব সময়ই বেশীরভাগ মানুষই মেনে নিয়েছে এবং আল্লাহ্র বাণীর আলো থেকে সরে অন্ধকারে চলে গিয়েছে। তবে সব সময়ই অল্প কিছু মু’মিন ছিল যারা আল্লাহ্র উপর ঈমান রাখতো এবং তাগুতকে অস্বীকার করতো- আর তাদের দমন করার জন্যই তাগুতের সামরিক বাহিনী অতীতে ছিল এবং বর্তমানেও আছেঃ
‘‘যারা মু’মিন তারা আল্লাহ্্র পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে;’’[1]
তাই যখন আমরা নবীদের পথে চলতে শুরু করি, এবং এই কালিমার দাওয়াহ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেই, তখন তাগুতের ভীতে ফাটল ধরে এবং জনগণ এদের সীমালঙ্ঘন বুঝতে পারে। এভাবেই তাগুতের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে হারানো যায় এবং তাগুতের দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়া যায়- যেমনটি হয়েছিল ইব্রাহীম (আঃ), মুসা (আঃ) এবং সূরায় বুরুজের সেই ছেলেটির সময় যখন তারা নিজেরা দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও তাদের সময়ের তাগুতের মুখামুখি হয়েছিল। যখন মু’মিনরা এই পথ গ্রহণ করে তখন তাগুতের প্রশাসন ভেঙে পড়ে, জাহিলিয়াতের দল থেকে বের হয়ে মানুষ ইসলামের দলে ঢুকতে থাকে- যেমন হয়েছিল ফিরাউনের জাদুকরদের ক্ষেত্রে এবং মুহাজির ও আনসারদের মাঝে অগ্রবর্তীদের ক্ষেত্রে যাদের মধ্যে অনেকেরই পরিবার ছিল ইসলামের শত্রু।
ঠিক এমন অবস্থতেই মু’মিনদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাগুতের সৈন্যদল, অতীতে এর অনেক নজির দেখা যায়। এসময় তাগুতরা দুর্বল ও অসহায় মুসলিমদের বেছে নিয়ে অত্যাচার শুরু করে, তবে যাদের পারিবারিক সুরক্ষা বা সামাজিক মর্যাদা আছে তেমন মুসলিমদের এরা প্রথমে ছেড়ে দেয়। এমনটিই হয়েছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় এবং শুয়াইব (আঃ) এর সময়ওঃ
‘‘তারা বলল, ‘হে শু’আইব! তুমি যা বল তার অনেক কথা আমরা বুঝি না এবং আমরা তো আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বলই দেখছি। তোমার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতাম, আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও।’’[2]
অত্যাচারের পাশাপাশি তাগুত অনেকের সামনে বিভিন্ন আকর্ষনীয় প্রস্তাব রাখতে পারে; এবং এসব প্রস্তাব বাইরে থেকে দেখে নিরাপদ এবং লাভজনক মনে হলেও, আসলে এগুলো গ্রহণ করা মানে হবে ইব্রাহীম (আঃ) এবং অন্যান্য সব নবীর মিল্লাত থেকে সরে যাওয়া। এই দাওয়াকে ‘কুফর বিত তাগুত’ এবং ‘আল-বারাআ’-র মত কঠোর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিতে এবং এর বিষয়বস্তু হালকা কিছু বিষয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতে তাগুত যে কি ধরনের ষড়যন্ত্র করে চলেছে সে ব্যাপারে পরে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইন্শাআল্লাহ্। তাগুত আমাদের সাথে আপোষ করতে চাইবে, যাতে আমরা যদি নবীদের পথ থেকে সামান্যও সরে যাই, তারা এই সুযোগে আমাদের আরও দূরে নিতে থাকবে এবং একসময় আমরা হয়ে যাবো ইসলামের পোশাকে তাগুতের মুখপাত্র। আল্লাহ্ আমাদের এর থেকে রক্ষা করুক এবং আমাদের মাঝে তলোয়ারকেই মীমাংসার একমাত্র পদ্ধতি বানিয়ে দিক; এই তলোয়ার হয় আমাদের মৃত্যু ঘটাবে সেক্ষেত্রে আমরা অর্জন করব শাহাদাত বরণ করার মর্যাদা, আর তা না হলে আল্লাহ্র শত্রুদের গর্দান ফেলে দিবে আর সেক্ষেত্রে আমরা হব গালিবীন (বিজয়ী)। আমাদের এবং তাদের মাঝে শুধু একটাই সম্পর্ক – যুদ্ধ।
এসব পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই মু’মিনরা বিভিন্ন স্তরে স্তরে বাছাই হয়ে যায়। কেউ কেউ সর্বোচ্চ স্তরে পেঁŠছে যায়, কেউ নিচু স্তরেই থেকে যায়, আবার এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ঈমান থেকে বেরও হয়ে যায় (নাউযুবিল্লাহ)।
মু’মিনরা সংখ্যায় যত অল্পই হোক না কেন, দুর্বল অবস্থাতেও (পার্থিব সম্পদ বা সামর্থ্যের দিক দিয়ে) তারা দুইটি বিষয় কখনই ত্যাগ করতে পারবে নাঃ
প্রথমতঃ মিল্লাতে ইবরাহীম (আঃ)-এর সাথে লেগে থাকা অর্থাৎ তাওহীদ ও কুফর বিত তাগুতের দাওয়াহ প্রকাশ্যে দিতে থাকা এবং যারা এর বিরোধিতা করবে তাদের প্রতি বারা প্রদর্শন করা।
দ্বিতীয়তঃ মিল্লাতে ইবরাহীম (আঃ)- এর সাথে লেগে থাকার অংশ হিসেবে আল্লাহ্র শত্রুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং শত্রুতা স্পষ্ট করে দেয়া। আমাদের রব, পরম দয়ালু, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ আমাদেরকে ‘ক্বিতাল’এর হুকুম দিয়েছেন। যদিও জিহাদের মাধ্যমে অনেক লক্ষ্য অর্জন করা যায়, তবুও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, জিহাদ শুধু অন্য কোন ইবাদতের (যেমনঃ দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার) হাতিয়ার নয়- বরং এটা নিজেই সবচেয়ে বড় ইবাদত, আর এত বড় ইবাদত থেকে অন্যান্য আরো অনেক উপকার হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশ্বজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন যে কিসের মাঝে কি মঙ্গল নিহিত আছে। আমরাও আমাদের সীমিত জ্ঞানেই জিহাদের অনেক সুফল দেখতে পারি। কিন্তু তারপরও, দূরদৃষ্টির অভাবে বেশির ভাগ মানুষই জিহাদের বাহ্যিক কষ্ট ও দুর্ভোগের কথা ভেবে জিহাদকে অপছন্দ করে। আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ
‘‘তোমাদের জন্য কিতালের বিধান দেওয়া হল যদিও তোমাদের নিকট ইহা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।’’[3
সালামাহ ইবনে নুফাইল (রাঃ) বলেছেনঃ যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে বসে ছিলাম তখন একজন মানুষ এসে বলল, ‘‘হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম, ঘোড়াদের অপমান করা হচ্ছে, অস্ত্র ফেলে রাখা হয়েছে আর মানুষ মনে করছে আর জিহাদ নেই এবং সব যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ‘‘তারা মিথ্যা বলছে, যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে। যুদ্ধ তো সবে শুরু হয়েছে। আমার উম্মাহর থেকে একটি দল সবসময়ই সত্যের পথে যুদ্ধ করতে থাকবে এবং আল্লাহ্ কিছু মানুষের ক্বলবকে পথভ্রষ্ট করে দিবেন এবং তাদের থেকে এই দলের জন্য প্রতিদ্বন্দী সরবরাহ করবেন, যতক্ষণ না শেষ সময় ঘনিয়ে আসে এবং আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালেই মঙ্গল লেখা থাকবে। আমাকে ওহী করা হচ্ছে যে, আমি অচিরেই তোমাদের ছেড়ে চলে যাব এবং তোমরা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে আমার অনুগামী হবে। আর জেনে রেখো, মু’মিনদের বাড়ী হবে শাম অঞ্চলে।’’[4]
আন-নাসাঈর টীকা হিসেবে আল-সিন্দি লিখেছেনঃ ‘‘ঘোড়াদের অপমান’’ বলতে বুঝানো হয়েছে ঘোড়াদের অবহেলা করা এবং তাদের গুরুত্বকে খাটো করে দেখা বা যুদ্ধর কাজে তাদের ব্যবহার না করা।
‘‘যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে। যুদ্ধ তো সবে শুরু হয়েছে।’’ -এটা দুইবার বলার উদ্দেশ্য হলো এর উপর গুরুত্ব আরোপ করা। এর থেকে বোঝা যায় যে, যুদ্ধ বাড়তেই থাকবে, কারণ আল্লাহ্ মাত্র কিছুদিন আগে এটা ফরয করেছেন, সুতরাং এতো জলদি কিভাবে এটা শেষ হয়ে যাবে? অথবা এর অর্থ হতে পারে যে, সত্যের যুদ্ধ সবে শুরু হচ্ছে, কারণ এর পূর্বে তারা শুধু নিজেদের এলাকাতেই যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু এখন সময় এসেছে অন্যান্য দূরবর্তী এলাকাতেও যুদ্ধ নিয়ে যাওয়ার।
‘‘আল্লাহ্ কিছু মানুষের ক্বলবকে পথভ্রষ্ট করে দিবেন’’ -এর অর্থ হলো আল্লাহ্ চিরদিনই এমন কিছু মানুষ রাখবেন যাদের বিরুদ্ধে সত্যপন্থীরা তাদের জিহাদ অব্যাহত রাখতে পারে এমনকি এজন্য যদি কারো মনকে ঈমান থেকে কুফরের দিকে ঘুরিয়ে দিতে হয়, আল্লাহ্ সেটাও করবেন। এর মাধ্যমেই আল্লাহ্ মু’মিনদের উপর তাঁর রহমত বর্ষণ করবেন যাতে তারা তাঁর রাস্তায় জিহাদ করার গৌরব অর্জন করতে পারে এবং আল্লাহ্র সন্তুষ্টি পেতে পারে।
‘‘ঘোড়ার কপালে মঙ্গল’’-এর অর্থ হলো পুরস্কার এবং গণীমতের মাল, সম্মান এবং গৌরব।
‘‘মু’মিনদের বাড়ী হবে শাম অঞ্চলে’’ -এখানে কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ের কথা বলা হয়েছে। সেই সময় শাম হবে মুসলিমদের শক্ত ঘাঁটি এবং জিহাদের কেন্দ্রস্থল।
জিহাদের মাধ্যেমে মু’মিনদের জন্য এই দুনিয়াতেও যেসব উপকার হতে পারে সেগুলো হলোঃ



শিরক এবং ফিতনা দূর করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা
‘‘এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিত্না দূরীভুত হয় এবং আল্লাহ্র দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ্ তো তার সম্যক দ্রষ্টা।’’[5]
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল, তারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে। আর তারা যদি এটা করে, তাহলে তাদের জান ও মাল আমার কাছ থেকে নিরাপদ শুধুমাত্র ইসলামের শরীয়াহর দাবী ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহ্র কাছে।’’[6]
• তাগুতদের ধ্বংস করা (যারা কাফিরদের সর্দার)
‘‘তাদের চুক্তির পর তারা যদি তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে বিদ্রূপ করে তবে কাফিরদের প্রধানদের সহিত যুদ্ধ কর; ইহারা এমন লোক যাদের কোন প্রতিশ্রুতি রহিল না; যেন তারা নিবৃত্ত হয়।’’[7]
•কাফিরদের অপমানিত করা, তাদের মনোবল ভেঙে দেয়া এবং মুসলিমদের সম্মান ফিরিয়ে আনা
‘‘তোমরা তাদের সহিত যুদ্ধ করবে। তোমাদের হস্তে আল্লাহ্ উহাদেরকে শাস্তি দিবেন, উহাদেরকে লাঞ্চিত করবেন, উহাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন ও মু’মিনদের চিত্ত প্রশান্ত করবেন, এবং তিনি উহাদের অন্তরের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা তার প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হন, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’’[8]
• দুনিয়া থেকে জুলুম সরিয়ে ফেলা
‘‘তোমাদের কী হল যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল*াহর পথে এবং অসহায় নরনারী এবং শিশুদের জন্য, যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক। এই জনপদ-যার অধিবাসী যালিম, উহা হতে আম\দেরকে অন্যত্র নিয়ে যাও; তোমার নিকট হতে কাউকেও আমাদের অভিভাবক কর এবং আমাদের সহায় কর। যারা মু’মিন তারা আল্লাহ্্র পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল।’’[9]
•কাফিরদের ভীত-সন্ত্রস্ত করা এবং তাদের কুকর্ম করার সাহস হতে না দেয়া
‘‘কিতাবীদের মধ্যে যারা উহাদিগকে সাহায্য করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ হতে অবতরণ করালেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন, এখন তোমরা উহাদের কতককে হত্যা করতেছ এবং কতককে করতেছ বন্দী।’’[10]


‘‘স্মরণ কর, তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং মু’মিনগণকে অবিচলিত রাখ। যারা কুফরী করে আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করব; সুতরাং তোমরা আঘাত কর তাদের স্কন্ধে ও আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে।’’[11]
‘‘তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে এতদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ্র শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এতদ্ব্যতীত অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ্ তাদেরকে জানেন। আল্লাহ্র পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে উহার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।’’[12]
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘……আমাকে বিজয় দেয়া হয়েছে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে ( যা আল্লাহ্ শত্রুদের অন্তরে গেথে দেন)।’’[13]
এগুলো ছাড়াও জিহাদের আরো অনেক উপকার আছে, যা আল্লাহ্ই ভালো জানেন। আল্লাহু আকবার! আমরা যদি জিহাদ আর তরবারি ত্যাগ করি, তাহলে আল্লাহ্ আমাদের ত্যাগ করবেন। জিহাদ না করলে জিহাদের কোন সুফল মু’মিনরা পাবেনা, বরং এর উল্টোটাই ঘটবে (অর্থাৎ শত্রুদের দ্বারা অপমানিত এবং তাদের দাসত্ব )।
‘‘সুতরাং তারা আল্লাহ্র হুকুমে উহাদেরকে পরাভুত করল; দাঊদ জালূতকে হত্যা করল, আল্লাহ্ তাকে রাজত্ব ও হিক্মত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ্ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ্ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল।’’[14]
ইমাম আল-হালিমী তার সুয়াব-আল-ঈমান বইতে লিখেছেনঃ ‘‘আল্লাহ্ সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি যদি মু’মিনদের দ্বারা কাফিরদের দমন না করে রাখতেন অথবা মু’মিনদের দ্বারা ইসলামকে রক্ষা করার ও কাফির বাহিনীকে ধ্বংস করার ক্ষমতা না দিতেন- তাহলে পৃথিবীতে কুফরের রাজত্ব চলতো এবং সত্য দ্বীন হারিয়ে যেতো। এখান থেকেই প্রমাণ হয় যে, ইসলামের টিকে থাকার কারণ হলো জিহাদ- আর এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অবশ্যই ঈমানের একটি স্তম্ভ হিসেবে গন্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে।’’
সুতরাং আমরা এভাবেই তাগুতের দ্বিতীয় হাতকে ভেঙে দেবো, ক্বিতালের মাধ্যমে।
‘‘যারা মু’মিন তারা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পক্ষে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল।’’[15]
মূর্তিপূজকরা তাদের মূর্তিগুলোর ক্ষমতার উপর বিশ্বাসে অটল থাকে যতক্ষন পর্যন্ত না কেউ সেগুলোর দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়। কিন্তু এরপরও কেউ কেউ মূর্তির ক্ষমতাকে ভয় করতে থাকে, যতক্ষন না কেউ এটাকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। একইভাবে আমাদেরও কাজ হবে দাওয়াহর মাধ্যমে তাগুতের মুখোশ উম্মোচন করে দেয়া, এবং সাথে সাথে যুদ্ধ চালিয়ে তাগুতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া, যাতে করে আমরা মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে সর্বোচ্চ, মহান একমাত্র আল্লাহ্র দাসত্বে নিয়ে আসতে পারি। আল্লাহ্ উপরের আয়াতে মু’মিনদের এবং বিশেষত মুজাহিদদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তাগুত এবং তাগুতের ষড়যন্ত্র দু’টোই আসলে অত্যন্ত দুর্বল। অতীতেও তাগুতরা পরাস্ত হয়েছে এবং তাদের অক্ষমতা প্রকাশ হয়ে গেছে, তাদের দুর্বল পরিকল্পনা তাদের নিজেদেরই ক্ষতির কারণ হয়েছে- যেমনটা দেখা যায় নমরুদ, ফেরাউন এবং আসহাবে উখদুদের ঘটনার সেই রাজার ক্ষেত্রে। এবং এখনও ইনশাআল্লাহ্, তাগুত ধ্বংস হয়ে যাবে, কেবলমাত্র যদি মু’মিনরা আল্লাহ্র উপর সম্পূর্ণ ত্বাওয়াক্কুল রাখে, ইসলামের বার্তাকে ছড়িয়ে দেয় এবং তলোয়ার তুলে নেয়। বিশিষ্ট আলেম ইবনুল কাইয়্যিম বলেছেনঃ


আমি জিহাদ চালাবো
আপনার শত্রুর সাথে ততদিন,
আমাকে আপনি
টিকিয়ে রাখবেন যতদিন।
যুদ্ধকেই আমি বানাব আমার পেশা।
বড় বড় জন সমাগমের মাঝেই
আমি প্রকাশ করে দেব তাদের ষড়যন্ত্র,
আর আমার জিহবার ধারে
ছিন্ন করে দেব তাদের শক্তি।
(তাগুতের প্রতি) নিস্ফল ক্রোধে জ্বলতে জ্বলতেই
তোরা ধ্বংস হয়ে যা,
কারণ আমার রব জানেন
তোরা যা লুকাতে চাস,
আর জানেন
যা আছে তোদের অন্তরে।
আর আল্লাহ্ তো আছেন
তাঁর দ্বীন এবং কোরআনের পক্ষে,
আরও আছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম
তার জান এবং কর্তৃত্ব নিয়ে।
সত্য এমন এক খুঁটি
যাকে কেউ ধ্বংস করতে পারবেনা,
এমনকি যদি ছাকালান (জ্বীন ও মানুষ)
এক হয়, তাহলেও না।





সুত্র:

[1] সূরা নিসা ৪ঃ ৭৬
[2] সূরা হুদ ১১ঃ ৯১
[3] সূরা বাকারা ২ঃ ২১৬
[4] সুনান আন-নাসাঈ
[5] সূরা আনফাল ৮ঃ ৩৯
[6] এই হাদীস ইবনে উমার,আবু হুরায়রা, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ, আনাস বিন মালিক, জাবীর ইবনে আব্দুল্লাহ, আউস ইবনে আবু আউস, ইবনে আববাস, সাহল ইবনে সাদ, আল-সুমান ইবনে বশীর, তারিক ইবনে আশিয়াম, আবু বাকরাহ, মুয়ায ইবনে জাবাল এবং সামুরা ইবনে জুনদুব থেকে বর্ণিত- এবং এটি বুখারী, মুসলিম, তিরমীযী, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমেদ, আল-বায়হাকী, ইবনে হিববান, আল-দারকুতনী এবং মুয়াত্তা ইমাম মালিক-এই সব হাদীস গ্রন্থে এটি সংকলন করা হয়েছে। সুতরাং এটি মুতাওয়াতির হাদীস, অর্থৎ সবচেয়ে সহীহ শ্রেণীর হাদীস।
[7] সূরা তাওবা ৯ঃ ১২
[8] সূরা তাওবা ৯ঃ ১৪-১৫
[9] সূরা নিসা ৪ঃ ৭৫-৭৬
[10] সূরা আহ্যাব ৩৩ঃ ২৬
[11] সূরা আনফাল ৮ঃ ১২
[12] সূরা আনফাল ৬ঃ ৬০
[13] বুখারী, কিতাবুল জিহাদ
[14] সূরা বাকারা ২ঃ ২৫১
[15] সূরা নিসা ৪ঃ ৭৬



জিহাদের মনোভাব প্রজ্জলিত হতেই



আল-হামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার, যিনি বিশ্বের প্রভূ। দোয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবারবর্গ এবং সাহাবাগনের উপর।
ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। সব ধরনের সম্পদ ও প্রচেষ্টাকে কাজে লাগানো হচ্ছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। কোন একটা মুহুর্তের জন্যেও তারা বিরত হচ্ছে না। আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে একথা জানিয়ে দিয়েছেন, “এবং যদি তারা সক্ষম হয় তবে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই থাকবে যতক্ষন না তোমরা দ্বীনের পথ থেকে সরে যাও।” (আল-বাকারাঃ২১৭)

আল্লাহ তা’আলা তাঁর আয়াত এ বলেন…

وَلَايَزَالُونَيُقَاتِلُونَكُمْحَتَّىيَرُدُّوكُمْعَنْدِينِكُمْإِنِاسْتَطَاعُوا

ইবনে কাসির (রহঃ) পুর্ববর্তী আয়াতের ব্যাখ্যা করেন যে, “এবং ফিতনাহ হত্যার চেয়েও জঘন্য পাপ” অর্থাৎ “বস্তুত তারা একজন মুসলিমকে তার দ্বীনের মধ্যে ফিতনায় ফেলছে এবং এভাবে ঈমান আনার পরও তাকে কুফরের দিকে ঝুঁকিয়ে মুরতাদ বানাচ্ছে এবং এটা আল্লাহর নিকট হত্যার চেয়েও মারাত্মক।” এবং এরপর তিনি বর্ননা করেন “এবং যদি তারা সক্ষম হয় তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই থাকবে যতক্ষন না তোমরা দ্বীনের পথ থেকে সরে যাও।” মানে হল “এবং তারপর তারা আরো খারাপ ও আরো জঘন্য পাপ করবে, তারা অনুতপ্তও হবে না বা বিরতও হবে না।”

শায়খ আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-সা’দি উপরের আয়াতটির তাফসীরে বলেন “এবং আল্লাহ তা’য়ালা জানান যে, তারা অনবরত মুমিনদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে। মুমিনদের বৈশিষ্ট্য মুছে দেওয়া এবং হত্যা করা তাদের লক্ষ্য নয়। বস্তুত, তাদের লক্ষ্য হল মুমিনদেরকে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং তারপর তারা কাফির হয়ে যায় যদিও তারা পূর্বে বিশ্বাসী ছিল এবং প্রজ্বলিত জাহান্নামের বাসিন্দা হয়। এই সবের জন্য তারা তাদের সামর্থ্যকে প্রয়োগ করে এবং যা করতে পারে সবই করে।” এবং তারা তাদের মুখের সাহায্যে আল্লাহর (দ্বীনের) মশাল নিভিয়ে ফেলতে চায়।, কিন্তু আল্লাহ তার এ আলোর পূর্ণ বিকাশ ছাড়া অন্য কিছুই চান না, যদিও কাফেররা তা পছন্দ করে না।””

তিনি আরো বলেন “ এই বৈশিষ্ট্য সকল কুফফরের জন্য প্রযোজ্য, তারা তাদের নিজেদের বাইরের দলগুলোর সাথে কখনোই যুদ্ধ হতে বিরত হবে না যতক্ষন না তাদেরকে দ্বীন থেকে সরিয়ে দেয়া যায়। বিশেষ করে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মধ্য হতে আহলে কিতাবধারীরা যারা তাদের দ্বীনের দিকে উম্মাহকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা স্থাপন করেছে, মিশনারি ছড়িয়ে দিয়েছে, ডাক্তার নিযুক্ত করেছে, স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাদের দ্বীনের (ইসলামের) মধ্যে সন্দেহ ঢুকানোর জন্য বিভিন্ন প্রোপ্যাগান্ডা তৈরি করছে।”

যদি এই হয় অবস্থা, তাহলে কি হবে যদি জিহাদের মনোভাব স্তিমিত হয়ে যায় যখন কাফিরদের শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব তীব্র হচ্ছে?

আল্লাহ কুফফারদের অন্য একটি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানান, তারা অব্যাহত ভাবে আল্লাহর পথ হতে ব্যাহত করার কাজ করে এবং আন্দোলন তৈরি করে যা ইসলাম হতে দূরে সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

قُلْيَاأَهْلَالْكِتَابِلِمَتَصُدُّونَعَنْسَبِيلِاللَّهِمَنْآمَنَتَبْغُونَهَاعِوَجًاوَأَنْتُمْشُهَدَاءُوَمَااللَّهُبِغَافِلٍعَمَّاتَعْمَلُونَ

“তুমি বল, হে আহলে কিতাবরা, যারা ঈমান এনেছে তোমরা কেন তাদের আল্লাহর পথ থেকে সরাতে চেষ্টা করছ, তোমরা (আল্লাহর) পথকে বাঁকা করতে চাও, অথচ তোমরাই তো (সত্যের) সাক্ষী?” এবং তোমরা যা কর সে ব্যাপারে আল্লাহ উদাসীন নয়। হে মুমিনরা, যাদের (আগে) কিতাব দেওয়া হয়েছে তোমরা যদি তাদের কোন একটি দলের কথা মেনে চল, তাহলে ঈমান আনার পরও তারা (ধীরে ধীরে) তোমাদের কাফির বানিয়ে দেবে”। (আলি-ইমরানঃ ৯৯-১০০)

এই কারনে, (তেজী) মনোবলকে ম্রিয়মাণ হতে দেওয়া যাবে না, এটা অবশ্যই জাগিয়ে রাখতে হবে। যদি শরি’য়ার শর্ত অনুযায়ী প্রত্যক্ষ জিহাদের উপযুক্ত সময় না হয় অথবা সামর্থ্য না থাকে তাহলেও আমাদের অবশ্যই জিহাদের মনোবলকে চাঙ্গা রাখতে হবে।

আল্লাহর দ্বীনকে ধ্বংস করার জন্য ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন ধরনের পন্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাঁর (দ্বীনের) মশাল উপড়ে ফেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা করছে। একটা হল তাদের মুখ দ্বারা যেমনটি কুরআনে বর্নিত হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ মিডিয়ার ফানেলের মাধ্যমে। সুতরাং আমাদের এই ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে, ইসলামের শত্রুরা ইসলামকে আক্রমণ করার জন্য সাংবাদিক কার্যক্রম সহ আরো বিভিন্নভাবে মিডিয়াকে ব্যবহার করবে, তাই আনসারুল্লাহ এবং মুজাহিদিনদের দক্ষ হতে হবে যাতে কুফফরদের ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হওয়া যায় এবং তা প্রতিহত করা যায়।



আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

يُرِيدُونَأَنْيُطْفِئُوانُورَاللَّهِبِأَفْوَاهِهِمْوَيَأْبَىاللَّهُإِلَّاأَنْيُتِمَّنُورَهُوَلَوْكَرِهَالْكَافِرُونَ

“তারা তাদের মুখের (এক) ফুঁৎকারে আল্লাহর (দ্বীনের) মশাল নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তার এ আলোর পূর্ণ বিকাশ ছাড়া অন্য কিছুই চান না, যদিও কাফেররা তা পছন্দ করে না।” (আত-তাওবাঃ৩২)

অন্য একটি আয়াতও তা ফুটিয়ে তোলে,

لَتُبْلَوُنَّفِيأَمْوَالِكُمْوَأَنْفُسِكُمْوَلَتَسْمَعُنَّمِنَالَّذِينَأُوتُواالْكِتَابَمِنْقَبْلِكُمْوَمِنَالَّذِينَأَشْرَكُواأَذًىكَثِيرًاوَإِنْتَصْبِرُواوَتَتَّقُوافَإِنَّذَلِكَمِنْعَزْمِالْأُمُورِ

“(হে মুমিনেরা) নিশ্চয়ই মাল ও জানের মাধ্যমে তোমাদের পরিক্ষা নেয়া হবে। এবং তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায় – যাদের কাছে আল্লাহর কিতাব নাযিল হয়েছিল এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্যদের শরীক করেছে, তাদের (উভয়ের) কাছ থেকে অনেক (কষ্টদায়ক) কথবার্তা শুনবে, এ অবস্থায় তোমরা যদি ধৈর্য ধারন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তা হবে অত্যন্ত বড়ো সাহসিকতার ব্যাপার।” (আলি-ইমরানঃ১৮৬)

যদি আমরা দেখি, বর্তমানে অধিকাংশ মিডিয়াই কুফফরদের দ্বারা এবং মুনাফিকদের মধ্য হতে কুফফরদের সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত। সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যদি আমরা অধিকাংশ গন মিডিয়ায় দেখি যে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃনা প্রচার করছে, ইসলামের শিক্ষাকে অপমান করছে, মুসলিমদের একঘরে করে ফেলছে, জিহাদকে সন্ত্রাস বলে প্রচার করছে, জিহাদের কার্যক্রমকে নেতিবাচক শিরোনাম দিয়ে প্রচার করছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে এরকম অনেক কিছু করছে। এমনকি কি এর চেয়েও দুঃখজনক হল, মুসলিম সম্প্রদায় এগুলো গিলছে এবং পাল বেধে ইসলাম সম্পর্কে একটা পক্ষপাতদুষ্ট উপসংহারের দিকে আগাচ্ছে এবং তারা এটা কোন রকমের বাছ বিচার ছাড়াই গ্রহণ করছে। সুতরাং বস্তুত, এই যুগে সংগ্রামের জন্য খুব বেশী প্রয়োজন অধিক পরিমান ধৈর্য এবং আল্লহভীতি (তাকওয়া), “কিন্তু যদি তুমি ধৈর্য ধারন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর- তাহলে, তা হবে অত্যন্ত বড়ো ধরনের এক সাহসিকতার ব্যাপার।”

গন মিডিয়ার মাধ্যমে কুফফরদের ঘৃনার কথাও আল্লাহ সুবহানু তা’য়ালা তার আয়াতের মাধ্যমে জানিয়েছেনঃ

“হে মুমিনেরা, তোমরা নিজেদের (মুমিনদের) ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না, কারন তারা তোমার অনিষ্ট সাধনের কোন পথই অনুসরন করতে দ্বিধা বোধ করবে না, তারা তো তোমাদের ক্ষতি-ই কামনা করে, তাদের ঘৃনা তাদের মুখ থেকেই প্রকাশ পেতে শুরু করেছে, এবং তাদের অন্তরে লুকানো হিংসা বাইরের অবস্থার চাইতেও মারাত্মক”। (আলি-ইমরানঃ ১১৮)

এটা হতে পারে যে , যদি আমরা সমর্থ হই, আমরা অবশ্যই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করব এবং তাদের ধ্বংস করব। কিন্তু কি করব, যখন উম্মাহ দুর্বল অবস্থায় আছে? গন মিডিয়ায় মুজাহিদিনদের সামর্থ্য কম। একজনকে ধৈর্য্য ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে হবে, এর মধ্যে একটি হল মিডিয়ার মাধ্যমে জিহাদ পরিচালনা করার আকাঙ্ক্ষাকে জাগ্রত রাখা।

কিভাবে জিহাদের মনোবলকে চাঙ্গা রাখা যায় তার জন্য কিছু উপদেশঃ

দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে মনের পরিবর্তন করুন; আখিরাতকে প্রধান জীবন বানান। দুনিয়া কেবল তার সঙ্গী হচ্ছে, এটাকে লক্ষ্য বানানো উচিত নয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম আহযাবের যুদ্ধে যখন খন্দক খুঁড়ছিলেন তখন তার সাহাবাদের সম্পর্কে বলেন,

اللهمإنالعيشعيشالآخره . فاغفرللأنصاروالمهاجره

“হে আল্লাহ, বস্তুত জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন। সুতরাং আনসার ও মুহাজিরীনদেরকে তুমি ক্ষমা কর। (আল-বুখারী) মানে হচ্ছেঃ হে আল্লাহ, বস্তুত জীবন হচ্ছে তাই যা আমরা খুজছি এবং যা হয় চিরস্থায়ী আর তা হল আখিরাতের জীবন।”

কেন আমরা আমাদের এই মনকে অবশ্যই কোন দ্বিধা-দন্ড ছাড়াই আখিরাতমুখী করব? কারন পার্থিব পরিবেশ জিহাদের মনোভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে। আমাদের মনে রাখা দরকার, যদি আমরা পার্থিব জীবনে সুখ অথবা দুঃখ পাই, তা মাত্র ৬০-৭০ বছরের মত হবে, এতে অল্প কিছুই ভোগ করব। যাহোক, যদি আমরা আখিরাতের জীবনের মোটামুটি একটা হিসাব করি, তাহলেও ক্ষতির পরিমান অপরিমেয়, আখিরাতের একদিন দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বৎসরের মত। আল্লাহ তা’য়ালাই ভাল জানেন।


Ad Code

Responsive Advertisement